১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বর্তমান সরকারের ১০০দিন ‘ উদ্যমহীন, উৎসাহহীন ও উচ্ছ্বাসহীন : সিপিডি

বর্তমান সরকারের ১০০দিন ‘ উদ্যমহীন, উৎসাহহীন ও উচ্ছ্বাসহীন : সিপিডি - সংগৃহীত

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম ১০০দিনকে ‘উদ্যমহীন, উৎসাহহীন ও উচ্ছ্বাসহীন’ বলে মূল্যায়ন করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ(সিপিডি)।

সিপিডি বলেছে, ‘শাসক দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে-কোনো রকম দুর্নীতি আমরা সহ্য করবো না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্রের ভেতরে, অন্যান্য সামাজিক সেবার ক্ষেত্রে সেই দুর্নীতি প্রকটভাবে রয়েছে। খেলাপি ঋণ কমানোর কথা বলে, সরকার নতুন নতুন সাকুলার দিয়ে ঋণ খেলাপিদের সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। জিডিপি’র যে প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

‘বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বাধীন পর্যালোচনা: বর্তমান সরকারের প্রথম একশো দিন’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি’র পক্ষ থেকে এ কথাগুলো বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্য’র মধ্যে সংস্থাটির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্রাচার্য, প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ড.ফাহমিদা খাতুন, অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড.খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সংবাদ সম্মেলনে দেবপ্রিয় বলেন, শাসক দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে-কোনো রকম দুর্নীতি আমরা সহ্য করবো না। কিন্তু আমরা দেখছি রাষ্ট্রযন্ত্রের ভেতরে, অন্যান্য সামাজিক সেবার ক্ষেত্রে সেই দুর্নীতি প্রকটভাবে রয়েছে।

আমাদের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি পরিবর্তনের, দিন বদলের। আর ওই বদলকে আটকে রাখছে এমন একটি গোষ্ঠী যারা এই দুর্নীতি থেকে সুবিধা ভোগ করছে। সুবিধাভোগী সম্প্রদায় যেটা রাষ্ট্রযন্ত্রের সঙ্গে আছে, সেটা রাজনৈতিক পরিবর্তনের শক্তিকে সামনে আসতে দিচ্ছে না। এটাকে যদি সমাধান করা না যায়- তাহলে আওয়ামী লীগের সুচিন্তিত, সুলিখিত ও সুগঠিত ইশতেহার কাল্পনিক দলিল হিসেবেই ইতিহাসে স্থান পাবে।

বিশিষ্ট্য এই অর্থনীতিবীদ আরও বলেন, সরকারের বিগত ১০০ দিন আমরা একটি উৎসাহহীন, উদ্যোগহীন, উচ্ছ্বাসহীন এবং একই সঙ্গে উদ্যমহীন দেখেছি। অথচ আমরা আশা করে ছিলাম এটি একটি বড় ধরনের ১০০ দিনের উত্থানের ওপর প্রতিফলিত হবে। এটা আমরা লক্ষ্য করিনি। আমরা যেটা লক্ষ্য করেছি গতানুগতিক ধারাবাহিকতা, নতুনভাবে সে রকম কিছু আমরা লক্ষ্য করিনি।

বরং যে ধরনের উদ্যোগ আমরা দেখেছি, সে ধরনের উদ্যোগ মিশ্র ইঙ্গিত দিচ্ছে। মিশ্র ইঙ্গিত কী দিচ্ছে? আমরা লক্ষ্য করেছি বিভিন্ন কর ছাড় দেয়া হচ্ছে। আমরা দেখেছি সুদের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এগুলোর ফলে বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত হবে-এটা আমরা মনে করি না। মনে হয় যেন কোথাও সরকারকে একটি প্রথিত গোষ্ঠী করায়াত্তÍ করে নীতিনির্ধারণ করছে।

জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে সংশয়

জিডিপি প্রবৃদ্ধি গণনার পদ্ধতির সমালোচনা করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আমরা সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে দেখছি প্রবৃদ্ধি-নির্ভর অর্থনৈতিক আলোচনা। এখানে কেমন একটা প্রবৃদ্ধি আচ্ছন্নতা বা আকৃষ্টতা দেখতে পাচ্ছি। অথচ অর্থনৈতিক তত্ত্বের সাম্প্রতিককালের চিন্তা দেখলে দেখা যাবে, সকলেই বলবে প্রবৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু যথেষ্ট না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাব করা আট দশমিক ১৩ শতাংশ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিকে ঈর্ষণীয় বলছে সিপিডি। তবে সিপিডি এই প্রবৃদ্ধির হিসাব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। সিপিডির মতে, এই হিসাব বাস্তবসম্মত নয়। অর্থনীতির সূচকগুলোর সঙ্গে এর মিল নেই। জিডিপির হিসাব আরও গভীরে গিয়ে করা উচিত। তা না হলে নীতিনির্ধারণে সমস্যা হবে।

সিপিডি কিছু অসংগতি তুলে ধরে জিডিপির হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে । সিপিডি বলেছে, উৎপাদন খাত নির্ভর এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে বলা হচ্ছে। বিবিএসের হিসাব মতে, চামড়া খাতে প্রথম প্রান্তিকে সাড়ে ৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

অথচ রফতানিতে নেতিবাচক প্রবণতা রয়েছে। রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি মাত্র ৬ শতাংশ। কিন্তু চলতি মূল্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে ১২ দশমিক ৭ শতাংশ। আবার গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহে প্রবৃদ্ধি সাড়ে ১২ শতাংশ। কিন্তু গতবার একই সময়ে এই খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে ১৮ শতাংশ। সিপিডির মতে, বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী এই প্রবৃদ্ধি অর্জনের মানে হলো, শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বেড়েছে।

এ বিষয়ে দেবপ্রিয় বলেন, ‘আমরা সাম্প্রতিককালে অর্থনৈতিক যে প্রবৃদ্ধি দেখি তা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উঁচু, প্রশংসনীয় এবং অনেকের কাছে ঈর্ষণীয়। তবে যেটুকু উন্নয়ন হয়েছে তাতে ব্যক্তিখাতের বাড়তি কোনো ভূমিকা আমরা দেখিনি। এই উন্নয়নের জন্য যে ধরনের কর আহরণ দরকার তা আমরা দেখলাম না। ব্যক্তিখাতে যে ধরনের ঋণপ্রবাহ বাড়ার কথা তা আমরা দেখলাম না। পুঁজিপণ্যের আমদানি প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। সেই সঙ্গে ব্যাংকখাতে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে যে ধরনের চাঞ্চল্য থাকে তা-ও দেখলাম না। প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে যে ধরনের চলক থাকে, সে চলকগুলোর প্রতিফলন কিন্তু আমাদের কাছে ধরা পড়ছে না।

তিনি বলেন, জিডিপির গ্রোথ রেটে যে মূল্যসমন্বয়ক ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে মূল্যস্ফীতি ৪ শতাংশের কিছু বেশি ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ আমরা জানি মূল্যস্ফীতি ৫/৬ শতাংশ। ফলে ৫ শতাংশ রেখে কেন ৪ শতাংশ ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে মূল্যস্ফীতি হারের সাথে সমন্বয় কোথায় সমস্য সেটা জানার রয়েছে। এখানেও প্রবৃদ্ধির হার এক শতাংশ কমে যাওয়ার কথা। ফলে যেসব তথ্য উপাত্ত দিয়ে প্রবৃদ্ধি অনুমিত হয়েছে তা সম্পন্নভাবে প্রকাশ করা হোক।

সিপিডি’র বিশেষ এই ফেলো আরও বলেন, ‘যদি আমরা ধরি যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, সেটা সঠিকভাবে অনুমিত হয়েছে। তাহলে বিনিয়োগ যেতেতু বেশি হয়নি, সুতরাং প্রবৃদ্ধিকে ব্যাখ্যা করতে হলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি দেখাতে হবে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে এমন কী প্রযুক্তি বা উদ্ভাবনীর রূপান্তর ঘটল যে শ্রমের উৎপাদন ক্ষমতা এমন বৈপ্লবিক বেড়ে গেল! এটা আমাদের এখন ভালো করে চিন্তা করে দেখতে হবে।

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যে সব দেশে বৈষম্য কম সেসব দেশে প্রবৃদ্ধি হার বাড়ার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু বাংলাদেশে বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির হার কমে যেতে পারে।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাংলাদেশে ঋণ খেলাপি একটি বড় সমস্যা, এই সমস্যার কথা সবাই স্বীকার করছেন, সরকারও স্বীকার করছেন। এটা কমিয়ে আনার জন্য নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। কিন্তু দু:খজনক হলো এটা কমাতে গিয়ে নতুন নতুন সার্কুলার জারি করে ঋণ খেলাপিদের সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এতে করে আমরা পিছনের দিকে চলে যাচ্ছি।

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, পুঁজিবাজারে দৃশ্যমান কোনো সংস্কার ও উন্নতি নেই। নির্বাচনের আগে মুল্যসূচক কিছুটা বাড়লেও পরে ধীরে ধীরে তা আগের অবস্থানে চলে আসে। তিনি বলেন, বাজারে সূচকের যদি ওঠানামা দেখি তাহলে দেখা যায় প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ পয়েন্টের ভিতরে এক ধরনের নিয়ন্ত্রিত ওঠানামা হয়।

পুঁজিবাজারে এভাবে ওঠানামা হওয়ার কথা নয়।তিনি বলেন, বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে বিএসইসির যে ধরনের জোরালো ভূমিকা নেয়ার কথা, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা দেখা যায় না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিএসইসি পদক্ষেপ নেয় বটে, তবে বাজারের কারসাজি বন্ধে দুষ্টচক্র থামানোর যে উদ্যোগ নেয়ার কথা, সেক্ষেত্রে বড় কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না।

শেয়ারবাজারের বর্তমান চিত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, নির্বাচনের পর পরই আমরা বড় ধরনের উল্লস্ফূন দেখলাম। এক মাস পর আবার সূচক আগের অবস্থানে চলে আসলো। এখানে কৃত্রিমভাবে শেয়ারবাজারের উল্লস্ফূন করা হয়েছিল কি না- তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায় এবং বিষয়টি নিয়ে সাম্প্রতিককালে মিডিয়ায় রিপোর্ট এসেছে। যেখানে এক ধরনের নিয়ন্ত্রিত ওঠা-নামানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। শেয়ারবাজারে এ ধরনের ওঠা-নামা হওয়ার কথা না। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ওঠা-নামা হওয়ার কথা।

তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ঋণ খেলাপি। এটা কমছে না। বরং দিনদিন বাড়ছে। খেলাপি ঋণ উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। বরং তাদের আরো সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement
সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবার রহমানের কবর জিয়ারত করলেন জামায়াত আমির আরব আমিরাতে ভারী বৃষ্টিপাত, বন্যায় ওমানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৮ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহসী কণ্ঠস্বর প্রশাসন ও আদালতকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার : গণঅধিকার পরিষদ দুই কুলই হারালেন ইউপি চেয়ারম্যান জাকারিয়া আলম একদিন পর জবিতে উদযাপন হবে নববর্ষ, বন্ধ থাকবে ক্লাস-পরীক্ষা ইসরাইলে হামলার পর ইরানের পরমাণু স্থাপনা ‘সাময়িক’ বন্ধ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাবে! স্ত্রীর বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাবেক স্বামীর মামলা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবেলায় গবেষণা আরো বাড়ানো হবে : কৃষিমন্ত্রী রেকর্ড ৪০.৬ ডিগ্রি তাপমাত্রায় পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা

সকল