২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ’ লড়াকু সৈনিক স্টোকস

- ছবি: সংগৃহীত

ব্যাট হাতে অপরাজিত ৮৪ রান করে একাই দলকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যান বেন স্টোকস। ৯৮ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় এই জান প্রাণে লড়া ইনিংস টি সাজান এই  ইংলিশ অলরাউন্ডার।

দৌড়ালেন মার্ক উড! দৌড় উসাইন বোল্টকে হার মানানোর মতোই ছিলো। কিন্তু নিউজল্যান্ডের কাছে তার রেস হেরে গেছে। জেমস নিশামের থ্রো ঠিকভাবেই বোলার বোল্ট ধরে স্ট্যাম্প স্পর্শ করে দলকেও টিকিয়ে রাখলেন। ইনিংসের শেষ বলে ২ রান দরকার ছিলো ইংল্যান্ডের। স্টোকস মিড অনে ঠুকে দিয়ে দুই রান নিতে চাইলেও তা সম্ভব হয়নি। দৌড়ে পারেননি নন স্ট্রাইকে থাকা আরেক ব্যাটসম্যান মার্ক উড। এক রান বৈধ হলে খেলা হয়ে যায় ড্র। তাতে খেলা গড়ায় সুপার ওভারে।

সুপার ওভার

আাগে ব্যাট করতে নামে ইংল্যান্ড। ব্যাট হাতে নামেন দুই বিধ্বংসী জস বাটলার ও বেন স্টোকস। অপরদিকে বল হাতে আসেন নিউজিল্যান্ডের অন্যতম পেসার ট্রেন্ট বোল্ট। দুই ইংলিশ ব্যাটসম্যান তাকে মোকাবেলা করে সুপার ওভারে তোলেন ১৫ রান। আর তাতে নিউজিল্যান্ডর জন্য লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৬ রান।

লক্ষ্য পাড়ি দিতে ব্যাট হাতে নামেন দুই কিউই ব্যাটসম্যান মর্টিন গাপটিল ও জেমস নিশাম। আর বল হাতে আসেন ইংলিশ পেসার জোফরা আর্চার। বল হাতে ওয়াইড দিয়ে শুরু করেন। প্রথম বলে বলে দুই রান নিলেন নিশাম। তৃতীয় বলে ছক্কা। পরের বলে আবার দুই। চতুর্থ বলে দুই রান নিতে গিয়ে রান ! লাস্ট দুই বলে দরকার ৩ রান। কিন্তু পঞ্চম বলে এক রান নিতে পারেন কিউই ব্যাটসম্যানরা। হিসেব দাঁড়ায় শেষ বলে ২ রান। গাপটিল শেষ বলে কাউ কর্নারের দিকে ঠেলে দিয়েছেন কিন্তু  দুই রান নিতে পারেননি। রয়ের থ্রোতে উইকেটরক্ষক বাটলার স্ট্যাম্পে বল লাগাতে ভুল করেননি। এক রান নিতে সক্ষম হয় কিউই ব্যাটসম্যানরা। আউট হন গাপটিল। খেলা ড্র হয়ে যায় এক রান নেয়ার সুবাধে।

কিন্তু মূল খেলায় বাউন্ডারি গণণায় ইংল্যান্ড ছিলো কিউইদের থেকে এগিয়ে। ম্যাচে আগে ব্যাট করা নিউজিল্যান্ড ১৪টি চার ও ২টি ছক্কায় মোট বাউন্ডারি পায় ১৬টি। অন্য দিকে দ্বিতীয় ইনিংসে ২২টি চারের সঙ্গে ২টি ছক্কায় মারে ইংল্যান্ড। যে কারণে সুপার ওভারের নিয়ম অনুযায়ী চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড। 


আর তাতে টান টান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে বাউন্ডারি কাউন্টে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তুলে নিলো ইংল্যান্ড।

প্রথমবার! বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তুলল ইংল্যান্ড। ‘ক্রিকেট’ যাদের হাত ধরে আজ বৈশ্বিক বিনোদনের অন্যতম একটি মাধ্যম, যে দেশে ক্রিকেটের জন্ম, সেদেশেই ক্রিকেট ব্যর্থ ছিলো! ব্যর্থ নয়তো কি? ক্রিকেটের দেড়শ বছরের ইতিহাস ব্রিটিশদের; কিন্তু খেলা জন্ম দিলেতো আর পিতৃত্ব অর্জন করা যায় না। যদি না ভালো খেলে একটি শিরোপাও ঘরে না তোলা যায়। দীর্ঘ প্রতীক্ষার ক্ষণ ফুরিয়ে অবশেষে সেই স্বপ্ন শিরোপাও ছুঁলো ইংলিশরা। আর তাতে সর্থকও হলো তাদের রোপিত ‘ক্রিকেট’, যা আজ ডানা ছড়িয়ে বৈশ্বিকে রূপান্তরিত হয়েছে।

বিশ্বকাপে এমন একটি রোমাঞ্চকর ফাইনাল কে-না আশা করে। লর্ডসের ২৮ হাজার দর্শক আর বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে এবারের ফাইনাল ম্যাচটি ছিল ভিন্ন মাত্রার। কারণ, দীর্ঘ ২৩ বছর পর নতুন কোনো চ্যাম্পিয়ন দেখার অপেক্ষায় ছিলো তারা। কি টান টান উত্তেজনা। পুরো বিশ্বকাপের সকল রোমাঞ্চ যেন এই ম্যাচকে ঘিরে অপেক্ষা করছিলো।

দ্বাদশ বিশ্বকাপের ফাইনালে প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়ের মিশনে টস জিতে আগে ব্যাট করে ইংল্যান্ডকে ২৪২ রানের লক্ষ্য দেয় নিউজিল্যান্ড। কিন্তু নির্ধারিত ৫০ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৪১ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় নিউজল্যান্ড। ব্যাট হাতে স্টোকস অপরাজিত (৮৪) ও বাটলার করেন (৫৯) রান।

লক্ষ্য পাড়ি দিতে নেমে ট্রেন্ট বোল্টের করা ইনিংসের প্রথম বলে জেসন রয়ের বিরুদ্ধে এলবিডব্লিউর জোরালো আবেদন করে নিউজিল্যান্ড। আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নেন কিউই অধিনায়ক উইলিয়ামসন। কিন্তু থার্ড আম্পায়র রড টাকার আউট হয়নি বলে সিদ্ধান্ত দেন।

সেমিফাইনালে ব্যাট হাতে জয়ের নয়ক রয় প্রথমবার বাঁচলেও ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে ম্যাট হেনরির বল খুঁচিয়ে দিয়ে টম লাথামের তালুবন্দী হলে, এবার আর আউট থেকে রেহায় পাননি তিনি। ২০ বলে ১৭ রান করে সাজঘরে ফেরেন এই ওপেনার।

৫৯ রানের মাথায় ভরসার পাত্র জো রুটকে, ৭১ রানে বায়েরস্টো ও ৮৬ রানের মাথায় ইয়ন মরগানের উইকেট হারালে চাপে পড়ে যায় ইংল্যান্ড।

জো রুট ৭, জনি বায়েরস্টো ৩৬ ও ইয়ন মরগানের ব্যাট থেকে আসে ৯ রান।

পঞ্চম উইকেট জুটিতে জস বাটলার ও বেন স্টোকস ১১০ রানের জুটি গড়লে ম্যাচ অনেকটা ইংলিশদের নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু ১৯৬ রানের মাথায় বাটলার ব্যক্তিগত ৫৯ রান করে আউট হলে ফের চাপে পড়ে ইংলিশরা।

দলকে একাই টেনে নেয়ার দায়িত্বে থাকেন স্টোকস। একে একে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকে ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। শেষ ওভার পর্যন্ত গড়ায় নাটকীয় খেলা।

লাস্ট ওভারে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ১৫ রান হাতে মাত্র দুটি উইকেট। বোল্টের করা ওভারে প্রথম দুই বলেই কোনো রান নিতে পারেননি স্টোকস। তৃতীয় বলে ছক্কা। পরের তিন বলে দরকার ৯ রান। চতুর্থ বলে দুই রান এবং নিউজিল্যান্ড বোলারদের ওভার থ্রোতে আসে আরো ৪ রান। তাতেই ম্যাচ খসে পড়ে নিউজিল্যান্ডের হাত থেকে। এই বলে যোগ হয় ৬ রান। শেষ দুই বলে ইংলিশদের রান দরকার ৩ রান। কিন্তু দুই বলে তারা দুই রান নিতে সক্ষম হয়। ইনিংসের শেষ বলে ২ রান দরকার ছিলো ইংল্যান্ডের। স্টোকস মিড অনে ঠুকে দিয়ে দুই রান নিতে চাইলেও তা সম্ভব হয়নি। দৌড়ে পারেননি নন স্ট্রাইকে থাকা আরেক ব্যাটসম্যান মার্ক উড। এক রান বৈধ হলে খেলা হয়ে যায় ড্র। তাতে খেলা গড়ায় সুপার ওভারে।

নিউজিল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে লকি ফার্গুসন ও জেমস নিশাম ৩টি, ম্যাট হেনরি ও কলিন ডি গ্রান্ডহাম একটি করে উইকেট শিকার করেন।

এর আগে টস জিতে প্রথমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৪১ রানের পুঁজি সংগ্রহ করে কিউইরা। দলের হয়ে হেনরি নিকোলাস (৫৫) ও টম লাথাম (৪৭) রান করেন।

লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। টস জিতে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় নিউজিল্যান্ড। কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন টস জিতে ইংলিশ অধিনায়ক ইয়ন মরগানকে ফিল্ডিং করার আমন্ত্রণ জানান।

ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের সপ্তম ওভারে দলীয় ২৯ রানের মাথায় মার্টিন গাপটিলের উইকেট হারায়  তারা। বিশ্বকাপের শুরু থেকে যার ব্যাট রান খরায় ধুঁকছে, ফাই্নালে হয়তো তার দল-ভক্তরা ভালো কিছু আশা করলেও ব্যাট হাতে ব্যর্থতার প্রমাণ ফাইনালে এসও দিলেন তিনি। ১৯ রান করে ক্রিস ওকসের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ফেরেন তিনি।

এরপর ওপেনার হেনরি নিকোলাস ও কেন উইলিয়ামসন দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব পালন করেন। দুজনে জুটিতে তোলেন ৭২ রান।

কিন্তু পুরো বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে নিউজিল্যান্ডের ত্রাতা হয়ে দলকে ফাইনালে আনার গুরু দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। কিন্তু ফাইনালে ৩০ রান করে লিযাম প্লাঙ্কেটের বলে জস বাটলারের তালুবন্দী হয়ে সাজঘরে ফিরে যান তিনি।

উইলিয়ামসন ফিরে গেলে দেখে-শুনে খেলতে থাকা ওপেনার নিকোলাসও বেশিদূর আর এগোতে পারেননি। দলীয় ১১৮ রানের মাথায় ইনিংসের ২৭তম ওভারে প্লাঙ্কেটের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। ৭৭ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৫৫ রান করনে নিকোলাস।

দলের ১৪১ রানের মাথায় ৩১ বলে ১৫ রান করে মার্ক উডের এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে ফেরেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান রস টেলর। বিশ্বকাপে এটি ছিল তার শেষ ম্যাচ। শেষটা বেশ ভালো হয়নি এই কিউইর। তবে এই ব্যাটসম্যানের আউটটি আম্পায়র দিলেও টিভি রিপ্লেতে সেটি নট আউট দেখা যায়। আম্পায়ারের হেলার শিকার হলেন তিনি।

প্রথম সারির চার ব্যাটম্যানকে হারিয়ে চাপে পড়ে নিউজিল্যান্ড। সেখান থেকে টম লাথাম-জেমস নিশাম ইংলিশ বোলারদের বিরুদ্ধে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও ১৭৩ রানের মাথায় মিড অনে ফিল্ডিং করা জো রুটকে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন নিশাম। ১৯ রান করে প্লাঙ্কেটের তৃতীয় শিকার হন তিনি।

ষষ্ঠ উইকেটে লাথাম-গ্রান্ডহাম জুটি দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিলেও বেশদূর যেতে পরেননি তারা। জুটিতে ৪৬ রান করার পর ক্রিস ওকসের বলে জেমস ভিন্সকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন কলিন ডি গ্রান্ডহাম। ১৬ রান আসে তার ব্যাট থেকে।

শেষ পর্যন্ত টম লাথামের ৫৬ বলে ৪৭ রানের ইনিংসের ওপর ভর করে ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৪১ রান সংগ্রহ করে উইলিয়ামসন বাহিনী।

ইংলিশ বোলারদের মধ্যে ক্রিস ওকস ও লিয়াম প্লাঙ্কেট ৩টি, জোফরা আর্চার ও মার্ক উড একটি করে উইকেট শিকার করেন।

প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট : ১০ ম্যাচে ৫৭৮ রান করে এবং দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট নির্বাচিত হন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন।


আরো সংবাদ



premium cement
শ্যামবাজার ঘাটে লঞ্চে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৪ ইউনিট ‘আমার শিশু মেয়েটির যে সর্বনাশ সে করেছে’ বান্দরবানের ৩ উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টির জন্য ইস্তিস্কার নামাজে মুসুল্লিদের ঢল বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের চাবিটা মনে হয় পার্শ্ববর্তী দেশকে দিয়েছে সরকার : রিজভী চীনের দক্ষিণাঞ্চলীলের গুয়াংডংয়ে সর্বোচ্চ স্তরের বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান গ্রেফতার মুসলিম শ্রমিক হত্যায় হিন্দু নেতারা চুপ কেন : প্রশ্ন হেফাজত নেতা আজিজুল হকের সাভারে বুধবার ১২ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে গাজা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কে জনতার অবরোধ ভাঙতে টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি

সকল