২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে গৃহযুদ্ধ!

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে গৃহযুদ্ধ! - ছবি : সংগৃহীত

‘শোয়েব মালিক-সানিয়া মির্জা’ শুধু মাঠের মধ্যেই আটকে নেই, ছড়িয়ে পড়েছেন মাঠের বাইরেও!

মাঠে শোয়েব খেললে টিভির সামনে বসে সানিয়া তার স্বামীকে সমর্থন না করে পারবেন না। কিন্তু মাঠের বাইরে ‘শোয়েব-সানিয়া’ দীর্ঘ দাম্পত্য জীবন একসঙ্গে কাটিয়েও ওই একটা দিনে যেন একে অন্যের থেকে দূরে সরে যান। এক জনের গায়ে জার্সিটা তখন পাকিস্তানের, অন্য জন ভারত ছাড়া আর কিছু ভাবতেই পারেন না।

‘মেডোজ’। দুবাইয়ের অত্যন্ত অভিজাত এলাকা। সেখানেই এ রকম এক দম্পতির বাড়ি। স্ত্রী উত্তরবঙ্গের মেয়ে, নাম আত্রিকা। স্বামী করাচির ছেলে সৈয়দ উমর। দুবাইয়ে পাঁচ বছর ধরে প্রেমের পরে বিয়ে। আত্রিকা বিমানসেবিকা হওয়ায় ঘুরে বেড়াতে হয় দেশে দেশে। সৈয়দ আবার নামী ইঞ্জিনিয়ার। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ চলাকালীন কী রকম হয় আপনাদের ঘরের মেজাজ? ‘‘ওহ, সে দারুণ উত্তেজনাপূর্ণ ব্যাপার। আমি অবশ্যই পাকিস্তানের হয়ে গলা ফাটাই, আর স্ত্রী ভারতের হয়ে,’’ বলছিলেন সৈয়দ। দাম্পত্য কলহও হয় নাকি দুই দেশের ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে? সৈয়দ হাসতে হাসতে জানালেন, হয় বৈকি, তবে তা ঠিকও হয়ে যায়।

দাম্পত্য কলহ হয়, আবার ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে হারের ক্ষত শুকোতে অনেক সময় লাগে। কখনো বা তা থেকেই যায়। এখনও যেমন মরুশহরে ক্রিকেট হলে উঠে আসবে, চেতন শর্মাকে মারা জাভেদ মিয়াঁদাদের সেই শেষ বলে ছয়ের কথা। যে কথা নিয়ে সবাই আলোচনা করলেও সেই ম্যাচের নায়ক মিয়াঁদাদ মুখ খুলতে বিশেষ আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। অনেক বারের চেষ্টায় পাকিস্তানে মিয়াঁদাদকে ফোনে ধরা গেলে তিনি শুধু বলে দিলেন, ‘‘ওটা তো অনেক দিন আগেকার কথা। আমি এখন আর ওই নিয়ে আলোচনা করতে চাই না।’’

কিন্তু কেউ না চাইলে কী হবে, মরুশহরে ক্রিকেট মাঠে আলোচনায় উঠে আসে নানা বিরল মুহূর্তের ছবি। পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক এবং শারজার ক্রিকেট প্রবর্তক আসিফ ইকবাল যেমন ভুলতে পারেন না অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সচিন তেন্ডুলকরের সেই ‘মরুঝড়’! ‘‘উফ, কী ইনিংসটাই খেলেছিল শচিন। ও সব ভোলা যায় না,’’ লন্ডন থেকে ফোনে বলছিলেন আসিফ।

রোববারের বিকেলে দুবাইয়ে আরো একটা ভারত-পাকিস্তান লড়াই কী ছবি উপহার দেবে দর্শকদের?

রোহিত শর্মা রীতিমতো আত্মবিশ্বাসী, আগের ম্যাচের পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারবেন বলে। শুক্রবার রাতে বাংলাদেশকে উড়িয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালের দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া ভারত অধিনায়ক বলছেন, ‘‘আগের দিন সব কিছু পরিকল্পনা মাফিক হয়েছে। আর সেটা যে দিন হয়, সব খুব ভালো দেখায়। আমরা বিশ্রাম নিয়ে আবার পাকিস্তান ম্যাচে নামব। গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানকে হারিয়েছি। আশা করি, সেই ম্যাচের ছন্দটা ধরে রাখতে পারব।’’

এমনিতে রোহিতের ক্রিকেট প্রেমটা শষ্য-শ্যামলা বঙ্গ দেশের মাঠের সঙ্গে। ইডেনে নামলেই তার ব্যাট যেন কথা বলে। এশিয়া কাপে দেখা যাচ্ছে, দুবাইয়ের এই শুষ্কং কাষ্ঠং মাঠের সঙ্গেও তাঁর প্রেম বেশ জমে উঠেছে। ব্যাট করার সময় এতটাই দৃঢ়় প্রতিজ্ঞ দেখাচ্ছে ভারত অধিনায়ককে, যেন মনে হচ্ছে, ট্রফি জেতার পাশাপাশি বেশ কিছু প্রশ্নের জবাব দিয়েই তিনি দেশে ফেরার বিমান ধরবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে ম্যাচ খেলার পরে শনিবারটা ভারতের বিশ্রামই ছিল। একই ভাবে ঘণ্টা দেড়েক দূরত্বের আবু ধাবি থেকে দুবাই ফিরে হোটেলের ঘরে নিজেদের বন্দি রেখেছিলেন পাক ক্রিকেটারেরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বিকেলে ভারতের ঐচ্ছিক প্র্যাক্টিস থাকলেও পাকিস্তানি ক্রিকেটারেরা বিশ্রামেই থাকতে চান। এশিয়া কাপের সূচি এমন ভাবে তৈরি হয়েছে, যাতে ফাইনালে ভারত-পাকিস্তান উঠলে সব মিলিয়ে তিন বার দু’দলের লড়াই হবে। যে তিনটে ম্যাচই সংগঠক এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের কাছে ‘আলিবাবার চিচিং ফাঁক’ মার্কা ম্যাচ! রবিবারে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জিতলে ভারত প্রায় ফাইনালে চলে যাবে, বলেই দেওয়া যায়। কিন্তু শুক্রবার রাতে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, যখন মনে হচ্ছিল, পাকিস্তান বুঝি না তার আগেই প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করে। আফগানিস্তানের কাছে হেরে।

শেষ ওভারে শোয়েব মালিকের একটা ছয় আর একটা চারে রোমাঞ্চকর জয় এলেও পাকিস্তান নাকি নিশ্চিত ছিল আফগানিস্তানকে হারাবেই। পাক দলের সঙ্গে জড়িত এক জন জানাচ্ছেন, ম্যাচ জেতার পরে বিশেষ উৎসব হয়নি। কেন? ‘‘আমরা নিশ্চিত ছিলাম, ম্যাচটা জিতব। তা হলে কেন টেনশন হবে? আমরা এখন তৈরি হচ্ছি ভারত ম্যাচটার জন্য।’’ ম্যাচের অন্যতম নায়ক শোয়েব মালিক বলে গেলেন, ‘‘ফাইনালে যাওয়ার দিকে আমরা এক ধাপ এগোলাম। এই ম্যাচ জিতে আমরা এখন যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। এই আত্মবিশ্বাসটাই ভারত ম্যাচে ধরে রাখতে চাই।’’

সেই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। যেখানে কত দাম্পত্য কলহ তৈরি হবে, আবার মিলিয়ে যাবে। যেখানে মুহূর্তে মুহূর্তে দেখা যাবে আবেগের কোলাজ। যেখানে একটা পদক্ষেপ ভুল মানে যে কেউ নায়ক থেকে মুহূর্তে খলনায়ক।

লেডিস অ্যান্ড জেন্টলমেন, সিট বেল্ট বেঁধে নিন। দুবাইয়ের স্টেডিয়ামে ক্রিকেট রোমাঞ্চের ফ্লাইট নামার সময় হয়ে গেছে।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


আরো সংবাদ



premium cement