২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দ্বিতীয় টেস্টেই প্রথম জয় পেল আফগানিস্তান

- ছবি : সংগৃহীত

আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে নিজেদের প্রথম টেস্ট জয় তুলে নিয়েছে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে ভালো খেলা আফগানিস্তান। পাঁচদিনের টেস্টে একদিন বাকি থাকতেই তারা লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। মূলত রহমত শাহ ও ইহসানউল্লাহর ফিফটিতে তিন উইকেট হারিয়ে সহজেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় আফগানরা।

ভারতের দেরাদুনের রাজীব গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ক্রিকেটের নবীনতম দুই দেশের লড়াইয়ে জয়টি যায় আফগানদের পক্ষে। এর ফলে সোমবারই নিজেদের দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচেই জয়ের সুঘ্রাণ পেয়ে যায় দেশটি। এর আগে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল আফগানদের। কিন্তু তাতে ইতিহাস গড়া হয়নি বরং বেশ খানিকটা নাস্তানাবুদ হয় আসগর আফগানের বাহিনী।

অন্যদিকে পাকিস্তানের বিপক্ষে দেশের মাটিতে নিজেদের প্রথম টেস্ট খেলা আয়ারল্যান্ড হারল দ্বিতীয় ম্যাচটিত্রে। তবে হারলেও হারানোর কিছু নেই আয়ারল্যান্ডের। কেননা সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের হিসেবে আয়ারল্যান্ডের তুলনায় অনেকখানি এগিয়ে আছে আফগানিস্তান।

দেরাদুনে টেস্টের চতুর্থ দিনে ২৯ রান নিয়ে দিন শুরু করা আফগানিস্তানের দরকার ছিল মাত্র ১১৮ রান। উইকেট খরচ হয়েছিল মাত্র একটি। এ অবস্থায় শতরানের জুটি গড়ে রহমতের সাথে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন ইহসানউল্লাহ। দিনের শুরু থেকেই চালকের আসনে ছিল আফগানিস্তান। সেই লাগামে আর ঢিল পড়তে দেননি আফগান ক্রিকেটাররা। আরো দুটি উইকেট পড়লেও চার হাঁকিয়ে আফগানিস্তানকে ইতিহাস গড়া জয় এনে দেন হাশমতউল্লাহ শাহিদি। দলের জয়কে সঙ্গে নিয়ে ফেরা ইহসানউল্লাহ করেন ৬৫ রান। টেস্ট অভিষেকে ফিফটি পাওয়া এই ওপেনারের ১২৯ বলের দায়িত্বশীল ইনিংস গড়া আট চার ও দুই ছক্কায়। রহমত শাহ করেছিলেন ১২২ বলে ৭৬ রান। তার ইনিংসে ছিল ১৩টি চারের মার। দুই ইনিংসেই ফিফটি করা রহমত জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। এদিকে দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেয়া রশিদ খান এই টেস্টে মোট আটটি উইকেট পকেটে ভরেন।

আয়ারল্যান্ডের পক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে অর্ধশতক তুলে নেন অ্যান্ডি বালবিরনি (৮২) ও নেইল ওব্রেইন (৫৬)। আফগানিস্তানের পক্ষে প্রথম ইনিংসে অর্ধশতক করেন রহমত শাহ (৯৮), হাশমতুল্লাহ আফ্রিদি (৬১) ও আসগর আফগান (৬৭)। দ্বিতীয় ইনিংসে অর্ধশতক তুলে নেন রহমত শাহ (৭৬) ও ইহসান উল্লাহ (৬৫)।

একনজরে স্কোর:
আয়ারল্যান্ডের ইনিংস : ১৭২ ও ২৮৮
আফগানিস্তান ১ম ইনিংস: ৩১৪ ও ১৪৭/৩
ফল: আফগানিস্তান ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রহমত শাহ

আরো পড়ুন : যেভাবে ভয়ঙ্কর দলে পরিণত হলো আফগানিস্তান
বিবিসি, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৩:২৬

সংযুক্ত আরব আমিরাতের এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বের সেরা চারটি দল হলো আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারত।

শ্রীলঙ্কাকে ৯১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে টুর্নামেন্টে শুরুতেই সাবেক বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নদের ছিটকে দেয় আফগানিস্তান।

যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের ক্রিকেটীয় উত্থান
আফগানিস্তানের ক্রিকেটের জন্য চলতি বছরটা দারুণ কিছু। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলা, ২০১৯ সালের ওয়ানডে ফর‍ম্যাটের বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে জায়গা করে নেয়া বড় অর্জন।

যদিও আফগানিস্তানের দলটি ইনজামাম উল হক বা লালচাঁদ রাজপুতের মতো কোচের অধীনে খেলেছে। কিন্তু এর আগে কোচরা আফগানিস্তান গিয়ে কোচিং করাতে নিরাপদ বোধ করতেন না।

তাদের মধ্যে একজন অ্যান্ডি মোলস। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের সাবেক এই কোচ ২০১৫ বিশ্বকাপের আগে আফগানিস্তানের কোচের পদে নিয়োগ পান।

তিনি বেশ অবাক হতেন যেভাবে ১৯৭৮ সাল থেকেই বিভিন্ন দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে যাওয়া একটি দেশ ২০০৮ সালে ঠিকভাবে ক্রিকেট খেলা শুরু করে এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের সর্বনিম্ন পর্যায়ের ওয়ার্ল্ড লিগ থেকে বিশ্বকাপের মতো আসরে জায়গা করে নেয়।

অ্যান্ডি মোলসের মতে যেই দেশে অনেক বেশি ভাঙ্গা-গড়ার মধ্য দিয়ে যায় ক্রিকেট সেখানে একটি ঐক্য তৈরির শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। আর মোহাম্মদ নবীর মতো ক্রিকেটাররা সে গল্পের রুপকার।

২০১৩ সালে যখন আফগানিস্তান ২০১৫ বিশ্বকাপের জন্য উত্তীর্ণ হয়, কাবুল ও কান্দাহারের পথেঘাটে উৎসব আয়োজিত হয়।

বিশ্বকাপের আগের বছর আফগানিস্তান ২০১৪ এশিয়া কাপে বাংলাদেশকে ৩২ রানে হারায়। সেটা ছিল কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে আফগানিস্তানের প্রথম জয়।

বাংলাদেশের ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফিস মনে করেন, "যখন একটি দেশের নেতিবাচক সংবাদ অনেক বেশি থাকে তারা কোনো একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে মন দেয়, এটা অনেকটা বাংলাদেশের মতোই, বাংলাদেশেও খুব কম ইতিবাচক বিষয়গুলোর মধ্যে একটা ক্রিকেট। এটা আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে আরো বেশি কাজ করে।"

নাফিস বলেন, "পাকিস্তান আফগানিস্তানের প্রতিবেশি দেশ। আফগানিস্তানের যুদ্ধ চলাকালীন প্রচুর উদ্বাস্তু বা আশ্রয়হীন মানুষ পাকিস্তানে থেকেছে। তারা ক্রিকেটটা বুঝেছে ভালবেসেছে।"

তিনি যোগ করেন, "রাজনৈতিক অবস্থান বা যে কোনো সংকটকে উতরে সেসব জায়গায় ক্রিকেটের একটা জয় জায়গা করে নিতে পারে। আফগানিস্তান ক্রিকেট দিয়ে একটা আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।"

মানসিক শক্তি আফগানিস্তানের ক্রিকেটের একটা বড় দিক বলে মনে করেন শাহরিয়ার নাফিস। তাদের জয়ের আগ্রহ বা কিছু করে দেখানোর আগ্রহটা অনেক বেশি।

ওয়ানডেতে ৪৮ ম্যাচ খেলে ১১০ উইকেট নেন রশিদ খান। এখানে তার ইকোনোমি রেট ৩.৯২।
আফগানিস্তানের বড় শক্তি তাদের বোলিং লাইন আপ। মাত্র একটি টেস্ট খেলা আফগানিস্তান শুধু স্পিন আক্রমণ দিয়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিপক্ষের জন্য।

বিশেষত এক্ষেত্রে রশিদ খানের কথা আলোচনা করা হয়ে থাকে। ২০১৭ সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে যোগ দেন রশিদ খান।

নিয়ন্ত্রিত বোলিং, রান রেট কম এবং নিয়মিত উইকেট শিকারি এসব গুণ তাকে আইপিএলের অন্যতম বড় প্রতিভা বানিয়ে তোলে।

সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে দু বছরে মোট ৩১ ম্যাচে ৩৮টি উইকেট নিয়েছেন রশিদ খান।

আফগানিস্তানের হয়ে রশিদ খানের টি-টোয়েন্টি রেকর্ড আরো ভাল। ৩৫ ম্যাচে ৬৪ উইকেট নিয়েছেন এই লেগ স্পিনার। গড় মাত্র ১২.৪০।

ওয়ানডেতে ৪৮ ম্যাচ খেলে ১১০ উইকেট নেন রশিদ খান। এখানে তার ইকোনোমি রেট ৩.৯২।

রশিদ খান এখন বিশ্বের ছয়টি দেশের টি-টোয়েন্টি লিগে অংশ নেন। রশিদ খানের সাথে যোগ দিয়েছেন ১৭ বছর বয়সী মুজিব উর রহমান। মুজিব তার অফস্পিনে ১৯টি ওয়ানডে ম্যাচে ৩৯টি উইকেট নিয়েছেন। আর আফগানিস্তানের অন্যতম বড় তারকা মোহাম্মদ নবী এই স্পিন আক্রমণে অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করেন। মুজিব বা রশিদের মতো রহস্য না থাকলেও নবীর বোলিং মাঝের ওভারগুলোতে বেশ ভালো রান নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

৫০ ওভারের খেলা বা ২০ ওভারের খেলায় এই তিন বোলারের স্পেল অনেকটা প্রভাব বিস্তার করে।

দুর্বল দিক : আফগানিস্তানের ব্যাটিং

আফগানিস্তান ব্যাটিং দল হিসেবে তেমন ভীতি জাগানিয়া নয়। উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ শাহজাদ মারকুটে ভূমিকা পালন করেন তবে তেমন ধারাবাহিক নন।

রহমত শাহ, মোহাম্মদ নবী, হাসমতউল্লাহ শহীদির ব্যাটের দিকেই তাকিয়ে থাকে আফগানিস্তানের ক্রিকেট ভক্তরা।

আফগানিস্তান যে ক্রিকেটীয় পরিকল্পনায় মূলত থাকে প্রতিপক্ষের সামনে মোটামোটি একটা সংগ্রহ দাঁড় করিয়ে সেটাকে ডিফেন্ড করা।

বাংলাদেশের একজন ক্রিকেট বিশ্লেষক ও নারী দলের ক্রিকেটার সাথিরা জাকির জেসির মতে, "আফগানিস্তানের ক্রিকেট শক্তিটা প্রাকৃতিক। এখানে ক্রিকেটটা অনেকটা পাকিস্তান থেকে অনুপ্রাণিত। ব্যাটিং এ খানিকটা পিছিয়ে থাকলেও, স্পিন ও পেস বোলিং মিলিয়ে একটা শক্তিশালী লাইন আপ থাকে আফগানিস্তানের।"


আরো সংবাদ



premium cement