১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

স্বামীর পরকীয়া ধরে নিরাপত্তাহীনতায় স্ত্রী

স্বামীর পরকীয়া ধরে নিরাপত্তাহীনতায় স্ত্রী - সংগৃহীত

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাংগুয়েজ ক্লাব থেকেই সামসিয়া তুজ সারোয়ার ও খন্দকার মোঃ হাসানুলে পরিচয়। এরপর একে অপরকে ভালো লাগা। আর সেই ভালো লাগা থেকে দুজন জড়িয়ে যান ভালোবাসার বন্ধনে। পরবর্তীতে দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। কিন্তু সুখ যে বেশি দিন সইলো না সামসিয়ার জীবনে।

বিয়ের কিছু দিনের মাথায় তার সেই ভালোবাসার মানুষের আসল রুপ প্রকাশ পায়। যৌতুকের ১৫ লাখ টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে মেয়েটিকে। শুরু হয় মানষিক শারীরিক নির্যাতন। তবুও স্বামীর ঘর ছাড়েননি সামসিয়া। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বেদম মারধর করে স্বামী হাসানুল বলে অভিযোগ করে ভুক্তোভোগী মেয়েটি।

এরপর তার ঠাই হয় মেডিক্যালে। বেশ কিছুদিন চিকিৎসা শেষে বাবার বাড়িতে উঠেন সামসিয়া। এরপর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যৌতুক মামলা করে ভুক্তোভোগী। এরপর থেকেই মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সময়ে হুমকি দিয়ে আসছে স্বামী খন্দকার মোঃ হাসানুল। এতে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে সামসিয়ার পরিবার। এ ঘটনায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর রোববার টঙ্গী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেছেন সামসিয়া। যার নম্বর ৭২৩।

জিডিতে তিনি অভিযোগ করেন, বিয়ের পর থেকে আমার স্বামী যৌতুকের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছে। এরপর তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। মামলায় স্বামী হাসানুলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা ইস্যূ হওয়ার পর আমাকে ও আমার পরিবারের লোকজনকে হুমকি ও ভয় ভীতি প্রদার করে আসছে। পরবর্তীতে সে জামিনে মুক্ত হয় কিন্তু তার হুমকি ভয় ভীতি প্রদান অব্যাহত থাকে। সর্বশেষ গত ১৪ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দুপুরে টঙ্গীর ষ্টেশন রোডের বাসায় এসে মামলা তুলে না নিলে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে যায়।

ভুক্তোভোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক দেড় লাখ টাকা দেনমোহরানায় সামসিয়া তুজ সারোয়ার ও খন্দকার মো. হাসানুলে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় মেয়ের বাবা ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও ১০ লাখ টাকার উপঢৌকন প্রদান করে। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে টাকা দাবি করে আসছে হাসানুল। মেয়ের পরিবার থেকে যতটুক সম্ভব দিয়েছেন। এরপর ঢাকায় জমি কেনার জন্য ১৫ লাখ টাকা চায় হাসানুল।

এত টাকা তারা কোথা থেকে কিভাবে দিবে এ কথা বলার পর থেকেই সামসিয়ার ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সামসিয়াকে তার স্বামী ও মা বিলকিস বেগম যৌতুকের ওই ১৫ লাখ টাকার দাবিতে বেদরক মারধর করে। নির্যাতন সইতে না পেরে মেয়েটি বাবার বাড়িতে ওঠেন। পরবর্তীতে পরিবারের লোকজন তাকে মেডিক্যালে ভর্তি করে।


ভুক্তোভোগী সামসিয়া নয়াদিগন্তকে বলেন, আমরা খুবই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। বাধ্য হয়ে অনেক সময় ফোন বন্ধ করে রাখি। স্বামীর নির্যাতন থেকে বাঁচতে মামলা করেও আমার নিস্তার নেই। এখন হত্যার হুমকি দিচ্ছে। বিষয়টি নিয় আমি ও আমার পরিবার খুবই ভয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের পর থেকে প্রথম দুই বছর ভালোই কাটছিলো। এরপর থেকেই ওর ডিমান্ড বাড়তে থাকে। আর সেই ডিমান্ড মেটাতে না পেরেই আজ এ অবস্থা। ওদের নির্যাতনটা এতটাই ভয়াবহ ছিলো যে আমি এখনও তা সাফার করছি। এখনও আমাকে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়।

তিনি বলেন, বিয়ের পর ওর আয়কর অফিসে চাকরি হয়। এরপর রাজশাহীতে পোস্টিং ছিলো তখন আমি ঢাকায় একটি কোম্পানীতে জব করতাম। এরপর ওর রংপুরে পোস্টিং হলে আমি চাকরি ছেড়ে দিয়ে ওর সাথে থাকার জন্য চাকরি ছেড়ে দেই। কিন্তু নিবে নিবে বলে আর নেয়নি। রংপুর থেকে বিমানে ঢাকায় এসে আমায় বলতো আমি বাসে ঢাকায় আসতেছি। পরবর্তীতে হাসানুলের এক কলিগ আমায় ফোন দিয়ে বলে যে আপনার স্বামীর দিকে খেয়াল নিয়েন ও কিন্তু ঢাকায় অবস্থান করছে।

এরপর আমি খোজ নিতে নিতে হোটেল-৭১ গিয়ে ওকেসহ ওর একমেয়ে কলিগকে পাই। জানতে পারি তাদের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে পরকীয়া চলছে। এ ঘটনার পর থেকে তার প্রতি নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায় বলে অভিযোগ করেন সামসিয়া তুজ সারোয়ার।


আরো সংবাদ



premium cement