১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শেষ ওভারে মোস্তাফিজের জাদুকরী বোলিং

মোস্তাফিজুর রহমান - ছবি : সংগ্রহ

মোস্তাফিজুর রহমান। আরো একবার বাংলাদেশের ক্রিকেটে এনে দিলেন আনন্দময় মুহূর্ত। এশিয়া কাপের সুপার ফোরের ডু অর ডাই ম্যাচে রোববার তার বোলিংয়ে শেষ ওভারে নাটকীয় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।

৫০তম ওভারে মোস্তাফিজ যখন বল হাতে নেন আফগানদের দরকার আট রান, হাতে ৪ উইকেট। টি-টোয়েন্টি ও পাওয়ার প্লের এই যুগে যেটি মোটেই কঠিন নয়। এখনকার সময়ে স্লগ ওভারে ১৫-১৬ রান নিয়ে ম্যাচ জেতার বহু উদারহরণ আছে। কিন্তু কাটার মাস্টার যখন নিজের নামের প্রতি সুবিচার করেন, দল জেতার আর কোন উপলক্ষ লাগে না।

শেষ ওভারে ক্রিজে ছিলেন ১৭ বলে ২৩ রান করা সামিউল্লাহ শেরওয়ানি ও আগের ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরি করা লেগ স্পিনার রশিদ খান। আগের ম্যচেই বাংলাদেশ দেখেছে রশিদ কতটা আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে জানেন। তাই এক ওভারে ৮ রান নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী হতে পারেনি কোন দর্শর্ক। পরিস্থিতি তাই পুরোটাই ছিলো আফগানদের অনুকূলে। কিন্তু মোস্তাফিজ সেটাই পাল্টে দিলেন।

প্রথম বলে কাভার অঞ্চলে খেলে দুই রান নিলেন রশিদ খান। কিন্তু দ্বিতীয় বলে ছক্কা মারতে গিয়ে বল তুলে দিলেন মোস্তাফিজের হাতেই। নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নিলেন কাটার মাস্টার। ততক্ষণে অবশ্য দৌড়ে স্ট্রাইকে চলে যান শেরওয়ানি। চার বলে দরকার ছয় রান। পরের বলে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচের মতো উঠেছিলো; কিন্তু আম্পায়ার নাকচ করে দিলেন, রিপ্লেতেও দেখা গেল বল প্যাডে লেগেছে। লেগবাই সূত্রে এলো এক রান।

৩ বলে দরকার পাঁচ রান। চতুর্থ বলে পরাস্ত হলেন নতুন ব্যাটসম্যান গুলবুদ্দিন নাইব। সমীকরণ দাড়ালো ২ বলে ৫ রানের। পঞ্চম বলেও ব্যাটে বলে করতে পারেননি নাইব, তবে দৌড় থামেনি তাদের। লেগ বাই থেকে এবারো একটি রান। শেষ বলে আফগানদের দরকার ছিলো ৪ রান।

গ্যালারির সব দর্শক তখন দুরদুরু বক্ষে অপেক্ষ করছে, ভরা গ্যালারিও পুরোপুরি নিশ্চুপ। স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে বল করলেন মোস্তাফিজ, গুড লেন্থের বলটি ছিলো কিছুটা রাইজিং ডেলিভারি। সজোরে ব্যাট চালালেন শেরওয়ানি; কিন্তু ব্যাটে বলে হলো না। এতটাই জোরে ব্যাট চালিয়েছিলেন যে, হাত থেকে তার ব্যাটই ছুলে গিয়ে পড়লো শর্ট মিডউইকেট অঞ্চলে। জয়ের আনন্দে মেতে উঠলো বাংলাদেশ।

এই ম্যাচে ৯ ওভার বোলিং করে একটি মেডনসহ ৪৪ রান খরচায় ২ উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক মাশরাফিও প্রশংসায় ভাসিয়েছেন তার তরুণ তুর্কিকে।

আরো পড়ুন:

শ্বাসরুদ্ধকর এক জয়

শ্বাসরূদ্ধকর এক ম্যাচ জিতলো বাংলাদেশ দল। এশিয়া কাপের সুপার ফোরে আফগানিস্তানকে শেষ ওভারের নাটকীয়তায় ৩ রানে হারিয়েছে মাশরাফি বাহিনী। এই জয়ের ফলে টুর্নামেন্টের ফাইনালে যাওয়ার আশা টিকে রইলো বাংলাদেশের। আর টানা দুই ম্যাচ হেরে বিদায় নিল আফগানিস্তান।

ইনিংসের শেষ ওভারের শেষ বলে আসা দুর্দান্ত এই জয়ের নায়ক কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান। তার জাদুকরী বোলিংয়ে আরো একবার জয়ের দেখা  পেল বাংলাদেশ। 


শেষ ওভারে আফগানদের জয়ের জন্য দরকার ছিলো ৮ রান। টি-টোয়েন্টির এই যুগে যা কঠিন নয়। কিন্তু সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে মোস্তাফিজুর রহমান আফগানদের বেধে রাখলেন ৫ রানে। এরমধ্যে আবার নিয়েছেন একটি  উইকেট। ওভারের দ্বিতীয় বলে রশিদ খানকে আউট করার পর গুলবুদ্দিন নাইব ও সামিউল্লাহ শেরওয়ানি কুলিয়ে উঠতে পারেনি মোস্তাফিজের জাদুকরী বোলিংর সাথে।

ম্যাচের বাংলাদেশের ছুড়ে দেয়া  ২৫০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২৪৬ রানে থেমেছে আফগান  ইনিংস। ম্যাচের শুরু থেকেই যদিও পরিস্থিতি ছিলো আফগানদের অনুকূলে; বেশ ভালোভাবেই নির্দিষ্ট লক্ষ্যপাণে ছুটেছে দলটি। ২৬ রানে ২ উইকেট হারানোর পর তৃতীয়  উইকেটে মোহাম্মাদ শাহজাদ ও হাসমতুল্লাহ শহিদীর ৬৩ রান এবং চতুর্থ উইকেটে শহিদীর সাথে অধিনায়ক আসগর আফগানের ৭৮ রানের পরপর দুটি জুটি আফগানিস্তানকে চালকের আসনে বসায়।

আবার ষষ্ঠ উইকেটে মোহাম্মদ নবী ও শেরওয়ানির ৪৬ রানের জুটির ছিলো দারুণ ভুমিকা। তবে শেষ দিকে আস্কিং রেট বাড়তে থাকায় নিয়মিত উইকেট হারাতে থাকে দলটি। শেষ ওভারে মোস্তাফিজের দুর্দা্ন্ত বোলিংয়ের আগে অবশ্য কেউ ভাবতে পারেনি এই ম্যাচে বাংলাদেশ জিততে পারে। ৪৯তম ওভারে মোহাম্মাদ নবীকে ফিরিয়ে সেই কাজটি সহজ করে দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। ২৮ বলে ৩৮ রান করা নবী যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন আফগানদের জয় সহজই মনে হয়েছিলো। 

শেষ দুই ওভারে আফগানিস্তানের দরকার ছিলো ১৯ রান। ৪৯তম ওভারে সাকিবের দ্বিতীয় বলে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে বিশাল  ছক্কা হাকিয়ে ব্যবধান হাতের নাগালে নিয়ে আসেন নবী। কিন্তু  তৃতীয় বলে আবারো ছক্কা মারতে গিলে ধরা পড়েন লং অফে। তখন ৯ বলে দরকার ছিলো ১২ রান। ওই ওভারের শেষ তিন বলে সাকিব দেন ৪ রান। যার ফলে শেষ ওভারে ওই ৮ রানের সমীকরণ। যেখানে ব্যর্থ আফগানরা, সফল মোস্তাফিজুর রহমান।

আফগান ব্যাটসম্যনদের মধ্যে হাসমতুল্লাহ শহিদী সর্বোচ্চ ৭১ রান করেছেন। বাংলাদেশী বোলারদের মধ্যে মাশরাফি  ও মোস্তাফিজ ২টি করে উইকেট নিয়েছেন। ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন ৭৪ রান  ও এক উইকেট নেয়া মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।


আরো সংবাদ



premium cement