এস-৪০০ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ওয়াশিংটন-আঙ্কারা টানাপড়েন
- মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম
- ১২ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি সমঝোতা পছন্দ করেন আর এটা যদি হয় তুরস্কের সাথে তাহলে তো অনেক সম্ভাবনার মধ্য থেকে যেকোনো একটি বেছে নেয়ার সুযোগ থাকে। এর মধ্যে বিশেষভাবে অন্তর্ভুক্ত আছে মার্কিন কংগ্রেসের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা তুরস্কের রাশিয়া থেকে আকাশ প্রতিরাব্যবস্থা এস-৪০০ কেনার বিষয়টি।
তুরস্কের এস-৪০০ ক্রয়ের বিষয়টি রাশিয়ার ওপর মার্কিন অবরোধের ঠিক কোন ধারা অমান্য করা হবে। আগে এটি সরবরাহ করা হোক বা সক্রিয় করা হোক কিন্তু এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে একমাত্র তারই অধিকার আছে বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখার কিংবা যদি তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, এখানে জাতীয় নিরাপত্তার মতো বিষয় বিবেচনা করার অবকাশ আছে।
নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তুরস্কের একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক জানিয়েছেন, আঙ্কারা এরই মধ্যে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করেছে যা ওয়াশিংটনের জন্য হবে সবচেয়ে কল্যাণকর। ওই কর্মকর্তার মতে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসৌলু তার সর্বশেষ ওয়াশিংটন সফরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে বলেছেন, এস-৪০০ এর জন্য রাশিয়ার সাথে যে চুক্তি এরই মধ্যে হয়ে গেছে তা তুরস্ক বাতিল করতে পারবে না। যদিও পম্পেওকে তিনি এও বলেছেন যে, তুরস্ক ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে কাজ করতে আগ্রহী এবং একই সঙ্গে এই প্রতিশ্রতিও দিচ্ছে যে, এই আকাশ প্রতিরাব্যবস্থা দেশটিতে ন্যাটোর মোতায়েন করা প্রতিরাব্যবস্থার জন্য হুমকি হবে না।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘অবশ্যই আমরা ন্যাটোর অংশ, কিন্তু একই সঙ্গে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য কোনো ঝুঁকিও আমরা চাই না।‘ ওয়াশিংটনের শঙ্কা কমানোর জন্য তুরস্ক এরই মধ্যে কিছু পদপে নিয়েছে। রাশিয়া প্রস্তাব দিয়েছিল, আগামী ৯ মাসের মধ্যে তুরস্কের মাটিতে রুশ সেনাবাহিনীর কারিগরি বিভাগের কর্মীদের মাধ্যমে এস-৪০০ সরবরাহ ও মোতায়েন করা হবে। কিন্তু আঙ্কারা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে মস্কোকে অনুরোধ করেছে তাদের সেনারা যেন তুরস্কে না এসে বরং প্রতিরাব্যবস্থা সংযোজন, মোতায়েন ও পরিচালনার জন্য তুর্কি সেনাকর্মকর্তাদের প্রশিণ দেয় কিংবা ন্যাটো নিয়ন্ত্রিত এলাকায় অন্য কোনোভাবে এর ব্যবস্থাপনা করে। আর এ কাজ সম্পন্ন হতে লাগবে ১৯ মাস।
পঞ্চম প্রজন্মের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান প্রতিরোধে এস-৪০০ মোতায়েনের ফলে গোয়েন্দা ঝুঁকির বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন সাম্প্রতিক কালে আরো বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। বেশ কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, এস-৪০০ রাডার তুরস্কের এফ-৩৫ এর তথ্য সংগ্রহ করে পাঠিয়ে দিতে সম। আর এর ফলে এই যুদ্ধ বিমানের দুর্বলতা ও এর নির্মাণ কাঠামোর বিস্তারিত চলে যেতে পারে রাশিয়ার হাতে। অবশ্য তুরস্কের কর্মকর্তারা এই সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, তারা পরিকল্পনা করছেন এই প্রতিরাব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হবে তাদের নিজেদের সফটওয়্যার-এর মাধ্যমে এবং এর সঙ্গে রাশিয়া কিংবা ন্যাটোর নেটওয়ার্কের কোনো সংযোগ থাকবে না।
আরো একটি বিষয় খুবই স্পষ্ট যে, ট্রাম্প প্রশাসন একটি মধ্যবর্তী সমঝোতা খুঁজতে কাজ করছে। মার্কিন প্রতিরা বিভাগের ইউরোপীয় অঞ্চল ও ন্যাটো’র নীতিবিষয়ক উপসহকারী প্রতিরামন্ত্রী থমাস গফাস সম্প্রতি বলেছেন, তুরস্ক একটি সার্বভৌম দেশ এবং এ কারণেই সে দেশের কর্মকর্তারা নিজেদের প্রতিরাব্যবস্থার প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
গফাস বলেন, ‘পশ্চিমা প্রযুক্তির কী ধরনের ঝুঁকি আছে তা মূল্যায়ন করার জন্য আমাদের একটি আলাদা প্রক্রিয়া আছে এবং এই ক্রয় কার্যক্রমেও সে ব্যাপারটি থাকতে পারে।’ এর অর্থ হলো, কোনো প্রকার ঝুঁকি তৈরি করা ছাড়াই এফ-৩৫ ও এস-৪০০ এর মতো জটিল প্রযুক্তির যেন সহাবস্থান থাকতে পারে এমন একটি সমাধান পেন্টাগন খুঁজছে।
তুরস্ক এস-৪০০ আকাশ প্রতিরাব্যবস্থা পরিদর্শনের যে প্রস্তাব মার্কিনিদের দিয়েছে তা অনেক বড় একটি সুযোগ এবং এর মাধ্যমে তারা এই প্রতিরাব্যবস্থা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবে। রাশিয়ার প্রতিরা কর্মকর্তারা এই পরিদর্শন সম্ভাবনা নিয়ে এরই মধ্যে উদ্বিগ্ন। তুরস্কের একজন প্রতিরা কর্মকর্তা বলেছেন, তুরস্ককে এ ধরনের উন্নত প্রযুক্তি দেয়ার েেত্র এস-৪০০ চুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত রুশ কর্মকর্তাদের হতাশ করেছে। তুরস্ক ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে এক ধরনের ভারসাম্যমূলক অবস্থান গ্রহণের চেষ্টা করছে। হ