২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এবার ভয়াবহ শীত পড়বে?

দীর্ঘ ও তীব্র হতে পারে শীত - ছবি : নয়া দিগন্ত

দীর্ঘ ও তীব্র হতে পারে সামনের শীত। গত কয়েক বছরের মতো সামনের শীতটি হয়তো স্বাভাবিক মাত্রায় নাও থাকতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে গবেষণায়রত বিজ্ঞানীরা তা-ই বলছেন। 

বাংলাদেশে সবেমাত্র হেমন্ত। বিকেল ঘনিয়ে এলেই মৃদু কুয়াশায় গ্রামের প্রকৃতি নীল নীল আভা ছড়াচ্ছে। শীত পড়তে শুরু করেছে শেষ রাতে। গ্রামের বাড়িতে কাঁথা-কম্বল না জড়িয়ে ঘুমানো যায় না। প্রকৃতিতে পাতা ঝরা যেমন শুরু হয়ে গেছে আবার শেষ রাতে শিউলি ফুলও ঝরে পড়ছে। ধানের পাতায় জমতে শুরু করেছে ফোঁটা ফোঁটা শিশির। সবুজ ঘাসের ডগায় জমছে বিন্দু বিন্দু কণা। সকালে সূর্যের আলো ঘাসের ডগায় পড়লে হিরার মতো ছড়াতে শুরু করেছে দ্যুতি। এ টাই হেমন্ত, এটাই শীতের আগমনী বাণী। হেমন্তের এই শুরুতেই ভোরের দিকে হাঁটতে গেলে গায়ে লাগে সেই চিরচেনা ঠাণ্ডা হাওয়া। এ হাওয়াটাই কি এবার শীতকালে তীব্র হয়ে দেখা দেবে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ^বিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি এবং জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর মেরিন অ্যান্ড এ্যাটমসফেরিক রিসার্চের প্যাসিফিক ইএনএসও অ্যাপ্লিকেশন ক্লাইমেট সেন্টারের প্রধান গবেষণা বিজ্ঞানী ড. রাশেদ চৌধুরী জানান, পশ্চিমের অস্বাভাবিক উষ্ণতা অথবা শুষ্কতা, ঠাণ্ডা অথবা ঝড়ো আবহাওয়ার সাথে পূর্বের দেশগুলোর একটা সম্পর্ক আছে। পশ্চিমে যে আবহাওয়া থাকে পূর্বের দেশগুলোতে এর বিপরীতটাই দেখা যায়। পশ্চিমের ঠাণ্ডা বায়ু ‘ব্লব’ নামক একটি প্রক্রিয়া স্থানান্তর করে পূর্বের দেশগুলোর দিকে ঠেলে নিয়ে যায় সেখানে ভালোভাবেই এর পশ্চিমের বিপরীত প্রভাব পড়ে। জলবায়ু বিজ্ঞানের পরিভাষা ‘ব্লব’ শব্দটি ব্যাখ্যা করে রাশেদ চৌধুরী জানান, ‘উত্তর-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অস্বাভাবিক উষ্ণ পানিকে’ জলবায়ু বিজ্ঞানীরা ব্লব নামে অভিহিত করে থাকেন। রাশেদ চৌধুরী এ ব্যাপারে অতীতে ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ সালের ঠাণ্ডার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। উল্লিখিত দুই বছরে বেশ ঠাণ্ডা পড়েছিল। এর কারণ হিসেবে জলবায়ু বিজ্ঞানী ব্লবকে দায়ী করেন। 
মেরু অঞ্চলের খুব ঠাণ্ডা ঘূর্ণন বায়ু ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ সালের শীতের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়ার জন্য দায়ী ছিল। 

রাশেদ চৌধুরী বলেন, প্রশান্ত মহাসাগরে লা নিনার উদ্ভব হলে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি ঠাণ্ডা ও বেশি বৃষ্টি হয়। পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি নিচে নেমে গেলে ওয়েদার এনোম্যালি হয়ে থাকে। এর প্রভাব সারা পৃথিবীতে এমনকি বাংলাদেশেও পড়ে। সে রকম একটি প্রভাব ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে লক্ষ করা যাচ্ছিল যেটা নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে প্রকটভাবে দেখা দেয়। তখনকার লা নিনাটি কিছুটা দুর্বল প্রকৃতির ছিল। ফলে ওই ওয়েদার এনোম্যালির কারণে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে অল্প কয়েক দিন চরম শীত পড়ে। 

বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে অক্টোবরে তেমন শীত পড়ে না। কিন্তু এবার অক্টোবর কিছুটা ব্যতিক্রম বলে মনে করছেন আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা। গ্রাম এলাকায় এখনি সন্ধ্যার পর সামান্য ঠাণ্ডা অনুভূত হচ্ছে, তা শেষ রাতে আরো বেশি তীব্র হচ্ছে। রাজধানীতেই শেষ রাতে কাথা-কম্বলের মতো একটা কিছু জড়িয়ে না ঘুমালে ঘুমটা আরামপ্রদ হয় না। এসব লক্ষণ দেখে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সামনের শীত হয়তো দীর্ঘ হবে।

এর সপক্ষে যুক্তি তুলে ধরে আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, ২০১৭ সালের ২১ অক্টোবরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল শ্রীমঙ্গলে ২৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। কিন্তু গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় শ্রীমঙ্গলেই ১৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর দেশের সর্বনিম্ন ছিল ডিমলায় ২২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কিন্তু গত ১৮ অক্টোবর দেশের সর্বনিম্ন ছিল শ্রীমঙ্গলে ১৮.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 
এসব দেখে আবহাওয়াবিদেরা জানিয়েছেন, মনে হচ্ছে এবার শীতের মাত্রা অন্য বছরের চেয়ে একটু বেশিই তীব্র হবে।


আরো সংবাদ



premium cement