২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ঠকঠক শব্দ রঙ-ব্রাশের কর্মযজ্ঞে কড়া নাড়ছে বইমেলা

-

হাতুড়ি-পেরেকের ঠকঠক শব্দ, রঙ-ব্রাশের মাখামাখিতে এখন সাজছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। নির্মাণ শ্রমিকদের দিনরাত ব্যস্ততা সাজগোজের কর্মযজ্ঞে এখন বুঝতে বাকি নেই কড়া নাড়ছে বইমেলা। ঐতিহ্য অনুযায়ী ১ ফেব্রুয়ারি প্রাণের মেলার সূচনা হলেও এ বছর তার উদ্বোধন হবে দুই ফেব্রুয়ারি। বিকেল ৩টায় মেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই মঞ্চ থেকে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে পদক তুলে দেবেন তিনি।
বাংলা একাডেমির পরিচালক ও গ্রন্থমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব জালাল আহমেদ জানান,, উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর বিকেল ৫টা থেকে সবার জন্য খুলে দেয়া হবে বইমেলা। ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কর্মদিবসগুলোতে প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে মেলা। ছুটির দিনগুলোতে মেলা খুলবে বেলা ১১টায়। আর ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বইমেলা চলবে।
এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলা অন্য যে কোনোবারের চেয়ে আরো বিস্তৃত পরিসরে আয়োজন করা হয়েছে। সাড়ে সাত লাখ বর্গফুট জায়গা নিয়ে এবারের মেলা অনুষ্ঠিত হবে। একই সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এবারের মেলা উৎসর্গ করা হয়েছে তাকে। গতবারের তুলনায় এবারের মেলায় ৪০টি নতুন প্রকাশনা সংস্থা বেড়ে হয়েছে ৪১০টি। এর মধ্যে প্যাভিলিয়ন ২৩টির স্থলে হয়েছে ৩৪টি। বাড়ছে শিশু চত্বরের আয়তনও।
কর্তৃপক্ষ জানান, এবারের গ্রন্থমেলায় সব অনিয়ম বন্ধে কঠোর ব্যবস্থার বিধান রাখা হয়েছে। মেলা শুরুর পর স্টলের ডেকোরেশন, এক প্রকাশনীর বই অন্য প্রকাশনীর স্টলে বিক্রিসহ যারা অনিয়ম করবেন তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া মেলা প্রাঙ্গণে যাতে ধুলার ছড়াছড়ি না থাকে সে বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে।
জালাল আহমেদ জানান, প্রতিবারই মেলা স্বল্প সময়ের প্রস্তুতির মধ্যে হয়ে থাকে। এবার সে বিষয় মাথায় রেখে চার মাস আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আমরা আশা করছি, এবারের মেলা অন্য যেকোনোবারের চেয়ে গোজানো হবে। এখন মেলার সব প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। ২৫ জানুয়ারির মধ্যে স্টল সজ্জার কাজ শেষ করতে হবে। এরপর কেউ ডেকোরেশনের কাজ করতে পারবেন না। এ ছাড়া যেকোনো বই বা সাহিত্য মুক্ত চিন্তার অংশ হলেও স্পর্শকাতর বা উসকানিমূলক কোনো বই যেন মেলায় না আসে সে বিষয়টিও নজরদারি করা হবে।
এবারের মেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব পাশ থেকে একটু সরিয়ে পশ্চিম পাশে ছবিরহাট থেকে শুরু হয়ে তিন নেতার মাজার পর্যন্ত মেলা বিস্তৃত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুজিববর্ষ উপলক্ষে গ্রন্থমেলা উৎসর্গ করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যার ছোঁয়া থাকবে মেলার সজ্জায়, বইয়ের পাতায়।
গত বছরের চেয়ে এবার মেলার পরিধি বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১৯ সালের মতো ২০২০ সালের গ্রন্থমেলার নকশা ও সজ্জার দায়িত্বে রয়েছেন এনামুল করিম নির্ঝর। প্রাথমিক নকশা ইতোমধ্যেই করা হয়েছে। এবারের মেলায় আগতরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছবিরহাট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি চত্বর এবং বাংলা একাডেমির বিপরীত পাশ দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। সবমিলিয়ে ১৩টি প্রবেশদ্বার দিয়ে মেলায় প্রবেশ করা যাবে।
গত বছর মেলা ছিল এক মাস দুই দিন। তাতে সর্বমোট চার হাজার ৮৩৪টি নতুন বই প্রকাশ পায়। আর বিক্রি হয় ৮০ কোটি টাকার বই। এর আগে ২০১৮ সালে মেলায় মোট নতুন বই প্রকাশ পেয়েছিল চার হাজার ৫৯০টি। সে হিসাবে গত বছর নতুন বইয়ের সংখ্যা ২৪৪টি বেড়েছিল। আর বিক্রি হয়েছিল ৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই, যা ১৮ সালের মেলার চেয়ে সাড়ে ৭ কোটি টাকা বেশি।
১৯৮৩তে বাংলা একাডেমিতে প্রথমবার ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ আয়োজন করা হয়। তবে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে ট্রাক তুলে দেয়ায় ওই বছর আর বইমেলা করা সম্ভব হয়নি। এর পরের বছর ১৯৮৪ সালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সাড়ম্বরে উদ্বোধন ঘটে আজকের ‘অমর একুশে বইমেলা’র। সে সময় থেকে ২০১৩ সাল অবধি বইমেলা হতো কেবল বাংলা একাডেমিতেই। ২০১৪ থেকে একে পার্শ্ববর্তী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও সম্প্রসারিত করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement