২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মাশরাফি-সাকিব-রিয়াদ-তামিমকে নিয়ে যা বললেন মুশফিক

একজন খেলোয়াড়কে সব কিছু মোকাবেলা করেই সামনে এগোতে হয় - সংগৃহীত

অমিয় চক্রবর্তী, বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ দাশ, বিষ্ণু দে ও সুধীন্দ্রনাথ দত্ত রবীন্দ্র ধারার বাইরে গিয়ে আধুনিক বাংলা কবিতা রচনা করে পঞ্চপাণ্ডব উপাধি পেয়েছেন। তাহলে ক্রিকেটে মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ কেন পঞ্চপাণ্ডব নয়। বাংলা কবিতায় যখন রবীন্দ্রনাথের বাইরে কিছু হচ্ছিল না তখন ওই পাঁচজনই যেমন বাংলা সাহিত্যে নতুন যুগের উন্মেষ ঘটান, তেমনি ক্রিকেট জগতেও এই পাঁচজনের কাঁধে চড়েই বিশ্বক্রিকেটে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ।

অন্ধকার ঠেলে, খাদ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ক্রিকেট-বিশ্বে আবির্ভূত হয়েছে নতুন পরাশক্তি হিসেবে। ভবিষ্যতেও তাদের হাত ধরেই আরো ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। এই পঞ্চপাণ্ডবের একজন মুশফিকুর রহীমের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ১০ বছর ধরে মাশরাফি-সাকিব-তামিম-মাহমুদুল্লাহদের সাথে খেলার অভিজ্ঞতা কেমন?

বাংলাদেশের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান ও সাবেক অধিনায়ক মুশফিকের মতে, মাশরাফি হচ্ছেন অতুলনীয়। আর সাকিব-তামিম-মাহমুদুল্লাহরা বিশ্বসেরা ক্রিকেটার। ক্রীড়াবিষয়ক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিক ইনফোকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানান মুশফিক।

পঞ্চপাণ্ডব নিয়ে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে জাতীয় দলকে সার্ভিস দেয়া মুশফিকের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘গত চার-পাঁচ বছর ধরে আমার ধারাবাহিক ভালো খেলার পেছনে এই চার ক্রিকেটারের ভূমিকা রয়েছে। কৃতজ্ঞতা তাদের প্রতি। ম্যাচ সহজ হয়ে যায় যখন আপনি সাকিব, রিয়াদ ভাই অথবা তামিমের সাথে ব্যাট করেন।

ক্রিকেট একার খেলা নয়। ভালো পার্টনারশিপ গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সবারই ম্যাচ জয়ের ক্ষেত্রে বড় অবদান রয়েছে। গত চার-পাঁচ বছর ধরে আমাদের পাঁচজনের প্রত্যেকেই কঠোরভাবে চেষ্টা করেছি। এমন একটি প্রজন্মের ক্রিকেটারদের সাথে খেলতে পারাটা অনেক বড় কিছু। মাশরাফি ভাই অতুলনীয়। সাকিব-তামিম ও রিয়াদ ভাই প্রত্যেকেই বিশ্বমানের খেলোয়াড়।’

বাংলাদেশের ক্রিকেটে কোনো-না-কোনোভাবে এই পাঁচের অবদান অনস্বীকার্য। জয়ের ভূমিকায়, কিংবা খাদের কিনার থেকে টেনে তোলাসহ সব কিছুই নির্ভর করে তাদের ওপর। নতুন করে হাল ধরার মতো কিংবা ক্রিজে বিশ্বস্ততায় মিতালি গড়তে পারছেন না কেউ। তারপরও মাঝে মাঝে দু-একটি ঘটনায় বোর্ড কর্তৃক সরাসরি অথবা পরোক্ষভাবে আহত হয়েছেন এই পাঁচজন। সাকিব তো বেশ কয়েকবার শাস্তিরও সম্মুখীন হয়েছেন। রিয়াদকে নিয়ে হয়েছে ছিনিমিনি খেলা। মাশরাফির নাম-ডাক যতই থাকুক- টি-২০ নিয়ে তার সাথে হয়েছে নাটক। মুশফিকের উইকেট কিপিং ও অধিনায়কত্ব নিয়ে হয়েছে নানা রটনা।

তবে সবার মধ্যে ব্যতিক্রম তামিম ইকবাল। অন্য চারজনের চেয়ে তাকে নিয়ে রটনা একটু কমই হয়েছে। মাঝে তার রান না পাওয়া নিয়ে যতটা না বোর্ড করেছে তার চেয়ে বেশি করেছে মিডিয়া। এসব কিছুই ক্রিকেটের অংশ উল্লেখ করে মাশরাফি বলেন, ‘খেলা খেলতে গেলে এমন কিছু হবেই। এটা ক্রিকেট তথা সব খেলারই অংশ। দিন শেষে আদর্শ খেলোয়াড়ের বৈশিষ্ট্য নিয়েই প্রেরণা খুঁজতে হয়। একজন খেলোয়াড়কে সব কিছু মোকাবেলা করেই সামনে এগোতে হয়।’

 

আরো পড়ুন : দেশের বাইরে রান করাটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখি : মুশফিক

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দেয়ার কারিগর হিসেবে যে কয়েকজন অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন, তাদের মধ্যে মুশফিকুর রহিম একজন। ভবিষ্যৎ ক্রিকেটারদের কাছে তিনি অনন্য উদাহারণ হিসেবে থাকবেন। বিদেশের মাটিতে দুর্দান্ত পারফরমেন্সের জন্য মুশফিক তাদের অনুপ্রেরণা যোগাবেন। কিন্তু তিনি নিজে কীভাবে এই পারফরমেন্সকে বিবেচনা করেন? মুশফিকের জবাব, 'বিদেশের মাটিতে রান করাটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখি।'

ক্রিকেটের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোকে এক সাক্ষাৎকারে এই কথা বলেন তিনি।

গত পাঁচ বছরে মুশফিক দেশের বাইরে টেস্ট ম্যাচে গড়ে ৫০ রান করেছেন। কীভাবে রান করার ধারবাহিকতা ধরে রাখছেন?

মুশফিকের জবাব, 'আমার মনে হয় না, কেউ ইচ্ছে করে ঘরের মাঠে অথবা বিদেশের মাটিতে বেমি রান করে। আমি সব সময় সব ম্যাচে নিজের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করি। তবে এটা সত্যি, দেশের বাইরে রান করাটা আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেই। অনেকের ধারণা, বাংলাদেশী ক্রিকেটাররা ঘরের মাঠে ভালো পারফরমেন্স করে। তবে আমি দেশের বাইরের খেলায় রান তোলার ব্যাপারে উন্নতি করার চেষ্টা করেছি। আমি পরিস্থিতি বুঝে এবং বোলিং দেখে রান নেই।'

এ ব্যাপারে মুশফিক আরো বলেন, 'তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ- আমরা মাঝে মাঝেই এই ব্যাপারে আলোচনা করি। আমরা বলি, আমাদের লিড নেয়া উচিত। আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্টে ভালো পারফরেমেন্স করিনি, তবে পরের সিরিজে ভালো করার আশা করছি। নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে আমি আমার শতভাগ দিয়েছি।

২০১৪ সালে কিংসটন এবং ২০১৭ সালে ওয়েলিংটন ও হায়দরাবাদে সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিক। বিদেশের মাটিতে তার সবচেয়ে প্রিয় ইনিংস কোনটি?

জবাবে অভিজ্ঞ এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান এবং সাবেক অধিনায়ক বলেন, 'ওয়েলিংটনের সেঞ্চুরিটি আমার কাছে বিশেষ কিছু্। সফরের প্রথম ওয়ানডের পর আমি ইনজুরিতে পড়ি। তাছাড়া নিউজিল্যান্ডে আমার বা বাংলাদেশের কোনো রেকর্ড ছিল না। মহান আল্লাহর অশেষ রহমত যে, আমি খুব ভালো একটা ইনিংস খেলেছি। এছাড়া তামিম আর মুমিনুলের যেভাবে নতুন বল মোকাবেলা করেছে- এজন্য তাদের সাদুবাদ দিতে হয়। তারা আমার আমার সাকিবের জন্য পথটা মসৃন করে দিয়ে গেছে। বাক পথটা আমরা ভালোভাবেই পার হয়েছি।'

'এরপর হায়দরাবাদের সেঞ্চুরির কথা বলতে হয়। ভারত সেরা দলগুলোর একটি। তাদের বোলিং অসাধারণ। এ দলটির বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার স্বপ্ন ছিল এবং ভারতের মাটিতে আমি বাংলাদেশের হয়ে প্রথম টেস্টে লিড করেছি। এ দুটি সেঞ্চুরি আমার কাছে স্পেশাল।'


আরো সংবাদ



premium cement