১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শ্বাসরূদ্ধকর ম্যাচে টাইগারদের জয়

টাইগারদের নাটকীয় জয় - ছবি : সংগ্রহ

শ্বাসরূদ্ধকর এক ম্যাচ জিতলো বাংলাদেশ দল। এশিয়া কাপের সুপার ফোরে আফগানিস্তানকে শেষ ওভারের নাটকীয়তায় ৩ রানে হারিয়েছে মাশরাফি বাহিনী। এই জয়ের ফলে টুর্নামেন্টের ফাইনালে যাওয়ার আশা টিকে রইলো বাংলাদেশের। আর টানা দুই ম্যাচ হেরে বিদায় নিল আফগানিস্তান।

ইনিংসের শেষ ওভারের শেষ বলে আসা দুর্দান্ত এই জয়ের নায়ক কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান। তার জাদুকরী বোলিংয়ে আরো একবার জয়ের দেখা  পেল বাংলাদেশ। 

শেষ ওভারে আফগানদের জয়ের জন্য দরকার ছিলো ৮ রান। টি-টোয়েন্টির এই যুগে যা কঠিন নয়। কিন্তু সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে মোস্তাফিজুর রহমান আফগানদের বেধে রাখলেন ৫ রানে। এরমধ্যে আবার নিয়েছেন একটি  উইকেট। ওভারের দ্বিতীয় বলে রশিদ খানকে আউট করার পর গুলবুদ্দিন নাইব ও সামিউল্লাহ শেরওয়ানি কুলিয়ে উঠতে পারেনি মোস্তাফিজের জাদুকরী বোলিংর সাথে।

ম্যাচের বাংলাদেশের ছুড়ে দেয়া  ২৫০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২৪৬ রানে থেমেছে আফগান  ইনিংস। ম্যাচের শুরু থেকেই যদিও পরিস্থিতি ছিলো আফগানদের অনুকূলে; বেশ ভালোভাবেই নির্দিষ্ট লক্ষ্যপাণে ছুটেছে দলটি। ২৬ রানে ২ উইকেট হারানোর পর তৃতীয়  উইকেটে মোহাম্মাদ শাহজাদ ও হাসমতুল্লাহ শহিদীর ৬৩ রান এবং চতুর্থ উইকেটে শহিদীর সাথে অধিনায়ক আসগর আফগানের ৭৮ রানের পরপর দুটি জুটি আফগানিস্তানকে চালকের আসনে বসায়।

আবার ষষ্ঠ উইকেটে মোহাম্মদ নবী ও শেরওয়ানির ৪৬ রানের জুটির ছিলো দারুণ ভুমিকা। তবে শেষ দিকে আস্কিং রেট বাড়তে থাকায় নিয়মিত উইকেট হারাতে থাকে দলটি। শেষ ওভারে মোস্তাফিজের দুর্দা্ন্ত বোলিংয়ের আগে অবশ্য কেউ ভাবতে পারেনি এই ম্যাচে বাংলাদেশ জিততে পারে। ৪৯তম ওভারে মোহাম্মাদ নবীকে ফিরিয়ে সেই কাজটি সহজ করে দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। ২৮ বলে ৩৮ রান করা নবী যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন আফগানদের জয় সহজই মনে হয়েছিলো। 

শেষ দুই ওভারে আফগানিস্তানের দরকার ছিলো ১৯ রান। ৪৯তম ওভারে সাকিবের দ্বিতীয় বলে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে বিশাল  ছক্কা হাকিয়ে ব্যবধান হাতের নাগালে নিয়ে আসেন নবী। কিন্তু  তৃতীয় বলে আবারো ছক্কা মারতে গিলে ধরা পড়েন লং অফে। তখন ৯ বলে দরকার ছিলো ১২ রান। ওই ওভারের শেষ তিন বলে সাকিব দেন ৪ রান। যার ফলে শেষ ওভারে ওই ৮ রানের সমীকরণ। যেখানে ব্যর্থ আফগানরা, সফল মোস্তাফিজুর রহমান।

আফগান ব্যাটসম্যনদের মধ্যে হাসমতুল্লাহ শহিদী সর্বোচ্চ ৭১ রান করেছেন। বাংলাদেশী বোলারদের মধ্যে মাশরাফি  ও মোস্তাফিজ ২টি করে উইকেট নিয়েছেন। ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন ৭৪ রান  ও এক উইকেট নেয়া মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।

 

আরো পড়ুন: 

দলের কাছে নিজের প্রয়োজনীয়তা বুঝালেন ইমরুল 

শেষ কবে জাতীয় দলের হয়ে খেলেছিলেন ইমরুল কায়েস? প্রশ্নটি পাঠকদের কাছে ছোড়ে দিলে হিসাব কষতে ভাবতে হবে অনেকবার। প্রায় ১১ মাস পর সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ফিরেছেন ইমরুল। শনিবার দুবাইয়ে দলের সাথে যোগ দেয়ার পর রোববারের ম্যাচে তিনি খেলবেন কিনা সেটা নিয়েও ছিল সংশয়। অথচ এই ইমরুলই রোববার মাহমুদউল্লাহর সাথে জুটে বেঁধে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জিং একটা স্কোর দাড় করাতে কাণ্ডারির ভূমিকা পালন করেছেন। ৮৯ বলে ৭২ রানের চমৎকার এক ম্যাচ খেলে তিনি ছিলেন অপরাজিত। তার এই রান দলের মাঝে নিজের প্রয়োজনীয়তার কথাও বুঝিয়েছে নির্বাচকদের। তার কাঁদে ভর করেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ করেছে ২৪৯ রান

রোববারের ম্যাচ খেলার আগে দেশের হয়ে৭০ ম্যাচ খেলেছিলেন ইমরুল। ২৮.৯৫ গড়ে মাত্র এক হাজার ৯৯৮ রান করেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তার শতক রয়েছে দুটি অর্ধশতক ছিল ১৪টি ( রোবারেরটা সহ ১৫টা)। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ফর্ম হীনতায় ভুগছেন তিনি। এমনকি শেষ ১০টি ইনিংস বিবেচনা করলে দেখা যায়, ঘরোয়া লিগেও মাত্র তিনটি অর্ধশতক পেয়েছেন এই খেলোয়াড়। তাই সাম্প্রতিক সময়ে ফর্মহীনতার জন্য দলের বাইরে রয়েছেন দীর্ঘদিন। তবে নির্বাচকরা হঠাৎ ডাক দিয়েছেন দলে। প্রায় ১১ মাস পর সীমিত ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে এসে ভরসার পরিচয় দিলেন ইমরুল। 


তবে ইমরুল রোববার ভালো করলেও দল নির্বাচন নিয়ে বড় এক প্রশ্নবোধক রয়েছে। কারণ সমস্যাট ছিল ওপেনিংয়ে। দলে নেই তামিম ইকবাল। লিটন দাস আর নাজমুল হোসেন পারছেন না। এ কারণেই সব ক্রিকেটীয় প্রথা ভেঙে টুর্নামেন্টের মাঝপথে দেশ থেকে উড়িয়ে আনা দুই ওপেনারকে।

নির্বাচকেরা কিচ্ছু জানেন না, অধিনায়কও দুই-দুইজন ওপেনার আসার খবর শুনেছেন সাংবাদিকদের কাছ থেকে। শুনে মহা বিস্মিত হয়েছেন। এই নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা! সবার মনে কত প্রশ্ন—দলের ‘ত্রাতা’ হয়ে উড়ে আসা সৌম্য সরকার ও ইমরুল কায়েস দুজনই কি তাহলে খেলছেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে? তাহলে তো আগের দুই ওপেনারই বাদ পড়ছেন, তাই না? যদি ইমরুল ও সৌম্যর মধ্যে একজন খেলেন, তাহলে কে বাদ পড়বেন—লিটন না নাজমুল? খুলনা থেকে ঢাকা, ঢাকা থেকে দুবাই—গভীর রাতে দুবাই পৌঁছানোর পর সকালে ঘুম থেকে উঠেই বাসে দেড় ঘণ্টা দূরত্বের আবুধাবি গিয়ে এই গরমে ম্যাচ খেলার মতো ফিটনেস থাকবে ইমরুল-সৌম্যর?

আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা যখন ম্যাচের আগে আড়মোড়া ভাঙছেন, তখন থেকেই প্রশ্ন গুলো ছিল। টস হওয়ার সময় এই ম্যাচে বাংলাদেশের ১১ খেলোয়াড়ের নাম যখন জানা গেল, সেসব অনুমিত উত্তর বিদ্রূপের হাসি হাসছে সবার দিকে চেয়ে।

যদিও সেটি অন্যায়। মানুষ তো কোনো কিছু অনুমান করার সময় যুক্তি-বুদ্ধিকেই কাজে লাগায়। আজকের ম্যাচে বাংলাদেশের একাদশ যে সেসবকে রীতিমতো বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিল! দুই ওপেনারকে নিয়ে এমন হাহাকার, অথচ দেখা গেল লিটন ও নাজমুল দুজনই দলে আছেন! সবাইকে অবাক করে বাংলাদেশের ইনিংস ওপেন করতেও নামলেন তারা দুজনই। তাহলে এত সব নাটকের অর্থ কী!

আগের ম্যাচের একাদশে দুটিই পরিবর্তন। রুবেল হোসেনের বদলে নাজমুল হোসেন অপুকে নেওয়াটা ট্যাকটিক্যাল সিদ্ধান্ত। উইকেট এবং আফগানিস্তানের শক্তি বিবেচনা করে একজন পেসার কমিয়ে একজন স্পিনার বাড়ানো। ১৩টি টি-টোয়েন্টি খেলার পর ওয়ানডে অভিষেক হলো বোলিংয়ের চেয়ে ‘নাগিন’ নাচের কারণে বেশি বিখ্যাত এই বাঁহাতি স্পিনারের। এটি নিয়ে বড় কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু অন্য যে পরিবর্তন—মোসাদ্দেকের বদলে ইমরুল কায়েস? দুই ওপেনারকে উড়িয়ে এনে আগের তিন ম্যাচের ৭ নম্বর ব্যাটসম্যানকে বাদ দেওয়ার কী যুক্তি? সমস্যা না শুধু ওপেনিংয়েই ছিল।

এখানেই তো চমকের শেষ নয়। ইমরুল যেহেতু ওপেন করলেন না, নিশ্চয়ই তিনি ৩ নম্বরে নামবেন। ওয়ানডেতে আগের ৭০টি ইনিংসে মাত্র নয়বারই ওপেন করেননি। প্রতিবারই খেলেছেন ৩ নম্বরে। সেটি নিয়ে নিজের অস্বস্তির কথাও গোপন করেননি। অথচ ইমরুল রোববার ৩ নম্বরও নন। লিটন আউট হওয়ার পর ৩ নম্বরে ব্যাটিং করতে নামলেন মিঠুন এবং খুব দ্রুতই আউট হয়ে প্রশ্নবোধক চিহ্নটাকে আরও বড় করে দিলেন। মিঠুনকে দলে নেওয়ার সময় কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, স্পিনটা তিনি খুব ভালো খেলেন। তা-ই যদি হয়, তাহলে কেন তাকে আগেই নামিয়ে দেওয়া? ৩ নম্বরে যাঁকে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসাবে ভাবা হচ্ছিল, সেই সাকিব আল হাসানকে ব্যাটিং অর্ডারে নামিয়ে দেওয়ারই বা কী যুক্তি?

ব্যাটিং অর্ডারে যেখানে ইমরুলের নাম, সেটি আরও একটা বড় প্রশ্ন তুলে দিল। ইমরুলকে যদি মিডল অর্ডারেই খেলানো হবে, তাহলে ওপেনিং নিয়ে এত ‘কান্নাকাটি’ করা হলো কেন? প্রশ্ন আছে আরেকটাও—ইমরুলকে উড়িয়ে এনে যদি মিডল অর্ডারেই খেলানো হবে, তাহলে মুমিনুল হক কী দোষ করলেন? তিনি কেন সুযোগ পাবেন না?


আরো সংবাদ



premium cement