২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

শ্রীলঙ্কার ‘ইমরান খান’ হবেন সাঙ্গাকারা!

কুমার সাঙ্গাকারা: রাজনীতিকে আসার আগ্রহ নেই - ছবি : সংগৃহীত

শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট কিংবদন্তী কুমার সাঙ্গাকার দেশটির আগামী বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হবেন এমন গুঞ্জন অনেকদিন ধরেই চলছে সংবাদ মাধ্যমে। এই খবরের সূত্র ধরে, কোন কোন সংবাদ মাধ্যম এই সাবেক অধিনায়ককে শ্রীলঙ্কার ‘ইমরান খান’ হিসেবেও অভিহীত করতে শুরু করেছে।

আগামী বছর অনুষ্ঠিত হবে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সরকারি জোট ও বিরোধী দল শীঘ্রই তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে। দেশটির অনেক ক্রিকেটারই খেলা ছাড়ার পর রাজনীতিতে এসেছেন। বিশ্বকাপ জয়ী(১৯৯৬) অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা বর্তমান সরকারের সমুদ্রবন্দর বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন, আগে করেছেন ক্রীড়া মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন। আরেক গ্রেট ব্যাটসম্যান ও সাবেক অধিনায়ক সনথ জয়সুরিয়াও বর্তমানে আছে উপমন্ত্রীর দায়িত্বে। যেসব কারণ সাঙ্গাকারার নামে গুঞ্জন ওঠার পর বিষয়টি অনেকেই সত্য বলে ধরে নিয়েছেন।

তবে সম্প্রতি রাজনীতিতে আসার নিয়ে এই খবর নাকচ করে দিয়েছেন সাঙ্গাকারা নিজেই। বলেছেন, বর্তমানে রাজনীতির সাথে কোন সম্পৃক্ততা নেই, ভবিষ্যতেও জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

পাকিস্তনের বিশ্বকাপ জয়ী(১৯৯২) অধিনায়ক ইমরান খান দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। দুই দিন পর ‘কাপ্তান’ শপথ নিবেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। মূলত সে কারণেই সাঙ্গাকারার বিষয়টি আলোচনায় বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। তবে সাঙ্গা বলেছেন, ‘এসব কথাকে গুজব হিসেবেই দেখতে চাই। নিশ্চিত করে বলছি, কোন রাজনৈতিক পদে আসার আকাঙ্ক্ষা আমার নেই। অতীতেও কখনো ছিলো না, ভবিষ্যতেও যে থাকবে না সে ব্যাপারে নিশ্চিত’।

৪০ বছর বয়সী সাঙ্গাকারা গত বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কা জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছেন। বর্তমানে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত আছেন তিনি। স্থায়ীভাবে কোন পেশায় জড়িত না হলেও রাজনীতিতে আসার গুঞ্জনকে নাকচ করে দিলেন শ্রীলঙ্কার হয়ে ১২ হাজারের বেশি টেস্ট রান করা সাঙ্গা নিজেই।

আরো পড়ুন : প্রথম জীবনে কেমন ছিলেন ইমরান খান
ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিতে আসা ইমরান খান ছিলেন প্রিন্সেস ডায়নার ঘনিষ্ট বন্ধুদের একজন। যিনি এখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহনের অপেক্ষায় রয়েছেন। জাতীয় পরিষদের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করার পর শনিবার দিনের শরুতে ইমরান খান বলেছেন,‘আমরা এমনভাবে দেশ চালাবো যার অভিজ্ঞতা দেশের মানুষের পূর্বে ছিল না।’

ইমরান খান (৬৫) পাকিস্তানিদের কাছে মহাতারকা হয়েছেন খেলার কারণে। ১৯৯২ সালে তার নেতৃত্বে ইংল্যান্ডেকে হারিয়ে বিশ্বকাপ ট্রফি জিতেছিল পাকিস্তান।


তবে দেশে তারকাবনে যাওয়ার আগে লন্ডনে তার প্লেবয় ইমেজ ছড়িয়ে পরেছিল। লন্ডনে নাইট ক্লাবগুলোতে তার উপস্থিতি এবং হোটেল কক্ষে হাফপ্যান্ড পরা ছবিগুলোই ছিল ওই ইমেজ ছড়িয়ে পরার প্রধানতম কারণ।

বিখ্যাত তারকা স্ট্রিং, মিক জগর, গোল্ডি হাভ পাকিস্তান সফরে এসে তার সাথে দেখা করে ছিলেন। এছাড়া ১৯৯৭ সালে প্যারিসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পূর্বে ডায়না যখন বয়ফ্রেন্ড হাসনাত আহমেদ খানের সাথে পাকিস্তানের এসেছিলেন তখনও ইমরানের সাথে দেখা করেছিলেন তারা।

তিনি প্রথম বিয়ে করেছিলেন লন্ডন ভিত্তিক চিত্রপরিচালক জেমিমা গোল্ডস্মিথকে। তাদের সংসারে দুই ছেলে রয়েছে, তবে ২০০৪ সালে তাদের ৯ বছরের সংসার জীবনের ইতি ঘটে।

এরপর লম্বা বিরতি দিয়ে ২০১৫ সালে তিনি বিয়ে করেন ব্রিটিশ পাকিস্তান বংশোদ্ভুত লাস্যময়ী সাংবাদিক রেহাম নায়ারকে। এই বিয়ে খুব দীর্ঘ হয়নি। ২০১৮ সালে তিনি পুনরায় বিয়ে সংক্রান্ত খবরের জন্য সংবাদের শিরোনামে আসেন। চলতি বছরের শুরুতে বিয়ে করেছেন তার আধ্যাত্মিক গুরু বুশরা ওয়াত্তুকে।

রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে গত দুই দখকে ইমরানের জীবনে পরিবর্তন আসে তার রোমান্টিক জীবনাচরনের কারণেই।

১৯৯৬ সালে রাজনৈতিক দল গঠন করার পর জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে দুইটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে একটি আসনে জয় লাভ করেন।

কিছু রাজনীতিবিধ তাকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করছিলেন। তবে সমালোচকদের তিরস্কারও পেয়েছিলেন।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মিলে সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ ঘোষণা করলে ইমরান তার বিরোধীতা করে আটক হয়েছিলেন। আমেরিকা বিরোধী মনোভাব স্থাপনে কাজ করায় পশ্চিমাদের কাছে তিনি জঙ্গিও সন্ত্রাসবাদ সমর্থনকারী হিসাবে বিবেচিত হয়েছিলেন। ইমরান খান তালেবানের বিচার ব্যবস্থাকে সমর্থন করেছিলেন এবং নিজেকে সাচ্চা মুসলিম হিসাবে দাবি করেছিলেন।

তিনি পাকিস্তানের কুখ্যাত ব্লাসফেমি আইনকে সমর্থন করেছেন, যা সংখ্যালগু ধর্মের সদস্যদেরকের আটক করতে সাহায্য করেছে। এছাড়া তার দল মালালা ইউসুফজাইকে দমনের পক্ষে ছিলেন। তালেবান কর্তৃক গুলি চালানো এই স্কুল ছাত্রীকে তিনি সিআইএর এজেন্ট হিসাবে আখ্যায়িত করেছে।

ক্রমবর্ধমানভাবে বাড়তে থাকা জাতীয় ঋণ, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, সাহিংসতা, হুমকির মধ্যই ‘নতুন পাকিস্তান’ গড়ার অঙ্গিকার করেছেন ইমরান। এছাড়া তিনি যে দেশটির শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করতে যাচ্ছেন, সেখানে শত মিলিয়ন মার্কিন সাহায্য কর্তন করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

শনিবার ঘোষিত জাতীয় পরিষদের ফলাফলে দেখা যায়, পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফ (পিটিআই) মোট ২৭০ আসনের মধ্যে ১১৫ আসন পেয়ে এগিয়ে আছেন। তবে সরকার গঠন করতে হলে দলটি আরো ২১টি আসন প্রয়োজন। ইমরান অবশ্য এতেই আশাবাদী। তিনি চাইছেন আঞ্চলিক দলগুলোকে সঙ্গী করে একটি জোট সরকার গঠন করতে।

তিনি কয়েক দশক ধরে চলমান দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিধদের কাছ থেকে মুক্ত করার অঙ্গিকার করে বলেছেন, ‘ক্যান্সারের মতো তারা এই দেশকে খেয়ে ফেলেছে’

তবে বিরোধী দলগুলো দাবি করেছে, জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য তিনি ভন্ডামির আশ্রয় গ্রহন করেছেন। সম্প্রতি তার দ্বিতীয় স্ত্রী বলেছেন, ‘ইমরান ধর্মকে ব্যাবহার করে নিছক একটি খোলস হিসাবে।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও মনে করেছেন ইমরানের জয়ের নেপথ্যে রয়েছে, দেশটির শক্তিশালি সেনাবাহিনী।


আরো সংবাদ



premium cement