১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আরেক মোড়লের বিদায়

- ছবি: সংগৃহীত

ওঠা হলো না অষ্টম বার। মনেই হয়নি ফাইনালে উঠার জন্য লড়তে নেমেছে পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়নরা। ব্যাট-বল দু’হাতেই ব্যর্থ অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপের ঠিক কিছু সময় আগেও ছন্দ ছিলো না দলের খেলায়। হঠাৎ পূর্বের মতোই, আগে ছন্নছাড়া হলেও বিশ্বকাপে যেন ক্ষুধার্ত বাঘ হয়ে নামে অজিরা। এবারও শুরুটা সেরকমই ছিলো। বীর দর্পে সেমিফাইনালে উঠে অ্যারন ফিঞ্চের দলটি। কিন্তু সেমিফাইনালে এসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একদমই ছন্দহীন দল মনে হলো অজিদের।

ব্যাট হাতে ফুলকি ছুটানো ডেভিড ওয়ার্নার-অ্যারন ফিঞ্চ দু’জনের ব্যাট যেন ঘুটিয়ে গেছে। একমাত্র স্টিভেন স্মিথই লড়ে গেছেন ব্যাট হাতে। ৮৫ রানের ইনিংস খেলেও দলকে পারেননি ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে।

প্রথম পর্বে কোনাঠাসায় পড়ে ধুঁকতে ধুঁকতে সেমিফাইনালে উঠে সঠিক সময় জ্বলে উঠলো ইংলিশরা। ব্যাট-বল -ফিল্ডিং দেখে মনে হচ্ছিলো যেন, খেলাটা আসল জায়গায় খেলার জন্য জমিয়ে রেখেছে মরগান বাহিনী। পুরোই দেখার মতো তাল ছিলো নিজেদের মধ্যে।

অজি ব্যাটসম্যান স্মিথের ৮৫ রানের বিপরীতে ইংলিশ ওপেনার জেসন রয়ও খেলেন ৮৫ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস। কিন্তু স্মিথের ইনিংসটি তার দলকে অষ্টম বারের মতো ফাইনালের মুখ দেখাতে পারেনি। অন্য দিকে রয়ের ইনিংস খরা কাটিয়ে ২৭ বছর পর দলকে ফাইনালে তুলল।

তাই নিজ দেশে ২৫ হাজার দর্শকরে সামনে নায়ক মাঠে নায়কও বনে যান তিনি। আর ব্রিটিশদের কাছেও হয়ে ওঠেন সুপার হিরো।

তার ব্যাটিং কৃতিত্বেই অজিদের ৮ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে উঠে ইংল্যান্ড।

১৯৯২ সালে ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২২ রানে হারের পর দীর্ঘ ২৭ বছর আর ফাইনালের মুখ দেখেনি ইংল্যান্ড। অবশেষে নিজ দেশে সেই খরা আটলো তারা।

স্টিভেন স্মিথের ব্যাটে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে স্বগতিক ইংল্যান্ডকে ২২৪ রানের লক্ষ্য দেয় অস্ট্রেলিয়া। ১৭.৫ ওভার হাতে রেখে ২ উইকেট হারিয়ে সহজেই সেলক্ষ্য পাড়ি দেয় ইংলিশরা।

শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়া অস্ট্রেলিয়া দলকে একাই সামনের দিকে টানেন স্মিথ। কিন্তু অন্য ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ৪৯ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২২৩ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় অজিরা। স্টিভেন স্মিথ দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৫ রান করেন।

ফা্ইনালে উঠার লাড়াইয়ে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে বার্মিংহাম এজবাস্টনে মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় ম্যাচটি শুরু হয়। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধন্ত নেন অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ।

ব্যাটিং করতে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। স্কোর বোর্ডে ১৪ রান তুলতেই তারা হারায় ৩ উইকেট। টপ অর্ডারের তিন সেরা ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরে গেলে বড় ধরনের চাপে পড়ে অজিরা।

দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চকে তুলে নেন ইংলিশ পেসার জোফরা আর্চার। ফিঞ্চ ফিরেছেন শূন্য রানে। অস্ট্রেলিয়ার রান তখন ৪। এরপর জোড়া আঘাত হানেন আরেক পেসার ক্রিস ওকস। তৃতীয় ওভারে ডেভিড ওয়ার্নার ও সপ্তম ওভারে পিটার হ্যান্ডসকমকে ফিরিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন তিনি।

তবে ওয়ানডাউনে ব্যাট করতে নামা স্টিভেন স্মিথ ও পাঁচে নামা অ্যালেক্স ক্যারির দৃঢ়তায় প্রাথমিক চাপ সামলিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় তারা । কিন্তু দলের ১১৭ রানের মাথায় আদিল রশিদকে ওভার বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে  ডিপ এক্সট্রা কাভারে ফিল্ডিং করা জেমস ভিন্সের তালুবন্দীয় হয়ে ফেরেন ক্যারি। ৪৬ রান আসে তার ব্যাট থেকে। ব্যাট করতে নেমে আদিল রশিদের একই ওভারের শেষ বলে মার্কাস স্টয়নিস এলভিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে রানের খাতা খোলার আগে ফিরে গেলে ফের চাপে পড়ে অস্ট্রেলিয়া।

ম্যাক্সওয়েল নেমে ২২ রান করে তিনিও ফেরেন, পেট কামিন্সের ব্যাট থেকে আসে ৬ রান।

এক একপ্রান্ত আগলে রেখে দলকে টেনে নিতে থাকা স্মিথ ৮৫ রান করে রান আউটের শিকার হলে অজিরা আর সামনে এগাতে পারেনি বেশ। ১১৯ বলে ৬ চারে ৮৫ রানের এক দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেন স্মিথ। তার আউটের পর দ্রুতই ঘুটিয়ে যায় অজিরা। শেষদিকে মিচেল স্টার্কের ব্যাট থেকে আসে ২৯ রানের ওপর ভর করে ৪৯ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২২৩ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় অস্ট্রেলিয়া।

ইংলিশ বোলারদের মধ্যে ক্রিস ওয়াকস ও আদিল রশিদ ৩টি, জোফরা আর্চার ২টি ও মার্ক উড একটি উইকেট শিকার করেন।

অস্ট্রেলিয়ার দেয়া ২২৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে রীতিমতো ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন দুই ইংলিশ ওপেনার জেসন রয় ও জনি বায়রেস্টো। ১৭.২ ওভারে জুটিতে তোলেন ১২৪ রান। তখনই ম্যাচ ইংলিশদের কব্জায় অনেকটা চলে আসে। ৩৪ রান করে মিচেল স্টার্কের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে বায়রেস্টো সাজঘরে ফেরেন।

এই উইকেটটি নিয়ে স্টার্ক গড়েন বিশ্বরেকর্ড। বিশ্বকাপের এক আসরে ২৭ উইকেট শিকার করে তিনি এই রেকর্ড গড়েন। এর আগে তারই দেশের সাবেক ফাস্ট বোলার গ্লেন ম্যাকগ্রা ২৬ উইকেট নিয়ে এতাদিন সেই জয়াগায় অবস্থঅন করছিলেন। স্টার্ক আসনটি তার থেকে কেড়ে নেন।

আরেক ওপেনার রয় করতে থাকেন অজি বোলরাদের বিরুদ্ধে মারমুখো আচরণ। সেঞ্চুরির পথেই হাঁটছিলেন তিনি। কিন্তু ভুল আউটে কপাল পুড়লো ইংলিশ ওপেনার জেসন রয়ের। পেট কামিন্সের করা ইনিংসের ২০তম ওভারের চতুর্থ বলে উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারি ঝাঁপিয়ে পড়ে তালুবন্দী করা বলে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে শ্রীলঙ্কান আম্পায়ার কুমার ধর্মাসেনা আউটের আঙুল তুলে দেন রয়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু টিভি রিভিউতে স্পষ্ট দেখা যায় ব্যাট কিংবা গ্লাভস কোথও বল স্পর্শ পায়নি রয়ের। সাজঘরে ফেরার আগে ৬৫ বলে ৯ চার ও ৫ ছক্কায় ৮৫ রান করেন তিনি।

এরপর আর কোনো উইকেট হারাতে হয়নি ইংলিশদের। দু্ই অপরাজিত ব্যাটসম্যান জো-রুটের ৪৯ ও ইয়ন মরগানের ৪৫ রানের ওপর ভর করে ৩২.১ ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড। এ সাথে দীর্ঘ সময়ের ফাইনালের খারাও কাটলো তাদের। সুযোগ থাকছে বিশ্বকাপের খরা কাটানোরও।

অস্ট্রেলিয় বোলারদের মধ্যে মিচেল স্টার্ক ও পেট কামিন্স একটি করে উইকেট শিকার করেন।

ম্যান অব দ্যা ম্যাচ : ৮ ওভারে মাত্র ২০ রান দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার তিন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে ম্যাচ সেরা হন ইংলিশ পেসার ক্রিস ওয়াকস।


আরো সংবাদ



premium cement