১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে দিলো পাকিস্তান

- ছবি : সংগৃহীত

বাবর আজম ও হারিস সোহেলের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে নিউজিল্যান্ডকে ছয় উইকেটে হারালো পাকিস্তান। এই জয়ে বিশ্বকাপে সেমিফাইনালের আশাও টিকে থাকলো পাকদের। আগে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ডের দেয়া ২৩৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৪৯.১ ওভারে চার উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য পাড়ি জমায় সারফরাজ বাহিনী। দলের হয়ে সর্বোচ্চ অপরাজিত সেঞ্চুরি (১০১) রান করেন বাবর আজম। হারিস সোহেল করেন (৬৮) রান।

এর আগে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তানী বোলারদের তোপে পড়ে ৫০ ওভারে ছয় উইকেট হারিয়ে ২৩৭ রান সংগ্রহ করে কিউই ব্যাটসম্যানরা। দলের হয়ে জেমস নিশাম সর্বোচ্চ (৯৭) রান করেন। কলিন ডি গ্রান্ডহ্যামের ব্যাট থেকে আসে (৬৪) রান।

সেমিফাইনালের লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় ছাড়া কোনো বিকল্প পথ নেই পাকিস্তানের। এমন চাপ নিয়ে বুধবার বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হয় পাকিস্তান। বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় ম্যাচটি শুরু হয়। টস জিতে কিউই অধিনায়ক কেন উইলয়ামসন আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন।

আগে ব্যাট করতে নেমে শরুতেই পাকিস্তানী বোলারদের অ্যাকশনে বেহাল দশা দেখা দেয় নিউজল্যান্ড ব্যাটিং লাইন আপে। ৪৬ রানে হারায় প্রথম সারির চার ব্যাটসম্যানকে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই প্রথম উইকেট হারায় কিউইরা। বল হাতে দারুণ ছন্দে থাকা মোহাম্মদ আমিরের প্রথম ওভারের ফার্স্ট বলেই দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান মর্টিন গাপটিল ফেরেন ৫ রানে।  ওয়ানডাউনে ব্যাট করতে নামেন বিশ্বকাপে দলের নিয়মিত ত্রাতা কেন উইলিয়ামসন। মুনরোকে নিয়ে দেখে-শুনে শুরু করতে থাকেন তিনি। কিন্তু পাক অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদে পাওয়ারপ্লেতেই তিন বোলার ব্যবহার করে দারুণ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেন এই ম্যাচে। মোহাম্মদ আমির বলে সুইং ঠিকভাবে না পাওয়াতে তাকে হাত খুলে খেলার চেষ্টা করেন কিউই ব্যাটসম্যানরা। তখন আক্রমণে নিয়ে আসেন বাঁ-হাতি পেসার শাহিন আফ্রিদিকে। ইণিংসের শুরুতে পাওয়ারপ্লেতে স্পিনার হাফিজকে দিয়ে অ্যাটাক শুরু করেন, সাথে আমির এবং তৃতীয় বোলার হিসেবে আনা হয় আফ্রিদিকে। শাহিন আফ্রিদি বোলিংয়ে আসার পর শুরু হয় ব্যাটসম্যানদের আসল পরীক্ষা। ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে কলিন মুনরোকে ১২, অভিজ্ঞ রস টেলর ৩ ও টম লাথাম ১ রানে ফেরেন শাহিনের শিকার হয়ে। ৪৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে অনেকটা চাপে পড়ে যায় কিউইরা। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে দলকে সামনের দিকে টেনে নিয়ে যেতে থাকেন কেন উইরিয়ামসন। পঞ্ম উইকেট জুটিতে কেন-জেমস নিশাম মিলে তোলেন ৩৭ রান। কিন্তু ৮৩ রানের মাথায়  ৪১ রান করে কেন উইলিযামসনকে লেগ স্পিনার শাদাব খান ফেরালে ফের কঠিন চাপে  পড়ে যায় নিউজিল্যান্ড। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে দলের চাপ কাটানোর দায়িত্ব নেন জেমস নিশাম ও কলিন ডি গ্রান্ডহ্যাম। দুজনের ধৈর্যশীল ইনিংসে নিউজিল্যান্ডও পায় সম্মনজনক স্কোর। জুটিতে তোলেন ১৩২ রান। দলের অগ্রজের ভূমিকা পালন করে জেমস নিশাম তুলে নেন ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ হাফসেঞ্চুরি। গ্রান্ডহ্যাম তুলে নেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় অর্ধশতক। শেষ পর্যন্ত গ্রান্ডহ্যামের ৭১ বলে ৬৪ ও নিশামের ১১২ বলে ৫ চার ও দুই ছয়ে অপরাজিত ৯৭ রানের ওপর ভর করে ৫০ ওভারে ছয় উইকেট হারিয়ে ২৩৭ রানের সম্মানজনক স্কোর দাঁড় করায় নিউজিল্যান্ড।

পাকিস্তানী বোলারদের মধ্যে শাহিন আফ্রিদি ৩টি, মোহাম্মদ আমির ও শাদাব খান একটি করে উইকেট শিকার করেন।

২৩৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় ও ট্রেন্ট বোল্টের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে ফুল শর্ট খেলতে গিয়ে গাপটিলের শিকার হয়ে ১২ রান করে ফেরেন পাক ওপেনার ফখর জামান। পাওয়ারপ্লে শেষ হলেই কিউই অধিনায়ক আক্রমণে আনেন ফর্মে থাকা লাকি ফার্গুসনকে। এসেই আস্থার প্রতিদান দিতে দিতে করেননি এই পেসার। নিজের ওভারের দ্বিতীয় বলেই দারুণ এক বাউন্সিং ডেলিভারিতে ইমাম উল হককে ব্যক্তিগত ১৯ ও দলীয় ৪৪ রানে গাপটিলের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান ফার্গুসন। দুই ওপেনারকে দ্রুত হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় পাকিস্তান। সেখান থেকে দলকে টেনে নিতে থাকেন বাবার আজম ও চারে ব্যাট করতে নামা অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ হাফিজ। দুজনে জুটিতে ৭৩ বলে তোলেন ৫০ রান। এই ম্যাচে বাবর আজম গড়েন ৬০ ম্যাচে দ্বিতীয় দ্রুততম ৩ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করার রেকর্ড। ৫৭ ম্যাচে ৩ হাজার রান করে এই রেকর্ডে শীর্ষে রয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান হাশিম আমলা। মাঠে নামার আগে ৩ হাজার থেকে ২৯ রান দূরে ছিলেন বাবর। ৬৫ বলে তুলে নেন বাবর তুলে নেন ফিফটি। কিন্তু ১১০ রানের মাথায় হাফিজ পার্ট টাইম বোলার কেন উইলিয়ামসনের বলে বড় শর্ট খেলতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ফার্গুসনের তালুবন্দী হয়ে ৩২ রান করে ফেরেন। উইলিয়ামসন ৬৬ রানের জুটি ভেঙে দলকে এনে দেন দারুণ ব্রেক থ্রো। অনিয়মিত বোলার এস ব্রেক থ্রো দিরেও নিয়মিত বোলাররা ছিলেন পাক ব্যাটসম্যান বাবর আজম ও হারিস সোহেলের কাছে অসহায়। চতুর্থ উইকেট জুটিতে দুজনের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে জয় পেতে বেশ বেগ পেতে হয়নি পাকদের। ১২২ বলে জুটিতে পূর্ণ করেন শতক।৬৩ বলে ক্যারিয়ারের দ্বাদশ ফিফটি করেন হারিস। অন্য দিকে ১২৪ বলে বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন বাবর আজম। জয়ের জন্য যখন ২ রান প্রয়োজন লাগে তখন রান আউটের শিকার হয়ে ৭৬ বলে ৫ চার ‍ও দুই ছয়ে ৬৮ রান করে ফেরেন হারিস। দুই রানের জন্য ব্যাট করতে মাঠে নামেন সরফরাজ আহমেদ। শেষ ওভারের প্রথম বলে ফার্গুসনকে চার হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেন সারফরাজ। বাবার আজম ১২৭ বলে ১১ চারে ১০১ রান ও সারফরাজ ৫ রান নিয়ে অপরাজিত থেকে জয় নিশ্চিত করে মাঠ থেকে উঠেন। আর পাকিস্তান পায় ছয় উইকেটের দুর্দান্ত জয়। এই জয়ে বেঁচে থাকলো সেমিফাইনালের আশাও।

কিউই বোলারদের মধ্যে ট্রেন্ট বোল্ট, লাকি ফার্গুসন ও কেন উইলিয়ামসন একটি করে উইকেট শিকার করেন।

ব্যাট হাতে ১০১ রান করে ম্যাচের সেরা নৈপুণ্য দেখিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন পাকিস্তানের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান বাবর আজম।

এএলএমটি

 


আরো সংবাদ



premium cement