২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

'দৌড়া বাঘ আইলো'র এক যুগ

খেলার মাঠে দৌড়া বাঘ আইলো - সংগৃহীত

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের একটি সমর্থক গোষ্ঠী 'দৌড়া বাঘ আইলো'। যারা এক যুগ পার করেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনে।

২০০৬ সালের ৯ ডিসেম্বর এই গোষ্ঠীর পথচলা শুরু বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনে। ওই দিন বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজের ৫ম ওয়ানডেতে এই গ্রুপ একত্র হয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে সমর্থন দেয়া শুরু করে।

তাদের পরিকল্পনা ছিল ইংল্যান্ডের বার্মি আর্মির মতো বাংলাদেশের জন্যও একটি সমর্থক গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করা।

গ্রুপটি নিজেদের মধ্যে অর্থ সংগ্রহ করে জার্সি তৈরি ও খেলা দেখার ব্যবস্থা করে।

এই ক্রিকেট সমর্থক গোষ্ঠীটি একটি নন প্রফিট অর্গানাইজেশন, যারা কোনো অর্থ সংস্থান ছাড়াই দলটি চালিয়ে থাকেন।

কীভাবে তারা এটি শুরু করেন?
বাংলাদেশে তখনও কোনো নিয়মিত ক্রিকেটভিত্তিক সমর্থক গোষ্ঠী ছিল না। দৌড়া বাঘ আইলো'র শুরুর দিকের যারা সদস্য ছিলেন তাদের পরিকল্পনা ছিল এমন একটি পরিকল্পনা হাতে নেয়া।

সে লক্ষ্যেই ওয়ালী এম ফাহিম, প্রিয় রহমান সৌরভ এবং মুস্তাফিজুর রহমান রকি বড় কাগজে হাতে লিখে নিয়ে গিয়েছিলেন "দৌড়া বাঘ আইলো!"

শুরুতে তিনজন থাকলেও আস্তে আস্তে এই গোষ্ঠীতে যোগ হতে থাকে আরো তরুণ ক্রিকেটভক্তরা।

সাদমান সাজিদের সাথে কথা বলছিলেন প্রতিবেদক। তিনি এই গোষ্ঠীর অন্যতম সমন্বয়ক।

"আমি দৌড়ার দায়িত্ব পাই ২০১৪ সালে। তখন দৌড়ার সময়টা খুব ভালো যাচ্ছিল না। সিনিয়ররা বা আগের মেম্বাররা সবাই চাকরিতে ঢুকে যাচ্ছিল। ২০১৪ এর আগ পর্যন্ত আমাদের ফ্যানক্লাবের কার্যক্রম মূলত অফলাইন ভিত্তিক ছিল। ওই ক্রাইসিসের পর আমরা অনলাইন-অফলাইন দুই জায়গা নিয়ে কাজ শুরু করি," সাদমান সাজিদ বলছিলেন।

"তখনো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল হিসেবে তেমন পারফর্ম করছিল না। হতাশ সমর্থকেরা গ্যালারিতে হাতের কাছে পেতেন সমর্থক গোষ্ঠীটির সদস্যদেরই। যেকোনো পরিস্থিতিতে দলকে সমর্থন করার 'অপরাধে' প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দলটির সদস্যদের কপালে জুটতো তিরষ্কার ও অশ্রাব্য ভাষার যথেচ্ছ্য ব্যবহার," বলছিলেন তানভীর প্রান্ত, যিনি 'দৌড়া বাঘ আইলো'র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দেখাশোনা করেন।

তবে মানুষ বাড়ার সাথে সাথে বাংলাদেশেও ক্রীড়া সমর্থক গোষ্ঠীর ধারণাটি সফলতা লাভ করে।

"শুরুতে পাঁচ-দশজন যেতাম এখন সংখ্যায় এক থেকে দেড় শ', এভাবে স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখার মজা আলাদা," প্রান্ত বলছিলেন।

এই গোষ্ঠীর একজন সদস্য পুষ্পিতা হোসেন, তিনি বলছেন এটা খেলা দেখার মাধ্যমে একটা বড় সংখ্যক তরুণ এক হতে পারছে এটা ভালো দিক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আসার পর এখানে যুক্ত হয়েছে পুরো দেশের অনেক ক্রিকেটপ্রেমীরা।

২০১১ বিশ্বকাপের স্মৃতি
গোষ্ঠীটির নেতৃত্বের দ্বায়িত্বে থাকে মূলত কলেজ-ভার্সিটি পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাই।

মোঃ আশেক হোসেইন, রিয়াদ আহমেদ, শিহাব সায়রাজ, সাদমান সাজিদ, শিহাব মোহাম্মদ, এলাহী শুভ, বিভিন্ন সময়ে গ্রুপ কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তারা পালন করছেন।

রিয়াদ আহমেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১১ বিশ্বকাপ ক্রিকেটকে কেন্দ্র করে 'দৌড়া বাঘ আইলো' বেশ বড়ভাবে সংগঠিত হয়।

"আমরা প্রায় দুই দিন আগে রাতে গিয়ে বসেছিলাম টিকেট পেতে, এক বড় ভাই মশার ব্যাট নিয়ে ছিলেন উনি পুরো রাত মশা মারেন, সেখানে আমরা প্রায় ৫০-৬০ জন ছিলাম, মানে আমরা একটা লাইন আমাদের পর থেকে বাকিরা," যৌথভাবে বাংলাদেশে আয়োজিত ২০১১ বিশ্বকাপ নিয়ে স্মৃতিচারণ করছিলেন রিয়াদ আহমেদ।

ইংল্যান্ডেও যাবে 'দৌড়া বাঘ আইলো'
২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে ইংল্যান্ড যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে গ্রুপটি।

সাদমান সাজিদ জানান, এই গ্রুপের সবার বিশ্বাস এই বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলবে বাংলাদেশ।

ইতোমধ্যে ইংল্যান্ডে যাওয়ার প্রস্তুতি শেষ করছে সদস্যরা।

সাজিদ বলেন, "ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের জন্য দেশ-বিদেশ মিলিয়ে আমাদের ৩০ জনের মেম্বার টিকেট কেটে ফেলেছে। বাংলাদেশের প্রথম খেলার আগে আমরা সবাই লন্ডনে এসে মিলিত হব। বাস ভাড়া করে প্রত্যেক ভেন্যুতে যাবার প্ল্যান হচ্ছে।"

এই গোষ্ঠীর ফেসবুক পাতায় প্রায় ২০ হাজার সদস্য আছেন। যারা সবাই সরাসরি সম্পৃক্ত না গোষ্ঠীর সাথে।


আরো সংবাদ



premium cement