২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির কপিতে ভয়াবহ বর্ণনা

রিফাত-নয়ন উভয়ের সাথেই সম্পর্ক রাখতেন মিন্নি

রিফাত-নয়ন উভয়ের সাথেই সম্পর্ক রাখতেন মিন্নি - ছবি : নয়া দিগন্ত

বরগুনায় আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দাখিলের ১৮ দিন পর এর কপি প্রকাশ করা হয়েছে। আইনজ্ঞদের অভিমত অভিযোগপত্র দাখিলের পর প্রকাশ পেতে এতোসময় লাগে না। বৃহস্পতিবার অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়েছে, আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির সাথে প্রেমের সম্পর্ক থাকাকালেই রিফাত অন্য মেয়েদের সঙ্গেও সম্পর্কে জড়ান।

৬১৪ পৃষ্ঠার এই অভিযোগপত্রের সারসংক্ষেপ ৩৪ পৃষ্ঠায়। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, নিহত রিফাত ও মামলার ১ নম্বর আসামি বন্দুকযুদ্ধে নিহত নয়ন বন্ড বাল্যকাল থেকে বরগুনা জিলা স্কুলে একত্রে লেখাপড়া করেছে। সে সুবাদে তাদের উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল। রিফাতের সাথে আনুমানিক দুই বছর আগে থেকে মিন্নির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সে সময় সরল বিশ্বাসে রিফাত নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির পরিচয় করিয়ে দেয়। এদিকে মিন্নির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক থাকাকালেই রিফাত অন্য মেয়েদের সঙ্গেও প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে যান। এটা মিন্নি জানতে পারেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের রমজান মাসে রিফাত শরীফ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে দেড় মাস চিকিৎসাধীন ছিলেন। এসব কারণে রিফাতের সঙ্গে মিন্নির সম্পর্কের কিছুটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এ সুযোগে আসামি নয়ন বন্ড মিন্নির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে প্রেম নিবেদন করে এবং মিন্নিও তাতে সাড়া দিয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেন। একপর্যায়ে মিন্নি রিফাত শরীফ ও নয়ন বন্ড দু'জনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক বজায় রাখেন।

অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর মিন্নি ও নয়ন বন্ড বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ওই বিয়েতে নয়ন বন্ডের পক্ষে সাক্ষী ছিল মামলার ২ নম্বর আসামি রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজী এবং মিন্নির পক্ষে সাক্ষী হিসেবে ছিলেন নয়ন বন্ডের প্রতিবেশী ও বন্ধু সাইফুল ইসলাম মুন্না এবং তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস। বিয়ের পর মিন্নি ও নয়ন বন্ড স্বামী-স্ত্রী হিসেবে প্রকাশ্যেই সম্পর্ক বজায় রাখেন। কিন্তু বিয়ের পর মিন্নি ধীরে ধীরে জানতে পারেন, নয়ন বন্ড মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত এবং থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এ কারণে নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির সম্পর্কের কিছুটা অবনতি হতে থাকে এবং রিফাত শরীফের সঙ্গে পুনরায় সম্পর্ক শুরু হয়।

অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়েছে, নয়ন বন্ড মিন্নির কাছ থেকে রিফাত শরীফকে হত্যার প্রস্তাব পেয়ে পথের কাঁটা দূর করতে তাকে হত্যার পরিকল্পনা চুরান্ত করে এবং হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে 'বন্ড ০০৭' গ্রুপের সদস্য এবং তার অনুসারী আসামি রিফাত ফরাজী, রিশান ফরাজী, রায়হান, অলিউল্লাহ অলি, টিকটক হৃদয়, রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার, রাকিবুল হাসান নিয়ামত, তানভীর, নাজমুল হাসানকে নিয়ে ২৫ জুন বিকেলে বরগুনা সরকারি কলেজের শহীদ মিনারে মিটিং করা হয়। তারা রিফাত শরীফকে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছক করে এবং হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণের জন্য ২৬ জুন সকাল ৯টায় বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সবাইকে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ প্রদান করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ জুন সকালে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

এদিকে রিফাত হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া মিন্নির সেই স্বীকারোক্তিতে বলেছেন, আমি বরগুনা সরকারি কলেজে ডিগ্রী প্রথম বর্ষে পড়া-শুনা করি। ২০১৮ সালে বরগুনা আইডিয়াল কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করি। আইডিয়াল কলেজে পড়াশোনা করাকালীন ২০১৭ সালে আমার প্রেমের সম্পর্ক হয়। ওই সময় রিফাত শরীফ বামনা ডিগ্রী কলেজের ছাত্র ছিল। রিফাত শরীফ আমাকে তার কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে পরিচয় করে দেয় তার মধ্যে নয়ন বন্ড একজন। কলেজে যাওয়া আসার পথে নয়ন বন্ড আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে জ্বালাতন করতো। আমি তার প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় সে আমার বাবা ও ছোট ভাইকে ক্ষতি করার ভয় দেখাতো। বিষয়টি আমি রিফাত শরীফকে জানাইনি।

আমি রিফাত শরীফকে ভালোবাসতাম। কিন্তু রিফাত শরীফ অন্য মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক করার কিছু বিষয় আমি লক্ষ্য করি এবং এ কারণে রিফাতের সঙ্গে আমার সম্পর্কের কিছুটা অবনতি ঘটে এবং আমি ধীরে ধীরে নয়ন বন্ডের দিকে ঝুঁকে আমার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

আমি নয়নের মোবাইল নম্বরে আমার মায়ের মোবাইল নম্বর এবং নয়নের দেয়া নম্বর শেষে ৬১১৩ ও একটি নম্বর শেষে ৪৫ দিয়ে নয়নকে কল, ম্যাসেজ এবং ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কল দিতাম। বরগুনা সরকারি কলেজে পড়াকালীন ধীরে ধীরে রিফাত ফরাজী, রিফাত হাওলাদার ও রাব্বি আকনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। রিফাত ফরাজী ও নয়ন বন্ডের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। প্রেমের সম্পর্কের কারণে নয়ন বন্ডের বাসায় আমার যাতায়াত ছিল। নয়নের বাসায় দুজনের শারীরিক সম্পর্কের কিছু ছবি ও ভিডিও নয়ন গোপনে ধারণ করে। যা আমি প্রথমে জানতাম না।

নয়নের বাসায় আমি প্রায়ই যেতাম এবং আমাদের শারীরিক সম্পর্ক চলতে থাকে। এরপর গত ১৫/১০/১৮ আমি রোজী অ্যান্টির বাসায় যাওয়ার পথে বিকেল বেলা ব্যাংক কলোনি থেকে নয়ন বন্ড রিকশাযোগে আমাকে তার বাসায় নিয়ে যায়।

নয়নের বাসায় গিয়ে আমি শাওন, রাজু, রিফাত ফরাজী এবং আরও ৭/৮ জনকে দেখি। শাওন বাইরে গিয়ে কাজী ডেকে আনে এবং নয়নের বাসায় আমার ও নয়নের বিয়ে হয়। তারপর আমি বাসায় চলে যাই। বাসায় গিয়ে নয়নকে ফোন করে বিয়ের বিষয়টি গোপন রাখতে বলি। তখন নয়ন বলে- ওইটা বালামে ওঠে নাই। বালামে না ওঠলে বিয়ে হয় না।

এরপরও আমি নয়নের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক বজায় রাখি। নয়নের সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি আমার পরিবারের কেউ জানে না। ২০১৯ সালের শুরুর দিকে কলেজ থেকে পিকনিকে কুয়াকাটা যাওয়ার বাস আমি মিস করি। তখন নয়নের মোটরসাইকেলে আমি কুয়াকাটা যাই এবং নয়নের সঙ্গে একটি হোটেলে রাত্রিযাপন করি।

এবিষয়ে মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, অভিযোগপত্র প্রকাশে এত বিলম্ব অন্য কোনো মামলায় তিনি দেখেননি। বিলম্বের কারণ তার বোধগম্য নয়। মিন্নির বিরুদ্ধে কী অভিযোগ দেওয়া হয়েছে তিনি তা এখনও জানেন না।

 


আরো সংবাদ



premium cement