১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঘুষের অডিও নিয়ে তোলপাড় : কী বললেন দুদক পরিচালক ও ডিআইজি মিজান

দুদক পরিচালক ও ডিআইজি মিজান - সংগৃহীত

পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার অভিযোগকে সম্পূর্ণ বানোয়াট বলে দাবি করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির। অন্য দিকে ঘুষের অভিযোগকারী ডিআইজি মিজানুর রহমান দাবি করে বলেছেন, আমার কাছে সব রেকর্ড আছে। ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়া পুলিশ ও দুদকের এই দুই কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের কাছে এমন দাবি করেছেন। 

বরখাস্ত হওয়া দুদকের পরিচালক এনামুল বাছির গতকাল দুদক কার্যালয়ে তার কক্ষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সাংবাদিকেরা ডিআইজি মিজানের কাছ থেকে ঘুষ নেয়া ও অডিও সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট একটি অভিযোগ। আপনারা সব এক্সপার্ট নিয়ে এটি প্রমাণ করুন। ডিআইজি মিজানুর রহমানের সাথে কথোপকথনের অডিও সম্পর্কে জানতে চাইলে এনামুল বাছির বলেন, সব বানোয়াট। তাকে অভিযোগ প্রমাণ করতে বলেন। ঘুষ নেয়ার অভিযোগ যে মিথ্যা, তার কোনো প্রমাণ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিথ্যা জিনিসের প্রমাণ কী?

পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত ডিআইজি মিজানুর রহমানের কাছ থেকে দুই দফায় ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ ওঠে দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তথ্য ফাঁসের অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে দুদক। একই সাথে তিনি ঘুষের টাকা নিয়েছেন কিনা, নিলে সেই টাকা কোথায় আছে, এ বিষয়ে আলাদা তদন্ত হবে বলে জানিয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। 

আমার কাছে সব রেকর্ড আছে : ডিআইজি মিজান
দুর্নীতি দমন কমিশনের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির ঘুষ নেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ বানোয়াট বলে দাবি করলেও ডিআইজি মিজানুর রহমান দাবি করেছেন, তার কাছে সব রেকর্ড আছে। কমিশন থেকে ডাকা হলে তিনি তা উপস্থাপন করবেন। গতকাল বেইলি রোডের বাসায় সাংবাদিকদের এ কথা জানান ডিআইজি মিজানুর রহমান। 
তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন কমিটি করে অডিওটির সত্যতা যাচাই করুক, সংশ্লিষ্ট কমিশনে পাঠাক। এই ভোকালটা ওনার (এনামুল বাছিরের) কিনা দেখুক। তাহলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। অডিও ফাঁসের বিষয়ে তিনি বলেন, নিজেকে সেভ করার জন্য এটা করেছি। আমার কাছে সব রেকর্ড আছে। আমাকে যখন ডাকবে তখন সব দেখাব।
কেন ঘুষ দিয়েছেন সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে মিজানুর রহমান বলেন, সে বিভিন্নভাবে আমাকে প্রেশার ক্রিয়েট করে। বারবার দেখা করতে চায়। আমি দেখা করলাম। যখন দেখলাম যে এই লোকটা নিজেই দুর্নীতিবাজ, তখন সেটা তো প্রমাণ করতে হবে। আমি এই বিষয়টাই প্রমাণ করেছি। আমি ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়েছি। আমার স্বজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি তার সব তথ্য আছে। আমি যথাসময়ে অনুসন্ধান কমিটিকে প্রমাণ দেবো।

দুদকের উদ্দেশে ডিআইজি মিজান বলেন, আমি কমিশনের কাছে অন্যায় কিছু চাচ্ছি না। আইন অনুযায়ী ন্যায়বিচার চাচ্ছি। ওনারা যদি সেটা দিতে ব্যর্থ হন, তাহলে আমাকে আইনি আশ্রয় নিতে হবে। আমি আশা করব তদন্ত কর্মকর্তা কোনো রাগ-অনুরাগের বশবর্তী হয়ে নয়, স্বাধীন নিরপেক্ষ কমিশনের একজন সদস্য হিসেবে আমার ওপর জাস্টিস অ্যাপ্লাই করবেন।
ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছিলেন দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির। অনুসন্ধানকালে তিনি কয়েক দফায় ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন মিজানুর রহমান। তিনি একটি অডিও ফাঁস করেন। যেখানে ডিআইজি মিজান ও এনামুল বাছিরের কথোপকথন রয়েছে। এ অভিযোগের পর কমিশন থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশে এনামুল বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। 

প্রসঙ্গত, ডিআইজি মিজানুর রহমান ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত জানুয়ারির শুরুর দিকে তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়। বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে দ্বিতীয় স্ত্রী মরিয়ম আক্তারকে গ্রেফতার করানোর অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। তখন তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। মিজানুরের বিরুদ্ধে এক সংবাদ পাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরি রয়েছে। 

এরপর তার বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের তথ্য প্রকাশ হলে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত বছরের ৩ মে অবৈধ সম্পদসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে ডিআইজি মিজানকে দুদক কার্যালয়ে প্রায় সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে মিজানুর রহমান ও তার প্রথম স্ত্রী সোহেলিয়া আনারের আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ কোটি টাকারও বেশি সম্পদের খোঁজ পায় দুদক। মিজানুরের নামে ৪৬ লাখ ৩২ হাজার ১৯১ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৭২ লাখ ৯০ হাজার ৯৫২ টাকার অসঙ্গতিপূর্ণ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের খোঁজ পায় দুদক। তদন্ত শুরু হওয়ার এক বছরের মাথায় দুদক পরিচালকের বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ার এই অভিযোগ ওঠে। 

ডিআইজি মিজানের অভিযোগ, তার বিরুদ্ধে তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের সাথে তার চুক্তি ছিল টাকার বিনিময়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাবেন। তবে টাকা নিয়েও শেষ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন জমা দেন বাছির। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে অবৈধ লেনদেনের এই ঘটনা ফাঁস করেন ডিআইজি মিজানুর রহমান। তার অভিযোগ আমলে নিয়ে এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে বিষয়টি তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে দুর্নীতি দমন কমিশন।


আরো সংবাদ



premium cement