২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বশির ‘চাচা’র খরচে এশিয়া কাপে সুধীর

পাকিস্তান ও ভারতের গ্যালারির দুই পরিচিত মুখ - ছবি : সংগ্রহ

মাঠে ভারত-পাক মহারণের এখনও বাকি কয়েকঘণ্টা; কিন্তু তার আগেই মাঠের বাইরে ম্যাচের জয়ী নির্ধারিত হয়ে গেল। ভারত ও পাকিস্তান— দু’দলই সেখানে জয়ী। সৌজন্য ও সম্প্রীতির মোড়কে বাঁধা পড়ে গেল দুই প্রতিবেশী দেশ-ই।

শচীন টেন্ডুলকারের অঘোষিত ‘ফ্যান নম্বর ওয়ান’ সুধীর গৌতমের কাছে টাকাই ছিল না আরব আমিরাতে গিয়ে ধুন্ধুমার ক্রিকেট ম্যাচ উপভোগ করার। অথচ তাকে ছাড়া কি ভারতীয় গ্যালারি সৌন্দর্য হারাবে না! তবে শেষ পর্যন্ত সুধীরকে ম্যাচ দেখতে যাওয়ার সমস্ত বন্দোবস্ত করে দিচ্ছেন পাকিস্তানের ‘চাচা’।

ওয়াসিম আকরাম থেকে সরফরাজ খান যুগ— পাকিস্তান ক্রিকেট পেরিয়ে এসেছে বহু পথ। মাঠে সবুজ জার্সিতে চির পরিচিত ক্রিকেটাররা নামলেই গ্যালারিতে হিল্লোল তোলেন বশির ‘চাচা’। পাকিস্তানের এক সময়ের জনপ্রিয় ফ্যান জলিল ‘চাচাকে’ এখন আর দেখা যায় না গ্যালারিতে, হয়তো বয়সের ভারে ন্যুজ হয়ে পড়ছেন তিনি। কিন্তু সেই জলিল চাচারই যেন দ্বিতীয় সংস্করণ এই ‘বশির চাচা’। বিশ্বের যে প্রান্তেই ম্যাচ হোক ‘চাচা’ হয়ে উঠেছেন পাকিস্তানি সমর্থকদের মুখ, ঠিক সুধীর গৌতমের মতোই। ক্রিকেট ময়দানে তিনি পরিচিত আবার ‘চাচা চিকাগো’ নামেও।

সেই চাচা-র সৌজন্যেই এবার দুবাইয়ের বিমানে উঠলেন সুধীর। অর্থের কোনও সংস্থানই ছিল না সুধীরের কাছে। প্রায় সমস্ত আশা যখন শেষ হতে চলেছে, তখনই সুধীরকে ফোন করেন বশির চাচা। জানতে চান প্রিয় বন্ধুর হাল হকিকত, খেলা দেখতে কবে যাবেন সেসব। সুধীর নিজের আর্থিক দুরবস্থার কথা জানান পাকিস্তানি বন্ধুকে। বলেন তার হয়তো এবার যাওয়া হবে না এশিয়া কাপ দেখতে।

দুজনের সম্পর্ক বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই। গ্যালারিতে প্রায়ই এক সাথে খেলা দেখেন আর দর্শকদের মাতিয়ে রাখেন নিজ নিজ দলের পক্ষে। বয়সের অনেক পার্থক্য থাকলেও দুজনের সম্পর্কটাও তাই রূপ নিয়েছে বন্ধুত্বে।

বশির চাচা ও সুধীর গৌতম

এবার টুর্নামন্টে শুরুর আগে বন্ধুর আর্থিক অবস্থার কথা শুনে আর দেরি করেননি বশির। সরাসরি বিমানের টিকিট আর প্রয়োজনীয় অর্থের বন্দোবস্ত করে দেন সুধীরকে। ভারতের এক প্রচারমাধ্যমে চাচা জানান, ‘ভালবাসার জন্যই এমন সাহায্য। আল্লার দোয়ায় টাকা আসবে, যাবে। আমি সবকিছু শুনে সুধীরকে বললাম, টাকার সংস্থান হয়ে যাবে। তুমি শুধু এখানে এস। আমি খুব ধনী নই। তবে আমার হৃদয় সমুদ্রের মতোই বড়। ’

বশির চাচা নিজেও যে খুব বড় ধনী বিষয়টি তা নয়; যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন-সেখানে একটি খাবার দোকান আছে নিজের। তাই দিয়ে চলে সংসার আর নিজের খেলা দেখার খরচ। বিশ্বে যে প্রান্তেই খেলুক পাকিস্তান, তার মাঠে থাকা চাই।

পরে সুধীর জানান, ‘ভিসা-র বিষয়টি মিটিয়ে ফেলেছি। চাচা-ই আমাকে সমস্ত টিকিটের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। হোটেল, খাবার— সমস্ত খরচ চাচাই দিচ্ছেন। জাতীয় দলকে যাতে গ্যালারি থেকে সমর্থন জানাতে পারি, তাই উনি সবকিছু করেছেন।’

দু’দেশের রাজনৈতিক উত্তাপ থাকতে পারে, মতানৈক্য থাকতে পারে। তবে দু’দেশের মানুষের হৃদয়ও রয়েছে। সুধীর-চাচা এপিসোডেই প্রমাণ। মাঠে দুই দল যখন ব্যাট বলে উত্তাপ ছড়ায় তখন গ্যালারি মাতিয়ে রাখেন এইসব সমর্থকরা, যার নিজ নিজ দেশের সমর্থকদের আইকনে পরিণত হয়েছেন; কিন্তু তারা যদি মাঠেই উপস্থিত না থাকতে পারেন, গ্যালারি কি প্রাণ পাবে? তাই হয়তো সুধীর গৌতমের প্রতি বশির চাচার এই ভালোবাসার মেলবন্ধন, যেটি তৈরি হয়েছে ক্রিকেটেরই কল্যাণে।

আরো পড়তে ক্লিক করুন:

পাক-ভারত লড়াইয়ে দুই দলের সম্ভাব্য একাদশ

এশিয়া কাপ: সৌরভের কণ্ঠে ভিন্ন সুর

টিকিট বিক্রি করে দিচ্ছেন ভারতীয় দর্শকরা!

 

দেখুন:

আরো সংবাদ



premium cement