২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বা‌ড়ির প‌থে নুসরা‌তের লাশ

নুসরা‌তের লাশ
ফেনীর বা‌ড়ির প‌থে রওয়ানা হয়েছে নুসরা‌তের লাশবাহী অ্যাম্ব্যুলেন্স - ছবি : নয়া দিগন্ত

ময়নাতদন্ত শেষে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ফেনীর পরীক্ষা কেন্দ্রে দগ্ধ মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির লাশ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে নুসরাতের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) থেকে রওয়ানা হয়।

এর আগে আজ সকাল ৯টায় নুসরাতের লাশ মর্গে নেয়া হয় ময়নাতদন্তের জন্য। তার আগে নুসরাতের সুরতহাল প্রতিবেদন সম্পন্ন করে শাহবাগ থানা পুলিশ।

বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে পাঁচ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যায় নুসরাত।

এদিকে ফেনী থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী ও আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে দাদির কবরের পাশেই দাফন করা হবে।

আজ বৃহস্পতিবার বাদ আসর সোনাগাজী মো: ছাবের সরকারী পাইলট হাই স্কুল মাঠে নুসরাত জাহান রাফির জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। জানাযা শেষে পৌর শহরের ৩নং ওয়ার্ডের ভূঁইয়া বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন নুসরাতের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ উল্লাহ ফরহাদ।

২৭ মার্চ নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে রাফিকে যৌন হয়রানি করেন মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা। এ ঘটনায় তার মা শিরিন আক্তারের দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করতে নানাভাবে চাপ দেয়া হয়। গত ৬ এপ্রিল শনিবার পরীক্ষার হল থেকে তার এক বান্ধবীকে মারা হচ্ছে বলে ছাদে ডেকে নিয়ে যায় আরেক সহপাঠি। পরে তাকে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে প্রেরণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠানোর নির্দেশ দিলেও স্বাস্থ্যের অবনতিতে তা সম্ভব হয়নি।

আলোচিত এ ঘটনায় সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মো: মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনায় রাফির ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় এজাহারভুক্ত তিন আসামিসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে সাতজনকে রিমান্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত।

হাসপাতালে নেয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্সে নুসরাত তার ভাইকে জানায়, তার বান্ধবী নিশাতকে মারধর করা হচ্ছে বলে পরীক্ষার হল থেকে তাকে ডেকে তৎসংলগ্ন সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নেয়া হয়। এ ভবনের দ্বিতীয় তলায় আলিম শ্রেণিকক্ষ ও অধ্যক্ষের কার্যালয়। সেখানে আগ থেকে বোরকা পরা চার ব্যক্তি ওঁৎ পেতে ছিল। তারা তাকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দেয়া অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। নুসরাত এটা করতে অস্বীকার করে। তার ভাষ্য মতে, ‘আমি যা বলেছি সত্য বলেছি। মৃত্যু পর্যন্ত এ অন্যায়ের প্রতিবাদ করে যাব। শিক্ষক হয়ে তিনি কিভাবে গায়ে হাত দিলেন...। এ সময় তিনজন হাত ধরে আরেকজন কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।’ এতে চিৎকার দিয়ে নুসরাত সিঁড়ি বেয়ে নিচের দিকে দৌড় দেয়। হামলাকারীদের একজনের কণ্ঠ তার চেনা বলে সে দাবি করে। তাহলে পরীক্ষার হল থেকে ডেকে নেয়া ওই শিক্ষার্থী এবং ঘটনায় জড়িত চারজন কারা- এ নিয়ে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। পরীক্ষা শুরু হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে সংরক্ষিত পরীক্ষাকেন্দ্রে কিভাবে এমন জঘন্য ঘটনা ঘটল এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে দায়িত্বরত কেউ হামলাকারীদের আসা-যাওয়ার সময় দেখেননি বলে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।

দায়িত্বরত একটি সূত্রের দাবি, ওই ছাত্রী পরীক্ষার হল থেকে নিজেই বেরিয়ে ছাদে যায় এবং কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। চিৎকার শুনে তারা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে। এ সময় ছাদ থেকে কেরোসিন বহনকারী পলিথিন, দিয়াশলাই কাঠি ও আগুনে পোড়া বোরখার টুকরো উদ্ধার করা হলেও হামলাকারীদের কাউকে দেখা যায়নি।

তবে মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নুসরাতকে আগুন লাগিয়েই হামলাকারীরা দক্ষিণ দিকে দ্রুত পালিয়ে যায়। অনেকে দেখলেও প্রাণভয়ে তা গোপন রাখছেন। ওই সূত্র আরো জানায়, ঘটনার দিন সকাল ৮টার দিকে মাদরাসার প্রভাষক মো: আফছার উদ্দিন মোবাইল ফোনে নুসরাতের ভাই আবদুল্লাহ আল নোমানকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দেয়া মামলা সম্পর্কে জানতে চান। মামলাটি সমঝোতা করার জন্য তিনি নোমানকে তাগিদ দেন। এ ছাড়া মাদরাসা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীম অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতের পরিবারকে অব্যাহতভাবে হুমকি-ধমকি দেয় বলে জানায় নোমান।

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানায়, মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা তার প্রভাব ধরে রাখতে একদিকে সরকারদলীয় কিছু নেতার সাথে গভীর সখ্য বজায় রাখেন এবং অন্য দিকে মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশকেও নানা সুবিধা দিয়ে লালন করেন। ২৭ মার্চ নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগে নুসরাতের মায়ের করা মামলায় ওইদিনই গ্রেফতার হন অধ্যক্ষ। ঘটনার পর তার শাস্তি ও মুক্তির দাবিতে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন হয়ে আসছে।

এদিকে এ ঘটনায় গত রোববার থেকে আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত মাদরাসার স্বাভাবিক কার্যক্রম ও অনির্দিষ্টকালের জন্য হোস্টেল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।


আরো সংবাদ



premium cement