২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

নুসরাত হত্যায় যেভা‌বে কি‌লিং মিশ‌ন চালা‌নো হয়

- ফাইল ছবি

ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যার সাথে জড়িত ১৬ জ‌নের কি‌লিং মিশ‌নের বর্ণনা দি‌য়ে‌ছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জানান, গত এপ্রিলের ১ তারিখে আসামী শাহাদাত হোসেন শামীম, নুরু উদ্দিন, ইমরান, হাফেজ আব্দুল কাদের ও রানা আসামী সিরাজউদ্দৌলার সাথে জেলখানায় দেখা করে। সেখানে সিরাজউদ্দৌলা তার মুক্তির বিষয়ে জোর প্রচেষ্টা চালাতে ও মামলা তুলে নিতে নুসরাতের পরিবারকে চাপ দিতে নির্দেশনা দেয়। হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের পরও মামলা তুলে না নিলে আসামীরা নুসরাতের উপর ক্ষুব্ধ হয়।

এছাড়া আসামী শাহাদাত হোসেন শামীম নুসরাতকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ক্ষুব্ধ ছিল। তাতে শাহাদাত হোসেন শামীম, কাউন্সিলর মাকসুদ ও রুহুল আমিনের সাথে আলোচনা করে নুসরাত জাহান রাফিকে ভয়ভীতি দেখানো ও প্রয়োজনে যে কোন কিছু করার পরিকল্পনা করে। কাউন্সিলর মাকসুদ এ কাজে শাহাদাত হোসেনকে ১০ হাজার টাকা প্রদান করে।

টাকা দিয়ে শাহাদাত হোসেন শামীম পরিকল্পনা মোতাবেক তার দূর সম্পর্কের ভাগ্নি কামরুন্নাহার মনিকে দিয়ে দুইটি বোরখা ও ৪ জোড়া হাতমোজা কেনায়।

বনজ কুমার জানান, পরবর্তীতে এপ্রিলের ৩ তারিখে আসামী শাহাদাত হোসেন শামীম, নুরুদ্দিন, হাফেজ আব্দুল কাদেরসহ কয়েকজনকে নিয়ে জেলখানায় অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার সাথে দেখা করে। সেখানে সিরাজউদ্দৌলা তাদের নুসরাতকে ভয়ভীতি দেখানো ও প্রয়োজনে পুড়িয়ে হত্যার নির্দেশ প্রদান করে এবং হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন।

এপ্রিলের ৪ তারিখে পরিকল্পনা মোতাবেক বিকাল আনুমানিক ১৫:০০ ঘটিকায় মাদ্রাসার পাশের টিনশেড কক্ষে আসামী শাহাদাত হোসেন শামীম, নুরুউদ্দিন, জোবায়ের, জাবেদ, পপি ও কামরুন্নাহারসহ আরো কয়েকজন মিটিং করে এবং নুসরাতকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এপ্রিলের ৪ তারিখে রাত ২১:৩০ ঘটিকার সময় পুনরায় মাদ্রাসার ছাত্র হোস্টেলে নুসরাত হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ৫ এপ্রিল বিকাল ৫টায় ভূইয়া বাজার থেকে আসামী শাহাদাত হোসেন শামীম ১ লিটার কেরোসিন তেল কিনে নিজের কাছে রেখে দেয়। আর ৬ তারিখ সকাল ৭টা বা সাড়ে ৭টার দিকে আসামী শাহাদাত হোসেন শামীম, নুরুদ্দিন, হাফেজ আব্দুল কাদের মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে আসে এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী ৮টা হতে ৯.২০টার মধ্যে আসামীরা যার যার অবস্থানে চলে যায়।

আসামী শাহাদাত হোসেন শামীম পলিথিনে করে নিয়ে আসা কেরোসিন তেল ও অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে থেকে একটি কাঁচের গ্লাস নিয়ে ছাদের বাথরুমের পাশে রেখে দেয়। কামরুন্নাহার মনির কেনা দুইটি ও বাড়ি থেকে নিয়ে আসা একটি মোট ৩টি বোরকা ও ৪ জোড়া হাত মোজা নিয়ে সাইক্লোন সেন্টারের তৃতীয় তলায় রাখে।

শাহাদাত হোসেন শামীম, জাবেদ ও জোবায়ের সাড়ে ৯টার দিকে বোরখা ও হাত মোজা পরিধান করে তৃতীয় তলায় অবস্থান করে। নুসরাত পরীক্ষা দিতে আসলে পরিকল্পনা অনুযায়ী পূর্বে অবস্থান করা উম্মে সুলতানা পপি নুসরাতকে তার বান্ধবীকে মারধরের কথা বলে। নুসরাত দৌঁড়ে ছাদে যেতে থাকে।

নুসরাত ২য় তলায় পৌছালে উম্মে সুলতানা পপি নুসরাতকে হুজুরের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে বলে ও ভয় দেখায়, নুসরাত মামলা তুলবে না বলতে বলতে পপির সাথে ছাদে উঠলে আসামী কামরুননাহার মনি, শাহাদাত হোসেন শামীম, জোবায়ের ও জাবেদ নুসরাতের পিছনে ছাদে যায়। ছাদে তারা নুসরাতকে মামলা তুলে নিতে হুমকী প্রদান করে কয়েকটি কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলে।

নুসরাত স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানালে আসামীরা ক্ষিপ্ত হয়। শাহাদাত হোসেন শামীম বাম হাত দিয়ে নুসরাতের মুখ চেপে ধরে এবং ডান হাত দিয়ে নুসরাতের হাত পিছন দিকে নিয়ে আসে। উম্মে সুলতানা পপি নুসরাতের গায়ের ওড়না খুলে জোবায়েরকে দিলে জোবায়ের ওড়না দুভাগ করে ফেলে। ওড়নার এক অংশ দিয়ে পপি ও মনি নুসরাতের হাত পিছনে বেঁধে ফেলে, অন্য অংশ দিয়ে আসামী জোবায়ের নুসরাতের পা পেচিয়ে ফেলে। আসামী জাবেদ পায়ে গিট দেয়। সকলে মিলে নুসরাতকে ছাদের ফ্লোরে ফেলে দিলে শাহাদাত নুসরাতের মুখ ও গলা চেপে রাখে।

কামরুন নাহার মনি নুসরাতের বুকের উপর চাপ দিয়ে ধরে এবং উম্মে সুলতানা পপি ও জোবায়ের পা চেপে ধরে। জাবেদ পাশের বাথরুমে লুকানো কেরোসিনের পলিথিন থেকে কাচের গ্লাসে কেরোসিন নিয়ে নুসরাতের পুরো গায়ে ঢেলে দেয়। শাহাদাতের ইশারায় জোবায়ের ম্যাচ দিয়ে নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন ধরিয়ে প্রথমে জোবায়ের ছাদ থেকে নামে, এরপর উম্মে সুলতানা পপি ছাদ থেকে নেমে যেতে থাকে।

ঐ সময় পূর্বের শিখানো মতে কামরুন নাহার মনি উম্মে সুলতানা পপিকে ‘কাম কাম চম্পা/শম্পা’ বলে ডেকে নিচে নেমে যায়। কামরুন নাহার মনি ও উম্মে সুলতানা পপি নিচে নেমে পরীক্ষার হলে ঢুকে যায়। আসামী জাবেদ ও শাহাদাত হোসেন শামীম সাইক্লোন সেন্টারের ৩য় তলায় গিয়ে বোরখা খুলে ফেলে। জাবেদ শাহাদাতকে তার বোরখা দিয়ে দ্রুত নেমে পরীক্ষার হলে ঢুকে। শাহাদাত হোসেন শামীম নেমে মাদ্রাসার বাথরুমের পাশ দিয়ে চলে যায় ও মাদ্রাসার পুকুরে বোরখা ফেলে দেয়।

আসামী জোবায়ের সাইক্লোন সেন্টার থেকে নেমে মাদ্রাসার মূল গেট দিয়ে বের হয়ে যায় এবং বোরখা ও হাত মোজা সোনাগাজী কলেজের ডাঙ্গি খালে ফেলে দেয়। আসামী নুরু উদ্দীন সাইক্লোন সেন্টারের নিচে থেকে পুরো ঘটনার তদারকীর দায়িত্ব পালন করে।

এছাড়া আসামী মহিউদ্দীন শাকিল ও মোহাম্মদ শামীম সাইক্লোন সেন্টারের দুই সিঁড়ির সামনে পাহারারত থাকে। মাদ্রাসার মূল গেইটের পাশে ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন মামুন, আব্দুর রহিম শরীফ ও হাফেজ আব্দুল কাদের পাহারারত থাকে।

হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার পর আসামীরা নিরাপদ স্থানে সরে গিয়ে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে বিভিন্নভাবে প্রচারনা চালায়। নুসরাত জাহান রাফি অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় নিচে নেমে আসতে থাকলে কর্তব্যরত পুলিশ কনস্টেবল ও নাইটগার্ড আগুন নিভায়। ঐ সময় আসামী নুর উদ্দীনও নুসরাতের গায়ে পানি দেয় এবং আসামী হাফেজ আব্দুল কাদের নুসরাতের ভাই নোমানকে ফোনে সংবাদ দেয়।

পরবর্তীতে নুসরাতকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়। নুসরাত জাহান রাফি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুকালীন জবানবন্দী প্রদান করে। উক্ত জবানবন্দীতে তাকে অগ্নিদগ্ধ করার ঘটনাটি একইভাবে বর্ণিত হয়েছে। নুসরাত হত্যা মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে।

তদন্তে ১৬ জন আসামীর বিরুদ্ধে নুসরাত জাহান রাফিকে অগ্নিদগ্ধ করে হত্যা করা এবং হত্যার পরিকল্পনায় অংশগ্রহন ও হত্যাকাণ্ডে সহযোগীতা করার অপরাধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর (সংশোধিত-২০০৩) এর ৪(১) ও ৪(১)/৩০ ধারায় অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে। একই সাথে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করে পিবিআই।

তদন্তে প্রমাণিত অভিযুক্ত আসামীরা হলেন:
১. এসএম সিরাজউদ্দৌলা (৫৭), পিতা-মৃত কলিম উল্ল্যাহ, মাতা-মৃত হালিমা খাতুন, রকৃষ্ণজয় (কলিম উল্ল্যাহ সওদাগার বাড়ী), ২. নুর উদ্দিন(২০), পিতা- মোঃ আহসান উল্যাহ, সাং- উত্তর চরচান্দিয়া, ৩. শাহাদাত হোসেন শামীম(২০), পিতা-মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, সাং-চরচান্দিয়া (নবাব আলী টেন্ডল বাড়ী, ভূইয়া বাজার), ৪. মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ আল কাউন্সিলর(৫০), পিতা-মৃত আহসান উল্ল্যাহ, সাং- চরগণেশ (পান্ডব বাড়ী), ০৪ নং ওয়ার্ড, ৫. সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের(২১), পিতা-আবুল বাশার, পূর্ব তুলাতলী (খায়েজ আহাম্মদ মোল্লা বাড়ী) ০৭ নং ওয়ার্ড।

৬. জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ(১৯), পিতা-রহমত উল্ল্যাহ, সাং-উত্তর চরচান্দিয়া (সৈয়দ সালেহ আহাম্মদের বাড়ী), ৭. হাফেজ আব্দুল কাদের(২৫), পিতা- আবুল কাশেম, সাং-সফরপুর (খান বাড়ী), ৮. আবছার উদ্দিন(৩৩), পিতা- মৃত ইবাদুল হক, সাং- উত্তর চারচান্দিয়া (সওদাগর বাড়ী), ৯. কামরুন নাহার মনি(১৯), পিতা-মৃত আব্দুল আজিজ (পালক পিতা), সাং-চরগণেশ (আজিজ বিডি আর এর বাড়ী) হোল্ডিং নং- ২৫০, ০৪ নং ওয়ার্ড, সোনাগাজী পৌরসভা।

১০. উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা(১৯), পিতা- শহিদুল ইসলাম, সাং- লক্ষীপুর (উকিল বাড়ীর দরজা সফর আলী সর্দার বাড়ী), ১১. আব্দুর রহিম শরীফ(২০), পিতা-আব্দুল শুক্কুর, সাং-পূর্ব চরচান্দিয়া(সোজা মিয়া চৌকিদার বাড়ী), ১২. ইফতেখার উদ্দিন রানা(২২), পিতা- জামাল উদ্দিন জামাল, সাং-চরগণেশ (হাজী ইমান আলীর বাড়ী, মালশা বাড়ী), ০৪ নং ওয়ার্ড, সোনাগাজী পৌরসভা।

১৩. ইমরান হোসেন ওরফে মামুন(২২), পিতা- এনামুল হক ওরফে মফিজুল হক, সাং-চরগণেশ (এনামুল হকের নতুন বাড়ী), ০৯ নং ওয়ার্ড, সোনাগাজী পৌরসভা, ১৪. মোহাম্মদ শামীম (২০), পিতা- সফি উল্ল্যাহ, সাং- তুলাতলী (আলী জমাদ্দার বাড়ী), ০৫ নং ওয়াড, ১৫. আসামী রুহুল আমিন(৫৫), পিতা-কোরবান আলী , সাং- চরচান্দিয়া (কোরবান আলী বাড়ী), ওয়ার্ড নং- ০৬, পোঃ ভূইয়া বাজার। ১৬. মহিউদ্দিন শাকিল (২০), পিতা- মোঃ রুহুল আমিন, মাতা- আনোয়ারা বেগম, সাং- উত্তর চরচান্দিয়া (রুহুল আমিনের নতুন বাড়ী, বোর্ড অফিস সংলগ্ন), ০৫ নং ওয়ার্ড, ০৬ নং চরচান্দিয়া ইউপি, সর্বথানা সোনাগাজী, সর্বজেলা- ফেনী।

তিনি জানান, ১৬ জন আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর নিকট তদন্তাধীন ফেনীর সোনাগাজী থানার মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। তদন্তে এজাহারনামীয় ৮ জনসহ এজাহার বহির্ভূত আরও ৮ জন অর্থাৎ মোট ১৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

এর আগে মার্চের ২৭ তারিখে নুসরাত জাহান রাফির অভিযোগের ভিত্তিতে তার মা বাদী হয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে সোনাগাজী মডেল থানায় একটি শ্লীলতাহানির মামলা দায়ের করা নিয়ে বিরোধের জের ধরে গত ৬ এপ্রিলে সকালে নুসরাত জাহান রাফিকে পরীক্ষা কেন্দ্রে কতিপয় দুষ্কৃতিকারী মিথ্যা তথ্য দিয়ে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে যায় এবং তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।

নুসরাত জাহান রাফি অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ছাদের সিড়ি দিয়ে নেমে আসলে পরীক্ষা কেন্দ্রে ডিউটিরত পুলিশ সদস্য ও গার্ড তার আগুন নিভায়। গুরুতর আশংকাজনক অবস্থায় নুসরাতকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করানো হয় এবং ১০ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নুসরাতকে অগ্নিদগ্ধ করার ঘটনাটি ঘটার পরপরই পিবিআই মামলার ছায়া তদন্ত শুরু করে।

পরবর্তীতে গত এপ্রিলের ১০ তারিখে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশক্রমে পিবিআই মামলাটির তদন্তভার গ্রহন করে। মামলার তদন্তভার গ্রহনের পর নিয়োজিত গুপ্তচর ও আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে পিবিআই প্রধান, ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার, তত্ত্বাবধান ও দিক-নির্দেশনায় পিবিআই এর বিভিন্ন ইউনিট আসামীদের গ্রেফতার করে।

মামলার এজাহারনামীয় আসামী কাউন্সিলর মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ আলমকে এপ্রিলের ১১ তারিখে গ্রেফতার করা হয়। পরেরদিন ১২ এপ্রিলে এজাহারনামীয় ০২ জন আসামী নুরু উদ্দিন ও জাবেদ হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। আর ১৩ তারিখে এজাহারনামীয় আসামী শাহাদাত হোসেন শামীমকে গ্রেফতার করা হয়।

পরবর্তীতে এজাহারনামীয় বাকী আসামী হাফেজ আব্দুল কাদেরসহ আসামীদের প্রদত্ত স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি অনুযায়ী আরো ০৭ (সাত) জনকে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদের মধ্যে ১২ (বারো) জন আসামী ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। এছাড়াও ০৭ (সাত) জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

এছাড়া গ্রেফতারকৃত আসামীদের বক্তব্য ও দেখানো মতে, মামলার বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত আলামাতসমূহের মধ্যে অন্যতম হল- কেরোসিন তেল বহনের কাজে ব্যবহৃত পলিথিন। একটি কাচের গ্লাস যা রাফির গায়ে অগ্নিদগ্ধ করার সময় তেল ঢালতে ব্যবহৃত হয়। দেয়াশলাইয়ের কাঠি। নুসরাত জাহান রাফির হাতে লেখা সম্বলিত খাতা যাতে অধ্যক্ষ কর্তৃক তাকে উত্ত্যক্ত করার বিষয় উল্লেখ রয়েছে। ৩টি কালো রঙের বোরকা।

একটি বোরকা আসামী জোবায়েরের দেখানো মতে ডাঙ্গি খাল হতে উদ্ধার করা হয়। আরেকটি বোরকা আসামী শামীমের দেখানো মতে মাদ্রাসার পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়। অন্যটি আসামী উম্মে সুলতানা পপির দেখানো মতে তার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়।

আসামী শাহাদাত হোসেন শামীম এর স্বীকারোক্তি মোতাবেক তার ব্যবহৃত একটি মোবাইল সেট যাতে তার সাথে অপর আসামী রুহুল আমিন এর সাথে ঘটনার বিষয়ে কথপোকথনের রেকর্ড রয়েছে।

সার্বিক তদন্তে মামলার ঘটনার বিষয়ে জানা যায় যে, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে নুসরাত জাহান রাফির করা অভিযোগ ও মামলায় সিরাজউদ্দৌলা গ্রেফতার হলে তার অনুগত লোক ক্ষিপ্ত হয়।

অন্যদিকে থানায় নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়াসহ সোনাগাজী মডেল থানার ওসি (প্রত্যাহার হওয়া) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে করা সব ধরনের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পিবিআই। ব্যরিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন কর্তৃক গত ১৫ এপ্রিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলার তদন্ত শেষে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছেন পিবিআই সদর দফতরের সিনিয়র এএসপি রিমা সুলতানা।

তিনি বলেন, তদন্ত শেষে গত রোববার সাইবার আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। এরপর সোমবার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।


আরো সংবাদ



premium cement