১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আজ দেশে ফিরে আসছেন তামিম

তামিম ইকবাল। - ফাইল ছবি

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ চলাকালীনই জানা গিয়েছিল, এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে পড়েছেন তামিম ইকবাল। তবুও শেষ মুহূর্তে ব্যাট হাতে মাঠে নামার মতো দুর্দান্ত সাহস দেখিয়েছিলেন তিনি। ক্রিকেটপ্রেমীদের মন জয় করেছেন।

বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন জানিয়েছেন, চার মাসের জন্য মাঠের বাইরে চলে যেতে হলো তামিম ইকবালকে। নতুন একজন শল্যবিদকে দেখানো হয়েছে তামিমের ইনজুরি। তার কাছ থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পরই নিশ্চিত হওয়া গেছে, কতদিন লাগবে তামিমের সুস্থ হতে। তবে জানা গেছে, অস্ত্রোপচার করা লাগবে না তামিমের বাম হাতের কব্জিতে।

এরপর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে, দুই থেকে তিন সপ্তাহ মাঠের বাইরে থাকতে হবে তাকে। তাই এবারের এশিয়া কাপে আর মাঠে নামতে পারছেন না তিনি।

এদিকে, এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার ফলে আরব আমিরাতে থাকা হচ্ছে না তামিম ইকবালের। তামিম নিজেই বাংলাদেশের মিডিয়াকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (আজ) দেশে ফিরে আসছেন।

আরো পড়ুন: এক হাতে ব্যাট করা নিয়ে যা বললেন তামিম

নয়া দিগন্ত অনলাইন, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই সুরঙ্গ লাকমলের বলে চোট পান তামিম ইকবাল। - ছবি: এএফপি
হাতের কব্জিতে ব্যান্ডেজ লাগানো অবস্থাতেই এক হাতে তামিমের ব্যাট করতে নেমে পড়ায় সাড়া ক্রিকেট বিশ্বে বেশ সাড়া ফেলেছে। অনেকেই তার সাহসিকতা ও দলের প্রতি আত্মনিবেদনের প্রশংসা করেছেন। দেশ-বিদেশের ক্রীড়াপ্রেমীরা অভিভূত হয়েছেন তামিমের এমন সিদ্ধান্তে, প্রশংসা করেছেন তার সাহসিকতার। এক হাতে ব্যাট করতে নেমে পড়ার আগে কি ভাবছিলেন তামিম?

জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইট ‘ইএসপিএন ক্রিকইনফো’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তামিম বলেন, ‘আমি ওই ১০ সেকেন্ডে (বোলার দৌড়ে আসার সময়) সাহস পাচ্ছিলাম। মাঠে নামার সময় দর্শকদের প্রতিটি চিৎকার আমাকে সাহস যোগাচ্ছিল। আমি হয়তো আউট হয়ে যেতে পারতাম বা যেকোনো কিছুই হতে পারতো, তবে ওই মুহূর্তে আমি দল এবং দেশের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম।’

তামিম স্বীকার করেছেন যে তিনি যা করেছেন তা ছিল তার জন্য এবং দেশের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

‘এখন মনে হচ্ছে খুব ঝুঁকিপূর্ণ ছিল কাজটা। আঘাতপ্রাপ্ত হাতটা আমার পেছনে ছিল, যদি খেয়াল করে থাকেন শট খেলার সময় হাত সামনে চলে এসেছিল আর বলটি মিস করলেই আমার ওই হাতেই আবার লাগতো।’

‘রুবেল যখন ক্রিজে ছিল আমি তখন প্যাড আপ করা শুরু করি। মাশরাফি ভাই আমার গ্লাভস কেটে দেন। জীবনে প্রথম অন্য কেউ আমাকে গার্ড পরিয়ে দিয়েছে! মুমিনুল এবং অন্যরা আমাকে প্যাড পরতে সাহায্য করে। সবাই আমাকে তখন দারুণ সহায়তা করছিল, সাহস দিচ্ছিলো।’

‘যখন মুস্তাফিজ আউট হলো, তখন পর্যন্তও নিশ্চিত ছিলাম না নামবো কিনা। আমি কিছু চিন্তা না করেই নেমে পড়েছিলাম। আমাকে জিগেস করা হয়েছিল আমি নিশ্চিত কিনা, আমি দ্বিধাহীন ছিলাম।’

‘এই এশিয়া কাপ নিয়ে আমার অনেক উচ্চাশা ছিল এবং আমি ওই মুহূর্তে আবেগের বশেই সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল যদি আমি এক বল খেললে দল আরো ৫ কিংবা ১০ রান করতে পারে এবং সেটা দলের উপকারে আসে, তাহলে কেন নয়? কেউ হয়তো আশা করেনি যে আমি ১ বল খেললে অপর প্রান্ত থেকে ৩২ রান আসবে। মুশফিক অসাধারণভাবে শেষ দিকটা সামলেছে।’

‘আমার মনে হয় না আমার জীবনে এমন অভিজ্ঞতা আগে হয়েছে। এখন আমি সবার প্রতিক্রিয়া দেখছি, কিন্তু আমি যখন ব্যাট করতে নামছিলাম এসব কোন কিছুই তখন আমার মাথায় ছিলনা। আমি শুধু আমার দল এবং দেশের কথা ভেবে নেমেছিলাম।’

 

আরো পড়ুন: তামিমের ছাড়া যারা এক হাতে ব্যাট ধরেছিলেন

নয়া দিগন্ত অনলাইন, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮


ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই সুরঙ্গ লাকমলের বলে চোট পান তামিম ইকবাল - ছবি : এএফপি
শনিবার শ্রীলংকার বিপক্ষে বাংলাদেশের ৯ উইকেট যাওয়ার পর ব্যাট হাতে মাঠে নামেন তামিম ইকবাল। এরপর একটি বল খেলেন তিনি।

৪৬ ওভারের পাঁচ নম্বর বলে মুস্তাফিজ আউট হয়ে যান। কার্যত সেখানেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা বাংলাদেশের ইনিংস।

তবে তামিম ইকবাল ৪৭তম ওভারের শেষ বলটি খেলেন।

এরপর ২ ওভার তিন বলে মুশফিকুর রহিম স্ট্রাইক ধরে রেখে ৩২ রান তোলেন। যাতে বাংলাদেশের সংগ্রহ হয় ২৬১।

এর আগে দ্বিতীয় ওভারেই সুরঙ্গ লাকমলের বল হাতে জোরে আঘাত করায় মাঠ ছাড়েন তামিম।

প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের পর জানানো হয় পুরো এশিয়া কাপে ব্যাট করতে পারবেন না তামিম ইকবাল। ছয় সপ্তাহের জন্য মাঠের বাইরে যেতে হবে তাকে।

তামিম পুনরায় ব্যাট হাতে নামার দু’ঘন্টা আগে চিকিৎসক জানান তিনি এই এশিয়া কাপে আর খেলতে পারবেন না।

তামিম এমনভাবে ব্যাট করতে নামেন মনে হচ্ছিল বা হাত বাহুবন্ধনীতে আটকে আছে। বাম গ্লাভ থেকে চারটি আঙ্গুল বের করে রাখেন যাতে গ্লাভের রক্ষাদেয়াল সুরক্ষিত থাকে।

তবে এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে এভাবে ঝুঁকি নিয়ে নামায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্রিকেট ভক্তরা অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশ ১৩৭ রানে জয় পেয়েছে এই ম্যাচে।

তামিমের আগে এই সাহসী পদক্ষেপ যারা নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে তিনজনের কীর্তি বেশ আলোচিত।

গ্রায়েম স্মিথ, ২০০৯, সিডনি
গ্রায়েম স্মিথ ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিডনিতে একটি টেস্ট ম্যাচ বাঁচাতে ভাঙ্গা হাত নিয়ে মাঠে নামেন।

৮ ওভার ২ বল বাকি ছিল তখন ম্যাচের। স্মিথ মিচেল জনসন, ডগ বলিঞ্জারের একের পর এক বল ঠেকিয়ে যাচ্ছিলেন এক হাতে ভর করে।

তবে ঠিক ১০ বল বাকি থাকতে মিচেল জনসনের একটি বল ব্যাট ও প্যাডের ফাঁক গলে বেড়িয়ে যায়।

শেষ পর্যন্ত ম্যাচ বাঁচাতে না পারলেও স্মিথের এই ইনিংস বহুদিন ক্রিকেট ভক্তরা মনে রেখেছেন।

ম্যালকম মার্শাল, ১৯৮৪, হেডিংলি
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হেডিংলি টেস্টের প্রথম দিনে ইংল্যান্ডের ক্রিস ব্রডের ব্যাট থেকে চুটে আসা একটি বল ঠেকাতে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটার ম্যালকম মার্শালের বা হাতের বুড়ো আঙ্গুলে দুটি চিড় ধরে।

যদিও তিনি ডান হাতি বোলার ছিলেন, চিকিৎসকরা তাকে পরামর্শ দেন যাতে তিনি এই টেস্ট তো বটেই আরো ১০ দিন ক্রিকেট থেকে দূরে থাকেন।

কিন্তু তৃতীয় দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ল্যারি গোমেজ যখন একাই লড়ছিলেন. তখন সফররতদের নয় উইকেটের পতন ঘটে। ৯৬ রানে অপরাজিত ছিলেন গোমেজ।

গোমেজ প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটা শুরু করলে মারশাল ব্যাট হাতে মাঠে নেমে সবাইকে অবাক করে দেন।

পরবর্তীতে মারশাল অবশ্য বলেন, ব্যাট করার ইচ্ছা ছিল না তার কিন্তু গোমেজ সেঞ্চুরির এতো কাছে ছিল যে তাকে নামতে হয়।

এটাই শেষ নয়। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে বা হাতে কনুই পর্যন্ত ব্যান্ডেজ দিয়ে পেচিয়ে বল করতে নামেন ম্যালকম মার্শাল। ২৬ ওভার বল করে ৫৩ রান দিয়ে ৭ টি উইকেট নেন সেই ইনিংসে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের অন্যতম সেরা এই পেস বোলার মাত্র ৪১ বছর বয়সে মারা যান, ১৯৯৯ সালে।

এগুলো বহুল আলোচিত ঘটনা। এছাড়া অনিল কুম্বলে ২০০২ সালে অ্যান্টিগা টেস্টে ভাঙ্গা চোয়াল নিয়ে বল করতে নামেন।

সে অবস্থাতে ব্রায়ান লারার উইকেট পান তিনি।

২০০৯ সালে ব্রিস্টলে ইংল্যান্ডের ইয়ান বেল বাংলাদেশের বিপক্ষে ভাঙ্গা পায়ের পাতা নিয়ে খেলতে নামেন।

সেই ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পায়। সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement