১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কলকাতাকে বিদায় করে ফাইনালে হায়দরাবাদ

কলকাতাকে বিদায় করে ফাইনালে হায়দরাবাদ - সংগৃহীত

বারুদের গন্ধ শুকে যাঁর বেড়ে ওঠা, তার কাছে ২২ গজের লড়াইটা তো অতি সাধারণ মনে হবেই! আফগানিস্তানের ১৯ বছরের স্পিনার রশিদ খান একাই যেন কলকাতা নাইট রাইডার্সকে (১৪ রানে) হারিয়ে সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে ফাইনালে তুললেন।
ব্যাট হাতে ১০ বলে বিস্ফোরক ৩৪ রান। আর বল হাতে চার ওভারে ১৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট। এখানেই শেষ নয়। শেষ ওভার জয়ের জন্য জন্য কেকেআরের দরকার যখন ১৯ রান। তখনো বাউন্ডারি লাইনের ধারে দু’টি অনবদ্য ক্যাচ তালুবন্দি করেন রশিদ। ইডেনের ২২ গজে রশিদ খান যেন আফগান ক্রিকেট উত্থানের এক মূর্ত-প্রতীক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন।

জয়ের জন্য ১৭৫ রান তাড়া করতে নেমে ক্রিস লিন ও সুনীল নারিন যেভাবে ব্যাট করছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল বেশ কয়েক ওভার বাকি থাকতেই ফাইনালের টিকিট পাকা করে ফেলবে কেকেআর। কিন্তু মুহূর্তে মুহূর্তের ম্যাচের রং বদলেছে। নারিন ১৩ বলে ২৬ রান করে মাঠ ছাড়ার পর ক্রিস লিন দায়িত্বটা কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। অফ ফর্মে থাকা রবীন উথাপ্পার পরিবর্তে তিনে নামানো হয় নীতীশ রানাকে। বেশ ভালোই খেলছিলেন রানা। ১২ ওভারে কেকেআরের দরকার ছিল ৯৪ রান। আস্কিং রেট আটের নিচে। হাতে ৯ উইকেট। ক্রিস লিন ৩৭ ও রানা ১৭ রানে ক্রিজে। এখান থেকেও কেকেআর ম্যাচ হারতে পারে, সেটা যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন দর্শকরা। নবম ওভারে নীতীশ রানা (২২) রান আউট হতেই ম্যাচের মোড় ঘুরতে শুরু করে। একাদশ ওভারের প্রথম বলেই রশিদ খানের বলে বোল্ড হন রবীন উথাপ্পা (২)।
কথায় আছে, সময় খারাপ গেলে ব্যাঙেও লাফি মারে। গোটা টুর্নামেন্টে অনবদ্য ব্যাটিং করার পর দীনেশ কার্তিককে গিরে ঘিরে কেকেআরের জয়ের স্বপ্ন তখনও অটুট ছিল। কিন্তু প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ ডিকে। দ্বাদশ ওভারের শেষ ডেলিভারিতে রশিদ খানের বলে কেকেআর ক্যাপ্টেন কার্তিক (৮) বোল্ড হতেই যেন ম্যাচের ভাগ্য লেখা হয়ে গিয়েছিল।

সানরাইজার্সের দুই স্পিনার রশিদ খান ও সাকিব-আল-হাসান মিডল ওভারে অনবদ্য বোলিং করে একের পর এক উইকেট তুলে নেন।

এরকম পরিস্থিতিতে স্নায়ুর চাপটা নিতে পারলেই বিপদ। লিনের ক্ষেত্রে সেটাই ঘটেছে। ৪৮ রানের মাথায় রশিদ খানের বলে সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোর হন কেকেআরের ওপেনারটি। ৩১ রানের মধ্যে পাঁচটি উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে জাঁকিয়ে বসে সানরাইজার্স। বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বোলিং পরিবর্তন করেন কেন উইলিয়ামসন। তিনি আন্দ্রে রাসেলের মনোসংযোগে বিঘ্ন ঘটাতে শর্ট লেগে ফিল্ডার নিয়োগ করেন। সেই ট্র্যাপে পা দেন রাসেল। তিনি রশিদের গুগলিতে পরাস্ত হয়ে ধাওয়ানের হাতে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন। আস্কিং রেটও নাইটদের নাগালের বাইরে চলে যায়। শেষ ওভারে কেকেআরের দরকার ছিল ১৯ রান। ব্রেথওয়েটের বলে শিবম মাভি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে লড়াইয়ে আর জমিয়ে দিয়েছিলেন। পরের বলেই মাভি আউট হয়ে মাঠ ছাড়েন। তৃতীয় বলে শুভমান গিল ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হতেই ফাইনালে চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের খেলা পাকা হয়ে যায়। তিন ওভারে ১৬ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন সাকিব। গত টুর্নামেন্টে কেকেআর তাকে ডাগ আউটে বসিয়ে রেখেছিল। এদিন যেন সেই অপমানের বদলা নিয়ে উচ্ছ্বসিত সাকিব।

ডেথ ওভারের দুর্বলতা ফের বিপাকে ফেলল কলকাতা নাইট রাইডার্স। দুরন্ত সূচনার পর সানরাইজার্সের ঘাড়ে চেপে বসেছিল কেকেআর। একই ওভারে হায়দরাবাদের দুই তারকা ব্যাটসম্যান শিখর ধাওয়ান ও কেন উইলিয়ামসনকে আউট করেন কুলদীপ যাদব। মনে হয়েছিল ১৫০ রানও তুলতে পারবে না সানরাইজার্স। ১৭তম ওভার শেষে হায়দরাবাদের স্কোর ছিল ৫ উইকেটে ১২৪ রান। শেষ তিন ওভারে ৫২ রান যোগ করে সানরাইজার্স। তার মধ্যে অধিকাংশ রানই এসেছে স্পিনার রশিদ খানের ব্যাটে। রশিদ মাত্র ১০ বল খেলে দু’টি বাউন্ডারি ও চারটি ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৩৪ রানে অপরাজিত থেকে দলের স্কোর একটা ভদ্রস্থ জায়গায় পৌঁছে দেন। শেষ ওভারে প্রসিদ্ধ একাই দেন ২৪ রান।

টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং নেয় কেকেআর। প্রারম্ভিক পর্বে অনূর্ধ্ব-১৯ ভারতীয় দলের তরুণ পেসার শিবম মাভি গতির বিচ্ছুরণে বার বার বিপাকে ফেলেন সানরাইজার্সের দুই ওপেনার ঋদ্ধিমান সাহা ও শিখর ধাওয়ানকে। পাঁচ রানের মাথায় ঋদ্ধিমানের ক্যাচ ফেলেন দীনেশ কার্তিক। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দলের হয়ে সর্বাধিক ৩৭ রান করেন ঋদ্ধিমান।

অষ্টম ওভারে কেকেআরকে প্রথম সাফল্যটি এনে দেন কুলদীপ যাদব। প্রথম ডেলিভারিতে ধাওয়ান সুইপ করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। বলটি খুব বেশি টার্ন নেয়নি। সোজা গিয়ে পায়ে লাগে। জোরালো আবেদনে লেগ বিফোর দেন আম্পায়ার। ধাওয়ান ২৪ বলে ৩৪ রান করে মাঠ ছাড়েন। ওই ওভারের শেষ ডেলিভারিতে গুগলিতে কেন উইলিয়ামসন (৩) পরাস্ত হয়ে উইকেটরক্ষক দীনেশ কার্তিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে দলকে বিপদের মুখে ঠেলে দেন। একাদশতম ওভারে পীযূষ চাওলার তৃতীয় ডেলিভারিতে ডিফেন্স করতে গিয়ে ঋদ্ধিমান শরীরের ভারসাম্য রাখতে না পেরে ক্রিজ থেকে বেরিয়ে যান। বিদুৎ গতিতে উইকেটরক্ষক দীনেশ কার্তিক স্টাম্প ভেঙে দেন। সাকিব-আল-হাসান যখন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলেন, ঠিক তখনই রান আউট হন। কুলদীপের বলে স্ট্রেট ড্রাইভে বাউন্ডারি হাঁকাতে চেয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু বলটি সোজা গিয়ে উইকেটে লাগে কুলদীপের হাতের ছোঁয়া নিয়ে। সাকিব ২৮ রান করেন। কেকেআরের বাতিল ঘোঁড়া ইউসুফ কিছুই করতে পারেননি। মাত্র ৩ রান করেন তিনি। কার্লোস ব্রেথওয়েট তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে রান আউট হন ৮ করে। দীপক হুদা সেট হয়ে গিওে উইকেট উপহার দেন ১৯ রানে।


আরো সংবাদ



premium cement