তানভিরের ছক্কা ফাইনালে উড়িয়ে নিলো গায়ানাকে
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৪:১৯, আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৪:০৬
জয়ের জন্য গায়ানা অ্যামাজন ওয়ারিয়র্সের প্রয়োজন ছিল ৬ বলে ৪ রান। শ্বাসরুদ্ধকর সেই মুহূর্তে ছক্কা হাকিয়ে দলকে ফাইনালে পৌঁছে দিলেন পাকিস্তানের হার্ডহিটার সোহেল তানভির। এক বল বাকি থাকতে ২ উইকেটে জয় পায় গায়ানা।
ম্যাচের শেষ ওভারটি করতে বল হাতে আসেন ত্রিনিবাগো নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক ডোয়াইন ব্রাভো। গায়ানার তখন প্রয়োজন ছিল ৬ রান। প্রথম বলে প্রান্ত বদল করেন ব্যাটসম্যান শেফার্ড। স্ট্রাইকে পৌঁছান সোহেল তানভির। জয়ের জন্য তখন প্রয়োজন ছিল ৫ বলে ৩ রান। কিন্তু ডোয়াইন ব্রাভোর ৩ বলে কোনো রানই তুললে পারলেন না তানভির। ২ বলে করতে হবে ৩ রান। দম বন্ধ হওয়া সেই মুহূর্তটিতে চাপ সামলে ঠাণ্ডা মাথায় খেললেন তানভির। শেষ বলের অপেক্ষায় না থেকে পঞ্চম বলেই ব্রাভোর বল উড়িয়ে সীমানার বাইরে ফেলে দিলেন তানভির। দুর্দান্ত জয় পেলো তার দল গায়ানা। পাশাপাশি ফাইনালের টিকেট।
এর আগে মঙ্গলবার টস জিতে বল হাতে নামে গায়ানা। ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই চাপে পড়ে নাইটরা। সর্বোচ্চ ২৫ রান করেন কলিন ইনগ্রাম। সাত উইকেট হারিয়ে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১২২ রান।
ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে একই হাল হয় গায়ানারও। ক্রিজে কেউই বেশিক্ষণ টিকতে পারছিলেন না। সর্বোচ্চ ৩৯ রান করেন হেটমিয়ার। শেষ ওভারে তার ছক্কা দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেয়।
আরো পড়ুন : যে কৌশলেই ভারতকে বধ করেছিলেন মঈন
ছোটবেলায় অনুশীলনের জন্য মাঠে পৌঁছাতে অন্য বাচ্চাদের যে সময় লাগত, ম্ঈ আলির লাগত তার দ্বিগুণেরও বেশি। তার ট্যাক্সিচালক বাবার গাড়িটি এত পুরনো হয়ে গিয়েছিল, যে একটু এগোনোর পরেই গরম হয়ে যেত। গাড়ি থামিয়ে ইঞ্জিন ঠাণ্ডা করে আবার চালানো শুরু করতে হতো। চার-পাঁচবার এভাবে থামা–চলার পর পৌঁছাতে পারতেন অনুশীলনে। ফেরার সময়ও তাই। বিরক্ত হলেও সেই তখন থেকেই বাস্তবের সাথে মানিয়ে নিতে শিখেছেন ম্ঈন। তাই ছোটবেলার ওই গাড়িটার মতো গত ছয় মাসের থামা–চলা ক্রিকেট জীবনকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছেন।
এ বছরের জানুয়ারির শেষদিক। অস্ট্রেলিয়ায় অ্যাশেজ সিরিজে এমন পারফরমেন্স করেছিলেন যে, তাকে নিয়ে রীতিমতো হাসি–ঠাট্টা শুরু হয়েছিল। ক্রিকেট পণ্ডিতরা পরামর্শ দিয়েছিলেন, ইংল্যান্ডের এক নম্বর স্পিনার হওয়ার স্বপ্ন ছেড়ে মঈন যেন ব্যাটিংয়ে মন দেন। তাহলে অন্তত যদি কিছুটা এগোতে পারেন। কিন্তু নিজের ওপর আস্থা ছিল মঈনের। জানতেন, ওই গাড়িটা যেমন বারবার থেমে গেলেও গন্তব্যে পৌঁছত, তেমন তিনিও পারবেন।
একটা জিনিস মাথায় ছিল তার- আঙুলের চোটের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় বলটা ঠিকমতো গ্রিপ করতে পারেননি। ছয় মাস পর আঙুলের চোট সারিয়ে ‘ডিউক’ বলটা শক্ত করে হাতে ধরে মঈন প্রমাণ করে দিয়েছেন, তিনিই এই মুহূর্তে ইংল্যান্ডের এক নম্বর স্পিনার। স্পিনের বিরুদ্ধে প্রবল পরাক্রমশালী ভারতীয় ব্যাটিংকে প্রায় একাই শেষ করে দিয়ে ইংল্যান্ডকে ৩–১ ফলে টেস্ট সিরিজ জিতিয়েছেন। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই।
বার্মিংহামে ভারতের বিরুদ্ধে চলতি সিরিজের প্রথম টেস্ট শুরু হওয়ার আগেই মঈনকে ইংরেজ অধিনায়ক জো রুট জানিয়ে দেন, আদিল রশিদের জন্য তাকে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ছেড়ে দেয়া একজনের জন্য জাতীয় দলের জায়গা খোয়ানোটা হজম হয়নি মইনের। কিন্তু রাগ, অভিযোগ, অভিমানের মতো নেতিবাচক অনুভূতিগুলোকে কাছে ঘেঁষতে না দিয়ে মঈন ঠিক করেন, কাউন্টিতে খেলেই ফর্মে ফিরবেন।
নটিংহ্যামে তৃতীয় টেস্টে তার সতীর্থরা যখন কোহলিদের কাছে নাস্তানাবুদ হচ্ছেন, তখন স্কারবরোতে উরস্টারশায়ারের হয়ে কাউন্টিতে তিন নম্বরে নেমে ডাবল সেঞ্চুরি এবং ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে রুটদের আবার তার কথা ভাবতে বাধ্য করেছেন মঈন। তার ওপর সাউদাম্পটনের উইকেটের চরিত্র এবং ক্রিস ওকসের চোট চতুর্থ টেস্টে জায়গা করে দিলো মঈন। প্রথম দিন তার ১৪১ বলে ৪০ রান ইংল্যান্ডকে ৬ উইকেটে ৮৬ রান থেকে টেনে তুলতে সাহায্য করেছিল। দ্বিতীয় দিন পাওয়া গেল স্পিনার মইনকে। তার প্রথাগত অফ স্পিনের কুল–কিনারা করতে পারেননি ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। মইন তুলে নিলেন ৫ উইকেট।
মৌসুম শুরুর আগে বোলিং কোচ সাকলাইন মুস্তাকের কাছে গিয়েছিলেন মঈন। তাকে একটা ছোট পরামর্শ দেন পাকিস্তানের সাবেক অফ স্পিনার- বল ডেলিভারি করার সময় ডান হাতটা যেন শরীরের আরো কাছে থাকে।
টেকনিকের সেই সামান্য বদলটাই সেরা অস্ত্র হয়ে গেল মঈনের। বল ছাড়ার সময় শরীরের ভারসাম্য বেড়ে গেল এবং বোলিং অ্যাকশনটা অনেক বেশি ‘মোমেন্টাম’ দিয়ে শেষ হতে লাগল। বলের গতিও কমিয়ে দিলেন মঈন। যাতে বাতাসে বল ‘ড্রিফট’ করে বেশি।
সহজভাবে বললে, মঈন নিজের বোলিংকে অনেক সরলীকৃত করে আনলেন। মূল লক্ষ্য স্থির করলেন- অ্যান্ডারসন, ব্রডদের বোলিংয়ের পর ডানহাতি ব্যাটসম্যানের অফস্টাম্পের বাইরে উইকেটে যে ক্ষত তৈরি হয়, সেটা কাজে লাগাতে হবে। চতুর্থ টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৩০ শতাংশ ডেলিভারিই সেখানে ফেলতে পেরেছিলেন তিনি। তথাকথিত স্পিন খেলতে বিরাট কোহলিদের মনে একটা ধন্ধ তৈরি করেছিলেন। তাতেই প্রথম ইনিংসে ৬৩ রানে ৫ উইকেট।
দ্বিতীয় ইনিংসে যখন বল করতে এলেন, তখন উইকেট আরো শুকনো। এবং ডানহাতি ব্যাটসম্যানের অফস্টাম্পের বাইরের ক্ষতগুলো আরও ভয়ঙ্কর। মঈন জানতেন, তার হাতেই ম্যাচের ভাগ্য। কিন্তু সেজন্য নিজেকে একবারের জন্যও বাড়তি চাপে ফেলেননি। টানা ১৩ ওভার বল করার সময় কোহলির উইকেটটাও প্রায় পেয়েই গিয়েছিলেন। কিন্তু এলবিডব্লুর জোরালো আবেদন নাকচ হয়ে যায়। কোহলি এবং রাহানে ক্রমশ তার বিরুদ্ধে সহজ হয়ে যান।
কিন্তু ছোটবেলার ওই গাড়িটা মঈনকে ধৈর্য ধরতে শিখিয়েছিল। তিনি জানতেন, একটা উইকেট তুলে নিতে পারলেই বাকিগুলো চলে আসবে। অবশেষে চা–বিরতির ঠিক আগে সবুরে মেওয়া ফলল। তার বল কোহলির গ্লাভসে লেগে জমা পড়ল শর্ট লেগে। ইনিংস শেষ করলেন আরো ৩ উইকেট নিয়ে। আর ম্যাচ শেষ করলেন? ম্যাচ–সেরার পুরস্কার নিয়ে।
ম্যাচ শেষে আরো তিনটি তথ্য সামনে এলো—
ভারতের ১ নম্বর স্পিনারের পরিসংখ্যান : ৫১.৫–১০–১২৪–৩
ইংল্যান্ডের ১ নম্বর স্পিনারের পরিসংখ্যান : ১৪–৩–৪০–০
আর ইংল্যান্ডের কাজ চালানো স্পিনারের? ৪২–৪–১৩৪–৯
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা