২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নিজেকে এত সস্তা ভাবি না: মাশরাফি

ফাইনালের আগে সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা রাখছেন মাশরাফি। - ছবি: সংগৃহীত

এশিয়া কাপে গত তিনটি আসরের দুটিতে ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। ভারত ও পাকিস্তানের সাথে শেষ মুহুর্তে হেরে যায়। বুধবার পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠার পর ট্রফি নিয়ে চলছে আলোচনা। আলোচনা মাশরাফিরকে নিয়েও। ক্যারিয়ারের শেষ লগ্নে এসে মাশরাফি কি পারবেন একটি শিরোপা জিততে? মাশরাফি অবশ্য দেশের ও দলের হয়ে খেলতে পারাকেই বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন। শিরোপা জয়কে তিনি ক্যারিয়ারের মাপকাঠি হিসেবে মানতে নারাজ।

ফাইনালের আগে সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি জানান, ‘একটা ট্রফি দিয়ে আমি নিজেকে বিচার করি না। ক্রিকেট একটা ট্রফির জন্য খেলিনি। বাংলাদেশের জন্য একটা ট্রফি দরকার। আমার বিশ্বাস হয়ত কোন একদিন ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ পারবে। ব্যক্তি মাশরাফিকে ট্রফি দিয়ে বিচার করবেন কিনা সেটা আপনাদের ব্যাপার। কিন্তু আমি নিজেকে এত সস্তা ভাবি না।’

তবে তরুণ ক্রিকেটারদের প্রেরণা দিতে বাংলাদেশের জন্য একটি ট্রফি প্রয়োজন বলে মনে করেন মাশরাফি, ‘তরুণ প্রজন্ম যারা ক্রিকেটের দিকে আসছে, যারা এখন দলে আছে। যারা অনূর্ধ্ব-১৯, অনূর্ধ্ব-১৬ খেলছে তারা ট্রফি পেলে হয়ত আরও প্রেরণা পাবে ক্রিকেট খেলতে। এইক্ষেত্রে হয়ত বলতে পারেন বাংলাদেশের একটা ট্রফি প্রয়োজন। সেটা এখন বা কাল না হলে সমস্যা ব্যাপারটা তেমন না।’

২০১২ ও ২০১৬ এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তান ও ভারতের কাছে হার মানতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। দুই বছর পর আরেকবার মাশরাফির সামনে সুযোগ এশিয়ার কাপ জেতার। কঠিন পরিস্থিতিতে থাকা মাশরাফি হাতের ভাঙা কব্জি নিয়ে তামিমের ব্যাটিং করাকেই এশিয়া কাপের জয় হিসেবে দেখছেন, ‘প্রত্যেক ম্যাচেরই আলাদা গুরুত্ব থাকে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে মাশরাফি বলেন, ত্রিদেশীয় সিরিজে যে ফাইনাল খেলেছি, বা ২০১২ সালে যেটা খেলেছি বা ২০১৬ সালে যেটা খেলেছি; সবগুলো ম্যাচেই ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতি ছিল। এবার খুব কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমাদের খেলতে হচ্ছে। সত্যি বলতে, আমার কাছে তামিম যখন ভাঙা হাত নিয়ে মাঠে নেমেছে, তখনই আমি এশিয়া কাপ জিতে গেছি। ওটা আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’

 

আরো পড়ুন: সুপারম্যান’ মাশরাফি!
নয়া দিগন্ত অনলাইন , ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:২৯


সুপারম্যানের মতো অবিশ্বাস্য ক্যাচে রুবেলের বলে শোয়েব মালিককে ফেরান মাশরাফি। (বামে) ক্যাচের পর সতীর্থরা জড়িয়ে ধরছেন মাশরাফিকে। - ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত।
চলিত এশিয়া কাপে শোয়েব মালিক দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছেন আফগানিস্তান, এমনকি ভারতের বিপক্ষেও। সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকেও চোখ রাঙাতে শুরু করলেন পাকিস্তানের এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। এদিন শোয়েব মালিকের ক্যাচ নিলেন পাখির মতো উড়ে। ম্যাচ শেষে সেই ক্যাচ প্রসঙ্গে কথাও বলতে হলো বাংলাদেশ অধিনায়ককে।

প্রথমে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ ২৩৯ রানে ৭ বল বাকি থাকতেই অলআউট হয়ে যায়। বাংলাদেশের দেওয়া ২৪০ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ১৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় পাকিস্তান। এরপর ইমাম-উল-হক ও শোয়েব মালিকের ব্যাটে ভর করে সেই চাপ কাটিয়ে উঠতে শুরু করে তারা। কারণটা সবারই জানা। চলতি এশিয়া কাপে শোয়েব মালিক যেভাবে ব্যাটিং করছিলেন তাতে একটা আশঙ্কা ভর করতেই পারে। কারণ তার ব্যাট যেদিন হাসে সেদিন প্রতিপক্ষের বোলারদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেন না। তাই শোয়েব মালিকের উইকেটটা বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শোয়েব বিপদজনক হয়ে উঠার আগেই পাকিস্তান শিবিরে আঘাত হানেন রুবেল। 


প্রতিপক্ষের অন্যতম ভরসা শোয়েব মালিককে সাজ ঘরে ফেরান রুবেল। ইনিংসের ২১ তম ওভারে মাশরাফির হাতে তালুবন্দি হন শোয়েব। তিনি ৫১ বলে ৩০ রান করেন। আউট হবার আগে ইমাম-উল-হকের সঙ্গে ৬৭ রানের পার্টনারশিপ গড়েন তিনি। এই শোয়েব মালিক চলতি এশিয়া কাপের আসরে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছেন আফগানিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে। তাই তাকে সময়ে ফেরাতে না পারলে হয়তো এই ম্যাচের গল্পটা অন্যভাবে লিখতে হতো।

রুবেল হোসেনের করা ২১তম ওভারের প্রথম বলে মালিক মিডউইকেটের ওপর দিয়ে তুলে মারতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ০০.৮৪ সেকেন্ডে এক হাতে বলটা ছোঁ মেরে ক্যাচটা নিয়ে নেন মাশরাফি। বলটা তালু বন্দী করতে ২.৩৫ মিটার বা প্রায় ৮ ফুট ডাইভ দিয়েছেন ম্যাশ। ডাইভ দিতে গিয়ে আঙুলে ব্যথা পেয়েছেন তিনি। ব্যথা পেয়ে মাঠের বাইরেও তাকে থাকতে হয়েছে ১৫ মিনিট। আহা, কী ক্যাচ ধরেছেন মাশরাফি—অবাক চোখে তাকিয়ে শোয়েব মালিক। এশিয়া কাপে পাকিস্তানের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান, অভিজ্ঞতায়ও সবচেয়ে বড় ভরসার নাম মালিক। মুহুর্তেই হতভম্ব পুরো পাকিস্তান টিম।

মাশরাফির সেই ক্যাচের পর মাঠে অন্যান্য খেলোয়াড়দের শরীরীভাষাও বদলে গিয়েছিল। ম্যাচ শেষে সেই ক্যাচ নিয়ে মাশরাফি পুরো দলকেই কতিত্ব দিলেন। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে ধারাভাষ্যকার রমিজ রাজা ক্যাচটি নিয়ে প্রশ্ন করলেন টাইগার অধিনায়ককে। হাঁটুতে এতো এতো কাটা দাগ, ওভাবে ঝাঁপালেন কিভাবে? মাশরাফি বললেন ‘আমাদের আজকের ফিল্ডিং নিয়ে গর্ব করা যায়। অনেক দিন আমরা এমন ফিল্ডিং করে দেখাতে পারিনি। আশা করি আজকের পর দলের খেলোয়াড়েরা বুঝবে ভালো ফিল্ডিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ। শোয়েব মালিকের ক্যাচটা যে শেষ পর্যন্ত ছাড়িনি, এতে আমি ভাগ্যবান ছিলাম। কারণ শোয়েব খুব ভালো ফর্মে আছে। যদি তখন সে আউট না হতো আমার মনে হয় ম্যাচ শেষ করে আসতো। শুধু আমি নই, সব মিলিয়ে আমাদের ফিল্ডিংটা ভালো হয়েছে।’

মাশরাফির সেই ক্যাচটা টিভিতে দেখা দর্শকরাও অনেকদিন মনে রাখবেন। কারণ শোয়েব যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন ততক্ষণ সবারই প্রার্থনা ছিলো শোয়েব কখন সাজ ঘরে ফিরবেন। দিন শেষে ৩৭ রানের জয়ের ভিড়ে হয়তো অনেকে ভুলে যাবেন কিন্তু মাশরাফির সেই ক্যাচটাই ম্যাচের দৃশ্যপট পাল্টিয়ে দেয়।


আরো সংবাদ



premium cement