ডিজের নৃশংসতা : ভাতে চুল পেয়ে শিশু গৃহকর্মীকে হত্যা
- বিবিসি
- ২৮ মে ২০১৮, ১৫:৪৯
১০ বছর বয়সী শিশু সাথী দুই মাস হলো কাজ করত ঢাকার দক্ষিণখানে কাজল রেখা নামে এক নারীর বাসায়।
কাজল রেখা পেশায় ডিস্ক জকি বা ডিজে। সাথীর বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশালে।
দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তপন চন্দ্র সাহা বিবিসি বাংলাকে বলেন, একেবারেই তুচ্ছ কারণে সাথীকে হত্যা করা হয়েছে।
এর আগেও বিভিন্ন সময় কাজল রেখা সাথীকে মারধর করত।
গত ২৩শে মে সাথী ভাত রান্না করে। পরে ভাতের মধ্যে একটা চুল দেখতে পাযন কাজল রেখা। এরপর কাজল রেখা সাথীকে প্রথমে কাঠের খুন্তি ও স্টিল দিয়ে মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত করে দেয়।
ওসি তপন চন্দ্র সাহা বলছিলেন সাথীকে হত্যার পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা কাজল রেখা তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে দিয়েছেন।
সাথীর মূল আঘাত লাগে মাথায়, যখন কাজল রেখা তার চুল ধরে দেয়ালের সাথে ধাক্কা মেরে মাথা ফাটিয়ে ফেলে। এরপর তাকে গলায় পা দিয়ে চেপে ধরে হত্যা করে।
'লাশ গুম করার চেষ্টা'
লাশ লুকানোর জন্য প্রথমে একটা সিলভারের হাড়ির মধ্যে লুকিয়ে তার ওপর কাপড়চোপড় দিয়ে ঢেকে একটা ঢাকনা দিয়ে রাখে কাজল রেখা।
সারা রাত এভাবেই রাখার পর সকালে তার বাসা থেকে খানিকটা দূরে তার মা ও মামাকে গিয়ে ঘটনাটি জানাযন।
পরে তিনি তার নানির সাথে গিয়ে একটা ল্যাগেজ কিনে আনেন সাথীর লাশ গুম করার জন্য।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলছিলেন তার মা, নানি ও মামা শরিফুল এই লাশ গুম করার কাজে তাকে সহায়তা করে।
পুলিশের হাতে আটক যেভাবে
২৪ মে সকাল এগারোটার দিকে লাশভরা ব্যাগটি নিয়ে একটি রিক্সায় উঠেন তার মামা শরিফুল। পেছনে আরেকটি রিক্সায় ছিলেন কাজল রেখা।
পুলিশ জানায়, তাদের উদ্দেশ্য ছিল আব্দুল্লাহপুর-শ্যামলী বাস কাউন্টারে কোনো একটা গাড়িতে টিকেট কেটে সেই বাসের লকারে লাশসহ লাগেজটি রেখে পালিয়ে যাওয়া।
কিন্তু পথের মধ্যে কোটবাড়ী রেলগেটে একটা পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে তার মামা ধরা পড়েন। এ সময় পুলিশ তাকে আটক করেন। পিছন থেকে কাজল রেখা দেখতে পেয়ে পালিয়ে যায়।
পরে গত ২৬ তারিখে পুলিশ কাজল রেখা ও তার মাকে গ্রেফতার করলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন।
এদিকে এ ঘটনায় সাথীর বাবা মামলা করেছে। সাথীর বাবা রহমত আলীর সাথে যোগাযোগ করার একাধিক বার চেষ্টা করলে সম্ভব হয়নি।
কাজল রেখার মামা শরিফুল এখন পুলিশের রিমান্ডে রয়েছে। অন্যদিকে তিনি আর তার মা এখন জেল হাজতে রয়েছে।
রাঙ্গামাটিতে আবারো গুলি : নিহত তিনজন
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় গুলিতে তিন জন নিহত হয়েছে। স্থানীয় থানার পুলিশ নিহতদের ইউপিডিএফের কর্মী বলে নিশ্চিত করেছেন।
বাঘাইছড়ি সাজেক থানার ওসি নুরুল আনোয়ার বলছিলেন আজ সোমবার ভোর রাত ৪টা থেকে ৫টা মধ্যে এই গুলির ঘটনা ঘটেছে।
তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, এটি দুর্গম একটা এলাকা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের আসতেও সেখানে সময় লেগেছে। তবে এই নিহত ব্যক্তিদের রাজনৈতিক পরিচয় ছাড়া আর কোনো বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।
এদিকে রাঙ্গামাটির পুলিশ সুপার আলমগীর কবির আশঙ্কা প্রকাশ করছিলেন যারা মারা গেছে তারা ইউপিডিএফ এর মূল দলের কর্মী।
প্রতিশোধ?
চলতি মে মাসের শুরুর দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমার নিহত হওয়ার পর তাঁর শেষকৃত্যে অংশ নিতে গেলে ইউপিডিএফের আরেকটি অংশ ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের নেতা তরুন জ্যোতি চাকমা নিহত হন।
মি. আলমগীর বলছিলেন আজকের এ ঘটনা সেটার একটা প্রতিশোধ হিসেবে হতে পারে।
পার্বত্য এলাকার পাহাড়িদের প্রধান দুটি সংগঠন জনসংহতি সমিতি এবং ইউপিডিএফের মধ্যে অন্তর্কলহ কথা অনেক দিন ধরে খবর হয়েছে।
তবে এই দুটি গ্রুপ ভেঙ্গে আরো দুটি গ্রুপ অর্থাৎ অন্তত চারটি গ্রুপ সক্রিয় থাকাই সেই দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে বলে স্থানীয়রা জানাচ্ছেন।
স্থানীয় সাংবাদিকরা জানাচ্ছেন আজ পর্যন্ত গত ৫ মাসে তিন জেলায় ২১ জনের নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
১৯৯৭ সালে ডিসেম্বরে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তিচুক্তি হয়। এই চুক্তির পর ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা পাবে এমনটা অনেকের ধারণা ছিল।
কিন্তু ওই চুক্তির পর ইউপিডিএফ চুক্তির বিপরীতে অবস্থান নেই।
আবার দলটি ভেঙ্গে ইউপিডিএফ- গণতান্ত্রিক নামে আরেকটি গ্রুপ তৈরি হলে পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা