২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ঐ তি হ্য সিরিঞ্জ পিঠা

-

আজ তোমরা জানবে সিরিঞ্জ পিঠা সম্পর্কে । এ দেশে প্রচলিত বেশির ভাগ পিঠাই বানানোর পর খেয়ে ফেলতে হয়, কয়েক দিন সংরক্ষণ বা ঘরে রেখে বহু দিন ধরে খাওয়া যায় না। কিন্তু সিরিঞ্জ পিঠা কৌটায় ভরে রেখে কয়েক মাস পর্যন্ত খাওয়া যায়। লিখেছেন মৃত্যুঞ্জয় রায়


সিরিঞ্জ পিঠা খেয়েছ কি?
ইনজেকশন দেয়ার সিরিঞ্জ ব্যবহার করে এ দেশের রমণীকুল আহা কী শৈল্পিক পিঠাই না তৈরি করে! গ্রামের অনেক মেয়েই ইংরেজি সিরিঞ্জ কথাটা শুদ্ধভাবে বলতে পারে না। তাই সিরিঞ্জের অপভ্রংশ ‘সিরিনচ’ বা ‘সিরিঞ্চ’ নামেই সেসব পিঠার নাম দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ বলে ‘চিনিশ’ পিঠা। তবে নামে যা-ই হোক, প্রাচীন বাংলার শত পিঠার তালিকায় পিঠার এ ফর্মটি বলা যায় এক নতুন সংযোজন। এ দেশে প্রচলিত বেশির ভাগ পিঠাই বানানোর পর খেয়ে ফেলতে হয়, কয়েক দিন সংরক্ষণ বা ঘরে রেখে বহু দিন ধরে খাওয়া যায় না। কিন্তু এ পিঠা কৌটায় ভরে রেখে কয়েক মাস পর্যন্ত খাওয়া যায় বলে হঠাৎ অতিথি এলে আপ্যায়নের উপকরণ হিসেবে এ পিঠার কদর দিন দিন বাড়ছে। এ পিঠা তৈরি করতে প্রথমে সিদ্ধ চাল দুই দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। পরে সেই চাল থেকে পানি ঝরিয়ে শিল-পাটায় বেটে গুঁড়া করতে হয়। চালের গুঁড়া সামান্য লবণ ও পানি দিয়ে ঘন করে গোলা হয়। তারপর সে গোলা ইনজেকশনের প্লাস্টিকের সিরিঞ্জে ভরে কলাপাতা বা কাগজের ওপর সিরিঞ্জ থেকে হাত দিয়ে চাপ দিয়ে গোলা ফেলা হয়। গোলা ফেলার সময় তা হাত দিয়ে যেভাবে ঘোরানো হয়, সেভাবেই সে নকশায় পিঠার গড়ন আসে। সাধারণত চালের গোলায় কোনো রঙ মেশানো হয় না। তবে কেউ কেউ পিঠাকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করতে লাল, হলুদ, সবুজ ইত্যাদি রঙ গোলার সাথে মেশান। বিভিন্ন রঙের সুতার মতো প্যাঁচ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পিঠার মধ্যে রঙের বৈচিত্র্য আনা হয়। যেমনÑ গেন্দা সিরিনচ পিঠা বানানো হয় মাঝে লাল রঙের কয়েক প্যাঁচ, তারপর হলুদ রঙের প্যাঁচ ও নিচে চাপা পড়া অংশটি বর্ণহীন।
এভাবে সেই পিঠাটি দেখতে যেন ঠিক গাঁদা ফুলের মতো দেখায়। চালের ঘন গোলার সুতার মতো রেখাগুলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে জিলাপির মতো নকশা করা হয়। এ পিঠার সৌন্দর্য বা নকশা পুরোপুরি নির্ভর করে প্রস্তুতকারিণীর শিল্পবোধের ওপর। কলাপাতা বা কাগজে ফেলার পর পাতাসুদ্ধ কাঁচা পিঠাটি ভাপা পিঠার মতো ভাপে সিদ্ধ করা হয়। তারপর তা নামিয়ে রোদে শুকানো হয়। দুই দিন রোদ দিলেই ভালোভাবে শুকিয়ে যায়। পরে সেসব পিঠা তেলে ভাজলে ফেঁপে ওঠে ও মচমচে হয়। গরম গরম কোনো কিছু পিঠাতে না দিয়েই ভাজা পিঠা সরাসরি খাওয়া যায়। তবে তেলে ভাজার পর তাতে অনেক সময় চিনির গুঁড়া মিশিয়ে খাওয়া হয় বা খাওয়ার জন্য পরিবেশন করা হয়। ইদানীং চালের গুঁড়ার বদলে কেউ কেউ সাগু দিয়েও সিরিঞ্জ পিঠা বানায়। ঈদের সময় এ পিঠা বেশি বানানো হয়। ঢাকার আশপাশে এ পিঠার চল বেশি। সাধারণত মুসলিম নারীরাই সিরিনচ পিঠা বানায়।


আরো সংবাদ



premium cement