২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আফগান অধিনায়ক ম্যাচ পাতিয়েছেন!

-

গতকালের ম্যাচে পাকিস্তানের যখন পরাজয় অবস্থা তখন বল হাতে এসে নিজেদের পরাজয়কেই যেন টেনে নিয়ে এলেন আফগান অধিনায়ক গুলবদিন নাইব। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। এমনকি এ সমালোচনায় যুক্ত হয়েছেন অনেক খেলোয়াড়ও।

আফগানিস্তানের তিন স্পিনারই ছিলেন মূলত ম্যাচের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে। পাকিস্তানের জন্য ম্যাচটি কঠিন করে দিয়েছিলেন মোহাম্মাদ নাবি, মুজিব ও রশীদ খান। কিন্তু অনেকটাই কঠিন হয়ে যাওয়া এ ম্যাচ এক ওভারেই মোর ঘুরিয়ে দেন ইমাদ ওয়াসিম।

টেনশনে ঘুম হারাম হওয়ার উপক্রম গ্যালারি ভর্তি দর্শকের। কিন্তু গুলবাদিনের করা ৪৬তম ওভারে এলোমেলো হয়ে গেছে আফগান স্বপ্ন। ইমাদ ওয়াসিম ওই ওভার থেকে নেন ১৮ রান। ঘুমন্ত লিডসের গ্যালারিতে তখন উল্লাস। পাকিস্তানের ড্রেসিং রুমেও সে ছোঁয়া। এরপর মুজিব এসে কন্ট্রোল করলেও রশীদ সেটা পারেননি। পাকিস্তানের ব্যাটসম্যান বিশেষ করে ইমাদ সে সুযোগটা আর দেয়নি। আত্মবিশ্বাসও বেড়ে গিয়েছিল। ফলে ওয়াহাবকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে তুলে নেন তারা জয় এ ম্যাচে তিন উইকেটে ২ বল হাতে রেখে। আফগানিস্তান সম্ভাবনাময়ী এক ম্যাচ হাতছাড়ার আফসোস করলেও পাকিস্তান সেমির স্বপ্ন জিইয়ে থাকায় জয়ের উদযাপন করে।

শেষ ওভারে পাকিস্তানের দরকার ছিল ৬ রান, তখনো লড়াইয়ের চেষ্টা করেননি গুলবদিন। শিনওয়ারি তখনো ২ ওভার বাকি। কিন্তু তাকে বল না দিয়ে শেষ ওভারেও নিজে বল করে ম্যাচটা ৪ বলের মধ্যে শেষ করেছেন গুলবদিন। আর শেষ ওভারের তৃতীয় বলে নষ্ট করেছেন রান আউটের সুযোগও। শুধু কী তাই? দলে ভালো ওপেনার থাকতেও পাকিস্তানের বিপক্ষে ওপেন করে ১৫ রানে আউট হয়েছেন গুলবদিন—ওয়ানডেতে তার ব্যাটিং গড় ২২.১৫!

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাই কাল ম্যাচের শেষ কয়েক ওভার থেকেই মুণ্ডুপাত চলছে গুলবদিনের। কেউ বলছেন, আফগান অধিনায়ক ম্যাচ পাতিয়েছেন, কেউ মনে করছেন গুলবদিনের মতো স্বার্থপর অধিনায়ক এই বিশ্ব-সংসারে দ্বিতীয়টি নেই। অনেকে আবার গুলবদিনকে মনে করছেন, তার ঘিলুতে ক্রিকেটজ্ঞান বলে কিছু নেই। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীদের বেশির ভাগই মনে করছেন, গুলবদিন যে কোনোভাবেই হোক ম্যাচ পাতিয়েছেন। কেউ কোনো অকাট্য প্রমাণ দাখিল করতে পারেননি। ম্যাচে তার সিদ্ধান্তগুলো এবং রান আউটের সুযোগ নষ্ট করা নিয়ে এভাবে ক্ষোভ ঝেড়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।

তবে সাবেক ক্রিকেটাররা সরাসরি কিছু না বলেও কিন্তু ঠারে-ঠোরে ঠিকই প্রশ্ন তুলেছেন। ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ও বিশ্লেষক আকাশ চোপড়া যেমন টুইট করেছেন, ‘আম্পায়ারিং ও নেতৃত্বের মান আজ প্রশ্নের মুখে...।’ আম্পায়ারিং নিয়ে প্রশ্ন হয়তো উঠত না যদি আফগানিস্তানের হাতে রিভিউ থাকত। আর এই রিভিউ না থাকার পেছনে অবদানও গুলবদিনের।

৫ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান তখন কাঁপছিল। ম্যাচ সেরা ওয়াসিম তখনো মাত্র ১ রানে। এমন অবস্থায় রশিদের একটি বল প্যাডে লেগেছিল। আফগানদের জোরালো আবেদনেও নড়লেন না আম্পায়ার উইলসন। রিভিউ না থাকায় আফগানরাও সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেনি। পরে দেখা গেল, ওটা নিশ্চিত আউট ছিল। রিভিউ না থাকার কারণ, বাবর আজম উইকেটে থাকতে আফগান বোলার আর উইকেটরক্ষক তেমন একটা আগ্রহ না দেখালেও গোঁয়ার্তুমি করে রিভিউ নিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন গুলবদিন।

সে যাই হোক, গুলবাদিন ৪৬তম ওভারে বোলিংয়ে আসার পরই মাইকেল ভনের টুইট, ‘গুলবদিন...!!!!!! ....’ আফগান অধিনায়কের ওপর সাবেক এ ইংলিশ অধিনায়ক এতই ক্ষিপ্ত ছিলেন যে তাৎক্ষণিকভাবে আরও একটি টুইট করেন, যা ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য।এ ছাড়া ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যানও সমালোচনা করেছেন গুলবাদিনের, ‘৪৬তম ওভারের আগ পর্যন্ত ম্যাচ আফগানিস্তানের হাতেই ছিল। কিন্তু অধিনায়কের কৌশলগত ভুল আর ডিআরএস না থাকার মূল্য দিতে হয়েছে।’

কাইফ যে সিদ্ধান্তকে কৌশলগত ভুল বলছেন সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখে তা ভীষণ সন্দেহজনক। এক ক্রিকেটপ্রেমী তো টুইটারে সোজাসাপ্টাই লিখেছেন, ‘সম্ভাব্য ম্যাচ পাতানোর জন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত। বোলিংয়ে যখন বাকিরা ভালো করছে তখন তার বল করতে আসার এই একটাই ব্যাখ্যা হতে পারে। সে একটা!’ গুলবদিন ম্যাচ পাতিয়েছেন এমন সন্দেহে টুইটের সংখ্যাই বেশি। তবে এর মধ্যেই একটি ক্রিকেটীয় প্রশ্ন তুলেছেন ভারতের ক্রিকেট পরিসংখ্যানবিদ সম্পথ বান্দারুপল্লী, ‘অধিনায়ক না হলে গুলবদিন নাইব কি আফগানিস্তান একাদশে সুযোগ পেতেন?’

বিশ্বকাপ শুরুর আগে বিতর্কিতভাবে গুলবদিনের কাঁধে নেতৃত্বভার তুলে দিয়েছিল আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। এ নিয়ে তখন প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন আফগান ক্রিকেটাররা। আর কাল তার জঘন্য সিদ্ধান্তের জন্য আফগানিস্তান ইতিহাস গড়ার পথে থেকেও পারেনি। মুণ্ডুপাত তো হবেই।


আরো সংবাদ



premium cement