২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গ্রামে বসেও আবহাওয়ার অবস্থা জানা যাবে পাঁচদিন আগে

গ্রামে বসেও আবহাওয়ার অবস্থা জানা যাবে পাঁচদিন আগে - সংগৃহীত

আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে নতুন ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর। নতুন এ ব্যবস্থার নাম দেয়া হয়েছে নিউম্যারিক্যাল ওয়েদার প্রেডিকশন।

অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন এ ব্যবস্থা পুরোপুরি চালু হলে কোনো স্থানের আবহাওয়ার বিষয়ে আরও সুনির্দিষ্ট করে পূর্বাভাস দেয়া যাবে। সুনির্দিষ্ট করে জানা যাবে কখন, কোন স্থানে ঝড়-বৃষ্টি হবে।

বর্তমানে পরীক্ষামূলকভাবে নতুন পূর্বাভাস পদ্ধতি চালু হয়েছে। যে কেউ চাইলে www.bmdnwp.com ঠিকানায় গিয়ে ইউজার আইডিতে test ও পাসওয়ার্ডে test লিখে প্রবেশ করে দেখতে পারেন।

তবে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিউম্যারিক্যাল ওয়েদার প্রেডিকশন মডেল ব্যবহার করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্থান ও সময় সুনির্দিষ্ট করে পূর্বাভাস কতটা সফল হবে সেটা দেখার বিষয়। তবে পূর্বাভাসে নতুন একটি টুলস যোগ হলো। আশা করা যায়, আবহাওয়া পূর্বাভাস ব্যবস্থা আগের থেকে আরও উন্নত হবে।

আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ নতুন পূর্বাভাস ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘লোকজন আমাদের চাপ দিত- কী বলছেন, রাজশাহীর কোথাও কোথাও বৃষ্টি হতে পারে, কোন সময় হবে সেটা বলেন না, বলেন বৃহস্পতিবার হবে। কোন জায়গায় হবে সেটাও বলেন না, বলেন কোনো কোনো জায়গায় হতে পারে। সেজন্য আমরা নতুন এ ব্যবস্থা ইন্ট্রডিউস করেছি।’

‘এ ব্যবস্থায় পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে লোকেশন ও টাইম স্পেসিফিক করে দিতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘সময় ও স্থানের যে সমস্যা ছিল সেটা আমরা ওভারকাম করলাম। এটা আমাদের জন্য একটি নতুন প্রযুক্তি, এটাকে বলা হয় নিউম্যারিক্যাল ওয়েদার প্রেডিকশন। আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে এ ব্যবস্থা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র ভারতেরই আছে। শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভূটান, মালদ্বীপেরও এ ব্যবস্থা নেই।’

‘আশেপাশের কয়েকটি দেশসহ বিশাল এলাকাজুড়ে আমরা পূর্বাভাস দিতে পারব’- বলেন সামছুদ্দিন আহমেদ।

‘নতুন এ পদ্ধতি গবেষক থেকে শুরু করে সব ধরনের নাগরিকদেরই কাজে লাগবে বলে আমি মনে করি। সবার দীর্ঘদিনের একটা আশা ছিল। সেটা করতে আমরা সফল হলাম। ভবিষ্যতে আমরা এটা আরও উন্নয়ন ঘটাব।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে আপনি ১০ দিনের পূর্বাভাস দেখতে পাবেন। আগামী পাঁচদিন মেঘের কী অবস্থা হবে, সেটাও আমরা এ ব্যবস্থায় দেখিয়ে দিতে পারব। যেটা স্যাটেলাইটের মাধ্যমেও সম্ভব নয়।’

‘আমরা অনেকদিন ধরেই এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করেছিলাম। গত বছর আমরা হার্ডওয়্যারগুলো কালেকশন করেছি। আমাদের আবহাওয়াবিদরা মডেল নিয়ে চিন্তা করেছেন। মডেলটা হার্ডওয়্যারে রান করা যাবে কিনা- সেগুলো করেছি। আমরা বছরের প্রথম দিকে এটার কাজ শুরু করেছিলাম। গত ১৫ দিনে আমরা সফল হয়েছি’- যোগ করেন আবহাওয়া অধিদফতরের এ পরিচালক।

‘এটা ডেভেলপ করতে বড় ধরনের মেশিন লাগে, আবার সফটওয়্যার লাগে এবং ওয়েদার মডেলও লাগে।’

নতুন পূর্বাভাস ব্যবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের চিন্তা-ভাবনা রয়েছে বলেও জানান পরিচালক।

তবে নতুন পূর্বাভাস ব্যবস্থা সফল করতে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এমনটি জানিয়ে সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা দেখছি, ইতোমধ্যে অনেক লোক এটা ব্রাউজ করছে। অনেক বেশি ব্রাউজ যখন হবে, তখন আমার ইন্টারনেট কানেকশন যদি সঠিক না থাকে সেক্ষেত্রে দেখা যাবে যখন মডেল রান হওয়ার কথা ছিল সেই সময়ে হয়নি, দেরি হয়ে গেছে। এছাড়া নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রবাহ থাকতে হবে। যদি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট থাকে তবে এটা সুফল সবাই পাবে বলে আমরা মনে করি।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বাইরে ২৫টি দেশ থেকে মানুষ একসেস নিয়ে দেখছে। রেকর্ডে দেখা গেছে, ৯৯টি স্থান থেকে এটা দেখা হচ্ছে।’

মানুষ যাতে সহজে এটি দেখতে পারে সেজন্য আবহাওয়া অধিদফতরের অ্যাপের সাথে পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থাটি যুক্ত করা হবে বলেও জানান অধিদফতরের পরিচালক।

নিউম্যারিক্যাল ওয়েদার প্রেডিকশনের বিষয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের সাবেক পরিচালক মোঃ শাহ আলম বলেন, ‘এটা থাকলে বুঝতে সুবিধা হবে। পূর্বাভাসটা আরও ভালো হবে। তবে এর মাধ্যমে শতভাগ নির্ভুল পূর্বাভাস দেয়া যাবে, তেমনটা নয়। আমেরিকায় কয়েকদিন আগে যে ঝড় হলো সেই বিষয়ে কিন্তু আবহাওয়া বিভাগের কোনো পূর্বাভাস ছিল না। নিউম্যারিক্যাল ওয়েদার প্রেডিকশনের মাধ্যমে সব সঠিক পূর্বাভাস দেয়া যাবে, তেমনও না। অনেক সময় টাইম ডিফারেন্স হয়, ভুলও হয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘এটি একটি জটিল সিস্টেম, তবে এটার মাধ্যমে অ্যানলাইসিস করে অনেক কিছু বের করা সম্ভব।’

‘আমাদের এখানে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়ার বিষয়টি একটু কঠিন। কারণ এটা এমন একটা জায়গা যেখানে সাগর ও পাহাড় পাশাপাশি, ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে সব আছে। এখানকার ওয়েদার সিস্টেমটা ডিভাইডেড। তাই এখানে সুনির্দিষ্ট করে পূর্বাভাস দেয়া কতটা সম্ভব হবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।’

শাহ আলম বলেন, ‘তবে এ ব্যবস্থা চালু হলে দেশে আবহাওয়ার পূর্বাভাস ব্যবস্থায় আরও উন্নয়ন হবে বলেই আমি মনে করি। এক-দুই বছর কাজ করার পর হয়তো ভুল-ত্রুটি সামলে ব্যবস্থাটি পূরিপূর্ণ হয়ে উঠবে।’

আবহাওয়া অধিদফতর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংস্থা। বিভাগীয় শহরগুলোসহ সারাদেশে আবহাওয়া অধিদফতরের ৪২টি স্টেশন আছে। এর প্রধান কার্যালয় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে।


আরো সংবাদ



premium cement