১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

৩ দিনেই পরাজয়ের শঙ্কায় ভারত

৩ দিনেই পরাজয়ের শঙ্কায় ভারত - ছবি : সংগৃহীত

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে তৃতীয় দিনেই ভারতের পরাজয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্বাগতিক ইংল্যান্ড এর মধ্যেই ২৫০ রানে এগিয়ে গেছে তাদের প্রথম ইনিংসে। হাতে আছে আরো ৪ উইকেট।
ভারতকে প্রথম ইনিংসে ১০৭ রানে অল আউট করে দিয়েছিল ইংল্যান্ড। তারপর তারা তাদের খেলা শুরু করে। প্রথম ইনিংসে শনিবার তারা ৬ উইকেটে করেছে ৩৫৭ রান।

কোহলিকে নিয়ে নতুন শঙ্কা
প্রেস বক্স থেকে উল্টা দিকের স্কোরবোর্ডে জ্বলজ্বল করছে দু’টি স্কোর। ক্রিস ওক্‌স ব্যাটিং ১২০। আর তার নিচে ভারতের প্রথম ইনিংস— ১০৭। এগারো জন মিলে ভারত যা করেছে, প্রতিপক্ষের এক জন সেটা পেরিয়ে গেছেন! তা-ও তিনি বিশেষজ্ঞ কোনো ব্যাটসম্যানই নন। অলরাউন্ডার। রাস্তায় মারামারি করা নিয়ে বেন স্টোকসকে আদালতে হাজিরা দিতে না হলে হয়তো এই টেস্টে জায়গাই পেতেন না।

বোলার ওক্‌স ভারতকে সব চেয়ে বড় ধাক্কা দিয়েছিলেন বিরাট কোহালির উইকেট তুলে। শনিবার ছিল ব্যাটসম্যান ওক্‌সের পালা। তার ১৫৯ বলে অপরাজিত ১২০ এবং জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে ১৮৯ রানের পার্টনারশিপ সিরিজে ইংল্যান্ডকে ২-০ এগিয়ে দেয়ার মঞ্চ তৈরি করে ফেলেছে। বেয়ারস্টো সেঞ্চুরি পেলেন না। কিন্তু ১৪৪ বলে ৯৩ করে তিনি যখন হার্দিক পাণ্ড্যর বলে আউট হয়ে ফিরছেন, যে ভাবে গোটা মাঠ উঠে দাঁড়াল, তাতে মনে হচ্ছিল ১৯৩ করে আসছেন। সেঞ্চুরির চেয়েও অনেক দামী এই ইনিংস। ইংল্যান্ডের গোটা ড্রেসিংরুম বেরিয়ে এলো ব্যালকনিতে। তেমনই আলো কমে আসার জন্য আম্পায়ারেরা যখন খেলা থামিয়ে দিলেন, নায়কের সংবর্ধনা পেলেন ওক্‌স। ভারতীয় দলের ক্রিকেটারেরাও দাঁড়িয়ে পড়লেন। ক্রিকেটের আদি সৌজন্য মেনে দিনের নায়ককে আগে মাঠ ছাড়তে দিলেন। কোহালিকেও দেখা গেল দাঁড়িয়ে গিয়ে হাততালি দিচ্ছেন। একটা সময় ইংল্যান্ড ৮৯-৪ হয়ে গিয়েছিল। জো রুটকে তখন তুলে নিয়েছেন মোহাম্মদ শামি। একটু পরে বাটলারও গেলেন। ইংল্যান্ড ১৩১-৫। মনে হচ্ছিল, দু’শোর মধ্যেও যদি ইংল্যান্ডকে রাখতে পারেন বোলাররা, তবু একটা আশা থাকতে পারে। কিন্তু সব আশায় পানি ঢেলে দিলেন ওক্‌স এবং বেয়ারস্টো। দুই স্পিনার খেলিয়েছিলেন কোহালি। দু’জনের কেউ একটাও উইকেট পেলেন না। ছয় উইকেটের তিনটি শামির, দু’টি নিলেন হার্দিক, একটি ইশান্ত।

কোহালির আইপিএল দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর এ বারই নিয়েছে ক্রিস ওক্‌সকে। লর্ডসে তিনিই সব চেয়ে বড় বাধা হয়ে উঠলেন কোহালির ভারতীয় দলের সামনে। চোট সারিয়ে ফিরেই বলে-ব্যাটে এমন চমৎকার পারফরম্যান্স করেছেন ওক্‌স যে, পরের টেস্টে স্টোকস ফিরলেও তাকে কী করে প্রথম একাদশে নেওয়া হবে, সেই আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে।

ভারতের জন্য সব দিক দিয়েই ফিরে এসেছে কালো আকাশ। মন্দ আলোর জন্য তৃতীয় দিনের খেলা যখন থামিয়ে দিলেন আম্পায়ারেরা, ইংল্যান্ড এগিয়ে গেছে ২৫০ রানে। ডেভিড গাওয়ার আর নাসের হুসেন কমেন্ট্রিতে তখনই বলাবলি শুরু করে দিয়েছেন, জো রুটের আগেই ডিক্লেয়ার করে দেয়া উচিত ছিল কি না। তা হলে মেঘলা আকাশের নিচে কয়েকটা ওভার ভারতীয় ব্যাটিংকে ফেলা যেত অ্যান্ডারসন, ব্রড, ওক‌্সদের সামনে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, রোববার সারা দিন বৃষ্টি হতে পারে। সোমবারেও বৃষ্টির সম্ভাবনা সত্তর শতাংশ। শনিবার রাতেই বৃষ্টি শুরু হলো। নাসের হুসেনরা এই কারণেই চিন্তিত। ২-০ এগিয়ে যাওয়ার মতো মঞ্চ তৈরি করেও আবহাওয়া না বাধা হয়ে দাঁড়ায় ইংল্যান্ডের সামনে। আর ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য আতঙ্কের খবর হচ্ছে, খেলা যদি হয়, মেঘলা আবহাওয়ার মধ্যেই হবে। তার মানে প্রতিকূল পরিবেশে ফের সেই স্টাইল ভাইদের ব্যাটিং দেখার অত্যাচার!

তার চেয়ে অন্য রাস্তাটা অনেক ভালো। ইংল্যান্ডের সর্বনাশই যদি ভারতের পৌষ মাস হয়ে দেখা দেয়। কোহালিকে বাদ দিলে এই ভারতীয় দলের ব্যাটসম্যানদের যা দুর্ধর্ষ দক্ষতার নমুনা পাওয়া গেছে, তাতে আবহাওয়ার উপরে ভরসা করাটা অনেক নিরাপদ বাজি। আরো খারাপ হচ্ছে, ওক্‌স এবং বেয়ারস্টোর পার্টনারশিপের পরে মাঠের মধ্যে ভারতীয় দলের শরীরী ভাষাও ভীষণ হাল ছাড়া লাগল। এটা আগে দেখা যেত যখন মহেন্দ্র সিংহ ধোনির অধীনে ভারত বিদেশ সফরে আসত আর একটার পর একটা টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হতো। কোহালি ক্যাপ্টেন হওয়ার পর থেকে এমন ন্যাতানো হাবভাব দেখা যায়নি। ২-০ হয়ে গেলে আরো দুমড়ে-মুচড়ে যাবে দলের আত্মবিশ্বাস। উদ্বেগের সব চেয়ে বড় কারণ অধিনায়ক স্বয়ং। যিনি এ দিন বেশ খানিকটা সময়ে মাঠে ছিলেন না। আশঙ্কার খবর পাওয়া গেছে কোহালিকে নিয়ে। তার পিঠে ব্যথা হচ্ছে। এই চোট নতুন নয়। এ বারের আইপিএল খেলার পরে হঠাৎ পিঠে ব্যথা অনুভব করতে শুরু করেন তিনি। মুম্বইয়ে ডাক্তার দেখানোর পরে কাউন্টি খেলতে আসার সিদ্ধান্তও বাতিল করতে হয়েছিল। সেটাই ফিরে এল কি না, তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। এ দিন মাঠে ফিরে আসার ঠিক আগের মূহুর্তে বাউন্ডারি লাইনের ধারে ভারতীয় দলের রিজার্ভ বেঞ্চের ক্রিকেটারদের সঙ্গে কিছুক্ষণ বসেছিলেন কোহালি। ওভার শেষ হলেই মাঠে ঢুকবেন বলে।

ওইটুকু সময়েই তাকে চোখমুখ কুঁচকে এক বার পিঠে হাত বোলাতে দেখা গেছে। মাঠে ফিরে এসে তিনি স্লিপে দাঁড়িয়েছিলেন। আশি ওভার হওয়া মাত্র নতুন বল নেন তিনি। নতুন বল নিয়ে ইশান্ত শর্মা প্রথম ওভার করার সময় দেখা গেল স্লিপে দাঁড়িয়ে অন্তত দু’বার কোহালি পিঠে হাত বোলাচ্ছেন। এমন কালো করে আসা আকাশ আর হার্ট অ্যাটাক করানো ব্যাটিংয়ের মধ্যে একা কুম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কোহালি। তার কিছু হওয়া মানে সিরিজ থেকে ছুটির বাজনা বাজতে আর বাকি থাকল কী!

শোনা যাচ্ছে, ড্রেসিংরুমে ফিরে ফিজিয়োকে দিয়ে পিঠের শুশ্রুষাও করাতে হয়েছে কোহালিকে। তাতেও যে পুরোপুরি স্বস্তি ফেরেনি, কয়েক বার পিঠে হাত বোলানো থেকেই পরিষ্কার। তিনি যে রকম ডাকাবুকো চরিত্র তাতে আশা রাখা যায়, ব্যথা হলেও ঠিকই ব্যাট করতে নামবেন। দলকে রক্ষা করার লড়াই চালিয়ে যাবেন। কোহালির পিঠে হাত মানে তো ভারতের মাথায় হাত!


আরো সংবাদ



premium cement