২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিএনপি প্রার্থীর সংবাদ সম্মেলন চট্টগ্রাম-৮ উপনির্বাচনে ভোট দিতে পেরেছেন ৫ শতাংশ

-

চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ ভোট পড়েছে ঘোষণা করলেও বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ান দাবি করেছেন, মাত্র পাঁচ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে পেরেছেন। বাকি ভোট ইভিএমের মাধ্যমে ডিজিটাল জালিয়াতি করে দেখানো হয়েছে বলে দাবি তার। সংবাদ সম্মেলনে মহানগর বিএনপির সভাপতি দাবি করেছেন স্বয়ংক্রিয় মেশিনের মাধ্যমে ভোট ডাকাতির একটি নতুন পদ্ধতিই যে ইভিএম তা এখন প্রমাণিত।
গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার মীর মো: হেলাল উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক আলী আব্বাস, সদস্য সচিব মো¯Íাক আহমদ খান, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সহসভাপতি মাহবুবুল আলম, নাজিম উদ্দিন আহমদ, সি. যুগ্ম সম্পাদক এস এম সাইফুল আলম, যুগ্ম সম্পাদক কাজী বেলাল উদ্দিন, ইসকান্দর মীর্জা, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, আনোয়ার হোসেন লিপু, গাজী মো: সিরাজ উলøাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক মো: কামরুল ইসলাম, দÿিণ জেলা বিএনপির সদস্য বোয়ালখালীর পৌরমেয়র আবুল কালাম আবু, এস এম মামুন মিয়া, হুমায়ুন কবীর আনসার, অ্যাডভোকেট আবু তাহের, আবুল কালাম আবু চেয়ারম্যান, মহানগর বিএনপির সহদফতর সম্পাদক মো: ইদ্রিস আলী, সহশ্রম সম্পাদক আবু মুসা, বায়েজিদ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের জসিম প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে আবু সুফিয়ান বলেন, উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ, প্রশাসন ও দলীয় সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে তথাকথিত ইভিএমের মাধ্যমে ডিজিটাল জালিয়াতি করে জনগণের বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। এই নির্বাচন প্রমাণ হয়েছে, ইভিএমের মাধ্যমে ভোট ডাকাতি করা যায়। এটি মধ্যরাতের নির্বাচনের মতো আরেকটি কৌশল। ইভিএম এখন মহাপ্রতারণার নতুন পদ্ধতি। এতে ডিজিটাল ডাকাতির পর অভিযোগ করারও সুযোগ নেই। একজন ভোটার কোথায় ভোট দিলেন তা নিজে জানারও সুযোগ নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে সুফিয়ান বলেন, ‘মাত্র পাঁচ শতাংশ ভোট পড়েছে। কিন্তু দেখানো হয়েছে ২২ শতাংশ। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সহায়তায় ইভিএম মেশিনের পাসওয়ার্ড নিয়ে প্রতি বুথে ৭০ থেকে ৮০টি জাল ভোট দিয়েছে। এভাবে ২২ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন বলে দেখানো হয়েছে।’ একই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘২২ শতাংশ ভোটের মধ্যে আসলে ভোট পড়েছে ৫ শতাংশ। ১০ শতাংশ ভোট দিয়েছেন প্রিজাইডিং অফিসার নিজে। বাকি ভোট কেন্দ্র দখল করে পাসওয়ার্ড নিয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে আমরা আগে থেকে যা আশঙ্কা করে বলে আসছিলাম তা-ই সত্যি হলো।
সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্র দখল করে ইভিএমের পাসওয়ার্ড নেয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগও তুলে ধরেন আবু সুফিয়ান। তিনি জানান, নগরীর হামজারবাগ রহমানিয়া স্কুল কেন্দ্রে দুপুর ১২টার সময় ২ নম্বর কক্ষে কয়েকজন বহিরাগত সন্ত্রাসী প্রবেশ করেন। তারা নির্বাচন কমিশনের আইটি বিশেষজ্ঞ ও প্রিজাইডিং অফিসার ছোটন চৌধুরীকে নিয়েই সেখানে যান। তার মোবাইল থেকে নির্বাচন কমিশনের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে ডিভাইস নম্বর দিয়ে কোড অথবা পাসওয়ার্ড চাইলে তাদেরকে +৮৫৮৪৭৭৬৭+ নম্বরটি দেয়া হয়। তারা এ সময় বলতে থাকেন, ১০ শতাংশ ম্যাচিং কোড দিয়ে তাড়াতাড়ি ভোট নিয়ে নেন। তখন অন্যজনের আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। অবৈধভাবে শুরু করা ভোটার নম্বর- ৪২২, ৫০২, ৪৯৯ ও ৫৮০।
তিনি জানান, ‘মৃত ব্যক্তি ও প্রবাসীদের নামেও ভোট দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের আগের রাতে বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও সরকার দলীয় নেতারা সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে কেন্দ্র দখল করেছেন। সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেও কেন্দ্র দখল করা হয়েছে। ভোট শুরুর কিছুক্ষণ পরেই পুলিশের উপস্থিতিতে নৌকার লোকজন ইভিএমের গোপন বুথে অবস্থান নেয়। ভোটাররা ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়ার পরই ব্যালট ইউনিটে নৌকার সমর্থকেরা ভোট দিয়ে দেয়।’
সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর জানান, ভোটগ্রহণের সময়ই অনিয়মের বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো: হাসানুজ্জামানকে অভিযোগ করা হলেও তিনি নীরব থাকেন এবং অস্বীকার করেন। এভাবে প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত ফলাফল ঘোষণা করেছে।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনেও চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন আবু সুফিয়ান। সংবাদ সম্মেলনে তিনি ওই নির্বাচন ও উপনির্বাচনে তার প্রাপ্ত ভোটের তারতম্য তুলে ধরে।
তিনি বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে বোয়ালখালীর পশ্চিম কধুরখীল উচ্চবিদ্যালয়ের একটি কেন্দ্রে তিনি ভোট পেয়েছিলেন ৭৩৬। উপনির্বাচনে পেয়েছেন ১১ ভোট। কধুরখীর পাঠানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পেয়েছিলেন ৮৫৭, এবার পেয়েছেন ৪২। খিতাপচর ইসলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পেয়েছিলেন ৫৫৬ ভোট, এবার পেয়েছেন ৫ ভোট। বেঙ্গুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পেয়েছিলেন ৫৫৩ ভোট, এবার পেয়েছেন ৮ ভোট। ঘোষিত ফলাফল বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সুফিয়ান বলেন, ‘জনগণের করের টাকা খরচ করে সরকার ও নির্বাচন কমিশন তামাশা করেছে। তামাশার নির্বাচন জনগণ মেনে নেয়নি।’

 

 


আরো সংবাদ



premium cement