২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আইনশৃঙ্খলার হঠাৎ অবনতি

- ফাইল ছবি

একের পর এক খুন ও লাশ উদ্ধারের ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। হঠাৎ করে এই পরিস্থিতির কারণ খুঁজছেন অনেকে। তবে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ ও সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে।

নওগাঁর ধামইরহাট থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রভাষকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গোপালগঞ্জে উদ্ধার হয়েছে এক ইজিবাইক চালকের লাশ। জামালপুরের মেলান্দহে এক কৃষকের লাশ উদ্ধার হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জে হত্যা করা হয়েছে এক কিশোরকে। কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে সাবেক এক ইউপি মেম্বরকে।

এছাড়াও নরসিংদীর বিলাসদি রেলওয়ের জলাশয় থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার হয়েছে। সাভারে অপহরণের চার দিন পরে জতীশ চন্দ্র নামে এক কাঠমিস্ত্রির লাশ উদ্ধার হয়েছে ধামরাই থেকে। বগুড়ার সান্তাহারে উদ্ধার হয়েছে মারুফ নামে এক অটোরিকশা চালকের লাশ। বরিশালে গত ১০ দিনে উদ্ধার হয়েছে ৯টি লাশ।

গোপালগঞ্জে উদ্ধারকৃত অবিনাশ পোদ্দার ১১ দিন আগে নিখোঁজ হন। গতকাল তার লাশ উদ্ধার হয়। সিদ্ধিরগঞ্জে তানজিল নামে ৭ বছরের এক শিশুকে বলৎকারের পর হত্যা করা হয়েছে।

গত বুধবার সকালে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় হাজী আব্দুর রউফ ভূঁইয়া নামে সাবেক এক ইউপি মেম্বরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিবাদ মীমাংসা করতে গিয়ে রউফ ভূঁইয়া নিহত হন। ওই দিন কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বরকামতা কালী মন্দিরের পাশে মাটি চাপা দেয়া অবস্থায় জয়চন্দ্র ঘোষ (১৫) নামে এক স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয়।

কোথাও কোথাও দুর্বৃত্তরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গণমাধ্যমকর্মীরাও তাদের হাতে মার খাচ্ছে। গতকাল বগুড়ায় সন্ত্রাসীদের হাতে আহত হয়েছেন দুই সাংবাদিক। একের পর এক হত্যাকাণ্ড ও লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।

অনেকেই বলেছেন, এটা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আলামত। খুনের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে নারী নির্যাতনও বাড়ছে।

এদিকে, পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানার সাথে কথা বললে গত রাতে তিনি বলেন, পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ ও সন্তোষজনক রয়েছে।

বরিশালে ১০ দিনে ৯ লাশ উদ্ধার
বরিশাল ব্যুরো জানান, গত ১০ দিনে বরিশালের বিভিন্ন এলাকা থেকে তিন যুবক, এক শ্রমিক, তিন শিক্ষার্থী ও দুই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসব লাশের বেশির ভাগেরই মৃত্যুর সঠিক কোনো কারণ জানা যায়নি।

সূত্র মতে, গত ১১ জানুয়ারি ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নিখোঁজের সাত দিন পর যুবক রাসেলের (৩২) লাশ উদ্ধার করা হয় কীর্তনখোলা নদী থেকে। ১০ জানুয়ারি নলছিটিতে নিখোঁজের একদিন পর খালের পাশ থেকে হানিফ খন্দকার (৫৮) নামে এক শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ৭ জানুয়ারি মুলাদীতে নিখোঁজের ১৬ দিন পর গিয়াস উদ্দিন নামে এক যুবকের এবং ৫ জানুয়ারি উজিরপুরের জল্লা ইউনিয়নের পীরেরপাড় এলাকার ধানক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয় ননী বাড়ৈ (২২) নামে আরেক যুবকের লাশ।

একই দিন বরিশালের সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীর চরআইচা খেয়াঘাট থেকে অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে লাশটি নগরীর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী সৈয়দ ফয়সালের (২৩) বলে শনাক্ত করেন তার স্বজনেরা। এ ছাড়া আগৈলঝাড়ায় উদ্ধার হয় এসএসসি পরীক্ষার্থী তাজুলের ঝুলন্ত লাশ।

পরিবারের পক্ষ থেকে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা হিসেবে দাবি করা হয়। ৩ জানুয়ারি আগৈলঝাড়ার রাজিহার ইউনিয়নের আহুতি বাটরা গ্রাম থেকে গৃহবধূ রীতা হালদারের (৩২) লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ উপজেলার সাপলেজা থেকে এলিজা বেগম (৩০) নামে দুই সন্তানের জননীর লাশ উদ্ধার করে গত ২ জানুয়ারি।

সর্বশেষ গত ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় গৌরনদী উপজেলার সুন্দরদী এলাকায় ব্যবসায়ী আক্তারুজ্জামান রিটুর কন্যা এইচএসসি পরীক্ষার্থী আয়শা আক্তারের (১৮) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবারের দাবি আয়শা ওড়না দিয়ে বসতঘরের আড়ার সাথে গলায় ফাঁস দেয়ার পর মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে গৌরনদী হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তবে থানা পুলিশের দাবি, আয়শা আক্তারের লাশটি দেখে আত্মহত্যার কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি। তাই ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।

বিএম কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রেখা সুলতানা বলেন, একের পর এক লাশ উদ্ধারের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রতিটি মৃত্যুর সঠিক কারণ খুঁজে বের করা উচিত। এরপর আগে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ও জনসচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা সম্ভব হলে এমন দুঃখজনক ঘটনার মাত্রা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাইমুর ইসলাম বলেন, লাশগুলো উদ্ধারের পর ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হয়। তা ছাড়া সব ঘটনাই কিন্তু হত্যাকাণ্ড নয়, এর মধ্যে দুর্ঘটনাও হয়ে থাকে।

কলেজ শিক্ষকের ভাসমান লাশ উদ্ধার
ধামইরহাট (নওগাঁ) সংবাদদাতা জানান, নওগাঁর ধামইরহাটে এক কলেজ শিক্ষকের হাত-পা বাঁধা ভাসমান লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত কলেজ শিক্ষকের নাম এম এম জামাল উদ্দিন (৪৭)। তিনি স্থানীয় জগদল আদিবাসী স্কুল ও কলেজের বিএম শাখার বাংলার বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। তিনি উপজেলার সাহাপুর গ্রামের মরহুম কায়েম উদ্দিনের ছেলে।

গতকাল সকালে ধামইরহাট বাজারের পূর্ব পাশে ঘুকসী নদীতে একটি লাশ ভাসতে দেখেন স্থানীয়রা। লাশের হাত, পা ও কোমর রশি দিয়ে বাঁধা ছিল।

নিহতের বড় ভাই আব্দুল ওয়াদুদ জানান, তার ভাই গত শনিবার কলেজে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন। এরপর আর বাড়ি ফিরেননি। তিনি ঋণগ্রস্ত ছিলেন। কিছু দিন আগে একটি চক্র তাকে অপহরণ করেছিল।

ধামইরহাট থানার ওসি জাকিরুল ইসলাম বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

ব্রাহ্মণপাড়ার সাবেক মেম্বারকে পিটিয়ে হত্যা
বুড়িচং (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম চণ্ডিপুর গ্রামে ধান মাড়াই নিয়ে বিরোধে লাঠির আঘাতে সাবেক মেম্বার আবদুর রৌফ ভুইয়া (৮৬) নিহত হয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার সকাল ৯টায় জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার পশ্চিম চণ্ডিপুর গ্রামের আবদুর রৌফ ভুইয়া ধান মাড়াই নিয়ে জাহাঙ্গীর ও হাবিবের মধ্যে বিরোধের মীমাংসা করে যান। তাদের ঝগড়ার একপর্যায়ে হাবিবুর রহমান ভুইয়া(৩০) একটি লাঠি দিয়ে রৌফ ভুইয়ার মাথায় আঘাত করলে রৌফ ভুইয়া ঘটনাস্থলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তার ছেলে বিল্লাল হোসেন তাকে কংশনগর গোমতী হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মৃত্যুর খবর এলাকায় পৌঁছলে উত্তেজিত এলাকাবাসী হাবিবকে আটক করে পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে ব্রাহ্মণপাড়া থানার ওসি এস এ এম শাহজাহান কবির সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে হাবিবকে থানায় নিয়ে আসেন এবং ময়নাতদন্তের জন্য নিহতের লাশ কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণপাড়া থানার ওসি বলেন, ঘাতক হাবিবকে আটক করা হয়েছে। নিহতের ছেলে বিল্লাল হোসেন বাদি হয়ে হাবিব ও তার ছোট বোন শাহিন সুলতানাকে আসামি করে ব্রাহ্মণপাড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

সিদ্ধিরগঞ্জে শ্বাসরোধে শিশু হত্যা
সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, সিদ্ধিরগঞ্জের নয়াআটি রসুলবাগ এলাকায় তানজিল হোসেন (৭) নামে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকেলে নাসিক ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াআটি রসুলবাগ এলাকার আলম খাঁনের ভাড়াবাড়ির তালাবদ্ধ একটি ঘর থেকে তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে থানা পুলিশ।
পুলিশের ধারণা ওই শিশুটিকে বলাৎকার শেষে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে ওই বাড়ির কেয়ারটেকার নাজমুল পলাতক রয়েছে।

পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যা থেকে তানজিল নিখোঁজ ছিল। নিখোঁজের পর থেকে বিভিন্ন স্থানে খোজাখুঁজি করেও তাকে না পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই শিশুর বাবা আনোয়ার মিয়া সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। থানা থেকে আনোয়ার মিয়া বাড়ি ফিরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় নিখোঁজ সন্তানকে আবারো খুঁজতে থাকেন। এ সময় ওই বাড়ির একটি স্টোর রুমে ড্রামের নিচে তানজিলের লাশ দেখতে পেয়ে বাড়ির লোকজন থানা পুলিশকে খবর দেয়।

পরে পুলিশ গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। তানজিল যশোর জেলার কোতোয়ালি থানার সুলতানপুর গ্রামের আনোয়ার মিয়ার ছেলে। আনোয়ার মিয়া পরিবার নিয়ে রসুলবাগ এলাকার আলম খাঁনের বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল-ক) মেহিদী ইমরান সিদ্দিকী জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শিশুটিকে বলাৎকার করার পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।

ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর হত্যার প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় পলাতক একজনকে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাকে গ্রেফতার করতে পারলেই হত্যার আসল রহস্য বের হয়ে আসতে পারে।

চলন্ত বাস থেকে ফেলে শিক্ষার্থী হত্যা
গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে গতকাল এক স্কুলছাত্রকে হত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাসটি আটক করেছে। নিহতের নাম হযরত ওমর (১৪)। সে যশোরের চৌগাছা থানার বিল কুষ্টিয়া এলাকার শিমুল হোসেনের একমাত্র সন্তান। ওমর কালিয়াকৈরের চন্দ্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, পুলিশ ও শিক্ষার্থীরা জানান, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার ভাড়া বাসায় স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানকে নিয়ে বসবাস এবং স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন শিমুল হোসেন। তার ছেলে হযরত ওমর গতকাল দুপুরে ছুটির পর বিদ্যালয় থেকে বাসায় ফেরার পথে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা বাস স্টপেজ হতে ঢাকাগামী একটি বাসে উঠে সে। এক সময় ওমরকে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয় ওই বাসের হেলপার। এতে মাটিতে পড়ে একই বাসের সাথে সজোরে ধাক্কা খেয়ে আহত হন ওমর। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় ক্লিনিকে নিয়ে যান। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে ওমর মারা যান।

কোনাবাড়ি হাইওয়ে থানার ওসি মজিবুর রহমান জানান, পুলিশ ঘাতক বাসটি আটক করেছে।


আরো সংবাদ



premium cement