২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অভিবাসী নীতি মার্কেলের উদারনীতির বিজয়

-

অভিবাসী প্রশ্নে ক্রিশ্চিয়ান সোস্যাল ইউনিয়ন নেতা ও জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হস্ট সেহফারের কঠোর নীতির বিপরীতে জার্মান চ্যান্সেলর এঞ্জেলা ম্যারকেলের উদারনীতি বিজয়ী হয়েছে। শুধু জার্মানির অভ্যন্তরেই নয়Ñ ইতালি, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড ও চেক প্রজাতন্ত্রের সরকারগুলো একই সুরে অভিবাসীদের বিরোধিতা করছিল। শেষ পর্যন্ত ২৮ জুন রাতে ব্রাসেলসের বৈঠকে উদারনীতিরই বিজয় হলো। ইতালি ও গ্রিসে আসা অভিবাসীদের সমানভাগে ভাগ করে নেয়ার জার্মান প্রস্তাব সবাই মেনে নিয়েছে হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ড ছাড়া। জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হস্ট সেহফারও শেষ পর্যন্ত অভিবাসন রাজনীতিতে চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেলের কাছে হেরে গেলেন। পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েও পদত্যাগ করেননি।
অভিবাসীদের সমানভাগে ভাগ করে নেয়ার সিদ্ধান্তে অ্যাঞ্জেলা ম্যারকেল সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অভিবাসন ইস্যুতে ম্যারকেলকে ‘সরকারে না থাকার’ আল্টিমেটাম দিয়েও শেষ পর্যন্ত অটল থাধকতে পারেননি। সেহফার জানিয়ে ছিলেন, ‘অবৈধ অভিবাসীদের বাধা দিতে অস্ট্রিয়া ও জার্মানি সীমান্তে পুলিশ মোতায়েনের সিদ্ধান্তে তিনি যে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন তা থেকে তিনি সরে এসেছেন।’ সেহফার অভিবাসীদের জার্মানিতে তাদেরই প্রবেশের অনুমতি দিতে চান যারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য কোনো দেশে এর আগে আশ্রয় প্রার্থী ছিল।
কেন অভিবাসী নিতে চায় জার্মানি এবং অ্যাঞ্জেলা মারকেল নিজের দেশে অনেক বিরোধিতা সত্ত্বেও অভিবাসীদের পক্ষ নিলেন ? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে জার্মানির জনসংখ্যা ও অর্থনীতির দিকে তাকালে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের রিপোর্ট অনুসারে ২০১৩ সালে জার্মানির জনসংখ্যা ছিল ৮ কোটি ১৩ লাখ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এদের এত কম যে, এই হার অব্যাহত থাকলে ২০৬০ জার্মানির জনসংখ্যা কমে দাঁড়াবে সাত কোটি আট লাখে। একই রিপোর্ট অনুসারে ২০১৩ সালে ব্রিটেনে জনসংখ্যা ছিল ছয় কোটি ৪১ লাখ। ২০৬০ সালে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৮ কোটি ১০ লাখে। এ তথ্য অনুসারে জার্মানি ও ফ্রান্সকে পেছনে ব্রিটেন এগিয়ে যাবে জনসংখ্যায়। বাড়তি জনসংখ্যাকে এক সময় আমেরিকান ও ইউরোপীয়রা দায় হিসেবে দেখালেও এবং মুসলিম বিশ^কে জনসংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য চাপ ও আর্থিক সহায়তা করে গেলেও এখন তারাই জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ইউরোপ অথবা আমেরিকানদের মধ্যে জন্ম হার এত কম যে, তাতে জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফলে এক সময় কর্মক্ষম জনসংখ্যা না থাকায় উৎপাদন হ্রাস পেতে বাধ্য। পরিণতিতে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়তে পারে। এ যুক্তিতে এখন ইউরোপ ও আমেরিকার কিছু দেশ অভিবাসী নিয়ে কর্মক্ষম হাত বাড়াতে চাচ্ছে। কেউ নিচ্ছে কেবল দক্ষ জনশক্তি যেমন কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশ। কিন্তু জার্মানি নিয়েছে একেবারেই ১০ লাখের বেশি অভিবাসী। এর বেশির ভাগ সিরিয়া থেকে আগত মুসলিম অভিবাসী।
জার্মানির অর্থনীতিবিদেরা এ মুহূর্তে বলছেন যে, অভিবাসন খারাপ কিছু নয়। যে ভাবে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে তাতে জার্মানিতে ২০৬০ সালের মধ্যে তাদের জন্য পেনশন, স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য সেবা দিতে জিডিপির ৫ শতাংশ চলে যাবে। অর্থনীতিবিদেরা ইতোমধ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন জন্মহার হ্রাস পাওয়ায় আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে জার্মানিতে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমে যাবে ৬০ লাখ। জার্মান অর্থমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল ২০১৫ সালে বিশালসংখ্যক অভিবাসী নেয়ার আগে সংসদে যে ভাষণ দিয়ে ছিলেন তার সারসংক্ষেপ করলে এমন দাঁড়ায় যে, ‘অভিবাসীদের দক্ষ করে তাদের হাতে কাজ দিতে পারলে তারা সম্পদে পরিণত হবে। জার্মান অর্থনীতি আরো শক্তিশালী হবে।’ বিপরীতে কর্মক্ষম হাত না বাড়াতে পারলে ২০৫০ সালের পর জার্মান অর্থনীতির সূচক শুধুই নিচের দিকে নামবে। জার্মানদের দিয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কাক্সিত মানে পৌঁছানো সম্ভব নয়। বিকল্প হিসেবে অ্যাঞ্জেলা মারকেলের সরকার নিজ দেশে কট্টরপন্থীদের বিরোধিতা সত্ত্বেও অভিবাসী নেয়ার ঝুঁকি নিয়েছেন।
ইতালি ও গ্রিসে আসা অভিবাসীদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব সদস্য দেশে সমানভাবে ভাগ করে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও পূর্ব ইউরোপের দুই দেশ হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ড এ পরিকল্পনা একেবারে নাকচ করে দিয়েছে। এ দুই দেশের জনসংখ্যা সমস্যা অবশ্য অন্য দেশগুলোর মতো নয়। আবার এ দুই দেশ ইউরোপের অন্যান্য দেশের চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে। ফলে এরা অভিবাসী প্রশ্নে বিরোধিতা করবে এটাই স্বাভাবিক। হ


আরো সংবাদ



premium cement