২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফাঁসিয়ে দেয়ার কথা বলে হয়রানি!

ফাঁসিয়ে দেয়ার কথা বলে হয়রানি! - ছবি : সংগৃহীত

মাদকবিরোধী অভিযানকে কেন্দ্র করে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পুলিশের সোর্সরা। তারা ‘ফাঁসিয়ে’ দেয়ার কথা বলে অনেক মানুষকে হয়রানি করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেকের কাছ থেকে সোর্সরা আর্থিকভাবে সুবিধা নিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। আবার একটি গ্রুপ এ অভিযানকে শত্রুতা মেটানোর মোক্ষম সময় বলে বেছে নিয়েছে। অনেক থানা বলছে, তাদের কাছে হালনাগাদ তালিকা নেই মাদক কারবারিদের। তারা অভিযোগের ভিত্তিতে এ অভিযান চালাচ্ছে। কেউ কেউ তালিকায় নাম ঢুকিয়ে দেয়ার কথা বলেও মানুষের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। অনেকে বলেছেন, মাদকের বিরুদ্ধে যে অভিযান চলছে তা প্রশ্নবিদ্ধ করতেও এভাবে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হতে পারে।

সরকারের সিদ্ধান্তের পর ১২ হাজারের বেশি মাদক কারবারি আটক হয়েছে। আর নিহত হয়েছে ১৩৭ জন। ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ছাড়া বেশ কয়েকজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউ স্পষ্ট করে বলতে পারেননি এ অভিযান কবে শেষ হবে। তবে এ অভিযানকে কেন্দ্র করে একশ্রেণীর অসাধু লোক মাঠে নেমেছে। তাদের মধ্যে অনেক রয়েছে যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স হিসেবে কাজ করছে।

রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, তাকে মাদক কারবারি হিসেবে ফাঁসিয়ে দেয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেছে একটি পক্ষ। না হলে ওই ব্যবসায়ীর নাম মাদক কারবারিদের তালিকায় ঢুকিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। এরপর থেকে ওই ব্যবসায়ী এবং তার পরিবারের সদস্যরা এখন তটস্ত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি বলেন, এভাবে চললে এ অভিযান প্রশ্নের মুখে পড়বে। বন্দুকযুদ্ধে নিহতদের দু-একটি পরিবার ইতোমধ্যে এ অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা নিহত ব্যক্তিকে নির্দোষ দাবি করে এই ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করেছেন। আবার অনেক ব্যক্তিকে গোয়েন্দাদের তালিকাভুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হলেও তারা বলেছেন, কোনো দিন তারা মাদক কারবারের সাথে জড়িত ছিলেন না।

কিভাবে তাদের নাম এ তালিকায় ঢুকল। তারা বলেছেন, পরিকল্পিতভাবে প্রতিপক্ষরা এ কাজ করেছে। এমনকি, মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক প্রচার অভিযানে অংশ নিয়েছেন এমনও অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যাদের মাদক কারবারি বা মাদকের গডফাদার হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিপক্ষরা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। ঢাকার এক ওয়ার্ড কাউন্সিলর বলেছেন, তিনি কোনো দিন সিগারেট পর্যন্ত সেবন করেননি; অথচ তার নামে মাদক কারবারিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। ওই কাউন্সিলর বলেন, তাকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয় করার জন্যই প্রতিপক্ষরা এ কাজ করেছে। আরেক কাউন্সিলর যিনি মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে ইতঃপূর্বে কয়েকবার মাদক কারবারিদের রোষানলে পড়েছেন; তার বিরুদ্ধেও প্রচার চলছে মাদক কারবারিদের আশ্রয় দেয়ার।

অথচ মাদকবিরোধী মিছিল-সমাবেশে ওই কাউন্সিলরের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে। মাদক অভিযানে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তাও করেছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সদস্য বলেছেন, কোনো অভিযান শুরু হলে একটি শ্রেণী রয়েছে যারা সুযোগ নিতে চায়। তারা প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের জন্য নানা অভিযোগ করে থাকে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাজ করতে হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স পরিচয়দানকারী কিছু দষ্কৃতকারী এ কাজটি বেশি করে থাকে। এ দিকে এ অভিযানকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মধ্যেও একটি আতঙ্ক রয়েছে। পল্টনের চঞ্চল চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি জানান, রাতে যখন বাসায় ফেরেন তখন তিনি আতঙ্কের মধ্যে থাকেন।


আরো সংবাদ



premium cement