২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বেশির ভাগ জুয়াড়ি ভারতীয়, আইসিসির বিস্ফোরক দাবি

বেশির ভাগ জুয়াড়ি ভারতীয়, আইসিসির বিস্ফোরক দাবি - ছবি : সংগ্রহ

শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের দুর্নীতি নিয়ে এই মুহূর্তে তদন্ত চালাচ্ছে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা আইসিসি। যেখানে জড়িয় গেছে সনৎ জয়সুরিয়ার নাম। আইসিসির পক্ষ থেকে এও বলা হয়েছে, আরো অনেক নামই সামনে আসবে। কিন্তু তারই মাঝে আরো একটা তথ্য প্রকাশ করেছে তারা। আইসিসির দুর্নীতি দমন শাখার আলেক্স মার্শাল জানিয়েছেন, ক্রিকেট গড়াপেটার সঙ্গে জড়িত বেশির ভাগ দুর্নীতিগ্রস্ত জুয়াড়িই হলো ভারতীয়।

একটি ওয়েবসাইটে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে ক্রিকেট গড়াপেটা তদন্তের দায়িত্বে থাকা মার্শাল বলেছেন, ‘‘শ্রীলঙ্কায় আমরা দেখেছি, জুয়াড়িরা হয় স্থানীয় নয় ভারতীয়। কিন্তু বিশ্বের বেশির ভাগ জায়গায় দেখা যাচ্ছে, দুর্নীতিগ্রস্ত জুয়াড়িরা প্রায় সবাই ভারতীয়।’’ মার্শাল এমন দিনে এই কথা বললেন, যে দিন আবার নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছেন পাকিস্তানের লেগস্পিনার দানিশ কানেরিয়া। এবং কানেরিয়া যে জুয়াড়ির কথা বলেছেন, সেই অনু ভট্টও একজন ভারতীয়।

এই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কা ঘরের মাঠে ওয়ান ডে সিরিজ খেলছে ইংল্যান্ডের সঙ্গে। যেখানে আইসিসি সমস্ত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছবি দেখায় দু’দলের ক্রিকেটারদের। মার্শাল বলেন, ‘‘এমন লোকেদের ছবি আমরা দেখিয়েছি, যারা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ক্রিকেটারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চাইছে।’’ আইসিসি আপাতত ১২ থেকে ২০ জনের ওপর নজর রেখেছে। যাদের মধ্যে ছ’জন ক্রিকেট গড়াপেটার সঙ্গে ভালো রকম জড়িত বলে সন্দেহ। মার্শালের বক্তব্য, ‘‘আমরা ছ’জনের ছবি দেখিয়েছি। তবে নজরে আরও ১২ থেকে ২০ জন আছে। যাদের ছবি দেখানো হয়েছে, তারা সবাই পুরুষ। তবে তার বাইরে জনা দু’য়েক মহিলার ওপরও আমাদের নজর আছে।’’

জুয়াড়িদের তালিকায় ভারতীয়দের নাম সবার উপরে থাকলেও আইসিসির নজর এখন শ্রীলঙ্কার ওপর। মার্শাল বলেছেন, ‘‘বেশ কয়েকটি দেশ নিয়ে আমরা খুব উদ্বিগ্ন। এদের মধ্যে শ্রীলঙ্কাও আছে। এই সব দেশ থেকে এত রিপোর্ট আসছে আর এত তদন্ত হচ্ছে যে, বোঝা যায়, দুর্নাতির ছায়া খুব ভালো ভাবে আছে।’’ এর পরে মার্শাল যোগ করেন, ‘‘গত ১২ মাসে সব চেয়ে বেশি তদন্তের ঘটনা ঘটেছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট নিয়ে। দু’নম্বরে আছে জিম্বাবুয়ে।’’

পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারেন জয়সুরিয়া!

শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক সনৎ জয়সুরিয়া কি পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হতে চলেছেন? এখনই একথা লেখার সময় আসেনি। তবে আইসিসি যেভাবে এগোচ্ছে তাতে জয়সুরিয়ার মাথার উপর ঝুলে থাকা শাস্তির খাঁড়া যেকোনো দিন নামতে পারে। তাই যদি হয়, তা হলে পাঁচ বছর ক্রিকেট থেকে সরে থাকতে হবে তাকে। ক্রিকেট দুনিয়ার কোনো মাঠে ঢুকতে পারবেন না। ক্রিকেটের সঙ্গে কোনোভাবে নিজেকে জড়িয়েও রাখতে পারবেন না।

জয়সুরিয়াকে নিয়ে ক্রিকেট বিশ্ব তাই উত্তাল। তাকে নিয়ে সন্দেহের মাত্রা বাড়ছে। আইসিসির দুর্নীতিদমন শাখার কর্তাদের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেননি। আইসিসি জানিয়েছিল, তার মোবাইল, ল্যাপটপ জমা দিতে। জয়সুরিয়া তাও দেননি। তাই জয়সুরিয়া সম্পর্কে আইসিসি কঠোর হতে চলেছে। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী জয়সুরিয়া ২.৪.৬ ও ২.৪.৭ ধারায় পড়েছেন। এই ধারায় তখন-ই ক্রিকেটারকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, যখন সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটার আইসিসি-র দুর্নীতিদমন শাখার সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে না দেয়। কিংবা যাবতীয় নথি দাখিল করার নির্দেশ অমান্য করে। তখন সেই ক্রিকেটারকে নিয়মে বেঁধে ফেলে শাস্তির ব্যবস্থা করে আইসিসি।

জয়সুরিয়া দু’টি ধারাতেই পড়ছেন। তাই আইসিসি যদি শাস্তি দিতে চায় তাহলে পাঁচ বছরের জন্য তাকে নির্বাসনে যেতে হবে। আইসিসি-র প্রথম সারির এক কর্মকর্তা বলছিলেন, “২.৪.৬ ধারায় (প্রমাণ করতে সহযোগিতা না করা) যদি জয়সুরিয়া পড়েন, তাহলে তাকে কম করে ছয় মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হবে। না হলে বড় শাস্তি। সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছরের। আবার ২.৪.৭ ধারায় যদি পড়েন (প্রামাণ্য নথি নষ্ট করা) তাহলে তাকে পাঁচ বছর সাসপেন্ড করা হবে। সেই সঙ্গে আর্থিক জরিমানাও হবে। এখন দেখতে অপেক্ষা কোন ধারায় পড়তে চলেছেন জয়সুরিয়অ।”

তবে জয়সুরিয়ার ঘটনা যেদিকেই মোড় নিক, ইতিমধ্যে তার স্বচ্ছ ভাবমূর্তিতে যেটুকু কালিমা লাগার লেগে গিয়েছে। সেই কলঙ্কের কালি মুছে ফেলতে কীভাবে আগামী দিনে তিনি এগোন সেটাই দেখার। মঙ্গলবার এক সাক্ষাৎকারে জয়সুরিয়া বলেছেন, ক্রিকেট জীবনে কোনো দিন দূর্নীতির সঙ্গে আপস করেননি। এ সব থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। তাই তার নামে যা রটানো হচ্ছে, তার কোনো ভিত্তি নেই। একদিন না একদিন তা প্রকাশ্যে আসবে। তখন সবাই জানতে পারবেন, তাকে নিয়ে বিতর্ক ভিত্তিহীন ছাড়া কিছু নয়।


আরো সংবাদ



premium cement