২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নারায়ণগঞ্জে বাড়ছে সুতার দাম

শুল্ক গোয়েন্দা অভিযানের প্রভাব পড়েছে খোলাবাজারে
-

নারায়ণগঞ্জে সুতার দাম বাড়ছে। সুতা ব্যবসায়ীদের কাছে প্রচলিত নাম তানা (মোটা সুতা) ও সাইজিং(চিকন সুতা) সব কাউন্টের সুতার দাম গত এক মাসের ব্যবধানে পাউন্ডপ্রতি ৫-৬ টাকা বেড়েছে। সুতা ব্যবসায়ীরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জে বন্ডের সুতা খোলাবাজারে বেচাকেনা হওয়ায় শুল্ক গোয়েন্দা অভিযান পরিচালিত হয় গত বছরের ডিসেম্বর মাসে। শুল্ক গোয়েন্দাদের এ অভিযানে কোটি কোটি টাকার সুতা জব্দ করা হয়েছে।
এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। এতে সুতার সরবরাহ অনেকটাই কমে গেছে। একই সাথে স্পিনিং মিলগুলো থেকে সুতার সরবরাহ কিছুটা কম থাকায় বাজারে প্রভাব পড়ছে।
নারায়ণগঞ্জের সুতার বাজারে সরেজমিন দেখা গেছে, ১০ কাউন্টের মোটা সুতা পাউন্ড প্রতি ৪১-৪৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগেও একই মানের সুতা বেচাকেনা হয়েছিল ৩৮-৪২ টাকায়। হিসেবে মতো ১০ কাউন্টের সুতার দাম বেড়েছে পাউন্ডে ৩ টাকা। ২০ কাউন্টের প্রতি পাউন্ড সুতা বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। এক মাস আগে এ মানের সুতা পাউন্ডপ্রতি ৬৮-৭৮ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। দাম বেড়েছে পাউন্ডে ২ টাকা।
নারায়ণগঞ্জের টানবাজারে এক মাস আগেও ৩০ কাউন্টের সুতা পাউন্ডপ্রতি ৯৬-১০২ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। গতকাল এ মানের সুতার পাউন্ড দাঁড়িয়েছে ১০০-১০৫ টাকা। মাসের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে পাউন্ডে সর্বোচ্চ ৪ টাকা। একইভাবে ৪০ কাউন্টের সুতার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাউন্ডপ্রতি ১১৮-১২০ টাকায়। এক মাস আগেও এ মানের সুতা বেচাকেনা হয়েছিল ১১২-১১৬ টাকায়। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে ৪০ কাউন্টের সুতার দাম বেড়েছে পাউন্ডে সর্বোচ্চ ৬ টাকা।
এ দিন ৫০ কাউন্টের সুতা পাউন্ডপ্রতি ১৪০-১৪৪ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। এক মাস আগেও পণ্যটির দাম ছিল পাউন্ডপ্রতি ১৩৫-১৪২ টাকা। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে ৫০ কাউন্টের সুতার দাম বেড়েছে পাউন্ডে সর্বোচ্চ ৫ টাকা। এ দিকে ৬০ কাউন্টের প্রতি পাউন্ড সুতা ২০০-২০৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাসের ব্যবধানে এ মানের সুতার দাম পাউন্ডে সর্বোচ্চ ৪ টাকা বেড়েছে।
গতকাল টানবাজারে ৮০ কাউন্টের চিকন সুতা পাউন্ডপ্রতি ২৪৫-২৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। ১০-১২ দিনের ব্যবধানে এ মানের সুতার বেড়েছে পাউন্ডে ৩ টাকা। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, সম্প্রতি টানবাজারে অভিযান পরিচালনা করেছে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের কাস্টম অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা কার্যালয়। এ সময় বন্ডের সুতা খোলাবাজারে বিক্রির অভিযোগে তিনটি গদি থেকে মালপত্র জব্দ করা হয়েছে। ২০ জন ব্যবসায়ীর নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। এরপর থেকে টানবাজারে খোলাবাজারে বন্ডের সুতা বেচাকেনা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। কমেছে সরবরাহ। এর প্রভাবে চিকন সুতার দামও বাড়তে শুরু করেছে।
টানবাজারের একজন সুতা ব্যবসায়ী জানান, অনেক আগে থেকেই এখানকার খোলাবাজারে বন্ডের সুতা বিক্রি হয়। তবে সাম্প্রতিক অভিযানের পর খোলাবাজারে বন্ডের সুতা বিক্রি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে গোপনে এসব সুতা বিক্রি করছেন। তবে সরকারি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সব মিলিয়ে বাজারে বেচাকেনা অনেকটাই কম। কমেছে সরবরাহ। এর প্রভাবে বাড়তে শুরু করেছে মোটা-চিকন সব কাউন্টের সুতার দাম। বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লিটন সাহা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে তুলার বাড়তি দাম এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যটির উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে বাজারে সব ধরনের সুতার দাম বাড়তির দিকে রয়েছে। একইসাথে স্পিনিং মিলগুলো থেকে সুতার সরবরাহ কিছুটা কম থাকায় বাজারে প্রভাব পড়ছে। এ কারণে বাজারে মোটা ও চিকন সব সুতার দাম বেড়েছে।
তিনি আরো বলেন, শীতের প্রকোপ অনেকটাই কমে এসেছে। এরই মধ্যে দেশের কারখানাগুলোয় গরমের মৌসুমের পোশাক তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ফলে চাহিদা বেড়েছে তুলনামূলক চিকন সুতার। সীমিত সরবরাহের বিপরীতে বাড়তি চাহিদার কারণে বেড়েছে দাম। এ দিকে বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত কাঁচামাল অবৈধভাবে খোলাবাজারে বিক্রির অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের ২০ জন সুতা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে পৃথক দু’টি মামলা করেছে কাস্টমস অ্যান্ড কমিশনারেট। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার কাস্টমস অ্যান্ড কমিশনারেটের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো: আতিকুর রহমান মো: নাহিদুল হাসান বাদি হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় মামলা দু’টি দায়ের করেন। পুলিশ মামলায় মামুন নামে একজনকে আটক করেছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত বছর ৮ ডিসেম্বর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ শহরের টানবাজার এলাকায় এবং নিকটস্থ মাঠে অভিযান চালিয়ে সর্বমোট ৯ হাজার ৪৪ কেজি বন্ডেড সুতা উদ্ধার করা হয়। যার বাজার মূল্য এক কোটি টাকা।
আতিকুর রহমানের মামলার আসামিরা হলেনÑ হাজী বিল্লাল (বিসমি অ্যান্ড ট্রেডিং), ব্যবসায়ী হাজী ইসমাইল (জেমি এন্টারপ্রাইজ), ফরহাদ (টানবাজারের ব্যবসায়ী), সুব্রত রায় (এস এস ট্রেড অ্যাক্সেসসরিক্স), বিপুল মণ্ডল (শুভা এন্টারপ্রাইজ), পুলক চৌধুরী (মেসার্স পুলক চৌধুরী), মো: সেলিম রেজা (এইচ এস ট্রেডিং), মো: গোলাম কিবরিয়া মামুন (তোতা ইয়ার্ন ট্রেডিং), আব্দুল মান্নান মিয়া (জামান ইয়ার্ন ট্রেডিং) ও খান নজরুল ইসলাম (শিমুলিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল)। গত বছর ১৪ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ শহরের সুতারপাড়া, বংশাল রোড এলাকার সাদ ট্রেডার্স এবং আজাদ ট্রেডার্সের গুদামে অভিযানেও ২৫ হাজার ৮৩৬ কেজি অবৈধ বন্ডেড সুতা আটক করা হয়। যার বাজার মূল তিন কোটি টাকা। এ ঘটনায়ও আলাদা আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়।
মো: নাহিদুল হাসানের দায়েরকৃত মামলার আসামিরা হলেন মো: জহির হোসেন (মেসার্স সাদ ট্রেডার্স), মো: আওলাদ হোসেন (মেসার্স আজাদ ট্রেডার্স), হাজী ইসমাইল (জেমি এন্টারপ্রাইজ), ফরহাদ (টানবাজারের ব্যবসায়ী), মো: আমিনউদ্দিন (সুতাঘর), গোবিন্দ্র চন্দ্র সাহা (রিতা ট্রেডার্স), মো: আইয়ুব আলী, মো: সেলিম (জাকি এন্টারপ্রাইজ), সমির সাহা (এনবি ট্রেডিং), রুহুল আমিন (আমিন ব্রাদার্স)।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান বলেন, অবৈধ সুতা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেছে বন্ড কমিশনারেট। আসামিদের অতি দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। বন্ড কমিশনারেটের ডেপুটি কমিশনার রেজভী আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বন্ডের পণ্য অবৈধভাবে খোলা বাজারে চলে আসছে। তার বিরুদ্ধে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট নিরবচ্ছিন্নভাবে অভিযান চালিয়ে আসছে।কামাল উদ্দিন সুমন নারায়ণগঞ্জ


আরো সংবাদ



premium cement