১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দুর্দান্ত জয় তুলে নিলো পাকিস্তান

- ছবি : সংগৃহীত

সেমিফাইনালে উঠার জন্য দু’দলের বাঁচা-মরার ম্যাচ ছিলো এটি। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪৯ রানে হারিয়ে সেমিফাইনালের আশা জীবিত রাখলো পাকিস্তান। আগে ব্যাট করে পাকিস্তানের দেয়া ৩০৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৫৯ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় আফ্রিকানরা। দলের হয়ে সর্বোচ্চ (৬৩) রান করেন ফাফ ডু প্লেসিস।

টস জিতে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩০৮ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান। দলের হয়ে সর্বোচ্চ (৮৯) রান করেন হারিস সোহেল। বাবর আজমের ব্যাট থেকে আসে (৬৯) রান।

সেমিফেইনালের আশা টিকিয়ে রাখতে এই ম্যাচ জয় ছাড়া বিকল্প পথ ছিলো না  দু’দলের। এমন বাঁচা-মরার লড়াইয়ে মাঠে নামে পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকা।

লন্ডনের লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় ম্যা্চটি শুরু হয়। টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানের অধিনায়ক সারফরাজ আহমেদ।

টিকে থাকার ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ফখর জামান ও ইমাম উল হকের ব্যাটে ওপেনিং জুটিতে ১৪.৫ ওভারে ৮১ রান তোলে উড়ন্ত সূচনা করে পাকিস্তান। ১৫তম ওভারের পঞ্চম বলে বিধ্বংসী ফখর জামানকে দলীয় ৮১ এবং ব্যক্তিগত ৪৪ রানে ফিরিয়ে আফ্রিকানদের ব্রেক থ্রো এনে দেন ইমরান তাহির। ইনিংসের ২১তম ও নিজের চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলে ইমাম উল হককে দলীয় ৯৮ ও ব্যক্তিগত ৪৪ রানে ফিরিয়ে সেই ইমরা তাহির ম্যাচে ফেরান দলকে। ওয়ানডাউনে ব্যাট করতে নামা বাবর আজম ও চার নাম্বার পজিশনে ব্যাট করতে নামা অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ হাফিজ নতুন করে জুটি বাঁধার লক্ষ্যে দেখে-শুনে ব্যাট করে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু হাফিজ একটু বেশি হিট করে খেলতে গিয়ে বার বার আফ্রিকান বোলারদের আবেদনের শিকার হন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনিয়মিত বোলার অ্যাইডেন মার্করামের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ২২ বলে ২০ রান করে ফেরেন হাফিজ। এই জুটি থেকে আসে ৪৫ রান। চতুর্থ উইকেট জুটিতে হারিস-বাবর মিলে গড়েন ৮১ রানের জুটি। ঠান্ডা মাথায় খেলে বাবার তুলে নেন ক্যারিয়ারের ১৫তম অর্ধশতক। ৮০ বলে ৭ চারে ৬৯ রান করে ফুল শর্ট খেলতে গিয়ে নিগিদির তালুবন্দী হয়ে আন্দিল পেহলিকায়োর শিকার হন বাবর। ২২৪ রানের মাথায় বাবর আউট হলে ইমাদ ওয়াসিম আসেন ব্যাটিংয়ে। পঞ্চম উইকেটে আপ্রিকান বোলারদের বিপক্ষে হারিস-ইমাদ তুলতে থাকেন দ্রত রান। ২৬ বলের ৫০ রান তোলেন দুজনে। ১৫ বলে ২৩ রান করে ইমাদ ফেরেন নিগিদির শিকার হয়ে। মাঠে নেমে ৪ রান করে ফিরে যান ওয়াহাব রিয়াজও। শেষ পর্যন্ত ৫৯ বলে ৯ চার ও ৩ ছক্কায় ৮৯ রান করে ইনিংসের শেষ ওভারের পঞ্চম বলে ক্যাচ নিগিদির বলে ডি ককের তালুবন্দী হয়ে ফেরেন হারিস। শেষ দিকে সরফারাজ ২ ও ১ রান করে অপরাজিত থাকেন শাদাব খান। এতে ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তানের  সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩০৮ রান।

আফ্রিকান বোলারদের মধ্যে লুঙ্গি নিগিদি ৩টি, ইমরান তাহির ২টি, আন্দিল পেহলিকায়ো ও অ্যাইডেন মার্করাম একটি করে উইকেট শিকার করেন।

৩০৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি আফ্রিকার। পাক অধিনায়ক শুরুতে আনেন অপ স্পিনার হাফিজকে আক্রমণে। প্রথম ওভারে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলেও্, স্পিন-পেসের সংমিশ্রণে দ্বিতীয় ওভারেই আক্রমণে আনেন দলের মূল াস্ত্র মোহাম্মদ আমিরকে। ইনিংসের দ্বিতীয় ও নিজের প্রথম ওভারের ফার্স্ট বলেই হাশিম আমলাকে ২ রানে ফিরিয়ে শুরুতেই দলকে বল হাতে দুর্দান্ত সূচনা এনে দেন আমির। আরেক ওপেনার ডি কক ওয়ানডাউনে নামা ফাফ ডু প্লেসিসকে নিয়ে দেখে-শুনে খেলে পাক বোলারদের মোকাবেলা করে রান তুলতে থাকেন সাবলীল গতিতে। দুজনে গড়েন ৮৭ রানের জুটি। কিন্তু ইনিংসের ২০তম ওভারে নিজের পঞ্ম ওভার কারতে আসেন পাক লেগ স্পিনার শাদাব খান। ওভারের দ্বিতীয় বলে শাদাবকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ইমামের তালুবন্দী হয়ে ৪৭ রান করে ফেরেন ডি কক। ককের উইকেট তুলে নিয়ে পাকিস্তান দলকে দুর্দান্ত ব্রেক থ্রো এনে দেন শাদাব। পরের ওভার করতে এসে চার নাম্বার পজিশনে ব্যাট করতে নামা অ্যাইডেন মার্করামকে ৭ রানে ফিরিয়ে প্রোটিয়াদের পুরোপুরি চাপে ফেলে দেন এই লেগি। দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে নিজের পঞ্ম ওভারের তৃতীয় বলে ফাফ ডু প্লেসিসকে (৬৩) রানে ফিরিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার মেরুদন্ড ভেঙে দেন পেসার মোহাম্মদ আমির। ডেভিড মিলারকে নিয়ে ৫ নাম্বারে নামা ভ্যান ডার দুসেন ফের ব্যাট হাতে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও শেষ দিকে বলের চেয়ে রান হয়ে দাঁড়ায় দ্বি-গুণ। নিরুপায় হলেও দুই ব্যাটসম্যান হাত খুলে খেলা ছাড়া তখন আর কোনো উপায় ছিলো না তাদের। কিন্তু ৮০তম ওভারে ৪৭ বলে ৩৬ রান করা ভ্যান ডার দুসেনকে ফিরিয়ে নিজের তৃতীয় শিকার তুলে নেন শাদাব। শেষ ১০ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন লাগে প্রতি ওভারে ১২ গড়ে ১২০ রান। হাতে তখন ৫ উইকেট। কিন্তু এই রান তাড়া করতে যেমন ইনিংস খেলা দরকার ছিলো, কোনো ব্যাটসম্যানই সেভাবে নিজেদের মেলে ধরার সুযোগ পাননি পাক বোলারদের সামনে। শেষ দিকে ব্যাটসম্যানরা ছিলেন আসা-যাওয়ার প্রেক্টিসে। মিলার ৩৭ বলে ৩১, আন্দিল পেহলিকায়ো ৩২ বলে ৪৬ ও ক্রিস মরিসের ১৬ রানের সুবাধে শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৫৯ রান করতে সক্ষম হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। আর তাতে ৪৯ রানে প্রোটিয়াদের হারিয়ে বিশ্বকাপে দ্বিতীয় জয়ের আনন্দে মেতে ওঠেন পাকিস্তানী ক্রিকেটাররা।

পাকিস্তানী বোলারদের মধ্যে শাদাব খান ও ওয়াহাব রিয়াজ ৩টি, মোহাম্মদ আমির ২টি ও শাহিন আফ্রিদি একটি উইকেট শিকার করেন।

৫৯ বলে ৮৯ রান করে ব্যাট হাতে সেরা পারফর্ম করে ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন পাকিস্তানের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হারিস সোহেল।


আরো সংবাদ



premium cement