প্রথম ম্যাচ থেকে শিক্ষা নিয়ে আজ মাঠে নামবেন সাকিবরা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৫ জুন ২০১৮, ১৩:৪৬, আপডেট: ০৫ জুন ২০১৮, ১৩:৫৮
আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে আজ মাঠে নামবে বাংলাদেশ দল। রাত সাড়ে ৮টায় ম্যাচটি শুরু হবে। তিন ম্যাচের প্রথমটিতে জিতে আত্মবিশ্বাসী আফগানরা। ৪৫ রানে জয়লাভ করে তারা। অপরদিকে পরাজয়ে হতাশ বাংলাদেশ। সংবাদ সম্মেলনে সেই সুর ছিল সাকিবের কণ্ঠে।
ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘আমরা বোলিং ভালো করেছি। বিশেষ করে শেষ ওভার ছাড়া। শেষ ওভারে রান বেশি দেয়া হয়ে গেছে। এ ছাড়া আর সবই ভালো ছিল।’
প্রথম ম্যাচে ১৬ ওভার শেষে আফগানিস্তানের রান ছিল ১০৭। সে স্কোর শেষ চার ওভারে নিয়ে গেছে ১৬৭ তে। এটাই ছিল ম্যাচে বাংলাদেশের হতাশার বড় চিত্র। সাকিব বলেন, ‘এটা মোটেও ভালো লক্ষণ না। অনেক বেশি রান দেয়া হয়ে গেছে।’ এখান থেকে ইমপ্রুভ করারই বড় প্ল্যান এখন টিম বাংলাদেশের।
তিনি বলেন, ‘আমাদের উন্নতির প্রয়োজন।’
আফগানিস্তানের প্রশংসা করে সাকিব বলেন, ‘অবশ্যই তারা ভালো প্রতিপক্ষ। ওই ম্যাচে সব দিক থেকেই তারা আমাদের চেয়ে ভালো খেলেছে।’
সাকিব প্রশ্নের মুখে পড়েন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের বোলিং করা প্রসঙ্গে। দু’জনই চমৎকার বোলিং করেন। আফগানরা যখন চাপে তখন ওই দুই অকেশনাল বোলার দিয়ে বোলিং করিয়েছিলেন। মাহমুদুল্লাহ তার এক ওভারে ১ রান দিয়ে নেন দুই উইকেট। আর সৈকত তার এক ওভারে দেন ৩ রান। স্বাভাবিক এরপরও কেন তাদের কন্টিনিউ করা হলো না সাকিবের কাছে প্রশ্ন ছিল।
সাকিব বলেন, ‘আসলে ওটা ছিল একটা পর্যায়ে। কিন্তু যখন তারা খেলতে পারছিল না তখন দলের মূল বোলারদের নিয়ে আসা হয়েছিল, যাতে তারাও সাফল্য পায়। তা ছাড়া এরপর ওই দুই বোলারকে আবারো বোলিং দিলে আরো বেশি চার ও ছক্কা হতে পারত। এ জন্য মূল বোলারদের নিয়ে আসা হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘এরপরও ১৭০ (১৬৭) রান চেজ করতে গেলে ব্যাটিং ভালো করতে হয়। কিন্তু আমাদের ব্যাটসম্যানরা দায়িত্ব নিতে পারেনি। বিশেষ করে অমন টার্গেটে যেতে টপ অর্ডারের ভালো ব্যাটিং প্রয়োজন। কিন্তু সেখানে আমাদের টপ অর্ডার উইকেট দিয়ে এসেছে। আসলে এর কৃতিত্ব প্রতিপক্ষেরই (আফগানিস্তান)। তাদের স্পিনাররা দুর্দান্ত বোলিং করেছে এবং সফলও হয়েছেন। আমাদের এগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে পরের ম্যাচে খেলতে হবে।’
আরো পড়ুন : যে কারণে হারলো বাংলাদেশ
যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খুব অল্প দিন হলো ক্রিকেট খেলছে।
সেই আফগানিস্তানের সাথে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৪৫ রানে হেরেছে বাংলাদেশ।
আফগানিস্তানের কাছেও কেন হারলো বাংলাদেশ?
এমন হারের কারণ কী- তা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেরাদুনে ম্যাচ কাভার করতে যাওয়া বাংলাদেশি ক্রীড়া সাংবাদিক তারেক মাহমুদ বলছেন, "সিরিজের শুরুতেই সাকিব আল হাসান বলেছিলেন আফগানিস্তানে স্পেশালিষ্ট কয়েকজন খেলোয়াড় রয়েছেন যারা টি-টোয়েন্টিতে ভাল করার মতো দক্ষ খেলোয়াড়। খেলা শুরুর আগেই সাকিব বলেছেন এবার আফগানিস্তান ফেভারিট থাকবে। মাঠে আফগানিস্তান ফেভারিটের মতোই খেলেছে।"
'এলোমেলো মনে হয়েছে বাংলাদেশকে'
কিন্তু বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টির ক্ষমতা নিশ্চয়ই এতটাই খারাপ নয় যে আফগানিস্তানের কাছেও হারতে হবে।
তাছাড়া সর্বশেষ এই দু'দলের যে ম্যাচটি হয়েছিলো তাতে বাংলাদেশই জিতেছিল। তাহলে হলোটা কি?
তারেক মাহমুদ বলছেন, "সেই বাংলাদেশকে মাঠে দেখা যায়নি। ব্যাটিং বলুন বা বোলিং সব ক্ষেত্রেই তারা পুরোপুরি ব্যর্থ। মাঠে এলোমেলো একটা দল মনে হয়েছে বাংলাদেশকে। সবমিলিয়ে বেশ বাজে একটা দিন কাটিয়েছে বাংলাদেশ।"
তাড়াহুড়োর মধ্যে ছিল বাংলাদেশ?
আফগানিস্তানের সংগ্রহ ছিল ১৬৭ রান। টি-টোয়েন্টির ম্যাচের জন্যে সেটিকে খুব একটা বড় সংগ্রহ কি বলা যাবে?
তারেক মাহমুদ বলছেন, "তা বলা যাবে না। কিন্তু দেরাদুনে রাজিব গান্ধী স্টেডিয়াম নতুন একটি স্টেডিয়াম। এখানে উইেকট পরীক্ষিত না।"
"টসের পরে সাকিব আল হাসান এমনটাই বলেছিলেন যে উইকেট সম্পর্কে যেহেতু ধারণা নেই তাদের, তাই কঠিন হবে। আমরা সেটাই দেখেছি ব্যাটসম্যানদের বেলায়। বল একটু স্লো আসছিলো ব্যাটে এবং সেখানে রান করা খুব কঠিন মনে হচ্ছিলো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য। একই সঙ্গে আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানদের দিকেও যদি খেয়াল করেন, তারাও কিন্তু রান করতে যথেষ্ট সংগ্রাম করছিলো"-বলছিলেন মাহমুদ।
তবে শেষ তিন ওভারে আফগানিস্তান যে ৫২ রান তুলেছে সেটাই এই ম্যাচে বাংলাদেশের সঙ্গে পার্থক্যটা গড়ে দিয়েছে।
তারেক মাহমুদ বলছেন, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কিছুটা তাড়াহুড়োর ভাবও দেখা গেছে এই ম্যাচে।
পরের দু ম্যাচে কতটা ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশে?
"প্রথম বলেই তামিম ইকবালের আউট হওয়াটা দলকে খানিকটা নাড়িয়ে দিয়েছে। তারপর মুশফিকুর রহিম যেটা করলেন, রশিদ খান এসেছেন প্রথম বলেই তাকে ওভাবে রিভার সুইপ খেলতে দিয়ে উনি ক্যাচ দিলেন। এটা অপ্রত্যাশিত মনে হয়েছে আমার কাছে"-বলেন তারেক মাহমুদ।
এই রশিদ খানকে নিয়ে সিরিজের আগে ছিল বাংলাদেশের যত আলোচনা। তাকে কীভাবে খেলতে হবে সেনিয়ে বাংলাদেশ টিম অনেক বেশি গবেষণা করেছে বলে শোনা যাচ্ছিলো।
"কিন্তু সেখানে প্রথম বলেই রশিদ খানের এত ঝুঁকিপূর্ণ শট তিনি কেন খেলতে গেলেন?", সেই প্রশ্ন রাখছেন তারেক মাহমুদ।
সাকিব আল হাসানেরও ঐ পরিস্থিতিতে কি দায়িত্ব নেয়া খেলা উচিত ছিল? তার খেলাও ম্যাচের ঐ পরিস্থিতির সাথে যাচ্ছিলো না।
আফগানিস্তানকে কি বাংলাদেশ হালকাভাবে নিয়েছিলো?
সেটাও একটা প্রশ্ন। তারকে মাহমুদ মনে করছেন বাংলাদেশ আফগানিস্তানকে গুরুত্ব সহকারেই নিয়েছে বলেই সাকিব তাকে ফেভারিট বলেছে।
তাছাড়া আফগানিস্তানের তিনজন খেলোয়াড় সম্প্রতি আইপিএলে খেলে এসেছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের মাত্র একজন। আফগানিস্তানের টি-টোয়েন্টি অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের চেয়ে কাছাকাছি সময়ে বেশি।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খুব অল্প দিন হলো ক্রিকেট খেলছে।
তারা এসেছে বাংলাদেশের অনেক পরে।
কী করে সম্ভব হচ্ছে এমন খেলা? আফগানিস্তান দলটির বৈশিষ্ট্যই বা কি?
তারেক মাহমুদ বলছেন, "ওদের খেলার মধ্যে রয়েছে আক্রমণাত্মক খেলা। একা রশিদ খানই কিন্তু তার আত্মবিশ্বাস দিয়ে চেঞ্জ করে দেয় পুরো দলকে। আইপিএলে তার বড় বড় প্লেয়ারদের সাথে খেলার অভিজ্ঞতা তিনি ড্রেসিং রুমে শেয়ার করেন।"
তবে এই একটি খেলা দিয়েই এই দুই দলের সামর্থ্য যাচাইয়ের উপসংহারে পৌঁছানো ঠিক হবে না।
এই খেলাই শেষ খেলা নয়। সামনে আরো দুটো ম্যাচ আছে। সেখানে হয়তো বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে-এমনটাই আশা করা হচ্ছে।
আরো পড়ুন : মোস্তাফিজকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় কোচ
বাংলাদেশের পেস অ্যাটাকের অন্যতম অস্ত্র মোস্তাফিজুর রহমান। ইনজুরির কারণে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজে দলে নেই তিনি। তার অনুপস্থিতি ভোগাচ্ছে দলকে। আফগানদের পর বাংলাদেশের মিশন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই সিরিজেও দলে তিনি থাকতে পারবেন কিনা- তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান কোচ কোর্টনি ওয়ালশ।
সংবাদ সম্মেলনে মোস্তাফিজের ইনজুরি নিয়ে ওয়ালশ বলেন, 'এটা আমাদের জন্য চিন্তার বিষয়। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার সে ইনজুরি নিয়ে আইপিএল থেকে ফিরেছে। আমাদের দলের জন্য ফিট মোস্তাফিজকে প্রয়োজন। যেহেতু সে অনেক প্রতিভাবান এবং এখনো তরুণ, তার সামর্থ্যের উন্নতি ঘটানোই আমাদের প্রধান কাজ। তাকে সঠিক নির্দেশনা দিয়ে, সঠিক পথে আনাটাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ।'
ইনজুরির ব্যাপারটি গোপন রাখায় হতাশার সুরে প্রধান কোচ বলেন, 'আমরা তার ইনজুরির ব্যাপারে জানতামই না। এটা সত্যিই হতাশাজনক ছিল। আমরা যদি আগে জানতাম তাহলে তার পুনর্বাসনে আরো গতি পেতো, তাকে আরো আগে মাঠে পেতে পারতাম আমরা। সে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে আসার পর জানতে পারলাম যে তার পায়ের অবস্থা ভালো নয়। তবে তাকে সতর্ক করা হয়েছে। যথাসময়ে যথাযথ জায়গায় যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।'
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা