২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সম্পাদকদের আবদুস সালামের মতো সাহসী হওয়া উচিত

স্মরণসভায় জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
সাংবাদিক আবদুস সালাম স্মৃতি সংসদ আয়োজিত স্মরণসভা : নয়া দিগন্ত -

জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছেন, সাংবাদিক আবদুস সালাম ছিলেন সাহসী সম্পাদক। তিনি পাকিস্তানের লৌহমানব আইয়ুব খানের সামনে সাহসী বক্তব্য উচ্চারণ করতেন। বর্তমানের সম্পাদকদেরও তার মতো সাহসী হওয়া উচিত। তাহলেই তার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হবে।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে দ্য বাংলাদেশ অবজারভারের সাবেক সম্পাদক, পাকিস্তান সম্পাদক পরিষদের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক আবদুস সালামের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। সাংবাদিক আবদুস সালাম স্মৃতি সংসদ এ সভার আয়োজন করে। এতে দ্য ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির আলোচনা করেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অনারারি অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত আলী খান, দ্য নিউ নেশনের সম্পাদক এ এম মোফাজ্জল হোসেন, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ ও কামাল উদ্দিন সবুজ, দৈনিক সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, সাংবাদিক আবদুস সালাম স্মৃতি সংসদের সভাপতি ও আবদুস সালামের ছোট মেয়ে রেহানা সালাম, নর্দান ইউনিভার্সিটির সাবেক ভিসি ড. আনোয়ারুল করিম, মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল বারী দিপু, ফেনী সাংবাদিক ফোরাম, ঢাকার সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ উল্লাহ ভুঁইয়া প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন, সাংবাদিক আবদুস সালাম স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক লোটন একরাম।
আনিসুজ্জামান বলেন, আবদুস সালাম সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে দ্য বাংলাদেশ অবজারভারের সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। এর আগে তার সাংবাদিকতা বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। তিনি নিজের প্রতিভা বলে সাংবাদিকতা পেশায় সফল হন। ১৯৫২ সালে তার একটি সম্পাদকীয়র কারণে পত্রিকাটি বন্ধ করে তাকে কারারুদ্ধ করা হয়। তার বিরুদ্ধে সে সময় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি কখনো আপস করেননি। তিনি কর্তব্য পালনে অবিচল ছিলেন। পাকিস্তানের লৌহমানব আইয়ুব খানের সাথে যখন সম্পাদকদের সভা হতো সেখানে তিনি সাহসী বক্তব্য উচ্চারণ করতেন। কিন্তু দুঃখজনক হলো দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও একটি সম্পাদকীয় লেখার কারণে তাকে আবার কারারুদ্ধ করা হয়। যা আমাদের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে রয়েছে।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রেই বর্তমানে নীতিনৈতিকতার অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। মরহুম আবদুস সালাম, মানিক মিয়া, জহুর হোসেন, মাওলানা আকরম খাঁরা আমাদের সাংবাদিকতার যে পতাকা তুলে দিয়ে গেছেন তা আমরা ধরে রাখতে পারছি না। আমরা অতীত ভুলে যাচ্ছি। বর্তমানকে কলঙ্কিত করছি। আর ভবিষ্যৎও নির্মাণ করতে পারছি না। তিনি বলেন, দেশের গণতন্ত্র তখনই সুষ্ঠু হয়, সুস্থ হয়; যখন মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকে, সাংবাদিকতার স্বাধীনতা থাকে। এজন্য আমাদের সাংবাদিক সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আবদুস সালাম যে ‘সুপ্রিম টেস্ট’ লিখেছিলেন তা আমাদের মেনে চলা উচিত। তাহলে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও নীতি-নৈতিকতা ফিরে পেতে পারি।
রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আবদুস সালাম আমাদের সাংবাদিকতার শিক্ষক ছিলেন। সাংবাদিকদের যেভাবে সত্য ও সাহসী সাংবাদিকতা করতে হয় তা তিনি শিখিয়ে গেছেন। বর্তমানের সম্পাদক ও সাংবাদিকদের তার থেকে শেখার রয়েছে।
সাখাওয়াত আলী খান বলেন, পৃথিবীতে গণমাধ্যম এখন রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু এটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। কিন্তু বর্তমানে সাংবাদিকদের বিভাজনের কারণে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে। এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের দৃষ্টি দেয়া উচিত। তাদের পেশার স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাংবাদিক আবদুস সালামের লেখার মাধ্যমে জাতি অনুপ্রাণিত হতো। তিনি ছিলেন একজন মুক্ত মনের মানুষ। তিনি একাধারে সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও ভাষার জন্য লড়াই করেছেন। আমাদের তার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার রয়েছে।
শওকত মাহমুদ বলেন, আবদুস সালাম অকুতোভয় ছিলেন। তৎকালীন স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে তিনি সাহসী কলম ধরেছিলেন। তিনি শুধু সাংবাদিক নন, জাতীয় বীর ছিলেন। সাংবাদিকতা যে আপসকামিতা নয়, বিদ্রোহের তা তিনি শিখিয়ে গেছেন।
এম আবদুল্লাহ বলেন, গণমাধ্যমের বর্তমান যে সঙ্কটকাল চলছে এ সময় মরহুম আবদুস সালামের মতো সাহসী সম্পাদকের প্রয়োজন। তিনি সম্পাদক থাকাকালে স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে অকুতোভয় ছিলেন। তার সাহসী লেখনীর কারণে স্বৈরশাসকদের মসনদ কেঁপে উঠত। বর্তমানের সম্পাদকরা তার আদর্শ ধারণ করলে গণমাধ্যমের বর্তমান দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।


আরো সংবাদ



premium cement