১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

লর্ডসে চরম লজ্জার হার কোহলিদের

লর্ডসে চরম লজ্জার হার কোহলিদের - ছবি : সংগৃহীত

দেশে বাঘ, বিদেশে গেলেই বেড়াল। ভারতীয় ক্রিকেট দলকে নিয়ে এই ধারণা চলে আসছে দশকের পর দশক। এবারো তার ব্যতিক্রম ঘটল না। লর্ডসে দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ইনিংস ও ১৫৯ রানে হেরে সিরিজে ০-২ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ল ‘টিম ইন্ডিয়া’।

টি-২০ সিরিজ জেতার পর বিরাটদের নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু লিড নিয়েও একদিনের সিরিজ জিততে ব্যর্থ হয় ভারত। যদিও টেস্ট সিরিজের আগে পর্যাপ্ত প্রস্তুতির সময় পেয়েও তা কাজে না লাগানোর খেসারত এখন গুণতে হচ্ছে ভারতীয় দলকে। লর্ডস টেস্টে লজ্জাজনক হার তার জ্বলন্ত উদাহরণ। এজবাস্টন টেস্টে ভারত যে লড়াই ছুঁড়ে দিয়েছিল সেটা বিরাট কোহলির সৌজন্যে। প্রথম ইনিংসে ১৪৯, দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ৫১ রান করার ফলেই ভারত জয়ের স্বপ্ন জাগিয়ে হেরেছিল। না হলে লর্ডস টেস্টের দেয়াল লিখনটা স্পষ্ট হয়ে যেত এজবাস্টনেই!

দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের ব্যাটিং বিপর্যয় দেখে মনে হচ্ছিল ইংল্যান্ড যেন কোনো কাউন্টি দলের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলছে। প্রথম ইনিংসে ১০৭ রানে অল-আউট হওয়ার পর ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট টস হারা এবং বৃষ্টিকেই দায়ী করেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যর্থতার কারণ কী সেটাই, কোচ রবি শাস্ত্রীর কাছে এই প্রশ্নটা এখন ছুঁড়ে দিতে চান অনেকেই।

ভারতীয় মিডিয়ায় দাবি করা হয়েছে, ইংল্যান্ডে আগে সীমিত ওভারের সিরিজ খেলে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। কিন্তু সেই সুযোগটা বিজয়, ধাওয়ানরা পুরোপুরি কাজে লাগাননি। প্র্যাকটিস না করে তারা বিলেতে শপিং করে বেড়িয়েছেন। ইংল্যান্ড সফরে এক একজন ক্রিকেটারের পিছনে থাকা, খাওয়া, যাতায়াত মিলিয়ে ভারতীয় বোর্ড বিপুল অর্থ খরচ করছে। ক্রিকেটাররা আগে ইকোনমি ক্লাসে যাতায়াত করতেন। আপগ্রেড করে তা এখন বিজনেস ক্লাস করা হয়েছে। বিরাট কোহলিদের বার্ষিক চুক্তির অর্থও কয়েক গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু মাঠে নেমে তার প্রতিফলন কী দেখা যাচ্ছে? ক্রিকেটপ্রেমীদের দাবি, পারফরম্যান্সের বিচারে ক্রিকেটারদের চুক্তির অর্থ নির্ধারিত করা হোক। সিনিয়রদের নিয়ে যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে জুনিয়রদের নিয়ে খেললে এর থেকে খারাপ কিছু হবে না। তাই সুযোগ দেওয়া হোক ফর্মে থাকা তরুণ ক্রিকেটারদের।

রোববার ইংল্যান্ডের স্কোর ছিল ৬ উইকেটে ৩৫৭ রান। ক্রিস ওকস ১২০ ও সাম কুরান ২২ রানে অপরাজিত ছিলেন। ২৫০ রানের লিড থাকা সত্ত্বেও ইংল্যান্ড ফের ব্যাট করতে নামে। স্যাম কুরান ৪০ রানে আউট হওয়ার পর ৩৯৬ রানে প্রথম ইনিংস ডিক্লেয়ার করেন জো রুট। ওকস ২১টি বাউন্ডারির সাহায্যে ১৩৭ রানে অপরাজিত থাকেন।

প্রবল চাপের মুখ দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে ভারত। কিন্তু তৃতীয় ওভারেই জেমস অ্যান্ডারসনের বলে মুরলী বিজয় (০) বেয়ারস্টোর হাতে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন। দুই ইনিংসেই ব্যর্থ বিজয়। বাহারি চুলে যতটা তিনি ইংল্যান্ড সফরে আলো ছড়াচ্ছেন, ব্যাট হাতে ততটাই অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছেন। প্রথম ইনিংসে জিমি অ্যান্ডারসন আউট স্যুইংয়ে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের নাকানিচোবানি খাইয়েছিলেন। এদিন কৌশল বদলে উইকেট টু উইকেট বল করে পর পর দুটি সাফল্য শুরুতে পেয়ে যান তিনি। সেই সঙ্গে লর্ডসে একশো উইকেটও পেয়ে গেলেন অ্যান্ডারসন। ম্যাচে তাঁর ঝুলিতে গিয়েছে মোট ন’টি উইকেট। তার দ্বিতীয় শিকার লোকেশ রাহুল (১০)। মাত্র ১৩ রানেই ভারতের ২টি উইকেট পড়ে যায়। পিঠের পুরানো চোট মাথা চাড়া দেওয়ায় চার নম্বরে ব্যাট করতে নামেননি বিরাট। ফলে চেতেশ্বর পূজারার সঙ্গী হন অজিঙ্কা রাহানে।

জোড়া উইকেট তুলে নিয়ে শুরুতেই জোর ধাক্কাটা দিয়েছিলেন জিমি। আর ভারতের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়ার কাজটা সফলভাবে করেন স্টুয়ার্ট ব্রড। তার প্রথম শিকার অজিঙ্কা রাহানে। অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল খেলতে গিয়ে জেনিংসের হাতে ক্যাচ তোলেন রাহানে (১৩)। চেতেশ্বর পূজারা উইকেটে টিকে থাকার মরিয়া চেষ্টা করছিলেন। কারণ, ম্যাচ বাঁচানোর জন্য প্রায় দু’দিন ব্যাট করতে হতো ভারতকে। কিন্তু পুজারার সলিড ডিফেন্স চিরে ব্রডের দুরন্ত ডেলিভারি উইকেট ছিটকে দেয়। পূজারা ৮৭ বলে ১৭ রানে বোল্ড হয়ে মাঠ ছাড়ার পর বিরাট কোহলি একা দলকে ভরসা দিচ্ছিলেন। ফিটনেস সমস্যায় তিনি পুরো একশো শতাংশ ব্যাট করতে পারছিলেন না। বলের লাইনে গিয়ে শট খেলতে সমস্যা হচ্ছিল কোহলির। ৩১তম ওভারে ব্রডের তৃতীয় ডেলিভারিতে শর্ট লেগে পোপের হাতে ধরা পড়েন ভারত অধিনায়ক। আম্পায়ার আউট দিলেও কোহলি রিভিউ নেন। যদিও রিপ্লেতে স্পষ্ট হয়ে যায় বলটি কোহলির গ্লাভসে লেগে পোপের হাতে জমা পড়ে। ১৭ রানে সাজঘরে ফেরেন কোহলি।

পরের বলে দীনেশ কার্তিককে (০) লেগ বিফোর করেন ব্রড। হ্যাটট্রিকের সুযোগ হাতছাড়া হলেও ব্রড কিন্তু ভারতের পরাজয় চা পানের বিরতির আগেই নিশ্চিত করে দেন। সপ্তম উইকেটে হার্দিক পান্ডিয়া ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন কিছুটা লড়াই করলেও সেটা ম্যাচ বাঁচানোর পক্ষে যথেষ্ট ছিল না। হার্দিক ২৬ রানে আউট হন। প্রথম ইনিংসের মতো ভারতের হয়ে সর্বাধিক রান করেন অশ্বিন। তিনি ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন। ইশান্ত শর্মা (২) আউট হতেই ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস ১৩০ রানে শেষ হয়ে যায়। ম্যাচের সেরা হন ক্রিস ওকস।

চতুর্থ দিনের স্কোর : প্রথম ইনিংসে ভারত ১০৭। ইংল্যান্ড (৬ উইকেটে ৩৫৭ থেকে) ওকস অপরাজিত ১৩৭, কুরান ক সামি বো পান্ডিয়া ৪০, অতিরিক্ত ২৩, মোট ৮৮.১ ওভারে ৭ উইকেটে ৩৯৬।

উইকেট পতন : ২৮-১, ৩২-২, ৭৭-৩, ৮৯-৪, ১৩১-৫, ৩২০-৬, ৩৯৬-৭। বোলিং: ইশান্ত ২২-৪-১০১-১, সামি ২৩-৪-৯৬-৩, কুলদীপ ৯-১-৪৪-০, পান্ডিয়া ১৭.১-০-৬৬-৩, অশ্বিন ১৭-১-৬৮-০।

দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত : বিজয় ক বেয়ারস্টো বো অ্যান্ডারসন ০, রাহুল এলবিডব্লু বো অ্যান্ডারসন ১০, পূজারা বো ব্রড ১৭, রাহানে ক জেনিংস বো ব্রড ১৩, কোহলি ক পোপ বো ব্রড ১৭, পান্ডিয়া এলবিডব্লু বো ওকস ২৬, কার্তিক এলবিডব্লু বো ব্রড ০, অশ্বিন অপরাজিত ৩৩, কুলদীপ বো অ্যান্ডারসন ০, সামি এলবিডব্লু বো অ্যান্ডারসন ০, ইশান্ত ক পোপ বো ওকস ২, অতিরিক্ত ১২, মোট ৪৭ ওভারে ১৩০।

উইকেট পতন : ০-১, ১৩-২, ৩৫-৩, ৫০-৪, ৬১-৫, ৬১-৬, ১১৬-৭, ১২১-৮, ১২৫-৯, ১৩০-১০।
বোলিং : অ্যান্ডারসন ১২-৫-২৩-৪, ব্রড ১৬-৬-৪৪-৪, ওকস ১০-২-২৪-২, কুরান ৯-১-২৭-০।


আরো সংবাদ



premium cement