১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খলনায়ক গেইল

গেইল
৬০ বলে ৪০ করেছেন ক্রিস গেইল - সংগৃহীত

টেস্টে চরম বিপর্যয়ের পর ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ক্যারিবিয়ানদের ৪৮ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। শুরুতে উইকেট হারালেও তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান মিলে দ্বিতীয় উইকেটে গড়েছেন ২০৭ রান। দ্বিতীয় উইকেটে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।

তামিম খেলেছেন ১৩০ রানের ইনিংস এবং এটি ওয়ানডেতে তার দশম সেঞ্চুরি।

প্রথমে ব্যাট করতে নেমে তামিম-সাকিবের রানের ওপর ভর করে বাংলাদেশ তুলেছিল ২৭৯ রান। তবে ১১ বলে ৩০ রানের একটি ছোট্ট কিন্তু কার্যকরী ইনিংস খেলেছেন মুশফিকুর রহিম।

জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৯ উইকেট পড়ে যায় ১৭২ রানেই। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে নয় উইকেটে ২৩১ রান তুলতে সমর্থ হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ চার উইকেট পেয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি।

টেস্টে হারার বিপর্যয় কাটিয়ে জয় এলো কিভাবে?

গায়ানা থেকে বাংলাদেশে ক্রীড়া সাংবাদিক রাকিবুল হাসান বলেন, ম্যাচের আগে তারা ঠিক এই প্রশ্নই করেছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে।

রাকিবুল হাসানের মতে, মাঠেও মর্তুজার নেতৃত্ব ছিল যথারীতি প্রশংসনীয় এবং টস জিতে ব্যাটিং নেয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণিত হয়েছে।

"আর তামিম সাকিবের রেকর্ড ২০৭ রানের জুটিই মূলত পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। আর গায়ানার যে উইকেটে খেলা হয়েছে সেখানে প্রথম ইনিংসে এর আগে গড় রান ছিল ২২৯। সেখানে বাংলাদেশ ২৭৯ রান করেছে। শেষ পর্যন্ত ৪৮ রানের জয়ের মাধ্যমে দারুণ শুরু করলো বাংলাদেশ।"

ক্রিস গেইলই খলনায়ক?

টেস্টে হেসে খেলে হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশকে আর সেই বাংলাদেশের সাথে ওয়ানডেতে এমন পরাজয় কেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের।

রাকিবুল হাসান বলছেন, ২১ দশমিক ৩ ওভার খেলে ক্রিস গেইল যখন রান আউট হন তখন তার রান মাত্র ৪০, তাও আবার ৬০ বল খেলে।

"এই ম্যাচে ক্রিস গেইলকেই খলনায়ক বলতে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দৃষ্টিকোণ থেকে। কারণ স্লিপে তার হাত থেকে দুটি ক্যাচ পড়েছে। মাঠেও তার যে মুভমেন্ট সেটা বর্তমান ক্রিকেটের গতির সাথে যায়না। এ ম্যাচের প্রেক্ষাপটে এবং ক্রিস গেইলের এসব ছিল বেমানান।"

কন্ডিশন কেমন ছিল বাংলাদেশের জন্য?

রাকিবুল হাসান জানান, এই মুহূর্তে আবহাওয়া মোটামুটি বাংলাদেশের মতোই এবং টেস্ট সিরিজের সময়ও আবহাওয়া এমনই ছিল।

"কোনো একটা অজ্ঞাত কারণে বাংলাদেশ টেস্টের সাথে মানিয়ে নিতে পারছে না কিন্তু ওয়ানডেতে বাংলাদেশ অনেক দিন ধরেই ভালো খেলছে ধারাবাহিকভাবে। এই বৈপরীত্য কাটিয়ে ওঠাই বড় চ্যালেঞ্জ এখন বাংলাদেশের জন্য।"

 

আরো পড়ুন : এমন ভুল!

স্কোরবোর্ডে ১ রান যোগ হওয়ার পরই যখন সাজঘরে ফিরলেন এনামুল হক বিজয়, তখন হতাশায় ডুবে গিয়েছিল টাইগার সমর্থকরা। টেস্টের মতোই কী হাল হবে বাংলাদেশের? না, তেমনটা হতে দেননি তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। দুইপ্রান্ত আগলে রেখে দেখে-শুনে চালিয়েছেন ব্যাট, যার ফল ২০৭ রানের অনবদ্য জুটি। এটি ওয়ানডেতে যে কোনো উইকেটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। তবে সেঞ্চুরি থেকে ৩ রান দুরে থাকতেই আফসোস নিয়ে বিদায় নেন সাকিব। ক্রিজে আসেন সাব্বির। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মাত্র তিন রান করেই সাজঘরে ফিরতে হলো তাকে, তাও আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে!

৪৭ ওভারের খেলা চলছিল। ক্রিজে ছিলেন সাব্বির। ওভারের তৃতীয় বলটি করতে দৌড়ে এসেছিলেন দেবেন্দ্র বিশু। একটু এগিয়ে এসে খেলতে চেয়েছিলেন সাব্বির। কিন্তু মিস করেন। ব্যাটে-বলে হলো না। বল চলে যায় উইকেটের পেছনে উইকেটরক্ষক সাই হোপের হাতে।

দ্রুত স্ট্যাম্প ভেঙে দেন উইকেটরক্ষক। আবেদন উঠতেই নন স্ট্রাইকে থাকা আম্পায়ার উইলসন আঙ্গুল তুলে দিলেন। সাব্বির কিছু না বুঝেই সোজা হাঁটা ধরলেন। রিভিউ নিলেও হয়তো বেঁচে যেতেন তিনি। কিন্তু রিভিউ না নিয়ে চলে গেলেন ড্রেসিংরুমে।

পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, সাব্বির আউট ছিলেন না। যখন স্ট্যাম্প ভাঙা হচ্ছিল, তখন তার পা ছিল উইকেটের ওপরই। অথচ, আম্পায়ারের ভুলে উইকেট দিয়ে আসতে হলো সাব্বিরকে।

যদি কাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ না জিতত তাহলে এই ভুলের জন্যই আফসোস করতে হতো বাংলাদেশকে।

 

আরো পড়ুন : 'পরিকল্পনা ছিল স্কোরবোর্ডের দিকে না তাকিয়ে খেলে যাওয়া'

এভাবে ঘুরে দাড়াবে বাংলাদেশ- সেটা হয়ত অনেকে ভাবেননি। কারণ টেস্টে হতাশাজনক পারফরমেন্স ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু কাল যেভাবে ধীর-স্থির ব্যাটিং করেছেন তামিম-সাকিব, তাতে ম্যাচজয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৩ রান দুরে থেকে সাকিবের সাজঘরে ফেরাটা মেনে নেয়ার মতো ছিল না। কিন্তু তামিম ধীরতার পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়েছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১০ম সেঞ্চুরি। ১৬০ বলে করেছেন ১৩০ রান।

নান্দনিক এই ইনিংস নিয়ে খুব বেশি কথা বলেননি তামিম। শুধু বলেন, 'যখন একটি ইনিংস দলের জয়ে অবদান রাখে, তখন সেটা সবসময়ই স্পেশাল কিছু।'

তবে এই উইকেটে রান তোলা যে মোটেই সহজ ছিল না সেটাও জানিয়েছেন তামিম। বলেছেন, 'আমরা যখন ব্যাটিং করতে আসি, এটা মোটেই সহজ উইকেট ছিল না। আমাদের শক্তিশালী অবস্থানে যেতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। আমার মনে হয়, প্রথম ২৫ ওভার সত্যিই অনেক কঠিন ছিল। বল টার্ন করছিল এবং ফাস্ট বোলাররাও সাহায্য পাচ্ছিল। তাই আমাদের প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল যতটা সম্ভব সময় খেলে যাওয়া, স্কোরবোর্ডের দিকে না তাকিয়ে। আমাদের মনে মনে একটা লক্ষ্য ছিল, যেটা আমরা মুশফিকের ব্যাটিংয়ে পেয়ে যাই। আমরা আসলে লক্ষ্যটা পার করে ২০ রান বেশি করতে পেরেছি।'


আরো সংবাদ



premium cement