২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

যৌন হেনস্থার শিকার হলে কী করবেন একজন নারী?

-

বাংলাদেশের ঢাকায় সম্প্রতি রাস্তা পার হওয়ার সময় যৌন হেনস্থার শিকার হয়া এক নারী কৌশলে হেনস্থাকারীর ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের পর এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এ ধরণের হেনস্থার শিকার হলে নারীর আসলে কি করা উচিত?

বাংলাদেশের সড়কে, ফুটপাথে কিংবা জনসমাগম হয় এমন স্থানগুলোতে দৈনন্দিন প্রয়োজনে চলা ফেরার সময় ঠিক কতজন যৌন হেনস্থার শিকার হন তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান জানা যায়না।

তবে যানবাহনে কিংবা রাস্তাঘাটে চলাফেরার সময় এ ধরণের অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতার খবর প্রায়শই শোনা যায়।

চলতি বছরের শুরুর দিকে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক পরিচালিত 'নারীর জন্য যৌন হয়রানি ও দুর্ঘটনামুক্ত সড়ক' শীর্ষক এক গবেষণায় দেখা যায়, গণপরিবহনে যাতায়াতের সময় ৯৪ শতাংশ নারী কোনো না কোনো ভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আর হেনস্থাকারীদের অধিকাংশই মধ্যবয়সী বা বয়স্ক পুরুষ।

ওই জরিপের তথ্য অনুযায়ী ৪১ থেকে ৬০ বছর বয়সী পুরুষদের দ্বারা এ ধরণের যৌন হয়রানি বেশি হচ্ছে।

আবার আরেক বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন এইডের এক জরিপ বলছে, তাদের জরিপে অংশ নেয়া নারীদের ৮৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা জনসমাগমস্থলে অশালীন মন্তব্য শুনেছেন এবং পুরুষেরা যৌন হয়রানি করার সুযোগ খুঁজেছিলেন। অর্ধেকের বেশি নারী গণ পরিবহনে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।

আবার কয়েক বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায় যে, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ৭৬ শতাংশ ছাত্রীই কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হন। এর মধ্যে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ হার সবচেয়ে বেশি: ৮৭ শতাংশ।

আর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোতে ৭৬ শতাংশ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৬ শতাংশ এবং মেডিকেল কলেজে যৌন হয়রানির শিকার হন ৫৪ শতাংশ ছাত্রী।

কিন্তু হেনস্থার শিকার নারী কি করবেন?

রাস্তাঘাটে বা যানবাহনে হেনস্থা বা যৌন হয়রানির শিকার হলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদের উদাহরণ বাংলাদেশে কমই দেখা যায়।

কেউ কেউ এখন বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করলেও নানা ঝক্কি-ঝামেলার ভয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগের সংখ্যা খুব বেশি হয়না।

তবে সম্প্রতি একজন নারী এভাবে হেনস্থা হওয়ার পর কৌশলে হেনস্থাকারীর ছবি তুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।

তবে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের দায়িত্বে থাকা পুলিশের ডিসি ফরিদা ইয়াসমিন বলছেন, ঘটনার সাথে সাথেই চিৎকার করে প্রতিবাদ করতে হবে।

যদিও কোনো নির্জন স্থানে ঘটে তাহলে নারীকে নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে এবং এক্ষেত্রে নিজের বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ ঘটাতে হবে কৌশলে।

তার মতে শক্ত থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে এবং এজন্য কন্যা সন্তানকে শারীরিক ও মানসিকভাবে শক্ত করে গড়ে তোলার বিষয়ে পরিবারকে সচেতন হয়ে এগিয়ে আসা দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ফরিদা ইয়াসমিন বলেন রাস্তাঘাটে বা যানবাহনে হুট করে কোনো হেনস্থার শিকার হলে সোচ্চার হয়ে প্রতিবাদ করতে হবে যাতে অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়।

"হুট করে কোনো ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করা বা চিৎকার করার মাধ্যমে আশপাশের মানুষকে ঘটনার সম্পৃক্ত করা উচিত"।

এসব বিষয়ে প্রায় একই মত দিয়েছেন আইনজীবী আফরোজা আক্তার। তিনিও বলছেন, "যতদ্রুত সম্ভব একেবারে নিকটস্থ থানায় যেতে হবে"।

এসময় সম্ভব হলে ঘটনাস্থল থেকে বা তার সাথে কেউ থাকলে তাকেও সাথে নেয়া উচিত কারণ এটি সাক্ষ্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

আর পুলিশের উচিত অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে ঘটনাস্থলে কাউকে পাঠিয়ে তদন্ত করা। এক্ষেত্রে রাস্তায় বা আশেপাশের ভবনে থাকা সিসিটিভি ফুটেজগুলো সহায়ক হতে পারে।

আফরোজা আক্তারের মতে রাস্তাঘাটে অযাচিত স্পর্শ বা এ ধরনের যৌন হয়রানির যেসব ঘটনার শিকার মেয়েরা তাৎক্ষনিক ভাবে হয়ে থাকে তার প্রতিবাদ হওয়া উচিত সঙ্গে সঙ্গেই।

"আক্রান্ত নারী তাৎক্ষনিক প্রতিবাদ করলে একদিকে দায়ী ব্যক্তি যেমন দ্বিতীয়বার এমন কাজ করার ক্ষেত্রে ভয় পাবে তেমনি এটি ঘটনাস্থলে প্রত্যক্ষদর্শী তৈরিতেও ভূমিকা রাখবে"।

একই সঙ্গে থানায় গিয়ে ঘটনা ও হেনস্থাকারী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেয়ার চেষ্টা করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

পুলিশ কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াসমিন বলেন তার মতে ছবি বা ভিডিও করে সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে না দিয়ে বরং তাৎক্ষনিক ভাবে স্থানীয় থানায় দিলে দ্রুত অপরাধীকে আটকে ব্যবস্থা নিতে পারে পুলিশ।

ফরিদা ইয়াসমিন বলেন যখনই ঘটনা ঘটুক এবং হেনস্থা বা হয়রানি যাই হোক- দ্রুততার সাথে স্থানীয় নিকটবর্তী থানায় অভিযোগ করা উচিত।

আইনজীবী আফরোজা আক্তার বলছেন বলেন, "দায়ী ব্যক্তির ছবি বা ভিডিও সংগ্রহ করে রাখলে সেটিও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য সহায়ক হবে"।

এক নজরে করণীয়: পুলিশ ও আইনজীবীর পরামর্শ

১. চিৎকার দেয়া ও প্রতিবাদ করা

২. ঘটনাস্থলের লোকজনকে সম্পৃক্ত করা

৩. দ্রুত নিকটস্থ থানায় যাওয়া

৪. সম্ভব হলে প্রত্যক্ষদর্শী কাউকে সাথে নিয়ে থানায় যাওয়া

৫. সম্ভব হলে ছবি তুলে বা ভিডিও করে তা পুলিশকে দেয়া

৬. নির্জন স্থানে হেনস্থার শিকার হলে নিজের নিরাপত্তাকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দেয়া

৭. নিজের বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ

৮. কেউ আক্রমণ করলে তাকে শক্তভাবে প্রতিহত করার

৯. শারীরিক ও মানসিক ভাবে শক্ত-সামর্থ্য হওয়ার চেষ্টা করা

১০. পরিবারকে তাদের কন্যাদের শারীরিকভাবে শক্তিশালী হতে সাহায্য করা


আরো সংবাদ



premium cement
এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক নোয়াখালীতে ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ‘আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল কাজ করে যাচ্ছে’ পুকুরে পাওয়া গেল ১০০ ইলিশ

সকল