১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগের পরই শতরান!

ক্রিকেট
মুহাম্মদ শাহজাদ - ছবি : ক্রিকইনফো.কম

ভারত ম্যাচের আগেই জানা গিয়েছিল, এশিয়া কাপ চলাকালীনই তাকে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আফগান উইকেটকিপার মুহাম্মদ শাহজাদ। সেই শাহজাদই ভারতীয় রিজার্ভ বেঞ্চের ক্রিকেটারদের বল নিয়ে ছিনিমিনি খেললেন। তার দুরন্ত শতরান (১১৬ বলে ১২৪) ও নবির (৫৬ বলে ৬৪) যোগ্য সঙ্গতে আফগানিস্তান ৮ উইকেট হারিয়ে ২৫২ রান তুলল। ছাপিয়ে গেল পাকিস্তানের ইনিংসকে।

কী ইনিংসটাই না খেললেন আফগান উইকেটকিপার তথা ওপেনার মুহাম্মদ শাহজাদ! তার শারীরিক গঠন দেখলে মনে হয় তিনি বর্তমানে ভারতের দলে থাকার জন্য যে ফিটনেস টেস্টগুলো নেয়া হয় সেসব পাস করতে পারবেন না। কিন্তু ক্রিকেট যে তা ছাড়াও খেলা যায় তা এদিন তিনি বুঝিয়ে দিলেন ভারতীয় বোলিংকে শাসন করে। মঙ্গলবার একার কাঁধে আফগান ইনিংসকে টানলেন তিনি।

৩৮তম ওভারে আফগানিস্তান ইনিংসের ১৮০ রানের মাথায় শাহজাদ আউট হন। সেই রানের ৬৮.৮ শতাংশই এসেছিল তার ব্যাট থেকে। এদিন ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। তার নেতৃত্বে ভারতীয় বোলিং ইউনিট যে খারাপ বল করেছে তা বলা যাবে না। কিন্তু একাই সংহারক মূর্তি ধারণ করেছিলেন। ২৬ ওভার পর্যন্ত কিন্তু আর কোনো আফগান ব্যাটসম্যান ৪ মারতে পারেননি।

অবশেষে সিদ্ধার্থ কলের বলে গুলবদিন নাইব একটি বাউন্ডারি মারতে পারেন। আজই প্রথম দলে ঢোকা অপর ওপেনার জাভেদ আহমদি তো ৩০ বল খেলে মাত্র ৫ রান করে আউট হয়ে যান। তাকে ফেরান রবীন্দ্র জাদেজা। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নিষ্ফলা থাকার পর এদিন ফের ভাল বল করলেন তিনি। ১০ ওভারে ৪৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন। ভাল বল করেন কূলদীপ যাদব (৩৮-২), কেদার যাদব (২৭-১)ও। ১ করে উইকেট নেন খলিল ও আজই অভিষেক হওয়া দীপক চাহারও। তবে চাহার তার অভিষেকটা ভুলে যেতে চাইবেন। নাইবের উইকেটটি পেলেও তিনি মাত্র ৪ ওভারে ৩৭ রান দিয়েছেন।

তার দুর্ভাগ্য সামনে ছিলেন শাহজাদ। চাহারের দ্বিতীয় ওভারেই তিনি ১৭ রান নেন। গোটা ইনিংসে তিনি মোট সাতটি ছক্কা ও এগারোটি ৪ মারেন। জাদেজার বলে তার মারা একটি ছয় স্টেডিয়ামের বাইরেও চলে যায়। তাকে কিন্তু ক্রমান্বয়ে বিব্রত করেছেন ভারতীয় বোলাররা। বল তার ব্যাট প্রায় ছুঁয়ে বেরিয়ে গেছে। কিন্তু তার পরের বলেই আবার অবলীলায় তিনি ছয় হাকিয়েছেন।

সিদ্ধার্থ কলের বলে ম্যাচের নবম ওভারের তার ক্যাচ ফেলেছে ভারত। ৯৭ রানে ব্যাট করার সময় তার বিরুদ্ধে উইকেটের পিছনে ক্যাচের আবেদন হয়েছিল। আম্পায়ার আউটও দিয়েছিলেন। কিন্তু রিভিউতে তিনি নটআউট প্রমাণিত হন। অবশেষে, কেদার যাদবের বলে থামে তার অনবদ্য ইনিংস। এরপর নবি ও নাজিবুল্লাহ জাদরান (২০ বলে ২০) সপ্তম উইকেটে জুটিতে দরকারি ৪৬ রান তোলেন। সেখান থেকে আফগানিস্তান আরো বড় রানের ইনিংস গড়তে পারত। মুহাম্মদ নবি সিঙ্গলস নেয়ার পাশাপাশি বড় শটও নিয়েছেন।

কিন্তু নবি ও জাগরান আউট হওয়ার পর আর সেই গতি ধরে রাখতে পারেনি আফগানিস্তান। ভারতীয় বোলাররা ডেথে ভাল ফিরে আসেন। শেষ পাঁচ ওভারে মাত্র ২৪ রান তুলতে পেরেছে আফগানরা।

আরো পুড়ন :
আফ্রিদির প্রেরণায় যেভাবে বদলে গেলেন শেহজাদ
নয়া দিগন্ত অনলাইন
বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খানের জন্য নাকি পাগল মোহাম্মদ শেহজাদ। বলিউড বাদশার কত যে সংলাপ মুখস্থ তার, তার হয়তো কোনো হিসেব নেই। দলের ড্রেসিংরুম মাতিয়ে রাখেন এসআরকে-র গরমাগরম ও মজাদার সংলাপেই।

মঙ্গলবার দীপক চাহারকে ফাইন লেগ দিয়ে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে পাঁচ নম্বর ওয়ান ডে সেঞ্চুরি পূর্ণ করে সে জন্যই বোধহয় শাহরুখ-ভঙ্গিমায় দু’দিকে দু’হাত ছড়িয়ে মুহূর্তটাকে উপভোগ করলেন আফগানিস্তানের সবচেয়ে আগ্রাসী ব্যাটসম্যান। জানা গেল, আগেও তিনি সেঞ্চুরি করে এ ভাবেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।

প্রায় ৯৫ কেজি ওজন। তবু সারা দিন ধরে মাঠে পড়ে থাকার মতো অদম্য মানসিকতা তার। এই দৃঢ় মানসিকতাই তাকে প্রায় ৩৮ ওভার ব্যাট হাতে যুদ্ধ করার পরও ৫০ ওভার স্টাম্পের পিছনে গ্লাভস হাতে উইকেট সামলানোর ক্ষমতা জোগায়, বলছেন তার কোচেরা।

আফগানিস্তানের প্রাক্তন কোচ লালচাঁদ রাজপুত, যিনি জিম্বাবোয়ের কোচের দায়িত্ব পেয়েছেন সদ্য, তিনি হারারে থেকে ফোনে বলেন, ‘শেহজাদের মতো ক্রিকেট প্রতিভা ও দেশে বিরল। চেহারা ও রকম হলেও টেকনিক ও মানসিকতায় ও ঠিক সব সামলে নেয়।’

মঙ্গলবার শেহজাদের ইনিংস দেখেননি রাজপুত। কিন্তু স্কোর শুনে বললেন, ‘ভারতের মতো দলের বিরুদ্ধে এই ব্যাটিংই তো ওর দৃঢ় মানসিকতার পরিচয় দেয়।’

এর আগেও প্রায় ১২৫ কেজি ওজন নিয়ে বার্মুডার ডোয়েন লেভেরককে খেলতে দেখেছে ক্রিকেটবিশ্ব। তারও আগে স্থূলকায় ডেভিড বুন, অর্জুনা রানাতুঙ্গারাও ক্রিকেট দুনিয়া শাসন করেছেন। সেই ধারাই বজায় রেখে চলেছেন এ প্রজন্মের মোহাম্মদ শেহজাদ।

বিপিএল-এ রংপুর রাইডার্সে শেহজাদ যখন খেলতেন, তখন সেই দলে ছিলেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক শাহিদ আফ্রিদিও। সেই দলের সহকারী কোচ ছিলেন কলকাতার অপরূপ চক্রবর্তী। তিনি জানালেন, আফ্রিদির কাছে ক্রিকেট-পাঠের চেয়ে মানসিকভাবে বেশি উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন শেহজাদ। অপরূপ বলেন, ‘আফ্রিদির পরামর্শে ও প্রচুর পরিশ্রম করত। তবে মানসিকভাবে নিজেকে চাঙ্গা রাখার উপায় নিয়েই বেশি কথা হতো ওদের মধ্যে। ব্যাটিংয়ের স্টান্সেও এখন কিছুটা বদল হয়েছে ওর। দু’বছরে যে নিজেকে কতটা বদলেছে শেহজাদ, তার প্রমাণ তো পাওয়াই গেল।’

শেহজাদের বাঙালি কোচিং সঙ্গীর মতে, ‘সিঙ্গলস নেয়াটা একদম পছন্দ নয় ওর। চার-ছয়েই বেশি রান তুলতে চায়। কারণ, ও জানে ওকে পঞ্চাশ ওভার কিপিংও করতে হবে। দুটি একসঙ্গে সামলানো বেশ কঠিন। এই ব্যাপারে ওর আদর্শ হলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।’

মঙ্গলবারও দুবাইয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোর ম্যাচে ব্যাট করার সময় তার আদর্শ ক্রিকেটার মহেন্দ্র সিংহ ধোনি তার পিছনে ছিলেন। তাই আরো উদ্বুদ্ধ হয়ে একেবারে হিসাব কষে ইনিংসটা খেলেন। সেঞ্চুরির মুখে ছিলেন অতি সাবধানী। ৭৬ বলে ৯৪ রান তোলার পরে ছ’টা রান করতে নেন আরো ১২টি বল।

সিঙ্গলসও বেশি নেননি। ১১টি চার ও সাতটি ছয় মেরে প্রায় ৭০ শতাংশ রান মাঠের বাইরে থেকে আনেন তিনি। ম্যাচের বিরতিতে তাকে টিভিতে বলতে শোনা যায়, ‘এখানে তিন সপ্তাহ ধরে আছি। তার আগেও এখানে অনেক বার খেলেছি। তাই দুবাইয়ের পরিবেশ, উইকেট সম্পর্কে ধারণা আছে। আজ উইকেটটা বেশ পাটা। তাই ম্যাচের আগেই ভেবেছিলাম, আজকের দিনটা আমার হতে পারে।’

এই গরমে টানা ব্যাটিংয়ের পরে আবার টানা কিপিং! শেহজাদ বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের পরে ড্রেসিংরুমে গিয়ে আইস বাথ নিয়েছি। ভালো করে গোসল করেছি। এখন একেবারে তাজা।’


আরো সংবাদ



premium cement