২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

স্যাকারিন মেশানো আখের রস : ভয়ঙ্কর বিপদের শঙ্কা

স্যাকারিন মেশানো আখের রস : ভয়ঙ্কর বিপদের শঙ্কা - ছবি : সংগৃহীত

ঘামঝরা গরমে কর্মব্যস্ত মানুষের তৃষ্ণা মেটাতে রাজধানীর অলিগলি সয়লাব ভ্রাম্যমাণ আখের রসের দোকানে। আশ্বিনের তীব্র গরমে তৃষ্ণা মেটাতে অনেকেই ছুটে যাচ্ছেন এসব আখের রসের দোকানে। মিষ্টি স্বাদের আখের রসে তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন তারা। কিন্তু অনেকেই জানেন না এই আখের রসে মেশানো হচ্ছে স্যাকারিন। মৌসুম হওয়ায় আখের কমতি নেই বাজারে। তাই বর্তমানে বরফ মেশানোর দৃশ্য খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। তবে রসে মিষ্টির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে ঘানিতে ভাঙানো আখের মধ্যে মেশানো হচ্ছে স্যাকারিন, যা মাত্রাতিরিক্ত শরীরে প্রবেশ করলে অসুবিধা হতে পারে। 

সম্প্রতি মিরপুর-১০ নম্বরে একটি ভ্রাম্যমাণ আখের রসের দোকানে যায় কলেজছাত্র রাশেদুল। সেখানে ভ্যানের উপরে বিশেষ পক্রিয়ায় বসানো মেশিন ও ঘানি দিয়ে আখ থেকে রস বের করা হচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে ক্লান্ত রাশেদ ১০ টাকা দিয়ে এক গ্লাস রস পান করে। কিন্তু আখের রস মুখে দিতেই মিষ্টিতে তার মুখ লেগে আসে। আখের রস এত মিষ্টি হতে পারে? এমন প্রশ্ন জাগে তার মনে। একপর্যায়ে সে ভ্রাম্যমাণ ওই ব্যবসায়ীর কাছে জানতে চায় রস এত মিষ্টি কেন। দোকনি সরলতার সাথে উত্তর দেনÑ ‘আগে তো বরফ মেশানো রস খাইছেন। তাই পানসে লাগছে। এখন তো বরফ মেশানো হচ্ছে না। আখ থেকে প্রকৃত মিষ্টি রসটাই আপনাদের বের করে দেয়া হচ্ছে।’ কিন্তু রসের স্বাদ ও দোকানদারের কথায় মিল পাচ্ছিল না রাশেদ। রাশেদের কাছ থেকে বিষয়টি জানার পর সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই মিষ্টি আখের প্রকৃত মিষ্টি নয়। তার মধ্যে কৌশলে মেশানো হচ্ছে স্যাকারিনের টুকরা, যা রসের সাথে মিশে মিষ্টিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। 

গত কয়েক দিনে মিরপুরের পীরেরবাগসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে এমন কিছু স্থানের সন্ধান পাওয়া যায়। পীরেরবাগে দেখা যায়, একটি খালি প্লটে বস্তির মতো বেশ কয়েকটি ছোট ঘর রয়েছে। এসব ঘরে বসবাস করেন এই ভ্রাম্যমাণ আখের রসের ব্যবসায়ীরা। তাদের ঘরগুলোর সামনে আখের স্তূপ পড়ে রয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের স্ত্রী ও পরিবারের অন্য সদস্যরা আখগুলো কেটে নির্দিষ্ট আকারে টুকরো করে রাখেন। এরপর রাতে ব্যবসায়ীরা বাসায় ফিরে ওই আখগুলো বিশেষ ছোলা মেশিন বা ছুরি দিয়ে পরিষ্কার করে সাদা অংশ বের করে ফেলেন। এরপর দায়ের আগা দিয়ে আগে একটি ছোট্ট ছিদ্র করেন। এরপর ওই ছিদ্রের মধ্যে আগে থেকেই টুকরো করে রাখা স্যাকারিন বসিয়ে দেন। এক টুকরো আখে এক টুকরো স্যাকারিন দিয়ে থাকেন। এরপর সেগুলো ভ্যানে ভরে বেলা বাড়লে বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। বিক্রির সময় আখের টুকরা ঘানিতে দিলেই রসের সাথে মিশে যায় স্যাকারিন। এরপর তা গড়িয়ে একটি মগে জমা হতে থাকে। সেই মগ থেকে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে রস বিক্রি করা হয়। 

জানতে চাইলে প্রথমে বিষয়টি স্বীকার করতে চাননি রস ব্যবসায়ী নূরে আলম। একপর্যায়ে তিনি বলেন, মিষ্টি বেশি লাগানোর জন্য কোনো কোনো সময় তারা স্যাকারিন মিশিয়ে থাকেন। আখের রসের নিজস্ব মিষ্টি রয়েছে তারপরও বেশি মিষ্টি লাগানোর প্রয়োজন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, টুকরো করা আখ নিয়ে সারা দিন কাঠফাটা রোদের মধ্যে ঘুরতে হয়। এতে করে আখ শুকিয়ে রসের পরিমাণ কমে যায়। আর রস কমে গেলে তাদের ব্যবসা কম হয়। তাই আখ তাজা রাখতে তার উপরে বস্তা বা মোটা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। শুধু তাই নয়, ওই বস্তা পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হয়। অনেক সময় পানি বেশি হয়ে গেলে আখের রসের মিষ্টি কমে যায়। তাই মিষ্টি বৃদ্ধি করতেই তারা স্যাকারিন দিয়ে থাকেন। 

এ দিকে স্যাকারিন মেশানো আখের রস পান করে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন মানুষ। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের চিকিৎসক হুমায়ূন কবীর হিমু নয়া দিগন্তকে বলেন, স্যাকারিন একটি মিষ্টিজাতীয় পদার্থ। তবে এতে কোনো পুষ্টিকর উপাদান নেই। এটি মানবদেহে মিশে যায় না। তিনি বলেন, অতিরিক্ত স্যাকারিন মানবদেহে কী ধরনের ক্ষতি করে থাকে সে ব্যাপারে এখনো তেমন কোনো গবেষণা হয়নি। তবে ইঁদুরের শরীরে প্রয়োগ করে দেখা গেছে এটি ব্যবহারে ক্যান্সার হতে পারে। এতে করে গবেষকরা ধারণা করেন অতিরিক্ত স্যাকারিন মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে মূত্রথলিসহ বিভিন্ন ক্যান্সার। এ ছাড়া স্যাকারিন শরীরে ইনসুলিনের প্রভাব ব্যাহত করে। এতে করে ডায়াবেটিস দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত স্যাকারিন গ্রহণে শরীরে ওজন বৃদ্ধিসহ এলার্জি দেখা দিতে পারে বলে জানান তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement