২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কালাশ

বিশ্বের নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী -

কালাশ কী? পাকিস্তানের একটি ক্ষুদ্র জাতি। এরা সংখ্যায় প্রায় ৩০ হাজার। এদের নিজস্ব ভাষা, হরফ, ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, এরা গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের সেনাদলের বংশধর।
খ্রিষ্টের জন্মের প্রায় ৩০০ বছর আগে আলেকজান্ডার ভারতীয় উপমহাদেশ অভিযানে এসেছিলেন। তিনি আজকের পাকিস্তান ও ভারতে অভিযান চালিয়েছেন। কিন্তু গঙ্গারিডি রাজ্যে (আজকের বংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ এলাকা) অভিযান চালাতে দুঃসাহস দেখাননি। এ রাজ্যের অধিবাসীরা (প্রাচীন বাঙালি) ছিল দুঃসাহসিক এবং এদের ছিল পরাক্রান্ত হস্তীবাহিনী। প্রাচীন বাঙালির শৌর্য-বীর্যের ভয়ে গ্রিকরা বাংলাদেশ এলাকা জয়ের পরিকল্পনা বাদ দেয়। আলেকজান্ডার তার অভিযানকারী সেনাদলের একটি অংশ নিয়ে ব্যাবিলনের (প্রাচীন ইরাকের রাজধানী) পথে যাত্রা করেন। অবশিষ্ট সেনারা ভারতীয় উপমহাদেশে থেকে যায়। থেকে যাওয়া এ সেনাদল থেকেই পরবর্তীকালে উদ্ভব হয় কালাশ জাতির।
উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের চিত্রল জেলায় কালাশদের আবাসভূমি। এখানকার তিনটি নির্জন পর্বত উপত্যকায় কালাশ জাতি বাস করে। এ উপত্যকাগুলো কুনার নদীর দিকে খোলা। কালাশ এলাকা উর্বর। এখানকার পর্বতের পার্শ্বভূমি ওক বনে ঘেরা। এ এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর পানি কাজে লাগানো হয়েছে চাষাবাদে। কালাশরা গম, ভুট্টা, আঙুর, আপেল, আখরোট, খুবানি প্রভৃতি চাষ করে।
ছাগল পালন এবং পর্যটন কালাশ জনগণের অন্যতম অর্থনৈতিক ভিত্তি।
কালাশরা কথা বলে কালাশ, ফারসি ও উর্দু ভাষায়।
একসময় কালাশদের প্রায় সবাই বহুদেবতাবাদে বিশ্বাস করত। বর্তমানে কিছু কালাশ ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করে।
কালাশ নারীরা সাধারণত লম্বা ঢিলে জামা (গাউনবিশেষ) পরে। এ পোশাক সচরাচর কড়ি দিয়ে নকশা করা হয়। পুরুষরা পরে সালোয়ার-কামিজ। শিশুরা চার বছর বয়সের পরে বড়দের পোশাকের অনুকরণ করে।
কালাশ সমাজে মেয়েদের প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার প্রথা প্রচলিত আছে। অনেক সময় বিবাহিত নারীরা নতুন স্বামী গ্রহণ করে। এ ক্ষেত্রে বিবাহিত নারী তার আকাক্সিক্ষত বরকে চিঠি লিখে জানায়, বর্তমান স্বামী তাকে কী দিয়েছে। বর্তমান স্বামী যদি একটি গরু দিয়ে থাকে, হবু বরকে অবশ্যই দু’টি গরু দিতে হয়। অবশ্য যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে তাদের মধ্যে এ প্রথা প্রচলিত নেই।
একসময় কালাশদের আবাসভূমি বেশ বড় ছিল। এটি বর্তমানে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তবে আফগানিস্তানের কালাশরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর সে দেশের কালাশ এলাকার নামকরণ করা হয় নূরিস্তান (আলোর ভূমি) এবং সেখানকার কালাশরা নূরিস্তানি নামে পরিচিতি পায়।


আরো সংবাদ



premium cement