২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাজধানীতে পেটে করে ইয়াবা আনার অভিনব কৌশল

রাজধানীতে পেটে করে ইয়াবা আনার অভিনব কৌশল -

পলিথিনের প্যাকেটে ইয়াবা ভরে তা সেবন করার পর রোহিঙ্গা শিশুদের এক ধরণের সিরাপ খাওয়ানো হয়। ঢাকায় এসে আরেক ধরনের সিরাপ খাওয়ালে ওই প্যাকেটগুলো মলদ্বার দিয়ে বের হয়ে আসে। এভাবেই ইয়াবা পাচারের জন্য রোহিঙ্গা শিশুদের ব্যবহার করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এসব শিশুকে মাদক ব্যবসায়ীরা হাত করছে তাদের পরিবারের মাধ্যমে। মূলত কম শ্রমে বাড়তি উপার্জনের লোভের কারণে পরিবারের সম্মতিতেই তারা ইয়াবা পাচারে যুক্ত হচ্ছে। দেশজুড়ে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যেও এভাবেই চলছে মাদক পাচার ও সরবরাহ।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নজর এড়াতে অভিনব কায়দায় পেটের মধ্যে করে এনে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে রাজধানীতে। রাজধানীর দক্ষিণ খান এলাকা থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ছয়জনকে গ্রেফতারের পর বের হয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর এমন তথ্য।

দক্ষিণ খানের গাওয়াইর এলাকার ছয়তলা বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে অবস্থান করছে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এমন খবরে গত রোববার মধ্যেরাতে সেখানে অভিযানে যায় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। বেশকিছু ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয় ছয়জনকে। তবে তাদের কাছে স্কচটেপ মোড়ানো ট্যাবলেট আকৃতির ইয়াবার ছোট ছোট পুঁটলি পেয়ে সন্দেহ হয় ডিবি পুলিশের। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা স্বীকার করে পানি দিয়ে ইয়াবার এসব পুঁটলি গিলে ফেলে তারা। একেকটি পুঁটলিতে থাকে ৩০ থেকে ৪০টি ইয়াবা।

রেজোয়ান নামে একজন দুই রোহিঙ্গাকে কক্সবাজার থেকে এসব ইয়াবা দেয়। আর ঢাকায় তা গ্রহণ করে মামুন নামে একজন। আর মামুনের তিন সহযোগী তা ছড়িয়ে দেয় ঢাকার বিভিন্ন স্পটে। এমন অভিনব কায়দায় ইয়াবা পাচারের ঘটনা দেখে হতবাক হয়ে যান গোয়েন্দা সদস্যরাও। রাতেই তাদের নিয়ে আসা হয় গোয়েন্দা হেফাজতে। পরে গতকাল সোমবার সকালে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে এক্সরে করার পর তাদের পেটে ইয়াবা থাকার কথা নিশ্চিত করেন হাসপাতালের পুলিশ সুপার ডা. এমদাদুল হক।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, ইয়াবা পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার দুই রোহিঙ্গা নাগরিক সম্পর্কে চাচা ভাতিজা। মাদক বিরোধী চলমান অভিযানের কারণেই তারা এমন অভিনব কায়দা বেছে নিয়েছে বলেও ধারণা পুলিশের।

গ্রেফতারকৃতরা জানায়, ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে পাকস্থলিতে করে মাদক পারিবহন করে তারা। শারীরিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও কেবল জীবিকার তাগিদে তারা প্রতিনিয়ত কখনো বাসে কখনো ট্রেনে করে ওই মাদক পরিবহনের কাজ করছে।

গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, পূর্ব গাওয়াইরে অভিযান চালিয়ে এক শিশুসহ দুই রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করে ডিবি। এরপর ওই এলাকা থেকে আরও চারজন মাদক কারবারীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার দুই রোহিঙ্গা হচ্ছে সেলিম মোল্লা, তার ভাতিজা আফছার ওরফে বাবুল (১২)। এছাড়া অন্য চারজন হলেন- মামুন শেখ, শরিফুল, ফাহিম সরকার ও রাজিব হোসেন।

তিনি বলেন, ইয়াবা পাচারের সঙ্গে রোহিঙ্গা শিশুদের জড়ানো হচ্ছে। বেশি টাকার লোভে রোহিঙ্গা পরিবারগুলো মাদক পাচারে তাদের শিশুদের পাঠিয়ে সহযোগিতা করছে। সেলিম মোল্লা উখিয়ার লেদা ক্যাম্পে পরিবারসহ থাকে। ১২ বছরের আফজার তার আপন বড় ভাইয়ের ছেলে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসে রেজওয়ান নামে এক মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে সেলিমের পরিচয় হয়। রেজওয়ানের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর জেলায়। ইয়াবা ব্যবসা করার জন্য সে কক্সবাজারেই বাসাভাড়া নিয়ে থাকে। ঢাকায় মামুন তার প্রধান সহযোগী। রেজওয়ান পাঁচ হাজার ইয়াবার চালান ঢাকায় পাঠানোর জন্য রোহিঙ্গা সেলিম মোল্লার সাথে ২৫ হাজার টাকায় চুক্তি করে। এরপর সেলিম তার ভাতিজা আফছারকে নিয়ে ঢাকায় ইয়াবা নিয়ে আসার পরিকল্পনা করে।

৫০ পিস করে ইয়াবা ক্যাপসুল আকারে তৈরি করে স্কচটেপ ও পলিথিনে মুড়িয়ে। এরপর ৩০ টি ক্যাপসুল পানি দিয়ে আফছারকে গিলিয়ে দেয় এবং ৭০ টি ইয়াবা ক্যাপসুল সেলিম নিজে গিলে খায়। মোট ৫ হাজার ইয়াবা এভাবে তারা গিলে পেটে করে নিয়ে আসে ঢাকায়। আসার পথে তারা কোনোকিছু খায় না। এমনকি ওষুধ খেয়ে নেয় যাতে পায়খানা না হয়। ঢাকায় এসে তারা ফের ওষুধ খায় মলত্যাগ করার জন্য। এভাবে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে ইয়াবা পাচার করে বলে জানিয়েছেন পুলিশ।

অতিরিক্ত কমিশনার জানিয়েছেন, এর আগেও আফছার ও তার চাচা সেলিম একাধিকবার ঢাকায় একইভাবে ইয়াবা নিয়ে আসে। তারা কখনও বাসে, কখনও ট্রেনে আসে। আরও রোহিঙ্গা শিশু আছে যাদেরকে এভাবে ইয়াবা পাচারের সঙ্গে তারা জড়িয়েছে মাদক ব্যবসায়ীরা। শিশু আফছার এই ইয়াবা চালান পৌঁছে দিতে পারলে দশ হাজার টাকা পেতো। তার চাচা সেলিম পেতো ১৫ হাজার টাকা। এতো কম সময়ে বেশি টাকা আয়ের লোভে এই পথে রোহিঙ্গা শিশুদের তাদের পরিবার মাদক কারবারীদের কাছে তুলে দিচ্ছে বলেও জানান অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস।


আরো সংবাদ



premium cement