শুটকী মাছের মধ্যে ইয়াবা!
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৪ জুন ২০১৮, ২২:২৩
কক্সবাজারের উখিয়ার মাদককারবারী স্থানীয় কিছু যুবকের বিলাসবহুল জীবনযাপন দেখে উদ্বুদ্ধ হয় কলেজ পড়–য়া ইফতেখারুল ইসলাম। একপর্যায়ে নিজেই জড়িয়ে পড়েন মাদককারবারীতে। উখিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বিএসএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হয়েও বিলাসবহুল জীবনযাপনের লোভে নিজের নেতৃত্বেই তৈরি করেন একটি চক্র।
চক্রটি দেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যেই কক্সবাজার থেকে কৌশলে শুটকী মাছের মধ্যে ইয়াবা নিয়ে আসে ঢাকায়। এরপর উত্তরার একটি বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীর কাছে মজুত করা হয়। তারপর সেখান থেকেই ইয়াবা সরবরাহ করা হয় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। ইয়াবা পাচারকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর সড়কের ১১ নম্বর একটি নির্মাণাধীন বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ২০ হাজার পিস ইয়াবাসহ চারজনকে গ্রেফতার করে র্যাব-৩।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- কক্সবাজারের মাদককারবারী ইফতেখারুল ইসলাম (২৫), ওই ভবনের কেয়ারটেকার ও উখিয়ার বাসিন্দা অলি আহম্মেদ (২৪), ওষুধ কোম্পানির ইনফরমেশন অফিসার মোস্তফা কামাল এবং পাঠাও চালক রানা আহম্মেদ ওরফে রাজু (২৫)। এ সময় ৮টি মোবাইল ও একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে র্যাব।
জানা গেছে, কক্সবাজার থেকে বিভিন্ন কৌশলে বাহকের মাধ্যমে ইয়াবাগুলো অলি আহমেদের কাছে পাঠানো হতো। ওই ভবন থেকেই অলি বিভিন্নস্থানে ইয়াবা সরবরাহ করতো। ইয়াবা ভাগাভাগি করার সময় যাতে গন্ধ বাহিরে না ছড়ায় এ জন্য ওই ফ্ল্যাটে প্রচুর পরিমানে শুটকী মাছের মজুত করা হয়। এর মধ্যেই ইয়াবাগুলো রাখা হতো বলে জানিয়েছে কেয়ারটেকার অলি আহমেদ।
র্যাব বলছে, রাইড শেয়ারিং অ্যাপস পাঠাও-এর চালকদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মাদক পরিবহনের মতো গুরুতর তথ্য তারা পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে পাঠাওয়ের সাথে অফিসিয়ালি যোগাযোগ করা হচ্ছে।
রোববার রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে কর্নেল এমরানুল হাসান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার মধ্যেরাতে উত্তরার ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় ঢাকার মাদক কারবারীরা ইয়াবার চালান আনতে কক্সবাজার যাওয়ার ক্ষেত্রে ভীতির মধ্যে রয়েছে। আগের তুলেনায় ইয়াবা পরিবহনে ঢাকার মাদককারবারীরা ও ক্যারিয়ারদের (বাহক) চলাচল সীমিত হয়েছে। তবে আমাদের কাছে সম্প্রতি তথ্য আসে কতিপয় মাদক কারবারী কক্সবাজারের উখিয়া থেকে মাদকের একটি বড় চালান ঢাকার উত্তরায় মজুত করা হয়েছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে ইয়াবাসহ তাদের গ্রেফতার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ইফতেখারুল ইসলাম জানান, কক্সবাজারের উখিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বিএসএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। মাদক কারবারীর সাথে জড়িত উখিয়ার স্থানীয় কিছু যুবকের বিলাসবহুল জীবনযাপন দেখে তিনি ইয়াবা কারবারীতে উদ্বুদ্ধ হয়। তার ধারণা ইয়াবা কারবারীতে দ্রুত লাভবান ও বিলাসবহুল জীবনযাপন করা যায়।
লে. কর্নেল এমরানুল হাসান বলেন, ইফতেখারুল নিজে মাদক ব্যবসায় জড়ানোর পাশাপাশি কক্সবাজারের মাদক কারবারীদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে স্থানীয় যুবক ও রোহিঙ্গাদের ঢাকায় ইয়াবা নিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করে। কক্সবাজার থেকে বহন করে ইয়াবা অবৈধভাবে ঢাকার উত্তরা নিয়ে এসে আশাপাশের মাদক কারবারীদের কাছে সরবরাহ করার কাজ নিয়ন্ত্রণ করত সে।
গ্রেফতার অলি আহম্মেদ জানান, তার বাড়িও কক্সবাজারের উখিয়া থানার রাজাপালং গ্রামে। উত্তরার ফজিলত প্রোপার্টিজ নামে একটি নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটি গার্ডের দায়িত্ব পালন করেন। অলি আহম্মেদ নিজের নিয়ন্ত্রিত ওই ভবনে কক্সবাজারের ইয়াবা রাখা হতো এবং তার সহায়তায় মাদক কারবারীদের কাছে পৌঁছে যেত।
গ্রেফতার মোস্তফা কামাল জানান, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা শরীফ ফার্মাসিউটিক্যালসের মেডিকেল ইনফরমেশন অফিসার হিসেবে চাকরি করেন। মোটা অঙ্কের টাকার লোভে ওষুধ বিপণন ও সরবরাহের সাথে যুক্ত থাকার পাশাপাশি ইয়াবা পরিবহনের কাজেও যুক্ত হয়ে পড়েন। কক্সবাজার থেকে ইয়াবা ঢাকায় একটি চালান পৌঁছাতে পারলে তিনি ২০ হাজার টাকা পেতেন।
গ্রেফতার রানা আহম্মেদ ওরফে রাজু মূলত রাইড শেয়ারিং অ্যাপস পাঠাও-এর একজন রাইডার। তিনি পাঠাওয়ের রাইড শেয়ার দেওয়ার পাশাপাশি ইয়াবা পরিবহন করে কাঙ্খিত মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে দিত।
র্যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, কক্সবাজারের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সাথে ঢাকার কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীর যোগসাজশের তথ্য আমরা পেয়েছি। তাদের নামও জেনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
তিনি আরও বলেন, পাঠাও চালকদের কয়েকজনের তথ্য আমরা পেয়েছি। অভিযুক্ত কয়েকজন চালকের ব্যাপারে তথ্য পেতে আমরা পাঠাওয়ের সাথে যোগযোগ করব। মাদক পরিবহনে পাঠাও চালক ও রোহিঙ্গা নাগরিকদের ব্যবহারের তথ্য পাওয়া-সংক্রান্ত মামলাটি র্যাব-৩ তদন্ত করবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা