২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নুসরাত হত্যাকাণ্ড তদন্তে কতটুকু এগিয়েছে পিবিআই?

- ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের ফেনী জেলার সোনাগাজীতে মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহানের দেহে কেরোসিন ঢেলে তাকে হত্যা করার তদন্তভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।

কিন্তু নিয়মিত তদন্তের বাইরে পিবিআই-এর এই তদন্তের বিশেষত্ব কী? এ বিষয়ে পিবিআই প্রধান পুলিশের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জানান, পিবিআই একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান।

নুসরাত জাহান রাফি ইস্যুতে পুলিশের মেধা এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা ঘটনার মূলে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন। এ ঘটনার জন্য কে বা কারা দায়ী তাদের খুঁজে বের করার জন্য পিবিআইয়ের একটি বিশেষ টিম ইতোমধ্যেই তৎপর হয়েছে বলে তিনি জানান। একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তদন্তের সার্বিক তত্ত্বাবধান করছেন।

পিবিআইপ্রধান বলেন, ফেনীর পিবিআই অফিসের কর্মীরা ছাড়াও আশেপাশের কিছু জেলার চৌকশ কিছু অফিসারকে তদন্তের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য সত্য প্রতিষ্ঠা করা। এই মামলার সাথে জড়িত সবার সাথে আমরা কথা বলেছি। আরো কিছু লোককে আমরা খুঁজছি।

গত শনিবার সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে নুসরাত জাহানকে কৌশলে ছাদে ডেকে নিয়ে গিয়ে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। গুরুতর দগ্ধ নুসরাতকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আনা হলে বুধবার তিনি মারা যান। তার শরীরের ৮০% শতাংশই আগুনে ঝলসে গিয়েছিল এবং তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।

নুসরাতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে সে কিছুদিন আগে তার মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা করেছিল। এরপর ওই অধ্যক্ষের সমর্থকরা নুসরাত জাহানকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে।

পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, এই ঘটনায় যে মামলাগুলো হয়েছে, তারপর বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের প্রত্যেকের বক্তব্য এখন যাচাই করা হচ্ছে।

এই হত্যার তদন্ত কতদিন ধরে চলবে তা না জানালেও পিবিআইপ্রধান বলেন, বিষয়টাকে তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন।

 

আরো পড়ুন : নুসরাতের মা-বাবার কান্নায় ওদের মা-বাবাও কাঁদছে
কামাল উদ্দিন সুমন, নারায়ণগঞ্জ;  ১২ এপ্রিল ২০১৯, ০৬:২৪

অগ্নিদগ্ধ হয়ে পাঁচ দিন অসহ্য যন্ত্রণার পর মারা যাওয়া ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির বাবা-মায়ের কান্না দেখে ওদের বাবা-মাও কাঁদছে। রাফির মতো মেয়ে তাদেরও ছিল। ওরা আজ বেঁচে নেই। ওদের নাম সুমাইয়া, খাদিজা, মাহমুদা, মরজিনা। তবে ওরা অগ্নিদগ্ধ হয়ে নয়, সংসার জীবনের অশান্তি আর নির্যাতনের আগুনে মারা গেছেন। তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে স্বামীর ঘর থেকে। টিভি কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নুসরাতের জন্য যখন তার বাবা-মায়ের আর্তনাদ দেখেছে তখন তাদের বাবা-মাও অকালে প্রাণ হারানো নুসরাতের সমবয়সী সন্তানের জন্য অঝোর ধারায় কাঁদছেন। 

জানা গেছে, হাতে বিয়ের মেহেদী রঙ মুছতে না মুছতেই ২৬ মার্চ রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের ছোট ভগবানগঞ্জের (খোয়ারপট্টি) স্বামীর ঘর থেকে লাশ হয়ে বের হয় গৃহবধূ সুমাইয়া। বিয়ের মাত্র এক মাসের মাথায় দুনিয়া ছেড়ে চলে গেল পরকালে। ২২ ফেব্রুয়ারি রঙিন জীবনের স্বপ্ন নিয়ে বিয়ে হয়েছিল সুমাইয়ার। আমেরিকা প্রবাসী ফায়াদ আহামেদ বাবুর সাথে বিয়ে হয় সুমাইয়ার। বিয়ের পর বিদেশ চলে যায় বাবু।

নারায়ণগঞ্জ শহরের ছোট ভগবানগঞ্জের জামান ডাক্তারের বাড়ির তৃতীয় তলার চিলেকোঠা থেকে ২৬ মার্চ রাত ১টায় গৃহবধূ সুমাইয়ার লাশ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার দারোগা আমিনুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ ঘটনার খবর পেয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলার রামপাল থেকে ছুটে আসেন পরিবারের সদস্যরা। তাদের একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দেয়ার মাত্র এক মাসের মধ্যে লাশ হওয়ার ঘটনায় নিহতের বাবা, মা ভাইয়ের কান্নায় ছোট ভগবানগঞ্জের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।

নিহতের বাবা আবদুর রহিম রাঢ়ী ওরফে সেন্টু জানান, ফায়াদ আহমেদ বাবুর সাথে বিয়ে দিতে নানাভাবে চেষ্টা চালানোর পর গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিয়ে সম্পন্ন হয়। এক মাসের মধ্যেই সে বিদেশে চলে যায়। এর পর থেকেই ফায়াদ আহমেদ বাবুর বাবা ফারুক হোসেন ও মা আজমিরী বেগম, বোন ও বোনজামাই শোলক আহমেদ নানাভাবে নববধূ সুমাইয়া আক্তার ঝরাকে নির্যাতন শুরু করে। শোলক আহমেদ নানাভাবে অত্যাচার চালিয়ে আসছিল বলেও মায়ের কাছে অভিযোগ করেছিল সুমাইয়া।

অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের মৃত্যুর খবরে তাদের মেয়ে সুমাইয়ার কথা মনে পড়ে বাবা আবদুর রহিম রাঢ়ী, মা নাজমা বেগম, একমাত্র ভাই রিংকুসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের। সুমাইয়ার কথা মনে করে তারা চোখের পানিতে বুক ভাসায়। আবদুর রহিম রাঢ়ী জানান, আমার মেয়ের মতোই নুসরাতও আগুনে পুড়ে নির্মমভাবে মারা গেছে পত্রপত্রিকায় টিভিতে ছবি দেখেছি। ওকে দেখে আমার মেয়ের কথা মনে পড়ে। বিয়ের মাত্র এক মাসে আমার মেয়েটা মারা গেল। মানতে পারছি না। 

১২ দিন মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে থাকার পর ১৪ মার্চ সকালে মারা যায় ফতুল্লা কাশিপুর হাটখোলা এলাকার গৃহবধূ খাদিজা আক্তার। স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্মম নির্যাতনের পর মারা যায় খাদিজা। নির্যাতনে খাদিজার গলার হাড় ভেঙে যায়। মুমূর্ষু অবস্থায় খাইয়ে দেয়া হয় হারপিক। খাদিজাকে হত্যার অভিযোগে স্বামী ফরহাদ ও ভাসুর রাব্বীকে ৫ এপ্রিল গ্রেফতার করে পুলিশ। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তার ফতুল্লা থানার এসআই আরিফুর রহমান জানান, খাদিজাকে হত্যার পর থেকে পলাতক ছিল স্বামী ফরহাদ ও ভাসুর রাব্বী। খাদিজার মা নূরজাহান বেগম বলেন, আমার মেয়েকে তারা অনেক কষ্ট দিয়েছে। কত না ছটফট করেছে আমার মা! গলা টিপে গলার হাড় ভেঙে ফেলেছে। তারপরও যখন মরেনি, তখন হারপিক খাইয়ে দেয়। শেষবারের মতো কথাও বলতে পারেনি। নুসরাতের কথা তুলতেই খাদিজার মা বলে উঠেন, ছবি দেখলাম মেয়েটা আমার মেয়ে খাদিজার মতোই। আর কোনো মেয়েকে যেন অকালে মারা যেতে না হয়। 

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার গোগনগর এলাকার একটি ফ্ল্যাট বাসা থেকে মাহমুদা আক্তার নামে এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে অবস্থিত ‘টপটেন’ নামক তৈরী পোশাক বিক্রির চেইন শপের বিক্রয় কর্মকর্তা ছিল সে। স্থানীয়রা জানান, মাহমুদার স্বামী তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে বাসার বাইরে থেকে তালা দিয়ে মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। স্বামী ও সন্তানের খোঁজে মাঠে নেমেছে পুলিশ। নুসরাতের মতোই একই বয়সের মাহমুদা গোগনগর আলামিননগর এলাকার মোহাম্মদ আলী আকবরের তিনতলার ভবনের নিচতলার ফ্ল্যাট বাসায় থাকত। 

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ পৌরসভার টিপুরদী এলাকায় ৭ এপ্রিল সকালে মরজিনা আক্তারের (১৪) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মরজিনা আক্তারের মা আছমা বেগম জানান, উপজেলার টিপুরদী এলাকায় জাহের আলীর বাড়িতে বাসা ভাড়া নিয়ে মেয়েসহ বসবাস করতেন। রোববার সকালে তিনি রান্না করার সময় মরজিনা আক্তার ঘরের দরজা বন্ধ করে ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। মরজিনার মরে যাওয়া মেনে নিতে পারেনি মা আছমা আক্তার। নুসরাতের কথা শুনে আছমা বেগম তার মেয়ের জন্য এ সময় হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন। 

নারী ও শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করেন মানবাধিকার নেত্রী সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি। তিনি নয়া দিগন্তকে জানান, প্রতিটা হত্যার উপযুক্ত বিচার হওয়া উচিত। নুসরাতের নির্মম খুনের সাথে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত বিচার করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তেমনি নারায়ণগঞ্জের সুমাইয়া, খাদিজা, মাহমুদা, মরজিনাদের মৃত্যুর জন্য যারাই দায়ী তাদেরও বিচার হওয়া দরকার। 

বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিল (বামাকা) বন্দর থানা সেক্রেটারি সাব্বির আহমেদ সেন্টু নয়া দিগন্তকে জানান, অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো রাষ্ট্রের দায়িত্ব। নুসরাতের ক্ষেত্রে যেমন তেমনি সুমাইয়া, খাদিজা, মাহমুদা, মরজিনাদের মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, স্বজনদের হাসপাতাল ঘেরাও বঙ্গোপসাগরে ১২ নাবিকসহ কার্গো জাহাজডুবি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি রাজশাহীতে টানা তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা শরীয়তপুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ জামায়াতের এক শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী নয় : শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নজিরবিহীন দুর্নীতির মহারাজার আত্মকথা ফতুল্লায় ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে নির্মাণকাজ বন্ধ, মারধরে আহত ২, মামলা পার্বত্যাঞ্চলে সেনাবাহিনী: সাম্প্রতিক ভাবনা গফরগাঁওয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে টিকটক করতে গিয়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু

সকল