১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

৯ ম্যাচে ৫৪ গোল: কিশোরী ফুটবলারদের সাফল্যের রহস্য

একের পর এক প্রতিপক্ষকে গোল বন্যায় ভাসাচ্ছে কিশোরী ফুটবলাররা - ছবি : সংগ্রহ

বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল দল ভুটানে দক্ষিণ এশিয়ান অনূর্ধ্ব-১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে উঠেছে। সেমিফাইনালের আগে গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানকে ১৪-০ ও নেপালকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে কিশোরী ফুটবলারদের দলটি।

আট মাস আগে ঢাকায় হওয়া সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ, হংকংয়ে আমন্ত্রণমূলক জকি কাপ ও চলতি দক্ষিণ এশিয়ান আসরে সফলতা পাচ্ছে বাংলাদেশের মেয়েরা। তিনটি আসরে মোট ম্যাচ খেলেছে ৯টি। আর প্রতিপক্ষের জালে গোল দিয়েছে ৫৪টি। আর গোল হজম করেছে মাত্র ২টি।

এমন গোলবন্যার নেপথ্যে কী আছে? অধিনায়ক মারিয়া মান্ডার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাধারণত পরিস্থিতি বুঝে গোল হয়। আমরা মাঠে থাকলে শুধু চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়েই ভাবি। গোল হলেই তো জয় হয়, ৪টা বা ৫টা দিলেও জয় পাই ৩টা গোল দিলেও জয় পাই।’

তবে কখনো কখনো পরিস্থিতি অনুকূলে থাকে না। যেমন সোমবার নেপালের বিপক্ষে। মারিয়া বলেন, ‘যখন আমরা গোল পাই না তখন আমরা সবাই মিলে বৈঠক করি। আলোচনা করে আবার ভালোভাবে খেলে ৩টি গোল দেই।’

পাকিস্তানের সাথে মূল লক্ষ্য ছিল প্রথম ম্যাচ জয়। কারণ প্রথম ম্যাচ জিতলে গ্রুপ পর্ব পার করা সহজ হয়। তাই গোল দেওয়ার বাড়তি তাড়না ছিল বলে জানান তিনি।

গত সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হবার ফলে এবারও চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য খেলছে বাংলাদেশ দল। মারিয়া মান্ডা মনে করেন, আত্মবিশ্বাসী হয়ে যেভাবে দলটি খেলছে সেভাবে এগুলেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশে ফেরাটা সম্ভব হবে।

মূলত প্রস্তুতির দিকে বেশি নজর দিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবলের বর্তমান সফলতম দলটি। নিয়মিত ফুটবল ফেডারেশনের ক্যাম্পে বিশেষায়িত কোচের অধীনে প্রতিদিন তিনবার অনুশীলন করে কিশোরীদের দলটি। মারিয়া মান্ডা মনে করেন, এই দলটির মূল শক্তি কোনো দলকে দুর্বল না ভাবা।

সেমিফাইনালে ভুটানের মুখোমুখি হবে তারা। বাংলাদেশের এই কিশোরী ফুটবল দলটির এমন সফলতার পেছনের কারণ জানতে চাওয়া হয়েছিলো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণের কাছে। তিনি বলেন, ‘মেয়েদেরকে নিয়মিত রুদ্ধদ্বার অনুশীলন করানো হয়। মূলত তাদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে মানসিক ও শারিরীক পরিচর্যা বেশি কাজে লাগছে।’

এভাবেই এই দলটিকে তৈরি করা হয়েছে বলে তিনি জানান। মেয়েরা ফুটবলকে পেশা হিসেবে, ক্যারিয়ার হিসেবে নেয়া শিখছে, এটাকে বড় কারণ মনে করেন মাহফুজা আক্তার কিরণ।

আরো পড়ুন : মনিকার ভক্ত হয়ে গেছে ভুটানিরা
‘ভাই, আমাকে আপনাদের নাম্বার সেভেন জার্সিধারী ফুটবলারটির একটা অটোগ্রাফ নিয়ে দেবেন?’ 
শনিবার রাতে ডিনারের সময় রেস্ট্রুরেন্টে এভাবেই বাংলাদেশী মিডিয়া কর্মীদের কাছে আবদার প্রেমা ওয়াংচুক ও দর্জি গেলসেনদের। এরা 
সাধারণ ভুটানি নাগরিক বা ফুটবল দর্শক নন। দু’জনই ভুটান ফুটবল লিগের খেলোয়াড়। প্রেমা ওয়াংচুকের ক্লাব ফুনসলিং এফসি, দর্জি গেলসেন খেলছেন রিজঝুং এফসিতে।

তারা এবারের সাফে বাংলাদেশ - পাকিস্তান ম্যাচ দেখেছেন। তাতেই মুগ্ধ বাংলাদেশ দলের মিডফিল্ডার মনিকা চাকমার খেলায়। তার খেলা এই ভুটানিদের দারুন পছন্দ হয়েছে। বিশেষ করে মনিকার পাসিং, ড্রিবলিং, চেজিং স্টাইল মনে ধরেছে তাদের। এই দুই ফুটবলার জানান, তাদের পক্ষে বাংলাদেশ দল যেখানে অবস্থান করছে সেই বাবেসার হোটেল আরিয়াতে যাওয়া সম্ভব নয়, বারণ আছে। তাই সংবাদ কর্মীদের দারস্থ হয়েছেন।


শুধু খাগড়াছড়ির মেয়ে মনিকা চাকমাই নন। বাংলাদেশ অধিনায়ক ময়মনসিংহের মারিয়া মান্ডা, দীর্ঘদেহী ডিফেন্ডার সিরাজগঞ্জের আঁখি 
খাতুনের খেলাও পছন্দ তাদের। প্রেমা ওয়াংচুকের মতে, বাংলাদেশ দলের মিডফিল্ডটা চালাচ্ছেন ৭ (মনিকা) ও ৮ নং জার্সিধারী ( অধিনায়ক মারিয়া মান্ডা)। তবে বেশী পছন্দ মনিকাকে। প্রেমা ও দর্জির সাথে আসা উগেন লিডুপ, ফু জং, তেরসিংরাও ভক্ত হয়ে গেছে  বাংলাদেশের কিশোরী ফুটবল দলটির এই ভুটানিরাদের দলটির সবারই কমবেশি সম্পর্ক আছে ফুটবলের সাথে। প্রেমা ও গেলসেন ছাড়া বাকীদের ফুটবল পর্ব শেষ হয়েছে স্কুলেই।

এখন তারা গ্র্যাজুয়েশন করছেন। প্রেমা ভুটান অনূর্ধ্ব-১৩ জাতীয় দলের প্রতিনিধি ছিলেন। বাংলাদেশ একবার তার যাওয়া হয়েছে বাবার সাথে। বাংলাদেশ থেকে তৈরী পোশাক আমদানি করেন তার বাবা।

বাংলাদেশের ফুটবলের প্রতি তাদের ভালোবাসার শুরু গত বছর সেপ্টেম্বরে থিম্পুতে অনুষ্ঠিত পুরুষদের সাফ অনূর্ধ্ব -১৮ ফুটবল থেকে। যে আসরে বাংলাদেশ জাফর ইকবালের ম্যাজিকে রানার্সআপ হতে পেরেছিল। নেপালের কাছে ভারতের রহস্যজনক হারে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি বাংলাদেশ। সেই খেলা ড্র হলেই শিরোপা হাতে উঠতো বাদশা, সুফিল, জাফরদের।

প্রেমা, গেলসেনদের দৃষ্টিতে এবারও বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল হবে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ মহিলা আসরে। এই দুই দলই বেশি শক্তিশালী। এগিয়ে রেখেছেন লাল-সবুজদেরই। তবে চ্যাম্পিয়ন হতে হলে এবং সোমবার নেপালের বিপক্ষে জয়ের জন্য মারিয়া, মনিকাদের আরো ভালো খেলার পরামর্শ তাদের।


আরো সংবাদ



premium cement