২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ফাইনালের চমক সবুজ উইকেট : ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠতে পারেন পেসাররা

ফাইনালের চমক সবুজ উইকেট : ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠতে পারেন পেসাররা - ছবি : সংগৃহীত

সেমিফাইনালে নিউজ়িল্যান্ডের কাছে ভারতের হারের চেয়েও বিস্ময়কর কিছুর দেখা মিলল শনিবার লর্ডসে। ফাইনালের বাইশ গজ। যেখানে এত সবুজের আভা যে, কে বলবে রোববার এখানে বিশ্বকাপ ফাইনাল হবে আর সেখানে খেলবে ঘরের টিম অইন মরগানের ইংল্যান্ড। বরং মনে হবে, এখানে কোহালির ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলতে নামছে জো রুটের দল।

সকালে লর্ডসে দশটা থেকে প্র্যাক্টিস করে ইংল্যান্ড। সেই সময় প্রথম দেখে চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা সকলের। ঘরের মাঠে কি তা হলে মর্গ্যান নিজেই সবুজে আক্রান্ত হতে যাচ্ছেন? কে না জানে যে, নিউজ়িল্যান্ডের সব চেয়ে বড় হাতিয়ার তাদের পেস বিভাগ। ট্রেন্ট বোল্ট, ম্যাট হেনরি এবং লকি ফার্গুসনের সঙ্গে থাকবেন জিমি নিশাম। তারকাখচিত ভারতীয় দলকে এরা সদ্য শুইয়ে দিয়ে এসেছেন ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে। তা হলে এ রকম ঘাসের পিচ পেলে আরো কত বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারেন!

তখনকার মতো মনে হচ্ছিল, সব দেশে যে রকম হয় তেমনই হয়তো লর্ডসেও পিচ-নাটক চলছে। কিছুক্ষণ বাঁদর খেলা দেখিয়ে বিকেলের দিকে পিচের ঘাস উড়িয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু ইংল্যান্ডের সময় সন্ধে ছ’টার সময়েও লর্ডস থেকে বেরোনোর সময় দেখা গেল পিচের সবুজ যেমন ছিল, তেমনই থেকে গিয়েছে। এর মাঝে ইংল্যান্ডে প্র্যাক্টিস করে হোটেলে ফিরে গিয়েছে। নিউজ়িল্যান্ড প্র্যাক্টিস করতে এসে প্রথমে পিচ দেখেছে। কেন উইলিয়ামসনরাও বোধ হয় প্রথম দেখে বিশ্বাস করতে পারেননি। তাই প্র্যাক্টিস সেরে ফেরার পথে আবার এলেন পিচ দেখতে। তখনো পিচের ঘাস ওড়ানো হয়নি। নিশ্চয়ই নিউজ়িল্যান্ড পেস ত্রয়ীর মুখে জল এসে গিয়েছে পিচ দেখে। যদি এই ঘাসই রেখে দেওয়া হয়, তা হলে বিশ্বকাপের ইতিহাসে এই প্রথম বার এমন পিচে ফাইনাল নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। লর্ডসের পিচের ছবি তুলে টুইটারে পোস্ট করে নাসের হুসেন লিখলেন, ‘‘পিচ আর আউটফিল্ড আলাদা করা যাচ্ছে না।’’

অনেকেই মনে করছেন, নিউজ়িল্যান্ডের পেস আক্রমণ এই বিশ্বকাপের সেরা। ভারতের বিরুদ্ধে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে সেটা তারা প্রমাণ করে দিয়েছেন। কোথাও যদি ইংল্যান্ডকে চাপে ফেলতে পারেন তারা, সেটা গতি ও সুইং দিয়েই। ইংল্যান্ড আবার চলতি বিশ্বকাপে ব্যাটিং উইকেটে প্রচুর রান তুলেছে। কিন্তু যখনই বোলারদের জন্য কিছু থেকেছে পিচে, তারা সমস্যায় পড়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ঘরের মাঠে অধরা বিশ্বকাপ জয়ের অভিযানে ইংল্যান্ডের সামনে এ রকম সবুজ পিচ তুলে দেয়া হচ্ছে কেন?

অইন মরগার সংবাদ সম্মেলনে অবধারিত ভাবেই সবুজ পিচের প্রসঙ্গ উঠল। মরগান দাবি করলেন, ‘‘পিচ যতটা না সবুজ, তার চেয়ে বেশি সবুজ দেখাচ্ছে।’’ তবুও ফাইনালের জন্য এমন টেস্ট পিচের রহস্যের সমাধান হয়নি। ইংল্যান্ডের নামী সাংবাদিকদের মতে, ম্যাচের সকালেই ঘাস কেটে যাওয়া উচিত অনেকটাই। এমন সবুজ পিচে খেলার সম্ভাবনা তারাও দেখছেন না।

ইংল্যান্ডের হাতেও ভালো বোলিং আক্রমণ রয়েছে। জোফ্রা আর্চার, মার্ক উড, ক্রিস ওকস, লায়াম প্লাঙ্কেট। সঙ্গে আদিল রশিদের লেগস্পিন। এ দিন ইংল্যান্ডের অনুশীলনের সময় আবার দেখা গেল, সবুজ পিচের পাশেই একটা উইকেটে দীর্ঘক্ষণ ধরে বোলিং অনুশীলন করে গেলেন তাদের দুই স্পিনার রশিদ ও মঈন আলি। তাতে পিচ-রহস্য আরো ঘনীভূত হলো। তা হলে কি ইংল্যান্ডও ধরে রেখেছে ঘাস ওড়ানো হবে? সেই কারণে স্পিনারদের তৈরি রাখছে?

কেন উইলিয়ামসনকে একই প্রশ্ন করা হল। প্রথমে তিনি বললেন, ‘‘সাধারণত, এখানে সকলের জন্য ভালো উইকেট হয়। তবে এটা দেখে মনে হচ্ছে, দু’দলের ফাস্ট বোলাররা খুব উৎসাহিত হবে।’’ নিউজ়িল্যান্ড অধিনায়ক প্রাক-ফাইনাল সেরা উক্তি পরিবেশন করে গেলেন। যখন তাঁকে ফের জিজ্ঞেস করা হল ফাইনালের আন্ডারডগ হওয়া নিয়ে। উইলিয়ামসনের জবাব, ‘‘আমরা যে ডগই হই না কেন, ভালো ক্রিকেট খেলার দিকে নজর দিতে হবে। বছরের পর বছর ধরে দেখা গেছে, একটা নির্দিষ্ট দিনে যে কেউ যে কাউকে হারাতে পারে। এর সঙ্গে কুকুরের জাতপাতের কোনো সম্পর্ক নেই।’’ হাস্যরোলের মধ্যে তিনি দ্রুত যোগ করলেন, ‘‘ইংল্যান্ড ফেভারিট হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে।’’


লর্ডসের বর্তমান পিচ প্রস্তুতকারকের নাম আবার সাবেক এক বিখ্যাত ফাস্ট বোলারের নামে। ম্যাকডারমট। ইনি যদিও ক্রেগ নন, কার্ল। ইংল্যান্ডের অধিনায়ক অইন মর্গ্যানের মতোই ডাবলিনে কেরিয়ার শুরু। সাউদাম্পটনে হেড কিউরেটর ছিলেন। ম্যাকডারমটের অতীত ইতিহাস বলছে, উইকেট বানানোর সময় তিনি বোলারদের কথাও মাথায় রাখেন। এক তরফা ব্যাটসম্যানদের স্বর্গ তৈরির ঘোর বিরোধী। হয়তো তার প্রতিফলন দেখা যাবে লর্ডসে ফাইনালের বাইশ গজে।

কোনো কোনো মহলে কথা উঠছে, আইসিসি হস্তক্ষেপ করল কি না? ইংল্যান্ডের ম্যাচে ব্যাটিং পিচের অভিযোগ আগে উঠেছিল এই বিশ্বকাপে। সেই সন্দেহ নস্যাৎ করতে নিয়ামক সংস্থা বোলার সহায়ক উইকেট তৈরির নির্দেশ দিয়েছে কি না, তা নিয়ে জল্পনা চলছিল। যার নিষ্পত্তি ফাইনাল না হওয়া পর্যন্ত হবে বলে মনে হচ্ছে না।

ফাইনালের জন্য হঠাৎ করে সবুজ পিচের আবির্ভাব দুই অধিনায়ককেই চিন্তায় ফেলে দিতে পারে। টসে জিতলে তা হলে কী করা উচিত? প্রথমে ব্যাট করা দল এই বিশ্বকাপে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জিতছে। লর্ডসে শেষ পাঁচটি ওয়ান ডে-তে যারা প্রথমে ব্যাট করেছে, তারা জিতেছে। ফাইনালের মতো হাইপ্রেশার ম্যাচে রান তাড়া করার ঝক্কি নেওয়া সহজ নয়। আবার ঘাসের উইকেটে প্রথমে বোলিং করার লোভ সংবরণ করাও কঠিন। তার উপর যদি ইংলিশ আবহাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আকাশ মেঘলা হয়ে ওঠে।

কোনো সন্দেহ নেই, যত নজর আজ লর্ডসের বাইশ গজের উপর। না, না, ভুল বললাম। লর্ডসের সবুজ বাইশ গজের উপরে!

 


আরো সংবাদ



premium cement