২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

মুশফিকের ব্যাটিংয়ের রহস্যটা কী?

দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে দলকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেন। - ছবি: এএফপি

১৫০ বল খেলে ১৪৪ রানের লড়াকু ইনিংস খেলেছেন মুশফিকুর রহিম। যা তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস।

মুশফিকের এই লড়াকু ও দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ের রহস্য কি? মুশফিক দুবাই ও আবুধাবির গরম আবহাওয়ায় কিভাবে ব্যাট করতে হবে তার জন্য বিগত পাঁচ সপ্তাহ কঠোর পরিশ্রম করেছেন। এমনকি দলের অন্যান্য খেলোয়াররা যখন ঈদের ছুটিতে ব্যস্ত মুশফিক তখন ব্যাট-বল নিয়ে স্টেডিয়ামে অনুশীলনে হাজির। দলের ঐচ্ছিক ছুটির দিনে ক্রিকেট সরঞ্জাম নিয়ে নেটে হাজির হওয়া একমাত্র ক্রিকেটারটির নামও মুশফিক। বিশ্বাস হচ্ছে না? কিন্তু এটাই বাস্তব। ঢাকার গরম ও ভ্যাপসা আবহাওয়ায় কঠোর পরিশ্রমই তাকে আরব আমিরাতের অচেনা গরমে কঠিন বাস্তবতা মোকাবেলায় সাহায্য করেছে।

সকালে এক সেশনে অনুশীলন করেছেন। আবার সন্ধ্যায় ক্লান্ত থাকা সত্তে ও দলের টিম মিটিংয়ে হাজির থাকতেন। এমনটা শুধু এই প্রথম করেছেন তা কিন্তু নয়। সব সময়ই মুশফিক এরকম।

শুধু মুশফিক নন, দলের আরেক কান্ডারি মাশরাফি ও তামিম ও ফিটনেস ঠিক রাখার জন্য কঠোর অনুশীলন করেছেন। দলের প্রতি আত্মনিবেদনে মুশফিক, মাশরাফি, তামিমদের জুড়ি মেলা ভার। এখনো দলের সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করা ক্রিকেটারটির নাম মুশফিক।

শনিবারের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এশিয়া কাপে তার ইনিংসটিই সেরা ইনিংস। বাকি সবকিছুকেই ছাপিয়ে গেল যেন। কী এক অবিশ্বাস্য ইনিংস খেললেন তিনি!

এই ম্যাচে মুশফিক খেলা নিয়ে কিছুটা হলেও সংশয় ছিল। মুশফিকের পাঁজরে নাকি ব্যথা। কিন্তু দলের প্রয়োজনে মুশফিক শুধু মাঠে নামলেন না, প্রথম ওভারের শেষেই মাঠে নামলেন। আরব আমিরাতের অচেনা গরমে খেলতে হলো ইনিংসের শেষ ওভার পর্যন্ত। এর মধ্যে দল বেশ কয়বার ঝড়ে পড়েছে। কিন্তু একদিকে হাল ধরে রেখেছিলেন মুশফিক।

ইনিংসের শুরুতেই মাঠে নামতে হবে এমনটা কি ভেবেছিলেন মুশফিক। আর মাঠে নেমেই দলের বিপর্যয়ে হাল ধরতে হবে তাও কি কল্পনা করেছিলেন ? ক্রিকেটে অনেক কিছুই কল্পনা আর বাস্তবের সাথে মিলে না। তাই প্রচন্ড চাপে দলের হাল ধরতে হলো মুশফিককে। ৩ রানে হারিয়ে ফেলেন তিনজন প্রথম সারির ব্যাটসম্যানকে। দলের প্রচণ্ড বিপর্যয়ের মধ্যেই রানের চাকা সচল রেখেছেন। শেষ ওভার পর্যন্ত সতীর্থদের কে সাথে নিয়ে লড়াই চালিয়ে গেছেন। ইনিংসের তিন বল বাকি থাকতে আউট হওয়ার আগে মুশফিকের নামের পাশে যোগ হয়েছে ১৪৪ রান, যা তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস ও বটে।

এর আগে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শুধু তামিম ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৫৪ রানের ইনিংস খেলেন। একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে এশিয়া কাপে দুই দুইটি সেঞ্চুরির মালিক হয়ে গেলেন মুশফিক।

কিন্তু আজকের সেঞ্চুরিটার মাহাত্ম্য যে অনেক বেশি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশ ২৬১ আর মুশফিক ১৪৪। স্কোর বোর্ডেই তো বোঝা যাচ্ছে মুশফিকের ইনিংসের গুরুত্ব। মোহাম্মদ মিঠুনকে সঙ্গে নিয়ে ১৩১ রানের জুটিটা না গড়লে তামিমের সেই বহু দিন মনে রাখার মতো স্মৃতি জন্ম দেওয়ার সুযোগই হয়তো হতো না। মুশফিক ছিল বলেই বাংলাদেশ নবম উইকেট পড়ে যাওয়ার পর তামিমকে আবার পাঠিয়েছে।

চার ঘণ্টার মতো ছিলেন উইকেটে। মোকাবেলা করেছেন অর্ধেক বল। আরব আমিরাতের অসহ্য গরমে ঘেমে–নেয়ে একাকার। সঙ্গে ছিল মানসিক চাপ ও সকালের পাঁজরের ব্যথা। এই পরস্থিতিতেও এরকম দায়িত্বশীল ও সময়োপযোগী ব্যাটিং মুশফিকের দ্বারাই সম্বভ।

এশিয়া কাপের শুরুটা দুর্দান্তভাবেই হলো। অনুমিতভাবেই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটা ও পেলেন মুশফিক।

আরো পড়ুন: ম্যাচ শেষের কথাতেও মন জিতলেন মুশফিক

নয়া দিগন্ত অনলাইন, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ক্যারিয়ারের সেরা খেলাটিই হয়তো শনিবার খেললেন মুশফিকুর রহীম। এখন পর্যন্ত তো অবশ্যই সেরা। তার ইনিংসে ভর করেই বাংলাদেশ শনিবার হারিয়ে দিলো শ্রীলঙ্কাকে। সেটিও বিশাল জয়। তার ১৪৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে কারণেই দুবাইয়ের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কাকে ১৩৭ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে টাইগাররা।

তবে ম্যাচ শেষে তিনি যা বলেছেন, তাতে তার বড়ত্ব আবার সামনে এসেছে। প্রায় এক হাতে ম্যাচ বের করে আনা সত্ত্বেও তিনি নিজেকে বড় করে দেখাননি। বরং মোহাম্মদ মিথুন আর তামিম ইকবালের প্রসঙ্গ এনেছেন।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, প্রথমেই সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। প্রথম ম্যাচে জয় সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। ছেলেরা সত্যিই চাঙ্গা ছিল। আমরা যেভাবে চেয়েছিলাম, সেভাবে শুরু করতে পারিনি। তবে কৃতিত্ব দিতে হবে মিথুনকে। ওই আমার ওপর থেকে চাপ সরিয়ে নিয়েছে। এর পর আমি যা করেছি তা হলো স্রেফ মূল্য পরিশোধ করা। তারপর তামিম যখন ব্যাট করতে এলো, তখন আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেল। আমার মনে প্রত্যয় জাগল, আমাকে তার জন্য, আমার দেশের জন্য কিছু একটা করতেই হবে। আমার ব্যাটিং সম্ভবত আমার সেরা। কারণ গরম ছিল প্রচুর। উইকেটে দৌড়ানোও ছিল কঠিন। এমন পরিস্থিতি রান করা সহজ ন। আমরা এখন ভালো অবস্থায় আছি।

 

ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেললেন মুশফিকুর

চার নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে ১৮৮ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ষষ্ঠ সেঞ্চুরির স্বাদ নেন মুশফিকুর। তবে শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ নেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ১১টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১৫০ বলে ১৪৪ রান করেন মুশি। যা তার ওয়ানডে ক্যারিয়াারের সেরা ইনিংস হয়ে যায়।

মুশফিকের আগের সেরা ইনিংস ছিলো ১১৭ রানের। ২০১৪ সালে ফতুল্লায় ভারতের বিপক্ষে ১১৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। সেটিও ছিলো এশিয়া কাপের ম্যাচ। অবশ্য ঐ ম্যাচটি ৬ উইকেটে জিতেছিলো ভারত।

বিশাল ব্যবধানের জয়ে যাত্রা শুরু বাংলাদেশের

শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয় তারপর একের পর এক ইনজুরিতে সংশয়ে থাকা বাংলাদেশ অবশেষে জয় দিয়েই যাত্রা শুরু করলো এশিয়া কাপ টুর্নামেন্টের। শনিবার দুবাইয়ের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কাকে ১৩৭ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে টাইগাররা।

বিদেশের মাটিতে এটাই বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় জয়। এছাড়া শ্রীলঙ্কাকে এতো বড় ব্যবধানে হারানো এটাই প্রথম। এর মাধ্যমে সেমি ফাইনালে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে এক ধাপ এগিয়ে গেলো মাশরাফি বাহিনী।

সবকটি উইকেট হারিয়ে তিন বল হাতে রেখেই নিজেদের প্রথম ইনিংস শেষ করে বাংলাদেশ।

মুশফিকুর রহিমের এক অনবদ্য ইনিংসের ওপর ভর করে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ২৬১ রান। পরের ইনিংসে মাত্র ৩৫.২ ওভারে শ্রীলঙ্কা গুটিয়ে যায় ১২৪ রানে।

এদিকে কবজিতে ইনজুরি নিয়েই ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন তামিম ইকবাল।

চোট নিয়ে মাঠ ছাড়তে হলেও পরে মোস্তাফিজ আউট হওয়ার পর শেষদিকে হাতে ব্যান্ডেজ নিয়েই মাঠে নেমে পড়েন তিনি। এক হাতে ব্যাট করে দলকে আগলে রাখার চেষ্টা করেছেন এই টাইগার ক্রিকেটার।

যা মুগ্ধ করেছে গ্যালারির হাজারো দর্শক ও সতীর্থদের।

ব্যাটিংয়ে দুর্বল সংগ্রহে ধুকতে থাকা বাংলাদেশের দলীয় সংগ্রহের অর্ধেকের বেশি এসেছে মুশফিকুর রহিমের ব্যাট থেকে। হাতে প্লাস্টার নিয়ে তামিম সঙ্গ দেন তাকে।

সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মুশফিক তার ব্যাটে একের পর এক রানের ঝড় তোলেন। দলের জন্য নিয়ে আসেন একটি চ্যালেঞ্জিং স্কোর।

ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটা এসেছে দুবাইয়ের এই মাঠ থেকেই। পরে ১৫০ বলে ১৪৪ রানে বিদায় নেন তিনি।

ম্যান অব দ্যা ম্যাচের কৃতিত্ব অর্জন করে মুশফিকুর রহিম।

দ্বিতীয় ওভারে কুশল মেন্ডিসকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেন মোস্তাফিজ। প্রথম বলেই বিদায় নেন লঙ্কান ওপেনার। পরের ওভারে মাশরাফির বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন অভিজ্ঞ ওপেনার উপল থারাঙ্গা। তার পরের ওভারে এলবিডাব্লিউতে মাঠ ছাড়তে হয় ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে।

স্কোরবোর্ডে কোনো রান করার আগেই প্যাভিলিয়নে ফিরে যান তিনি।

পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে শ্রীলঙ্কার চতুর্থ উইকেট কুশল পেরেরাকে ১১ রানে এলবিডাব্লিউ করেন স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। তখন শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ছিল মাত্র ৩৮ রান। এ অবস্থায় ম্যাথিউস-সানাকা জুটি প্রতিরোধ গড়তে চাইলেও সাকিব আল হাসানের ছুড়ে দেয়া বলে রান আউটে দুসাই সানাকাকে ফেরান মিরাজ।

ঠিক এর পরের ওভারেই রুবেলের হাতে ইনিংসের প্রথম বল তুলে দেন মাশরাফি। দ্বিতীয় বলেই অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে ১৬ রানে এলবিডাব্লিউ করেন রুবেল।

এরপর মিরাজের বলে রুবেল ধরেন থিসারা পেরেরার ক্যাচ। এরপর দিলরুয়ান পেরেরা সঙ্গে জুটি বেধে লাকমল কিছুক্ষণ প্রতিরোধ করলেও বেশিক্ষণ তা টেকেনি। ২০ রানে মোস্তাফিজের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন লাকমল।

এ পর্যায়ে জয়ের আশা ছেড়েই দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। লক্ষ্য ছিল ব্যবধান কমানো। মোসাদ্দেক হোসেনের বলে স্ট্যাম্পিং হয়ে লিটন দাসের ক্যাচে ২৯ রানে ফিরে যান দিলরুয়ান পেরেরা। পরের ওভারে সাকিবের বলে নাজমুল ক্যাচ ধরে ফিরিয়ে দেন আপোনসোকে। শেষ পর্যন্ত ৩৫.২ ওভারে ১২৪ রানে থেমে যান হাথুরুসিংহের শিষ্যরা।

দুটি করে উইকেট নিয়েছেন মাশরাফি, মোস্তাফিজ ও মিরাজ। এছাড়া সাকিব, রুবেল এবং মোসাদ্দেক নিয়েছেন একটি করে উইকেট।


আরো সংবাদ



premium cement